নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরিফ ভাইয়ের আয় খুকু আয়।

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৩

আয় খুকু আয় গানটা ছাড়ো, ছাড়লাম।

খুব মোলায়েম করে অনুরোধ করলেন, আয় খুকু আয় গানটা আবার ছাড়ো।

সারা দিন এই একই গান ওনাকে শুনালাম। ৯৭ সালের ঘটনা। ক্যাসেট প্ল্যায়ারে বারবার টেনে টেনে শুনাতে হয়। প্রথম দিন এমন পাগলামী দেখে যে মজা পেলাম তার শুদ্ধ শব্দ হ্ছে, যারপরনাই।



এর পর তিনি যখনই আমাদের বাসায় আসেন শুরু হয়ে যায় - এই অরুন আয় খুকু আয় গানটা ছাড়ো। শেষমেস অবস্থা হলো এমন, আমি ওনার পাশে রোবটের মত বসে থাকি। উনি চোখ বন্ধ করে বিশাল দেহ নিয়ে খাটে চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকেন। ঘারে দেয়া থাকে খাড়া করে দেওয়া বালিশ। বালিশের দুই মাথায় ঢালু হয়ে পড়ে থাকে এক দিকে মাথা আর অন্য দিকে দেহ, দুইটাই বিশাল।



তিনি আমার মেজ ভাই আমজাদ ভাইয়ের বন্ধু, আরিফ। বোর্ড ষ্টেন করা ছাত্র। তার প্রত্যেকটা কাজই আমাদের কাছে অন্যরকম লাগতো। আরিফ ভাইয়ের হাতের লেখা ভালো না। তখন বন্ধুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিলাম, ভালো ষ্টুডেন্টের লক্ষণ হলো, হাতের লেখা হতে হবে খারপ কিন্তু বানান হতে হবে নির্ভুল।



আরিফ ভাই তার ভারী দেহটা নিয়ে ধীরে ধীরে হাটতেন, খুব নম্রভাবে বিনয়ের সাথে আস্তে আস্তে কথা বলতেন। আশেপাশের মানুষ উনারে নিয়ে কি ভাবে না ভাবে এইসব খেয়াল করতেন না। ঘরোয়াতে ঢুকে আরিফ ভাই যখন খাওয়ার সময় খাশির হাড় মজা করে খেতেন তখন আমার ভাই প্রায়ই নাকি আস্তে করে বলতেন, আরিফ এবার বাদ দাও, হাড্ডি খাওয়ার সময় তোমারে মানুষ মনে হয়না। আরিফ ভাই তখন নাকি শিশুদের মত হাসতেন।



পড়েন জগন্নাথে, ম্যাথমেটিকস এ। অনার্স পরীক্ষার আগের দিন নাকি তিনি ঘোষণা দিলেন, তিনি পরীক্ষা দিবেন না। আরে কি মুসিবত! পরে এক শর্তে পরীক্ষা দিতে রাজি হলেন, আমজাদের বাসা থেকে পরীক্ষা দিতে দিলে তবেই পরীক্ষা দিবো। মাষ্টার্সেও একই রকমের ঘটনা। পড়াশুনা কিছুই করলেন না। বাবা মা আশা ছেড়ে দিলেন। পরীক্ষার এক সপ্তাহ আগে এসে আমাদের বাসায় হাজির। আমজদা তুমি যদি আমারে একটু পড়ায়ে দাও তো আমি পরীক্ষাটা দিবো। ফলাফল, আমার ভাই সেকেন্ড ক্লাশ, আরিফ ভাই ফার্সট ক্লাশ।



যাই হোক, যে কথাটি মাথায় ছিলো বলে লেখা শুরু করেছিলাম তা বলি। আরিফ ভাইয়ের একটাই নেশা ছিলো, প্রকট নেশা। প্রইভেট পড়িয়ে প্রচুর টাকা পেতেন, জমাতেন। এবং হুট করেই মাস খানেকের জন্য হাওয়া হয়ে যেতেন। তখন চকলেট, খেলনা কিনে কিনে পথ-শিশুদের দিয়ে বেড়াতেন। তাদের সাথেই বস্তিতে থাকতেন, মসজিদে থাকতেন। বিশাল দেহী একজন মেধাবী শিশু ছিলেন তিনি।



গত কয়েক বছর আগে উত্তরায় ট্রেনর নীচে কাটা পড়ে তিনি মারা যান। আমার ভাই দেশের বাইরে চলে যাবার পর আর আমার সাথে কোন যোগাযোগ ছিলো না। কেউ কেউ বলেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন। কেউ কেউ বলেন আনমনে হাটতে হাটতে ট্রেনের খেয়াল করেননি।



দুনিয়ায় বর্তমানে ৭০০ কোটি মানুষ আছে। এদের মধ্যে কয়জন মানুষ উদাহরণ দেওয়ার মত কাজ করে তবে বিদায় নিবেন? আরিফ শিশুপ্রেমী হয়ে, শিশুদের মত সরল থেকে উদাহরন দেওয়ার মত হয়ে তবেই বিদায় নিয়েছেন। প্রত্যেকটা জীবনই এমন কিছু একটা করে তবেই যেন সমাপ্তি টানে। আরিফ ভাই, এখন কম্পিউটারে, এমপিথ্রি প্লেয়ারে রিপিট নামের একটা বাটন হয়েছে। একগান বারবার অটোমেটিক বাজে। কোনদিন আপনার সাথে স্বপ্নেও যদি দেখা হয়। খোদার কসম আমি আপনাকে ক্যাসেটের ফিতা বারবার রিউইন্ড করে করেই শুনাবো, আয় খুকু আয়, আয় খুকু আয়।

***

তিনি মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক ছিলেন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৩

লেখোয়াড় বলেছেন:
ভাল লাগল। সুখী মানুষ।

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৮:০০

রাজিব বলেছেন: তার আত্মার শান্তি কামনা করছিএ। আর গানটির ইউটিউব লিঙ্ক দিলামঃ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.