![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
- কম্পিউটার তো চিনেন?
কিছুক্ষণের জন্য একটু থতমত খেয়ে গেলাম। প্রশ্নের ধরণ দেখে বুঝলাম, ছেলেটা আমাকে কিছু একটা বলতে চাইছে। কিন্তু সে তখনই বলবে যদি আমার জ্ঞান কম্পিউটার চেনা পর্যন্তই হয়। ভুলটা ঠিক তখনই করলাম।
- জ্বি কম্পিউটার চিনি।
ছেলেটা নিশ্চিন্ত হলো। আগ্রহ নিয়ে বলতে শুরু করলো
- কম্পিউটার দেখতে টিভির মত। আসলে কিন্তু দুইটা এক না। বিস্তার ফাড়াক।
আমি এই মুহূর্তে একটু বিব্রতকর অবস্থায় পড়লাম।
ঘটনা হচ্ছে, গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গিয়েছি। পাশের বাড়ীতে বিয়ের অনুষ্ঠান। গ্রামের বাড়ীতে সবাই কোন না কোন ভাবে আত্মীয় হয়। বিয়ে বাড়ীর এই আত্মীয় নিজে এসে আমাকে বলে গেলেন, তুই কিন্তু অবশ্যই বরযাত্রী আসার আগেই থাকবি। যে ছেলেটা এত আগ্রহ ভরে গল্প করছে সে বরযাত্রীদের সাথে এসেছে। আমার গ্রামের ভদ্রলোক আমাকে আগ্রহ ভরে নিয়ে গিয়েছেন। এই কম্পিউটার বিশেষজ্ঞও হয়ত বরযাত্রীদের মধ্যে তেমনই আগ্রহ ভরে আনা কেউ। আর আমার বিব্রতকর অবস্থায় পড়ার কারন হলো, আমি বিল গেটস বা ষ্টিভ জবস না। এর পরেও পেশায়তো আমি কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। যদি আমার পরিচয়টা কেউ একজন বলে দেয় তাহলে ছেলেটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে।
ছেলেটার বয়স কত হবে? বিশ বা একুশ। মফস্বল শহর থেকে কুমিল্লা শহরে গিয়ে পড়াশুনা করছে, কম্পিউটারে ডিপ্লমা। খুব আগ্রহ নিয়ে আমাকে অনেক কিছু বুঝালো। সফটওয়্যার ছাড়া যে কম্পিউটার অচল এই জিনিসটা বুঝানোর আগে নিজে কতক্ষণ হু হু করে হেসে নিলো। হু হু করে হাসার কারনটা হলো, সে যে এই বিষয়টা বুঝতে পারে তা অনেকেই পারে না। তাই এই হাসি।
আমি যখন ১৯৯৭ সালে কম্পিউটার না দেখে খাতা কলমে ফরট্রান প্রোগ্রামিং শিখি তখন আমার মধ্যেও তেমনই উত্তেজনা ছিলো। ছেলেটার মধ্যে আমারই অতীত দেখতে পেলাম। আমার সম্পর্কে একটু জানারও সময় হয়নি ছেলেটার। বিয়ে বাড়ীতে এসে সে আমাকেই হয়ত যোগ্য শ্রোতা মনে করেছে। তাই সে তার আগ্রহের বিষয়টা নিয়ে গল্প করছে। ছেলেটার প্রতি আমার মায়া পড়ে গেলো।
বিয়ে বাড়ীতে খুব বেশীক্ষণ থাকতে ভয় লাগছিলো। পাছে কেউ এসে আমার পরিচয়টা বলে দেয়। গ্রামের মানুষ এখনো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারকে অনেক বড় কিছু মনে করে। আসলে যে বিষয়টা বড় কিছুনা তা এখনো তারা বুঝে ওঠেনি। যাই হোক, যখন চলে আসবো তখন ছেলেটা জিজ্ঞাসা করলো
- আঙ্কেল আপনি কই থাকেন?
- ঢাকায়
- ও আইচ্ছা। কী করেন ঐখানে?
আমি যে মিথ্যা টুকটাক বলি না তা না। তবে খুব একটা বলি না। কারন মিথ্যা বলতে গেলে আমার হাসি পায়। মানুষজন ধরে ফেলতে পারে, তাই বলি না। কিন্তু এখন একটা মিথ্যা আমাকে বলতেই হবে। অতি অবশ্যই বলতে হবে। আমি চোখ মুখ কিছুটা শক্ত করলাম। যেন মিথ্যা বলার সময় যে হাসি আসে তা আটকাতে পারি। একটু বিরক্ত হয়েই বল্লাম
- আমি কাষ্টমস এ চাকরি করি। ক্লিয়ারেন্স এন্ড ফরওয়ার্ডে।
ছেলেটা তেমন কিছু বুঝলো না। শুধু বল্লো, ও আচ্ছা।
কিছু কিছু মিথ্যায় পাপ থাকে না। যে মিথ্যায় এমন মায়া জড়ানো থাকে এ মিথ্যায় অতি অবশ্যই কোন পাপ থাকে না।
২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:২২
দুঃখী__ বন্ধু বলেছেন: ভাল লাগলো সুখী ভাই।
৩| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১২:২৩
অতনু অর্ঘ বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন ভাই! খুব ভালো লাগলো লেখাটা! ভালো থাকুন!
৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:০৪
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: ঘটনাটা ভালো লাগলো। আমরা সাধারণত প্রথমেই হয়তো ঐ ছেলেকে থামিয়ে দিতাম নিজের পরিচয় জাহির করে। মনে থাকবে ঘটনাটা।
৫| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:০৬
মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার লেখার ঢং ...
লিখে যান, আরও চাই ...
শুভকামনা রইলো ...
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে আগস্ট, ২০১৪ রাত ১১:০৭
মুক্তকণ্ঠ বলেছেন: চমৎকার লেখনী তো আপনার!!