![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
চড়ুইভাতিকে আমরা বলতাম কুজাকুড়ি।
এই খেলার মোক্ষম সময় ছিলো বর্ষাকাল। বড়রা পাতলা কাঁথা গায়ে দিয়ে দিতেন ঘুম। ছোটরা আমরা বিনা বাধায়, বিনা টেনশানে শুরু করতাম খেলা। বাড়ীর সবচেয়ে অনাদরে পড়ে থাকা, অব্যবহৃত ঘরটিকে আমরা বেছে নিতাম। শিশুমনের কোথাও না কোথাও নিশ্চয়ই একটা যুক্তি ছিলো, এই ঘরের যতই অনিষ্ট করি কেউ কিছু বলবে না।
শহরের ছেলেপেলেরা দেখি মিছামিছি চড়ুইভাতি খেলে। আমাদের সময় তা ছিলো না। শহরের মা বাবাদের মত গ্রামের মা-বাবারা অত পাষাণ হন না। তারা আগুন নিয়ে বাচ্চাদের খেলতে দেন। আগুন দিয়ে সত্যিকারের ভাত, তরকারী রান্না করাতম। বৃষ্টিতে ভিজে এ বাড়ী ও বাড়ী থেকে পাতা, খড়, জ্বালানী কাঠ (কুমিল্লার ভাষায় লাড়কী বলে) সংগ্রহ করা হতো। তাই রান্নার মধ্যে কেমন একটা ধোঁয়াটে গন্ধ থাকতো। তবু আহা কী সে স্বাদ!
আমি বর্শীতে মাছ ধরায় বেশ পটু ছিলাম। তাই বৃষ্টিতে আমারই বেশী ভিজতে হতো। বেশ মনে আছে, আকাশ মেঘে ঢাকা, রহস্যময় অন্ধকার। বাড়ী ভর্তী নানান রকম গাছ। এই গাছের কারেন যেন অন্ধকার আরো যেত বেড়ে। পুকুরের চারপাশে বিভিন্ন ঝোপঝাড়। মুর্তাগ গাছ নামের একটা গাছ খুব হতো তখন পুকুর পাড়ের ভীতরের দিকে। তখনের বৃষ্টিতে ভেজার নেশা কি জিনিস তা বোঝার বয়স হয়নি। মুর্তাগ গাছের ঝোপের ফাঁকে ছিপ ফেলে বসে থাকতাম। বৃষ্টির ফোঁটাগুলো ছোটছোট হয়। কিন্তু গাছের পাতায় জমে থাকা পানি টুপ করে পুকুরে পড়লে তা একটু বড় করেই পড়ে। এই পানি বর্শীর চুবানিতে (শলা দিয়ে বানানো একটা অংশ যা বর্শীর সুতার মাঝখানে বেঁধে দেওয়া হয় ভেসে থাকার জন্য) পড়ার সাথে সাথেই মনে হতো এই বুঝি কোন মাছ ধরা পড়লো।
সবচেয়ে বেশী মনে পড়ে বর্ষায় ভেজা পাখীদের কথা। দোয়েল পাখীর নাচ যে কত সুন্দর নাচ তা তখন বুঝিনি, এখন মিস করি। দোয়েলের চাইতে ছোট মাথা কিন্তু পাখা বড় আরেকটা পাখী ছিলো, নাম মনে নাই। কিন্তু নাচে দোয়েলের চেয়েও বেশী পাকা ছিলো। আরেক রকমের পাখী ছিলো টুনটুনির চেয়েও ছোট। এরা এক দলে গোটা পঞ্চাশেক করে এক সাথে ঘুরে বেড়াতো। মাছ ধরা, পাখী দেখা, বৃষ্টিতে ভেজা এবং চড়ুইভাতির মজা সবকিছুর আনন্দ শিশুমনে একত্রে নেচে বেড়াতো।
রান্নাবান্না শেষে পুকুরে গোসল করতাম সবাই এক সাথে। বৃষ্টির গোসলেও আলাদা মজা আছে। উপুড় হয়ে পানিতে মরার মত পড়ে থাকতে হবে। নাক, মুখ, কান থাকবে পানির নীচে। পিঠ আর মাথার পিছনের অংশ ভাসতে থাকবে। পায়ে হালকা হালকা স্ট্রোক দিতে হবে ভেসে থাকার জন্য। বৃষ্টির শব্দ রিনঝিন হয়না, বৃষ্টির শব্দ হয় টুপটুপটুপ...। তা বুঝতে গেলে এমন করে আনন্দটা নিতে হবে।
আজও কি এমন করে অন্ধকার হয়ে বৃষ্টি হয়? যে মেঘময় অন্ধকারে সারাদিনমান আন্দের নেশা হু হু করে ছড়িয়ে যেতে থাকে মনে, মন থেকে মনের গহীনে? কে জানে হয়ত হয়। কিন্তু অফিসের ভিতরের লাইটিং এ যেখানে বাহিরে দিন না রাত তা ই টের পাওয়া যায়না এখানে এমন মোহনীয় মেঘময় অন্ধকার কিভাবে বোঝা যাবে?
আমার পুত্র প্রিয়'র বৃষ্টির স্মৃতি হবে কোন এক বারান্দার গ্রিলে ধরে বৃষ্টি দেখা। তার সঙ্গী হবে মা, ভাগ্য তার খুব ভালো হলে হয়ত সঙ্গী হিসাবে পাবে বাবা, মা দুজনকেই। তবু সব শিশুর বৃষ্টি স্মৃতি হোক স্বর্গীয় আনন্দের। আমার বিশ্বাস স্বর্গের দুইট জিনিস দুনিয়াতে সেম্পল হিসাবে আছে। এক হলো চাঁদের আলো আরেক হলো অন্ধকার হয়ে পড়া নিরলশ একটানা ঝুম বৃষ্টি।
০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪২
সুখী মানুষ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।
২| ০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৩১
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: সেই ছোট বেলায় চলে গিয়েছিলাম।
দারুন লিখেছেন --- আমার এখন বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছে করছে ---
১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:২৬
সুখী মানুষ বলেছেন: নেক্সট এ বৃষ্টি হলে অবশ্যই ভিজবেন
৩| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:০৭
স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
আমার বিশ্বাস স্বর্গের দুইট জিনিস দুনিয়াতে সেম্পল হিসাবে আছে। এক হলো চাঁদের আলো আরেক হলো অন্ধকার হয়ে পড়া নিরলশ একটানা ঝুম বৃষ্টি।
ভালো লাগলো আপনার স্মৃতিচারণা আর এই মার্ক করা কথাগুলো । ++
ধন্যবাদ, ভালো থাকুন ।
১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:২৮
সুখী মানুষ বলেছেন: ভাবনার সাথে মিলে গেলো, আপনার ভালোও লাগলো। তাই খুব ভালো লাগছে। যদ্দিন লেখি এমন করে একটি লাইনও যেন ভালো লাগাতে পারি এই দোয়া করবেন।
৪| ১০ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৩
জিরো ডাইমেনশন বলেছেন: আমি নিজেও বৃষ্টিরাশির জাতক।লেখা অনেক সুন্দর হইছে। পোস্টে প্লাস
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৬
আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ছোটবেলার এসব মধুর স্মৃতি নস্টালজিয়াতে ভোগায়।
ধন্যবাদ, সুখীমানুষ।