নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংসারী বাউন্ডুলে

২০ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৩

মহেশপুরের ফুপা।

আসলে তিনি আমার সরাসরি ফুপা না। আমার ফুপাতো ভাইয়ের ফুপা। ছোটবেলায় বুঝিনি এই সাধারণ মানুষটা কত অসাধারণ, এখন বুঝি।



প্রতি বছর অন্তত একবার হলেও তিনি বেড়াতে আসতেন। মেহমানদের হাতে কিছু না কিছু থাকে। গ্রামের বাড়ীতে তখন পাইনাপেল বিস্কিটের খুব চল। ফল ফ্রুট না হলে অন্তত একটা পাইনাপেল বিস্কিট মেহমানরা নিয়ে আসতেনই। মইশমাড়ার ফুপা ছিলেন আলাদা। তিনি লুঙ্গি, পাঞ্জাবী পড়ে চলে আসতেন। হাতে কোন ব্যাগ ট্যাগও থাকতো না। যে কয়দিন থাকতেন আমাদের কাপর-চোপড়ই পড়তেন। যাওয়ারসময় নিজেরগুলা পড়ে চলে যেতেন।



মহেশপুরের এই ফুপা বেড়াতে আসলে কেউ আনন্দে ডগমগ হতো না। আবার বিরক্তও হতো না। উনি আসতেন, একেবারে পরিবারের একজন হয়ে কিছুদিন থাকতেন, চলে যেতেন। তারমানে উনার এই আসা যাওয়াটা একেবারে স্বাভাবিক। আমার জন্মেরও আগে থেকেই হয়ত স্বাভাবিক।



ঢাকায় আসলাম। উত্তরা বাড়ীতে আমরা দুই ভাই আর দুই ফুপুর দুই ছেলে থাকি, সবাই ছাত্র। হঠাৎ এক দিন দেখি মইশমাড়ার ফুপা এসে হাজির। তখন একটু বড় হয়েছি, কলেজে পড়ি। উনাকে দেখেই বুঝে গেলাম, উনি সুন্দর করে আমাদের সাতে মিশে যাবেন, গেলেনও। মুখ ভর্তী সাদা চাপ দাড়ি, পান খাওয়া মুখে সুন্দর হাসি। আমাকে উদ্দেশ করে বল্লেন

- বাবাজি লুঙ্গি দেন। গোসল করাম, দুই দিন দইরা গোসল নাই।



বড় ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম

- ভাইছা, উনি ঢাকার বাড়ীও চিনেন?

বড় ভাই আমার আগে ঢাকা এসেছেন। তিনি একটু অবাক হয়ে বল্লেন

- এর আগেতো আসেন নাই। কারো কাছ থেকে ঠিকানা নিয়া আসছে হয়তো।

এরপর একটু হাসতে হাসতেই বল্লেন

- এই ফুপার স্বভাবই হইলো ঘুইরা বেড়ানো। যার সাথেই দেখা হোক, কথায় কথায় ঠিকানা নিয়া তার বাড়ীতে চলে যায়। উনি মুসাফির-স্বভাবের মানুষ।



উনি কয়েকদিন থাকলেন। উনার উপস্থিতি এতদিন পর খুব একটা মনে পড়ছে না। তারমানে উনি তেমন মনে পড়ার মত আড্ডাবাজ ছিলেন না। একদিন সকাল বেলা 'বাবাজি যাই' বলে চলেও গেলেন।

-*-



মহেশপুর হলো কুমিল্লা শহরের পাশে গোমতী নদীর পাড় ঘেঁসা একটা গ্রাম। মহেশপুরের এই ফুপা জন্মেছিলেন গোমতী নদীর স্বভাব নিয়ে। তিনি ঘুরেছেন, সারা জীবন নদীর মত ঘুরে ঘুরে বেড়িয়েছেন।



আমরা তো এখন হ্যালো বলে কেউ হাত বাড়িয়ে দিলেও ভয় পাই। ভ্রু কুঁচকে মুখে হয়ত হ্যালো বলি ঠিকই কিন্তু হাতটা বাড়ানোতো দূরে থাক হাত আরো পিছনে সরিয়ে ফেলি। ভাবটা এবন যে, আগে বলেন এই হ্যালোর উদ্দেশ্য কি এর পর হাত বাড়াবো।



গত কয়েক বছর আগে ভাবলাম উনার সাথে দেখা করি। অনেক কিছু জিজ্ঞাসা করার আছে উনাকে। এমন সংসারী একটা মনুষ কিভাবে এমন করে ঘুরে বেড়াতে পারেন? নির্ভেজাল এই জীবনে উনার অভিজ্ঞতাইবা কী? এমন করে নিরুদ্দেশ যাত্রায় সংসার কিভাবে চলেছে? যাই হোক অনুসন্ধিৎসু মনে অনেক জিজ্ঞাসা। খোঁজ নিয়ে জানেত পারলাম উনি অনেক আগেই মারা গেছেন। বাংলা সিনেমায় কিছুটা বিখ্যাত ভিলেন বাবরের বড় ভাই ছিলেন তিনি।



আমার নিজের বাড়ী গোমতীর পাড়ে না হলেও পাশে। আমারও মহেশপুরের ফুপার মত নির্ভেজাল একটা জীবন কাটাতে ইচ্ছা করে। ইচ্ছা করে উনার মত সংসারী বাউন্ডুলে হই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২৮

অতনু অর্ঘ বলেছেন: ভাই, আপনিতো খুব ভালোই লিখেন... একটা পড়ে এখন আরেকটা পড়লাম...

২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:৫৬

সুখী মানুষ বলেছেন: এমন মন্তব্য আর দশ বারোটা দিয়ে দেখেন, খুদে রবীন্দ্রনাথ হয়ে যাবো। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.