![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
ও পলাশ...
বনে আগুন দুই ভাবে লাগে। একটা আগুন আক্ষরিক অর্থে আগুন। তার নাম দাবানল। আরেকটা আগুন সাহিত্যের আগুন। এর নাম বসন্তের পলাশ ফুল ফোটার আগুন। পলাশ ফুলের নাম জানে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যেমন ভার, তেমনি পলাশ ফুল চেনেন, এমন মানুষের সংখ্যাও কম। এই ফুলের ইংরেজি নামটা বড় অদ্ভুত- ফ্লেম অব দ্য ফরেস্ট। অর্থাৎ বনের আগুনের স্ফুলিঙ্গ। শিম ফুলের মতো গঠন এ ফুলের। এর রং একেবারে রক্তিম লাল। উদ্ভিদবিজ্ঞানী দ্বিজেন শর্মা তাঁর 'ফুলগুলি যেন কথা' বইয়ে লিখেছেন- 'মাঝারি আকারের পত্রমোচী দেশি গাছ। তিনটি পত্র নিয়ে যৌগিক পত্র। ফুল ফোটে বসন্তে। ফুল ৭.৫ থেকে ১০ সেমি শিম ফুলের মতো...।'
বাংলা সাহিত্যে পলাশ ফুলের প্রভাব অত্যধিক। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই লাল দেখে লিখেছিলেন- 'পলাশের কুঁড়ি/এক রাত্রে বর্ণবহ্নি জ্বালিল সমস্ত বনজুড়ি।' তপন চৌধুরীর বিখ্যাত সেই গান- 'পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে/এসেছে দারুণ মাস/আমি জেনে গেছি তুমি আসিবে না ফিরে/মিটিবে না পিয়াস।' লতা মুঙ্গেশকরের গান- 'ও পালাশ, ও শিমুল/আমার এ মন কেন রাঙ্গালে/জানি না, জানি না...।' এমনকি বাংলার দিবাকর যেই মাঠে অস্ত গেল সেই পলাশীর প্রান্তরের নামও এই পলাশ ফুল থেকেই।
পলাশ ফুল থেকে একবীজীয় একটা ফল পাওয়া যায়, কিন্তু এই ফল মানুষের খাবার উপযোগী নয়। পলাশ গাছের মূল থেকে শক্ত এক প্রকার রশি তৈরির প্রচলন ছিল এক সময়। বর্তমানে তাও দেখা যায় না। তবে কলকাতার কিছু জায়গায় এখনো পলাশ পাতায় করে ফুচকা বা এই জাতীয় স্ট্রিট ফুড বিক্রি হয়। পলাশ গাছ সাধারণত ২০ থেকে ৩০ ফুট উঁচু হয়। আর এর কাণ্ড বহু শাখায় বিভক্ত থাকে। এই গাছ এতটাই ধীরে বড় হয় যে বছরে এর বৃদ্ধি এক ফুটও নয়। পলাশ ফুল থেকে এক ধরনের হলুদ রং পাওয়া যায়। কিন্তু এই রংটাও টেকসই নয় বলে ব্যবহার করা হয় না। তবে পলাশ ফুলের বীজ চূর্ণ করে একটা পাউডার করা হয়, যা ধারণা করা হয়ে থাকে চর্মরোগের প্রতিষেধক। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা এ গাছকে পবিত্র বলে মনে করেন। কারণ তাঁরা মনে করেন গাছের ত্রিপত্র ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিবের প্রতীক।
শীতের কশাঘাতে যখন পাতারা ঝরে যায়, রিক্ত পশাল গাছের কোলজুড়ে তখন আসে সহস্র রক্তিম পলাশ ফুল। নবীন পাতার সমারোহ তখন বনজুড়ে দেখে এই পলাশের বর্ণমিছিল। এই বসন্তে পলাশ রাঙিয়ে দিয়ে যাক আমাদের চেতনাকে তারই উজ্জ্বল রঙে।
জাহাঙ্গীর হোসেন অরুণ
Click This Link
©somewhere in net ltd.