![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
হরমুজ স্যার, আমার প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক।
অন্য স্যারেরা ক্লাশে বেত দিয়ে পিটান। আমরা ভয়ে, ঘৃণায় কাঁদি। হরমুজ স্যার আস্ত একটা বসার বেঞ্চ পালোয়ানের মত করে উপরে তুলে পিটান। আমরা মজায়, আনন্দে হাসি।
প্রাইমারী স্কুলে কোন শিক্ষক কেমন পড়াতেন তেমন মনে পড়ে না। তবে কোন শিক্ষক কেমন ছিলেন তা বেশ মনে পড়ে। আমার জীবনে শিক্ষক ভীতি মারাত্মক। বইয়ে দাগ দিয়ে পড়া মার্ক রাখিনি বলে এক শিক্ষক পিটিয়ে পিঠের ছাল তুলে ফেলেছিলেন। তবে হরমুজ স্যারের মত মজার শিক্ষকও পেয়েছিলাম কয়েকজন। আজ শুধু হরমুজ স্যারের কথাই বলি।
হরমুজ স্যার বিশাল পালোয়ান সাইজের মানুষ। স্যারের বৃদ্ধ বয়সটাতেই আমরা তাঁকে পেয়েছিলাম। চুল, দাড়ি সব পাকা। পায়জামা পাঞ্জাবী পড়তেন। মুখে সবসময় একটা হাসি লেগে থাকতো। আমাদেরকে ডাকতেন বাপ্ বলে। কেউ পড়া না পারলে, ক্লাশে দুষ্টামি করলে কিছুক্ষণ তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। এর পর কী করবেন তা আমাদের জানা। যে বেঞ্চের পাশে তিনি দাঁড়িয়ে থাকেন সেই বেঞ্চে বসা ষ্টুডেন্টদের বলতেন
- বাপ্ তোরা একটু ওঠ
এরপর বেঞ্চ মাথায় নিয়ে মাইর দেওয়া দেওয়া ভাব করতেন। সমস্ত ক্লাশ হেসে ওঠতো। যাকে ভয় দেখানো হচ্ছে সে হাসতো সবচেয়ে বেশী। এরপরে বেঞ্চটা নামিয়ে রেখে ওর মাথায় হাত রেখে বলতেন
- বাপ্ মানুষ হ।
এরপর একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলতেন
- মানুষ হওয়া খুব কঠিন রে, খুব কঠিন। মানুষ হ বাপ্, মানুষ হ।
আমার নিজের বাবা একজন শিক্ষক। তবু তখনো এই বিষয়টা জানতাম না যে শিক্ষরা সমাজেরই অংশ। তাঁরা স্কুল ছাড়া অন্য জায়গাতেও যান। তাই হঠাৎ যেদিন হরমুজ স্যারকে আমাদের বাড়ীতে দেখলাম সেদিন কি যে খুশি হয়েছিলাম! কথায় বার্তায় দেখি তিনি আমার বাবার বন্ধু। খুশির উপর খুশি। স্যার যখন আমাদের বাড়ী থেকে বিদায় নেন তখন অভ্যাসমত আমার মাথায় হাত রেখে বলেছিলেন
- বাপ্ মানুষ হ।
ঠিক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে এই কথাটাও বলেছিলেন
- মানুষ হওয়া খুব কঠিন রে, খুব কঠিন। মানুষ হ বাপ্, মানুষ হ।
-০-
আজ বহু বছর পর স্যারের কথা খুব মনে পড়ছে। স্যার বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলে হয়ত পা দুইটা ধরে সালাম করে বলতে পারতাম
- স্যার ভুল তো প্রতি পদে পদে হয়ে যাচ্ছে। এর পরেও নিজেকে মানুষ দাবি করতে মন চায়। স্যার আমাকে দিয়ে কি মানুষ হওয়া হবে?
-০-
গরুর ঘরে গরু জন্মায়, হাতির ঘরে হাতি।
মানুষের ক্ষেত্রে কিন্তু ঘটনা ভিন্ন। মানুষের ঘরে আমরা একটা শিশু হয়ে জন্মাই। আর সারাটা জীবন মানুষ হওয়ার চেষ্টা করে যাই। আর একবার মানুষ হয়ে গেলেই যে মানুষ হয়ে গেলাম তা না। মৃত্যুর আগ মুহূর্তেও অ-মানুষ হয়ে যাওয়ার চান্স থাকে। আমরণ মানুষ হওয়ার চেষ্টা করে আমৃত্যু মানুষ থাকাটাই প্রত্যেকের লক্ষ্য থাকা উচিত।
২| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৭
ডরোথী সুমী বলেছেন: অসম্ভব ভাল লেগেছে। মনটা ছুঁয়ে গেল। আমরা এখনও মানুষ হবার চেষ্টায় আছি। ধন্যবাদ।
৩| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:২২
মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: আমরণ মানুষ
হওয়ার চেষ্টা করে আমৃত্যু মানুষ থাকাটাই
প্রত্যেকের লক্ষ্য থাকা উচিত.......অপূর্ব।
৪| ২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:০০
মোঃ সাইফুল্লাহ শামীম বলেছেন: আমরণ মানুষ
হওয়ার চেষ্টা করে আমৃত্যু মানুষ থাকাটাই
প্রত্যেকের লক্ষ্য থাকা উচিত।
©somewhere in net ltd.
১|
২৫ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩
ফারগুসন বলেছেন: ভাল---খুব ------ ভাল।