![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
ছেলেটার স্মৃতিশক্তির প্রমান পাচ্ছি আর মনে মনে ভাবছি-
"শিকল দিয়া এরে বেঁধে রাখে কেন!"
- কাকু সেই যে ৯৭ এর এপ্রিলে দেশ ছাড়লা। এরপরেতো বছরেও একবার দেখা পাই না।
- এত ডিটেইল তোর মনে আছে?
- কও কি মনে না থাকার কি আছে? ছোটবেলায় তুমি আমারে একটা লাত্থি দিছিলা মনে আছেনি?
- হ এরশার আছে। আমি সরি রে কাকু...
- সরি কওয়ার কিছু নাই। ছোটবেলায় বেজায় দুষ্ট আছিলা। এখনতো বুঝি, ছোটবেলায় দুষ্ট থাকলে বড় হয়ে তারা বড় মানুষ হয়।
আমি আবার মনে মনে ভাবছি - "শিকল দিয়া এরে বেঁধে রাখে কেন"! মুখে বল্লাম
- কি যে কস্, ঢাকায় থাকি তাই দূরত্বটা বাড়ছে। কিন্তু বড়টর কিছু হই নাই।
এরপর জ্ঞানগর্ভ অনেক আলোচনা হলো। মাদ্রাসায় আলেম বা কামেল কিছু একটা ডিগ্রি ও করছে। প্রত্যেকটা বিষয়ে রেকর্ড পরিমান মার্কস পাচ্ছে। আলোচনায় সাবজেক্টের নাম, কিছুটা বিষয়বস্তু নিখুঁত ভাবে নিয়ে আসলো। আমি আবাও মনে মনে বল্লাম - "শিকল দিয়া এরে বেঁধে রাখে কেন"!
কথার এক ফাঁকে বল্লো
- কামাইতো মনে হয় করো লাখে, হাজার পাঁচেক টাকাতো কোন বিষয়ইনা। কি কও কাকু?
হুট করে এই টপিক ওঠায় আমি কিছুটা বিব্রত। কি বলবো বুঝতে পারলাম না। একটু চুপ করে রইলাম।
- এই যে, ভাবাতেছো যে এরশাদ মনে হয় টাকা চাইবো? বড়লোকের এই এক সমস্যা। টাকার কথা ওঠলেই মানিবেগ চাইপা ধরে। টাকা কি ঢুকবো না বাইর অইবো এই বিষয় জানার আগেই।
আমি কিছুটা বিব্রত, বিরক্ত হয়েই বল্লাম
- এরশাদ টাকা আসলে পাঁচ, দশ হাজার কথা না। কোন খাতে টাকটা লাগবো এই বিষয়টা ইমপরটেন্ট।
- ধরো, তোমার চাচা'র (ওর নিজের) বই কিনতে হাজার দশেক লাগবো। তাইলে?
ও কিন্তু পাঁচ থেকে লাফ দিয়ে দশে ওঠে গেলো। কিন্তু এই আলোচনায় আমার আর ভালো লাগছেনা। বল্লাম, তোর কি বই লাগবে আমার কাছে লিষ্ট দিস্, আমি কিনে দিবো।
এবার এরশাদ কিছুটা অপ্রকৃতস্থ'র মত হাসতে লাগলো
- ও টাকা দিয়া বিশ্বাস করলা না, এইতো?
আমি টুকটাক কথা বলে বিদায় নিলাম। বাড়ীতে এসে আব্বাকে বল্লাম
- আব্বা এরশাদের যা বই লাগে আপনে একটু কষ্ট করে কিনে দিয়েন।
আব্বাতো অবাক। আব্বার কথা হলো, এরশাদ ঠিক পাগল না, সে চোর, কঠিন চোর। মানুষকে কথার ফাঁদে ফেলে, ঠকিয়ে, চুরি করে টাকা পয়সা নিয়ে নেশাফেসা করে।
জিজ্ঞাসা করলাম, পড়াশুনা?
- কিসের পড়াশুনা! সব চাপাবাজি। তার যন্ত্রনায় অতিষ্ট হয়ে তার বাপ এখন শিকল দিয়া বাইন্ধা রাখে। জমিজামা যা ছিলো সব বিক্রি করে মানুষের অভিযোগের দায় মিটাইছে।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এত সুন্দর করে যে কথা বলতে পারে, যে পাগলও না সে কেন এমন করে চোর হবে? আর সে এই বুদ্ধি নিয়ে চুরি করলেতো ধরা পড়ার কথা না।
সপ্ত-সুরের কোন একটা সুরের তার কাটা পড়ে গেছে। খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো কাউন্সিলিং করে ছেলেটাকে ভালো করে তুলি। কিন্তু এরশাদের কথাই হয়তো ঠিক, এখন বড় হয়ে গেছি। সময়ের দাম দিতে শিখেছি। তাই এরশাদকে কাউন্সিলিং করে সুস্থ করার আমার সময় কই?
©somewhere in net ltd.