নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

পন্ডিত মশাই বনাম...

১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৩

পন্ডিত মশাই এর গল্পটা মনে আছেতো?

ঐযে, লাট সাহেবের কুকুরের ৩ টা পা। তার পিছনে খরচ হয় মাসে ৭৫ টাকা। আর পন্ডিত মশাই এর মাসিক বেতন ২৫ টাকা। তার মানে দাড়ায় - লাট সাহেবের কুকুরের এক পায়ের মাসিক খরচ ইজ ইকুয়েলটু পন্ডিত মশাইয়ের এক মাসের বেতন।

-০-

প্রায় ১৪ বছর পর আমার ভাই আসতেছেন আমেরিকা থেকে। এই খুশিতে ভাইয়ের জন্য খাট কিনলাম একটা। খাট নিয়ে যে ভেন ওয়ালা আসলেন তার নাম জাফর। জিজ্ঞাসা করলাম

- মামা আপনার নাম কি শুধু জাফর নাকি আগে পিছে কিছু আছে?

বেটা দেখি বেজায় রশিক। মিচকা একটা হাসি দিয়ে বল্লো

- মামা মীর টীর নাই, জাফরের আগে মোহাম্মদ আছে।



কথার পিঠে কথা দিয়ে মজা করার লোকের বড়ই অভাব আজকাল। বেশীরভাগ মানুষের সাথেই মজা করে বলি একটা বুঝে আরো দশটা। কিন্তু যেইটা বুঝাইতে চাইছি এর ধারে কাছেও যায় না। ঐদিন এক বন্ধুর বিশাল ভুঁড়ির দিকে নজর দিয়ে বল্লাম, ভাবীর সাথে দেখি তোর দূরত্ব দিনে দিনে বাড়তেই আছে। ও কি বুঝাইতে চাইলো বুঝলাম না, বল্লো - হ রে, কিছু একটা টের পাইছে মনে অয়।



যাই হোক, জাফর মামা'র পরিশ্রম দেখে খুব মায়া লাগছিলো। খুব যত্ন করে খাট লাগাচ্ছে। ফ্রিজে পাটিশাপটা পিঠা ছিলো, দিলাম। সাথে কাজে একটু হাত লাগিয়ে সাহায্য করছিলাম। এতেই দেখি বিনয়ে একেবারে গদগদ। পান খাওয়া মুখে হাসি যেন ধরেনা।



মানুষ কারো উপর খুশি হলে গরগর করে কথা বলে। খইয়ের মত কথা ফুটতে থাকে মুখে। টপিক কোন বিষয় না, এমনিতেই কথা বের হয়। আমাকে বল্লো

- মামা আপনের কাম কইরা আরেক বাসায় যামু।

- ঐটাও কি খাট?

- না মামা ডেরেসিং টেবিল।

- দিনে কয়টা কাজ থাকে এমন?

- তা মামা ধরেন, নিদেন পক্ষে তিনডা। চাইরডাও থাহে।



আমি মনে মনে হিসাব করলাম, ৮০০ গুনন ৩ ইকুয়েলটু ২৪০০ টাকা। মানে মাসে ৭২,০০০ টাকা। ধরলাম, মাঝেমাঝে কাজ থাকেনা। ধরলাম, ভেনের সবটা টাকা সে পায় না। সবকিছু বাদ দিয়ে ৫০% ধরলেও ৩৬ হাজার টাকা। জিজ্ঞাসা করলাম

- মামা টাকা পয়সা কি কিছু জমান?

- জমাই মামা, কইলেকি লইয়া যাইবাইন?

এর পর মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বল্লেন

- আইজ রাইতে যাইতেছি শেরপুর। জমি কিনুম একটা।

- কতটুক জমি?

- চইদ্দ কাঠা মামা

- কত পড়ছে?

- সাড়ে তিন লাখ।

এর পর আরো অনেক কথা হলো। মুদ্দা কথা হলো, তিনি তার বউকে দিয়ে কিছু করান না। দুই ছেলেকে স্কুলে পড়ান। পরিশ্রমকে কখনোই না বলেন না। সে আর কয়েক বছর পরিশ্রম করবে। এরপর এখন যে জমি কিনছেন বা সেভ করছেন তা দিয়ে বড় একটা কিছু করেবন। এবং তখন আর শারীরিক পরিশ্রমটা এত করবেন না।



সব শুনে খুশি হলাম। সব আত্মপ্রত্যয়ীমানুষইযে নিউটন হবেন, এডমান্ড হিলারী হবেন তা তো না। দেশের নিম্নশ্রেণীর মানুষেরা যদি এমন করে কনফিডেন্ট হন তবে এই ভিত্তির উপর উন্নয়নের এভারেষ্ট তৈরী হবে। এইটাই আমাদের বেশী দরকার। এই মুহূর্তে আমাদের এভারেষ্টের মত উচ্চ শিখরের চাইতেও বেশী দরকার একটা শক্ত ভিত্তির। জাফর মামার মধ্যে এই ভিত্তিটা দেখে ভালো লাগলো।



তবে, কিছুটা দুঃখ লাগলো এই ভেবে যে, এই দেশে কায়িক পরিশ্রমের ভেল্যুর চাইতে ব্রেইনের পরিশ্রমের দাম এখনো কম। যা মোটেও আশার কথা না। এখনো একজন গ্রাজুয়েটের এন্ট্রি সেলারী ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা। যেখানে একজন রিক্সাওয়ালার গড় আয় মাসে ৩০ হাজার টাকা।



পন্ডিত মশাইয়ের মত অংক করতে শুরু করলাম, জাফর মামার ইনকাম যদি লাট সাহেবের কুকুরের তিন পা হয় তবে এর কয়টা পা এর সমান আমার একজন আইটির কলিগ বেতন পান?

-০-

লোকটার পরিশ্রম দেখে এত মায়া লাগলো। গিন্না বাসায় নাই, নিজেই ডিম ভাজলাম, বিস্কিট দিলাম, ঠান্ডা পানি দিলাম। পরিশ্রমী একটা মানুষ খাচ্ছে, আহারে এই দৃশ্য বুঝি দেখতে এত সুন্দর!

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:




ভালো বক্তব্য +

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮

আহলান বলেছেন: সামঞ্জস্যহীনতাই তো এদেশের কালচার ...

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩০

কলমের কালি শেষ বলেছেন: এই দেশে কায়িক পরিশ্রমের ভেল্যুর চাইতে ব্রেইনের পরিশ্রমের দাম এখনো কম।

কথাগুলো ভাল বলেছেন ।

৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৪

েগালাপমিহ বলেছেন: Beautiful!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.