নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিতা যে অভিজ্ঞতা

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৮

তিতা হয় যে অভিজ্ঞতা

***

নতুন নতুন মোবাইল ফোন ব্যবহার করি। ফোন বেজে উঠলে দুইটা জায়গা উজ্জল হয়। একটা হলো মোবাইলের কী-প‌্যাড, আরেকটা হলো আমার মুখ।



বিজনেস কার্ড করার মত কোন পরিচয় তখনো হয়নি। তাই এ-ফোর সাইজের কাগজে প্রিন্ট করে নিলাম নিজের নাম, ফোন নাম্বার ইত্যাদি। কোথাও গেলে পকেট থেকে কাগজ বের করে দেই। এই সখের একটা গ্রাম্য নাম আছে, পিতলা সখ। পিতলা সখ ক্ষতিকর কিছু না। আমার জন্য ক্ষতিকর হয়ে গেলো। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় হয়ত এই কাগজ কোথাও রেখে দিয়েছিলো। হঠাৎ একদিন ফোন দিয়ে বসলো

- ভাই আপনে কই?

- বাসায়।

- আমি তো ডাহা (ঢাকা) আইছি। আপনের ঠিকানাডা একটু কন না।

ঠিকানা বল্লাম, তিনি বাসায় আসলেন। আমার বুদ্ধির খুব প্রশংসা করলেন। ফোন নাম্বারের কাগজটা তার পকেটে ছিলো বলে আজ এই বিপদের দিনে তিনি রক্ষা পেলেন। বিপদটা কী? বিপদ হলো, তার এক হাজার টাকা দরকার। শুধু দরকার না, গাছেমাছে দরকার। ছাত্র অবস্থায় এক হাজার টাকা মানে এখনকার এক লাখ টাকা। ভদ্রলোক বাড়ীতে গিয়েই মানি অর্ডার করে টাকটা দিবেন আশ্বাস দিলেন। খুব একটা আশ্বস্ত হলাম না, তবু লজ্জায় পড়ে সর্বস্ব খালি করে টাকটা দিলাম।

ভদ্রলোক আমার দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছিলেন। সম্পর্কটা এরপর এতই দূ...র সম্পর্কের হয়ে গেলো যে ইংরেজীতে বলতে গেলে - নো ট্রেস।

-০-

এর কিছুদিন পর। টুকটুক করে বাজার খরচের টাকা থেকে টু পাইস সরিয়ে আবার কয়েকশো টাকার সেভিংস হলো। এক বড় ভাই ফোন দিলেন

- অরুণ আমি তো অফিসে রওয়ানা দিয়া দিসি। পকেটে দেখি বেশী টাকা নাই। আমি অফিসে যাচ্ছি, বেবী ভাড়া যে দিবো তাও পকেটে নাই। তুমি একটু কষ্ট করে কয়েকশো টাকা নিয়া আসবা?



মনে মনে বল্লাম, বেবী ভাড়া নাই তো, বাসে যান। ভদ্র ছেলে, কাউকে মানা করতে পারি না। তাই মনে মনে বল্লাম

- জ্বী ভাইয়া।

এমন করে টুকটাক বাহানায় তার কাছে তেরোশো টাকা পাই। তার সাথে সম্পর্কটা আজ তেরো হাজার মাইলেরও বেশী দূর।

-০-

তখন ইটিভিতে কাজ করি। একজন ফোন দিলেন

- দাদা আমি তোমার অফিসের নীচে। একটু নামবা?

নামলাম। ঘটনা মর্মান্তিক। তার কিডনীতে পানি জমছে। ডাক্তার না দেখাইলে বড় বিপদ। যে কিডনীর কাজই পানি পরিষ্কার করা সে কিডনীতে পানি জমা তো বড় বিপদ! টাকা দিলাম। এমন করে তার সমস্যা চলতেই থাকলো। টাকার পরিমান কমতে থাকলেও টুকটাক করে আমিও দিতে থাকলাম।



কয়দিন পর শুনলাম, পানির ঘটনা সত্যি। তবে এই পানি কিডনীতে জমে নাই। এই পানি জমে আছে ভদকা টদকা টাইপ কিছু বোতলে। যা পান না করলে তার কিডনী কাজ করে না।



আমার বিয়ের সময় দেখি হাতে নগদ কোন টাকা নাই! সব টাকা এদিক সেদিক দেওয়া। এখন ফোন করে টাকা চাই, কেউ টাকা দেয়না। উল্টা শত্রু হয়ে গেলাম। কয়েকজন টাকা দিলো তবে কয়েকজন বল্লো

- পুরাটাই দেওয়া লাগবো? হাজার খানেক কম দিলে হয় না?

আরে ভাই, আমি তো ব্যবসা করি নাই যে কম দিবেন? আমি তো সুদ লাগাই নাই যে টাকা কম দিবেন? নগদ টাকা নিছেন, নগদ টাকা দিবেন। কম দিবেন কেন?



এই ভদ্রলোককে ফোন দিলাম।

- ভাই আমার তো বিয়া।

- অরুণ দা দাওয়াত লাগবো না, বিয়াতে আমি সবার আগে আসবো।

- ভাইরে, বিয়া পর্যন্ত যাইতে গেলেতো খরচা পাতি আছে, টাকাটা ফেরেত দেন না। যাদের কাছে পাই, সবার কাছেই চাইতেছি।

- ওহো, আপনের টাকা ফেরত দেই নাই!



আমি আসমান থেকে পড়লাম। ভদ্রলোক আবার বল্লেন

- কত পাইতেন অরুণ দা?

আমি এমাউন্টটা বল্লাম। তিনি চমকে উঠলেন।

-এত! নাহ অরুণ দা, কোথাও ভুল হইতেছে।



আমি সবকিছু এক্সেল ফাইলে ডেট সহ লিখে রাখি। ভুল হওয়ার কারন নাই। আমি বল্লাম

- ভাই আমি আপনার কাছে কোন টাকা পাইনা। যদি কিছু পাই তাহলে আল্লাহ যেন তা মাফ করে দেন। আমার কাছে লেখা সব হিষ্টোরি আমি মুছে দিলাম।

-০-

যে এক্সেল ফাইলে টাকা ধার দেওয়ার বৃত্তান্ত লেখা ছিলো তা ডিলিট করে দিলাম। কাকে কত ধার দিয়েছিলাম তার কোন হিসাব আর আমার কাছে লেখা নাই। এর মধ্যে বড় বড় এমাউন্টও ছিলো, ঘটনা সাধারণ ধার ছিলো বলে তা একেবারেই মনে নাই। কিন্তু ধার দেওয়ার প্রসেসগুলো যেখানে একটু ব্যতিক্রমী ছিলো সেইগুলি ভুলি নাই।



এই ধারের টাকা মাফ না করে বেহেস্তে যাওয়ার বায়না ধরবো তা আমি বিশ্বাস করি না। আল্লাহ তাদের মন থেকে এই স্মৃতি মুছে দিক যে তারা আমার কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন। তাহলে তারা আর দূরে থাকবেন না। টাকার দুঃখ ভুলা যায়। টাকার কারনে কাছের মানুষগুলা দূরে সরে গেলে এই দুঃখ ভুলা যায়না।

-০-

বিদ্র: যারা এর মধ্যে আমার ফেসবুকে আছেন তারা কাইন্ডলি রাগ করবেন না। আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকেই উল্লেখ করিনি। আপনারা আমার কাছে আপনজন। আর এই কারনেইতো ধার দিয়েছিলাম। রাস্তার অপরিচিত কাউকেতো ধার দেই নাই, তাই না?



আমি দুই হাত বাড়িয়ে আছি, আসুন। ধার নেওয়ার আগে যেমন করে আড্ডা দিতে আসতেন, এমন করেই আসুন। আমি আড্ডাবাজ মানুষ, টাকার গুরুত্ব আজ পর্যন্ত আমার কাছে আপনাদের আড্ডার চেয়ে মূল্যবান হয়নি। ভবিষ্যতেও যেন না হয়।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সূখী মানুষের দু:খের কাহন!!!!!!!

ধার আসলেই বড় বাজে জিনিষ

দিলেও পস্তাইতে হয়
না দিলেও!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

২| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪০

চাতকপাখি বলেছেন: সুন'দোর হোয়েছে ।

৩| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:০০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধার দেনা আসলেই খুব খারাপ জিনিষ। আপনজনকে পর করে দেয়। আপনার মতো তিক্ত অভিজ্ঞতা আমারও আছে।

ধন্যবাদ, সুখী মানুষ।

৪| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৮

সুমন কর বলেছেন: অর্থই সকল অনর্থের মূল। টাকা ধার দিলে সম্র্পক নষ্ট হয়, তাই না দেওয়াই ভাল।

অাপনার লেখা ভাল লাগল।

৫| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:০৮

আফসানা যাহিন চৌধুরী বলেছেন: আমি দুই হাত বাড়িয়ে আছি, আসুন। ধার নেওয়ার আগে যেমন করে আড্ডা দিতে আসতেন, এমন করেই আসুন। আমি আড্ডাবাজ মানুষ, টাকার গুরুত্ব আজ পর্যন্ত আমার কাছে আপনাদের আড্ডার চেয়ে মূল্যবান হয়নি। ভবিষ্যতেও যেন না হয়।





উই মাস্ট ফলো ইওর স্পিরিট.. অনেস্টলি...! :)

৬| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৬

কলমের কালি শেষ বলেছেন: ভালো বলেছেন । টাকা অনেক খারাপ জিনিস । থাকলেও বিপদ না থাকলেও বিপদ ।

৭| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:১১

এস,এম,মনিরুজ্জামান মিন্টু বলেছেন: বড়ই পরিতাপের বিষয়..........আল্লাহ আমাদের সবাইকে জ্ঞান দান করুন।

৮| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:২৬

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: ধার দিয়ে কত যে পস্তাচ্ছি আমি --- এখন আর কাউকেই ধার দিতে ইচ্ছা করে না ----

৯| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩

কহেন কবি কালিদাস বলেছেন: @সুমন কর : অর্থই সকল অনর্থের মূল। টাকা ধার দিলে সম্র্পক নষ্ট হয়, তাই না দেওয়াই ভাল।
@ লাইলী আরজুমান খানম লায়লা : ধার দিয়ে কত যে পস্তাচ্ছি আমি --- এখন আর কাউকেই ধার দিতে ইচ্ছা করে না

আপনারা মনে হয় এমন কোনও মানুষকে বিশ্বাস করেছিলেন যে আপনাদের বিস্বাসের উপযুক্ত না । আমি বেক্তিগতভাবে মনে করি টাকাপয়সা সম্পর্ক নষ্ট করে না যদি আপনি যাকে বিশ্বাস করেন তাকে দেন। আমার বেক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলছি কথাগুলো ।

১০| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১১

আমি ইহতিব বলেছেন: আমার জামাইয়ের এক জানের জান বন্ধুকে টাকা ধার দেয়ার পর প্রায় তিন বছর সে যোগাযোগ বন্ধ করে রেখেছিলো। রিসেন্ট সে আমার জামইয়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে যোগাযোগ করে নিজে থেকেই। ওর খোঁজ খবর নেয় অনেক। কিন্তু ভুলেও সেই টাকার কথা তুলেনা। আমার জামাইও ভদ্রতা করে সেটা মনে করিয়ে দেয়না। ব্যাপারটা টাকার না আসলে। সুন্দর একটা সম্পর্ক টাকার কারনে নষ্ট হয়ে গেল এটা ভেবেই আফসোস হয়।

১১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:০৬

সমানুপাতিক বলেছেন: তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিখার অনেক কিছু আছে ।

১২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:০৬

সমানুপাতিক বলেছেন: তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শিখার অনেক কিছু আছে ।

১৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৩

মহসিনা বলেছেন: মাশাল্লাহ, বেশ ভালো হয়েছে, বেশ ভালো লাগলো...।অনুসরন করুন করলাম।

১৪| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫

ভিটামিন সি বলেছেন: ২০০৮ এ একজনকে ৫০০০ টাকা ধার দিসিলাম টিউশনির জমানো টাকা থেকে। সেই লোক অনার্স, মাস্টার্স করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট দিয়ে সরকারী চাকুরি বাগাইলো। এখনও আমার টাকা ফেরত দেয় নাই। ফেবুতে ফ্রেন্ড। কিন্তু চ্যাটিং এ গেলেই উনি লগ আউট হয়ে যায়। আরে হালায় আমি তো তোর কাছে টাকা চাইতে আসি না। জাষ্ট কথা বলতে চাই, ডরাস কেনে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.