নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পরিপূর্ণ মনুষ্যত্ব অর্জনের প্রত্যয়ে

শুজা উদ্দিন

ব্যতিক্রম

শুজা উদ্দিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

যেখানে আকাশ ছুয়েছে ভূমি

১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫০

বাংলার ভূ-স্বর্গ, প্রকৃতির অনুসর্গ ও পাহাড়ঘেরা দুর্গ বান্দরবান পার্বত্য জেলা। বাংলাদেশের সর্বাধিক বৈচিত্র্যময় একটি জেলা বান্দরবান। মহান প্রভু নিজ হাতে অঢেল ঐশ্বর্য দিয়ে সাজিয়েছেন এই লীলাভূমি। নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও বিচিত্র জনগোষ্ঠী মিলিয়ে এ যেন অপরূপ এক ভূখন্ড। বান্দরবানের ন্যায় এতো গিরি ঝর্ণা, হৃদ, সুউচ্চ পাহাড়-পর্বত এবং অরণ্য দেশের অন্যান্য অঞ্চলে দেখা মেলে না। এই পর্বতময় অঞ্চলে বাস করছে এগারোর অধিক ভিন্ন ভাষাভাষী ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী। সম্প্রীতির এই বান্দরবান বর্তমানে দেশী-বিদেশী সকল পর্যটকদের নয়নমণি।
প্রকৃতির শিল্পকর্মের ছোয়া পাওয়া যায় পর্যটন জেলা বান্দরবানে। শহর হিসেবে বান্দরবানের ইতিহাস ২০০ বছরের পুরনো। এই জেলা প্রথম আত্মপ্রকাশ করে ১৯০০ সালে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক বোমাং সার্কেল ঘোষণার মাধ্যমে। ১৯৮১ সালে সাতটি উপজেলার সমন্বয়ে বান্দরবান জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
প্রকৃতিপ্রেমী মানুষের ইকো-ট্যুরের জন্য বান্দরবান আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিশেষ পরিচিতি লাভ করেছে। বান্দরবানের জেলা প্রশাসন হতে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বর্তমানে ২২টির অধিক সুগম-দুর্গম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এই নতুন শতাব্দীতেই মূলত বান্দরবানের পর্যটন শিল্প পূর্ণমাত্রায় বিকাশ লাভ করে।
বান্দরবানের প্রাথমিক ভ্রমণবিলাসের স্থান ছিল চিম্বুক পাহাড়, শৈলপ্রপাত, প্রান্তিক লেক এবং স্বর্ণমন্দির খ্যাত বুদ্ধ ধাতু জাদি। বাংলার দার্জিলিং খ্যাত চিম্বুকের পরিচিতি অনেক পুরনো। এই পাহাড় হতে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত, পাহাড়ের গায়ে রোদ-মেঘের খেলা, চট্টগ্রামের ৩য় কর্ণফুলী সেতুসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চিত্তাকর্ষক দৃশ্য দর্শকের দেহ-মন আন্দোলিত করবে। বান্দরবান হতে ২৪কি.মি. ভেতরে দাড়িয়ে আছে এই পাহাড়। দুর্গম পাহাড়ী অঞ্চলের বুক চিরে বয়ে চলেছে হিমশীতল শৈলপ্রপাত। চিম্বুক যাবার পথেই বান্দরবান হতে ৮কি.মি. দূরে এটি অবস্থিত। বান্দরবান প্রবেশের পূর্বে হলুদিয়ায় ২৫ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে কৃত্রিম জলাশয় প্রান্তিক লেক। পিকনিক ও মাছ শিকারের সৌখিনতার জন্য এটি জনপ্রিয়।
বান্দরবানের বিখ্যাত স্বর্ণমন্দিরটি স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছে মহাসুখ প্রার্থনাপূরক চেতি নামে পরিচিত। এটি ৩কিলোমিটার ভিতরে প্রায় ৪০০মিটার উপরে পাহাড় চূড়ায় অবস্থিত। সোনালী রঙের কারুকার্য, প্রাচ্যের ৯টি দেশের শৈলীতে সৃষ্ট বুদ্ধমূর্তিসমূহ এবং পাহাড়চূড়া হতে দূর-দিগন্তের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখে মন দুলে ওঠে।
বান্দরবানবাসীসহ সকল পর্যটকের ভ্রমণের তালিকায় শীর্ষে থাকে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্র। একটি সাধারণ পাহাড় তার অবস্থান ও উচ্চতার কারণেই হয়ে ওঠেছে অদ্বিতীয় আকর্ষণ। মাত্র ৫কি.মি. দূরে টাইগার পাড়ার টাইগার হিলে অবস্থিত এই পর্যটন কেন্দ্রটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে ২০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত নীলাচলে দাড়িয়ে গোটা বান্দরবান শহর এক নজরে দেখা যায়। দূরে-অদূরে বহু পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে মেঘের কুন্ডলী ও লুকোচুরি, সৌভাগ্যবশত মেঘের ছোয়া, রোদ-বৃষ্টি-মেঘের খেলা, দূরের চিকচিকে খাল-বিল, সূর্যাস্তের সোনালী আভা, অবিরাম বাতাসের ঝাপটা, জুমচাষ, পাহাড়ী সর্পিল পথসহ সকল নৈসর্গিক স্বর্গীয় শোভা নীলাচল হতে মূহুর্তে দেখতে পাওয়া যায়। সার্বিক বিবেচনায় নীলাচলের কোন জুড়ি নেই।

পাহাড়ী দুর্গম পথে ভ্রমণপিপাসুদের প্রিয় পর্যটন কেন্দ্র - নীলগিরি ও বগালেক। ৪৭ কি.মি. রোমাঞ্চকর গিরিপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। নীলগিরি হতে আরো ২২ কি.মি. ভেতরে রয়েছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ প্রাকৃতিক হ্রদ বগালেক। এটি বাংলাদেশের একটি রহস্যময় স্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে প্রায় ১৭০০ ফুট উপরে পাহাড় চূড়ায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে স্বচ্ছ জলের সরোবরটি। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ একটি লেক এবং আশেপাশে পানির কোন উৎস নেই। এর গঠনশৈলী দেখে অনেকে মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ বলে ধারণা করেন। ইহা সত্যিই সৃষ্টিকর্তার অপার এক মহিমা যা সৃষ্টিজগতের আয়ত্তবহির্ভূত।
পাহাড়কন্যা বান্দরবানকে প্রাকৃতিক ঝর্ণার দেশ বললে নিশ্চয় অত্যুক্তি হবে না। এখানে আছে শৈলপ্রপাত, বনপ্রপাত, নাফাখুম, রেমাক্রীখুম, আমিয়াখুম, বাকলাই ঝর্ণা, জাদিপাই ঝর্ণা, রূপমুহুরী ঝর্ণা, ঝুরঝুরি ঝর্ণা, চিংড়ি ঝর্ণা, কুমারী ঝর্ণা ও তিনাপ সাইতার। পাহাড় আর পাথর হতে উৎসারিত এসব জলধারা যেন মহান প্রভুর অপার শক্তি বহিপ্রকাশ। বান্দরবান প্রবেশের একটু পূর্বেই রয়েছে বনপ্রপাত ঝর্ণা। বর্ষাকালে এর রূপসৌন্দর্য প্রত্যক্ষ করার মতো। ঝুরঝুরি ঝর্ণাটিও প্রধান সড়ক হতে ১৫মিনিটের পায়ে হাটা দুরত্বে অবস্থিত।
বান্দরবানের সর্বোচ্চ সংখ্যক ঝর্ণা রয়েছে রুমা উপজেলায়। বান্দরবান শহর থেকে ৫৪ কি.মি. দূরে রুমা উপজেলায় পাহাড়ের গা বেয়ে সাঙ্গু নদীর বুকে আছড়ে পড়ছে নান্দনিক রিজুক ঝর্ণা। মারমা ভাষায় এটি রী-স্বং-স্বং নামে পরিচিত। প্রায় ৩শ ফুট উপর থেকে রিমঝিম সুরে ঝরে পড়ছে এই জলপ্রপাত। সাঙ্গু নদীতে নৌকা ভ্রমণ করে এই ঝর্ণার সৌন্দর্যসহ আশপাশের মারমা, বম ও ম্রো নৃ-গোষ্ঠীর জীবনাচরণ উপভোগ করা যাবে।
থরে থরে সাজানো পাহাড়ে বিস্তৃত জায়গা জুড়ে বয়ে চলেছে মনোমুগ্ধকর জাদিপাই ঝর্ণা। এটি কেওক্রাডং পাহাড় সংলগ্ন ২০০ ফুট উচু জলপ্রপাত। রুমা সদর হতে জীপে চড়ে এখানে যেতে হয়। এই প্রপাতের উপর সূর্যের আভা রংধনু তৈরী করে। এছাড়াও রুমা উপজেলা হতে ৩৩ কি.মি. দূরে যমজ ঝর্ণা এবং ২০ কি.মি. দূরে বাংলার আমাজন খ্যাত তিনাপ সাইতার অবস্থিত। আরো আছে কেওক্রাডংয়ের পথে বাশবাগান ও পাথর ঘেরা চিংড়ি ঝর্ণা।

থানচি উপজেলার তিন্দুতে আছে কুমারী ঝর্ণা ও বাকলাই ঝর্ণা। এখানে অবস্থিত অপরূপ জলপ্রপাত দ্বয় হলো নাফাখুম ও আমিয়াখুম। স্থানীয় মারমা ভাষায় খুম অর্থ ঝর্ণা বা প্রপাত। রেমাক্রী খালের পানি পাথুরে পাহাড় বেয়ে নামতে গিয়ে এই জলপ্রপাতের সৃষ্টি হয়েছে। আমিয়াখুম থেকে আরেকটু উপরের দিকে গেলেই পাওয়া যাবে সাতভাই খুম। এসব খুমের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও বিপজ্জনক দিক হলো এগুলো ৫০ হতে ১০০ ফুট উচু পাথুরে পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে। পাথরের কারণে এসব খুমে শুধু ভেলা দিয়েই চলাচল করতে হয়। দুনিয়ার লীলাখেলা সাঙ্গ করার সময় হলে যে কোন সময় আপনার উপর গড়িয়ে পড়তে পারে এক খন্ড পাথর।
থানচিতে আছে পাথরের রাজ্য, আছে রাজা পাথরও। বহমান স্রোতধারার দুপাশে ছোট-বড় পাথরের দেয়াল এবং সেই দেয়ালে প্রকৃতির কারুকার্য দেখে দর্শকমাত্রই ভাবতে বাধ্য হয় কে করেছে এসব কারুকার্য, কে সাজিয়েছে এত দীর্ঘ পথ সুকঠিন নকশা দিয়ে? পাথরের রাজ্য এখানেই শেষ নয়। থানচির বড়মদকের আরো উজানে রয়েছে সাঙ্গু নদীর অববাহিকা এবং বড়মদকের পরে দেখা মেলে নাসেরা ঝিরি, এতদুভয়ের মূল আকর্ষণ হল- প্রায় ৭০ ফুট উচু পাথরের দেয়ালের মাঝ দিয়ে এরা বয়ে চলেছে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত। নাসেরা ঝিরি এ কারণে আন্ধার মানিক নামে প্রসিদ্ধ।
প্রতি বছর পাহাড় জয়ের স্বপ্ন নিয়ে বান্দরবান আসে প্রচুর দেশী-বিদেশী পর্যটক। কেননা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিংডং এবং অন্যতম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডং বান্দরবানের রুমা উপজেলায় অবস্থিত। বান্দরবান শহর হতে যথাক্রমে ৮০ ও ৭০ কি.মি. দূরে অবস্থিত। তাজিংডং অর্থ-বিশাল পাহাড়। এর অন্য নাম মদক মুয়াল ও বিজয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১৩১০মিটার। এছাড়াও রোমাঞ্চ ও এডভেঞ্চার প্রিয় পর্যটকদের জন্য রয়েছে হিল-ট্রেকিংয়ের অফুরন্ত সুবিধা।
দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম রিজার্ভ ফরেস্ট বান্দরবানের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থিত। এখানে রয়েছে দুর্লভ প্রজাতির অসংখ্য প্রাণি ও উদ্ভিদ। অসংখ্য নান্দনিক পাহাড়, বিস্তীর্ণ হ্রদ আর দুর্গম পাহাড়ী ঝর্ণার এই লীলাভূমিতে বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানিয়ে কবি বলেন-
"এসো বন্ধু দেখে যাও সেই স্বর্গ তুমি
পাহাড় ছুয়েছে আকাশ এখানে
আকাশ ছুয়েছে ভুমি।"
তথ্যসূত্রঃ
১. Discover Bandarban(২০১৩), জেলা প্রশাসন, বান্দরবান।
২. অপরূপা বান্দরবান(২০১৭), জেলা প্রশাসন, বান্দরবান।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:০৯

মুচি বলেছেন: দেশের সবচেেয়ে সুন্দর স্থান নিয়ে একটি সুন্দর পোস্ট। লেখার সাথে কিছু ছবি জুড়ে দিলে পোস্টটি আরও আকর্ষণীয় হতো। +++

২| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৫:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: কিন্তু ছবি কই?
এই রকম পোষ্ট ছবি ছাড়া জমে না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.