নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যর্থ মিশন-১

৩১ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:৩৯

ব্যর্থ মিশন-১

***

বউ এর "আজ ঘুরতে ইচ্ছা করতেছে" এর মানে হলো - দ্রুত রেডি হও, নইলে খবর আছে। বিয়ের দুই বছরের মাথায় অলরেডি তা বুঝে গিয়েছি।



২০১২'র ফেব্রুয়ারী মাসের পাঁচ তারিখ তখন। বউরে বল্লাম বল্লাম, চলো বই মেলায় যাই। গিন্নি যে সিলেবাসের বাইরের বই পড়ায় আগ্রহী না তা মাথায় ছিলো না। শীতল দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকানোর পর তা মনে পড়লো। ভ্রু কুঁচকায়ে বল্লো, আমার লগে তুমি **** করো?



ভাগ্নীটা বল্লো, মামা নূহাশ পল্লীতে চলেন।

- নূহাশ পল্লীতে যাবো কি রে! এইটা তো অনেক দূর। আর চিনিওতো না।

- সহজ তো মামা। হোতাপাড়া যাওয়ার পরে বাম দিকে ৮ কিলোমিটার দূরেই নূহাশপল্লী। পিরোজালি জায়গাটার নাম।



বুঝলাম প্ল্যান আগে থেকেই রেডি করা। জিজ্ঞাসা করলাম

- তুই জানস কেমনে?

- মামা সবতো ইন্টারনেটে দেওয়া আছে।

মনে মনে বল্লাম, সামনের মাস থেকে ইন্টারনেটের লাইন বাদ দিতে হবে বাসা থেকে। মুখে বল্লাম, তারাতারি রেডি হো।



পাখী পাথর খায়। কারন পেটের ভিতর পাথরের সাথে শস্যকণা ঘসা লেগে দ্রুত ভাংগে। বউও কিছু কথা ভাগ্নীকে দিয়ে বলায়। প্রেশারটা যে দুই দিক থেকেই তা যেন আমি বুঝি।



যাই হোক, ঝক্কি ঝামেলা পার হয়ে গেলাম নূহাশ পল্লী। মেইনরোড থেকে এত ভিতরে তা ভাবি নাই। আশেপাশে বাড়ীঘর তেমন নাই। শালবনের গহীনে এই জায়গা। যাওয়ার পথে রিক্সাওয়ালা বল্লো

- আগে থেইক্কা সব ঠিক কইরা আইছেন তো?

- কী ঠিক করবো মামা?

- ভিতরে ডুকার বিষয়ে

- ভিতরে ঢুকার বিষয়ে আবার কী ঠিক করার আছে?

- তাইলে ডুকবার পারবেন না।

- দেখি

- দেখা দেখির কিছু নাই। মন্ত্রী মিনিষ্টার অইলেও বেইল নাই, হুমায়ূন আহমেদ বইলা কথা।



নূহাশ পল্লীর গেট এ দেখি লেখা "পিকনিক চলছে", গেট বন্ধ। দাড়োয়ানকে বল্লাম, ভাই ভিতরে যাওয়া যাবে না?

- না

এই "না" এরও অন্য এক দৃঢ়তা। হুমায়ূন আহমেদের নাটকের চরিত্রগুলা মনে হয় বাস্তবে উনার আশপাশের লোকজন। একটু রিকোয়েষ্ট করে বল্লাম

- ভাই আমরা মিডিয়ার লোক। একটু যদি ভিতরে গিয়া বলে দেখতেন।

এবার ভদ্রলোক কোন উত্তরও দিলেন না।



কতক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম। গেটের পাশে অবশেষে একজন লোক দেখলাম। তাকে দেখে দাড়োয়ান দাড়িয়ে গেলো। ভাবলাম এ হয়তো ক্ষমতাবান কেউ। হ্যালো ভাই, বলে ডাকলাম। ভদ্রলোক দয়া করে একটু দাড়ালেন, কাছে আসলেন না। গেটের খুব কাছে গিয়ে, মুখটা গেটের ফাঁকে নিয়ে নিজের পরিচয় দিলাম। উনি মুখে কথা বল্লেন না, নিজের একটা ভিজিটিং কার্ড হাতে ধরিয়ে দিলেন। নাম, বুলবুল। তিনি নূহাশ পল্লীর ম্যানেজার। সাত খন্ড রামায়ন পড়ার পর বল্লাম,

- ভাই আমরা অনেক প্ল্যান প্রোগ্রাম করে ঢাকা থেকে এসেছি। অন্তত দূর থেকে ভিতরটা একটু দেখার সুযোগ যদি দিতেন।

- পিকনিক চলছে দেখতেছেন না?

এই কথা বলে ভদ্রলোক রাগ চাপা দিয়ে চলে গেলেন।



মনেমনেও ফকিন্নির পুত গালি দিতে পারলাম না। কারন বিষয়টার সাথে হুমায়ূন আহমেদ জড়িত। পরীক্ষার খাতা ক্লাশে পাওয়ার পরে আমি কোনদিনই টিচারকে বলি নাই, স্যার এইখানেতো সব ঠিকই আছে তবু মার্কস দেন নাই কেন। কারন এইসব যন্ত্রনা আমি সব সময় এড়িয়ে চলি। অতএব তক্খনই আমার চলে আসার কথা। কিন্তু বউ, ভাগ্নীর সখের বিষয়টার দিকে সম্মান দেখায়ে ফেরতও চলে আসতে খারাপ লাগছে।



ফোন দিলাম মুশফিক ভাইকে। মুশফিক ভাই আমার ইটিভি'র কলিগ। উনার সুন্দর একটা ডায়লগ আছে

- অরুণ, আপনি যদি বলেন জাহাঙ্গীর গেইট থেকে ট্যাংকটা সরাইতে হবে তাহলে কয়েক দিন সময় লাগবো। এই টাইপ কাজ ছাড়া অন্যান্য কাজে কয়েক মিনিটের বেশী সময় লাগা আমার উচিৎ না।



মুশফিক ভাই ফোন ধরেই বল্লেন, কি রে ল্যা*** কি খবর?

- ভাই নূহাশ পল্লীর বাইরে দাড়ায়ে আছি। ঢুকার পার্মশান পাচ্ছিনা। ব্যবস্থা করেন।

- আছা দূরবীণের ভোকালিষ্ট শহীদের নাম্বারটা দিচ্ছি। ছোটখাটো কাজে আমার ব্যবস্থা নেওয়ার কিছু নাই।



এরপর কি হলো আর বলার দরকার নাই। রিক্সাওয়ালা মামা তো বলেই মন্ত্রী মিনিষ্টার অইলেও বেইল নাই, হুমায়ূন আহমেদ বইলা কথা।

এবং এর পর দুইজনের কেউই আর ফোন ধরলেন না।



খুব মন খারাপ নিয়ে ফিরছি। অনেক্ষণই চেষ্টা করা হয়ে গেছে। খেয়ালই করি নাই যে আমরা বনের ভিতর। সন্ধা হয় হয় তখন। ফেরার পথে নাই কোন রিক্সা। আমি, বউ, ভাগ্নী হেটে হেটে ফিরছি। আশপাশ দিয়ে কয়েটা বখাটে ছেলে ঘু ঘু করে মোটরসাইকেল নিয়ে আমাদের চারপাশ দিয়ে ঘুরছে আর এগোচ্ছে। পুরা সিনেমা ষ্টাইল। এই বনের ভিতর এরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। কেউ দেখারও নাই, জানারও নাই।



আমি যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেই তখনই একটা জিনিস দিবালোকের মত ফিল করেছিলাম। জগৎ সংসারের যে কোন বিপদ, হোক সে ধূলার মত তুচ্ছ, হোক সে বুলেটের মত নির্মম; অবশ্যই আমাকে ভেদ করবে। আমার বউয়ের উপর কোন কিছুর ছোঁয়া লাগবে না। আর ভাগ্নীটাকে আমি জন্মের একদিন পর থেকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছি। ভয়, অসহায়ত্ব যে কি জিনিস তা এত বেশী করে আর কোনদিন ফিল করিনি। আমি ভয় আর অসহায়ত্বের মহাসাগর পার করেছি সেদিন।



কিছুদূর আসার পরে একটা রিক্সা পেয়েই ওঠে গেলাম। ওঠার বর বল্লাম দ্রুত চালান, মেইনরোডে যাবো।



অবশেষে:

নিজে আমি বড় কেউ না। অর্থাৎ আমি কোন হনু না। আর হনুদেরকেও হুমায়ূন আহমেদ কেয়ার করতেন না। অতএব তার আশপাশের মানুষগুলো কেন করবে? চুম্বকের নিজের ক্ষমতা তার গায়েই শুধু না, তার আশেপাশেও থাকে। আমি কার সাথে অভিমান করবো? হুমায়ূন আহমেদের চৌদ্দ গোষ্ঠির কাউকেই আমি চিনিনা যাকে একটু অভিমান করে বলবো এই ব্যর্থ মিশনের গল্প। অন্তত এই উপায়ে হলেও যেন তিনি তার এক ভক্তের কষ্টটা ফিল করেন। আর আমি নিজে এমন কোন ব্যাক্তি না যে আমার কথা কোথাও ছাপা হবে। এবং হুমায়ূন আহমেদের নজরে পড়ার পর উনি ছোট্ট একটা চিরকূট লিখে কাউকে দিয়ে পাঠাবেন আমার কাছে।



কিন্তু মনের গভীরে কোথায় যেন একটা আশার আলো ছিলো। কেউইতো নিজেকে ছোট ভাবে না। আমি অবশ্য এখনের আমিকে না বরং ভবিষ্যতের আমিকে ছোট ভাবি না। কেবল মনে হয় কিছু একটা হয়ত হবো। অন্তত কয়েক হাজার মনুষ চিনবে এমন কিছু একটা আমাকে দিয়েই তৈরী করাবেন উপরওয়ালা। আর সেদিন হুমায়ন আহমেদই হয়ত আমাকে বলবেন,

-অ্যাই ছেলে তুমিতো ভালো আড্ডা জমাতে পারো। চলে এসো, নূহাশ পল্লীতে আড্ডা দিবো।



তখন এই আমিই আমার বউ, ভাগ্নীকে নিয়ে বীরদর্পে হুমায়ূন আহমেদের নিজের দাওয়াতে তার সাথে আড্ডা দিতে নূহাশ পল্লিতে যাবো।



কিন্তু হায়, ভবিষ্যতের আমি ২০১৩ এর নভেম্বর পর্যন্ত এমন কিছুই হতে পারিনি যে হুমায়ূন আহমেদের সাথে আমার দেখা হবে। তবেই না তাকে মুগ্ধ করার প্রশ্ন।



সেই ভবিষ্যতের বড় আমি আর কতটা দূরে আছে কে জানে। যখন কারো দড়জায় গিয়ে ফেরত আসতে হবে না। নাম শুনলে মানুষজন হয়ত তখনো দড়জা খুলবে না। কিন্তু সেইটা হবে বিস্ময়ে। হুঁশ ফেরত আসার সাথে সাথেই বলবে, আপনি, আপনি আমার সামনে নিজে দাড়িয়ে আছেন? সেই ভবিষ্যতের আমি'র দেখা আমার হবে কি না কে জানে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.