![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
শাহবাগে নেমেই টুক্কু ভুলে গেলো কী কাজে সে এসেছিলো।
আজ মনে হয় এই এলাকায় কোন উৎসব টুৎসব হচ্ছে। মেয়েদের সাজগোজ আর শাড়ী দেখে মনে হচ্ছে পহেলা ফাগুন টাইপ কিছু একটা হবে। যাদুঘরের সামনে সে এমনি এমনি দাড়িয়ে রইলো।
এমন উৎসবের দিনগুলাতে ফুটপাথে ছোট ছোট দোকান বসে। টুক্কু দোকান দেখছে আর ধীরে ধীরে টিএসসির দিকে আগাচ্ছে। চুড়ির দোকানের মোটাসোটা এক দোকানদার খালা জিজ্ঞাসা করলো
- বাবাজি কী নিতেন?
টুক্কু প্রথমে বুঝেনি তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। হঠাৎ বুঝতে পেরে একগাল হাসি দিয়ে উনার সুরে সুর মিলিয়ে বল্লো
- খালা কিছু নিতাম না, এমনি দেখছি।
- দেখেন বাবাজি, আইজকা দেখলেই না কাইলকা কিনতেন। দেখনেরও দরকার আছে।
- এত সুন্দর করে বল্লেন খালা, কাইলকা আর কিনতে হবে না। আজই কিনবো, আপনে সুন্দর দেখে চুড়ি দেন।
- কোন সাইজ দিমু?
- সাইজ টাইজ লাগবো না। আপনের কাছে সুন্দর লাগে এমন একগাছা চুড়ি দেন।
খালা কি বুঝলো কে জানে। এমন একটা হাসি দিলো যার অর্থ হলো, আহারে সোনারে চুড়ি নেওয়ার মন আছে, চুড়িওয়ালী নাই?
হলুদ একগাছা কাঁচের চুড়ি চল্লিশ টাকা দাম রাখলো। টুক্কুর মনে হলো দামটা অনেক কম রেখেছে। কে জানে হয়ত তার প্রতি মহিলার মায়া পড়ে গেছে। টুক্কু একটু আদর নিয়েই বল্লো
- খালা আপনেরতো মনে হয় লাভ হইলো না। দাম ঠিক রাখছেন তো?
খালা কিছু বল্লেন না, আবার সুন্দর একটা হাসি দিলেন।
হাতে চুড়ি নিয়ে বেশ মুগ্ধ একটা দৃষ্টিতে সে চুড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো। "চুড়ির তালে নুড়ির মালা রিনিঝিনি বাজেগো..." গুনগুন করতে করতে সে আবার সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। একটু এগিয়ে গিয়েই আবার ফুটপাথের বইয়ের দোকানে আটকে গেলো। জীর্ণশীর্ণ একটা বই। উপরের মলাটটা নাই। প্রথম পৃষ্ঠাতেই লেখা "MOUNTAIN INTERVAL"। বইটা হাতে নিয়ে রেন্ডমলি একটা পেজ ওপেন করেই চোখ আটকে গেলো - Out, Out এ। দাড়িয়ে দাড়িয়েই সে কবিতাটা পড়লো। শেষ লাইনটায় লেখা
"since they
Were not the one dead, turned to their affairs"।
আহারে ছোট্ট ছেলেটা করাতে হাত কেটে শেষমেষ মরেই গেলো!
এক হাতে বই, আরেক হাতে হলুদ রঙের চুড়ি নিয়ে সে আবার হাটতে শুরু করলো। মনটা ভীষণ খারাপ লাগছে ছেলেটার জন্য। টুক্কু খেয়াল করে নাই তার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সে কল্পনা করছে, আচ্ছা ছেলেটার বয়স কত হবে?
"big boy
Doing a man’s work, though a child at heart"
বিগ বয় যেহেতু বলছে, তার মানে বয়স হয়ত বারো তেরো বছর হবে। আহারে বারো তেরো বছর বয়সের একটা ছেলের অন্তরেতো একটা শিশুরই হৃদয় হবে। বড় মানুষের মত সাহসী একটা কাজ করতে গিয়ে করাতে হাত কেটে ছেলেটা মরেই যেতে হলো? কবি এত নিষ্ঠুর হয় কেন? ছেলেটার জীবন মৃত্যু তো কবি'র হাতে ছিলো। কবি'র হাত এত নিষ্ঠুর, এত!
টিএসসির কাছাকাছি এসে হুট করেই নজর গেলো আরেকটা দোকানে। এখানে ভীড় করে মানুষজন কী দেখছে? বাহ এই দোকানটা অনেক সুন্দর করে গুছানো। কেবল কানের দুল আর কানের দুল। দোকানদার মহা ব্যস্ত। চুড়ি কিনে তার মায়া পড়ে গেছে, ভাবলো এক জোড়া কানের দুলও কিনবে। জিজ্ঞাসা করলো
- মামা এই জিনিসের দাম কত?
- দুই শো।
দুই শো বলেই আবার অন্য কাষ্টমার নিয়ে সে ব্যস্ত হয়ে গেলো। টুক্কু বল্লো
- মামা একশো দেই?
মামা এতটাই ব্যস্ত যে "দেন" বালার সময় নাই। চোখে ইশারা দিলো, টাকা ফেলেন, মাল তুলে নিয়ে যান।
ঠিক এমন সময় পাশ থেকে একটা নারী কণ্ঠ ভেসে আসলো
- আপনিতো দেখি মহা বেকুব!
টুক্কু বুঝলো না, ঠিক তাকেই কি বলা হলো? কেন বলবে? সূত্র কী?
মেয়েটার দিকে তাকালো-
রোগা, লম্বা গড়ন, গায়ের রং শ্যামলার চেয়ে একটু ফর্সা। হালকা বেগুনী রঙের একটা শাড়ী, গলায় পোড়া মাটির একটা মাদুলী টাইপ। চুল টাইট করে বাঁধা। চুলে সামান্য তেলও দিয়েছে মনে হয়। আহামরী সুন্দরী না। কিন্তু বেশ আলাদা করে নজড়ে পড়বে এমন। খুব ফ্রেন্ডলী চেহারা।
চার পাঁচ সেকেন্ড তো হবেই। এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। এদিক দিয়ে দোকানী মামার ব্যস্ততা মনে হয় কমেছে। তাড়া দিয়ে বল্লো
- কই মামা দেন, একশো।
আবার এদিক দিয়ে মেয়েটা একটা মুচকি হাসি দিয়ে বল্লো
- সেইম দুল আমার কাছে দামই চাইলো পঞ্চাশ টাকা। আমি বিশ টাকা বল্লাম, ব্যাটা নিম রাজিও হইলো। আর আপনার কাছে দাম চাইলো দুইশো আর আপনি একশো বলে দিলেন?
মেয়েটা আবার ফিক করে হাসছে। টুক্কু একটু বিব্রতকর অবস্থায় পড়লো। দোকানী চিন্তা করছে তার কাষ্টমার হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে, তাই একটু জোড়ই তাড়া দেওয়ু শুরু করলো। আর মেয়েটার দিকে একটু ভ্রু কুঁচকে তাকাচ্ছে।
টুক্কু কী করবে ঠিক বুঝলো না। ঠিক টাকা কমানোর জন্য না, এমনি ঘোরে মধ্যই বল্লো
- মামা বিশ টাকা তো!
আর যায় কোথায়। মামা এবার গুলিস্তানের মামাদের মহ হিংস্র হয়ে উঠলেন
- ঐ মিয়া, ভদ্রলোকের এক কথা। একশো বলছেন, একশো দিবেন।
মেয়েটা আবারো গা ঝাকিয়ে হাসছে। খুব মজা পাচ্ছে, মেয়েরা যতটা মায়া ধারণ করে অন্তরে ঠিক ততটাই তারা পাষাণও হতে পারে। টুক্কুর একটু মন খারাপ হচ্ছে। এর মানে হয়? সে পকেট থেকে একশো টাকা দিয়ে দুলটা নিলো।
এবার অনেকটা অনাকাংখিত ভাবেই, মেয়েটার কণ্ঠ আবারো শোনা গেলো। এবারের কণ্ঠ বাঘীনির মত হিংস্র।
- মামা, আশি টাকা ভদ্রলোকরে ফেরত দেন।
টুক্কু চলে যাচ্ছিলো। ঘুরে গিয়েও চট করে দাড়ালো। আশি টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য না। মেয়েটার হঠাৎ পরিবর্তণ দেখে। এবার দুইজনেই অবাক। এক দোকানদার আরেক টুক্কু। খুব শীতল গলায় মেয়েটা বল্লো
- মামা আমি কি ভার্সিটির পোলাপানরে ফোন দিবো?
মামা কিছুটা ভয়, কিছুটা বিস্ময়ে টাকা ফেরত দিলো। দুইজনকেই অবাক করে রেখে মেয়েটা হাটা ধারলো।
এক হাতে চুড়ি, আরেক হাতে রবার্ট ফ্রষ্টের বই আর কানের দুল নিয়ে আরো কিছুক্ষণ টুক্কু ঘুরাঘুরি করলো। ঘুরেফিরে মেয়েটার কথা মাথায় আসছে। বয়সের দোষ। টুক্কু ভাবলো, স্বাভাবিক। এই বয়সে একটু আধটু এমন ফিলিংস হওয়াটা ব্যপার না। মেয়েটাকে ভালো লাগায় নিজের উপর বেশ খুশি। টুক্কু নিজের রুচির প্রশংসা করলো মনে মনে। একটু ব্যতিক্রমী মেয়ে। সবাই আজ বাসন্তী রং শাড়ী পড়লেও মেয়েটা পড়েছে ব্যতিক্রমী শাড়ী। কে জানে হয়ত মেয়েটার বাসন্তী রং শাড়ী নাই। যাক, না থাকাতেই ভালো হয়েছে। টি এস সির পাশের একটা দোকানে চায়ের অর্ডার দিয়েছিলো। গরম চা হাতে ঠান্ডা হলো। দোকানদার হাক দিয়ে বল্লো
- মামা চা তো শর্বত হয়া গেলো। আরেক কাপ দিমু গরম গরম?
এক চুমুকে ঠান্ডা চা খেয়ে একটু লজ্জিত হয়ে দোকানীকে টাকা দিয়ে টুক্কু বাসায় রওয়ানা হলো।
বাসায় এসে মনে হলো, আয় হায় সেতো গিয়েছিলো কাটাবনের উদ্দেশ্যে। বাড়ীওয়ালার মেয়েটার জন্য কচ্ছপ আনতে। গত কয়দিন ধরেই নীলান্তি নামের এই পরীর বাচ্চাটা টুক্কুকে দেখলেই বলে চাচ্চু কচ্ছপ।
ডিসকভারীতে এত কিছু দেখে সে, পছন্দ আটকে গেছে কচ্ছপে। তাও ভালো কুমিরে পছন্দ আটকায় নাই। ডিসকভারী যা শুরু করেছে। একটু পর পর গ্যাটার-বয় প্রমো।
টুক্কু সরাসরি বাসার দু'তলায় বাড়ীওয়ালার রুমে গেলো। দড়জা খুলে দিলো নীলান্তি। খুব দুষ্টু দুষ্টু একটা হাসি দিয়ে তাকিয়ে রইলো। টুক্কু নীলান্তির হাতে চুড়ি আর দুল দিলো।
নীলান্তির এই দিকে কোন আগ্রহই নাই। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো, চাচ্চু কচ্ছপ? তিন চার বছরের এই মেয়ে এত ঢং কোত্থেকে শিখলো কে জানে। টুক্কু টুক করে নীলান্তিকে কোলে নিয়ে একটা হাসি দিয়ে বল্লো, কচ্ছপ তো আনতে গিয়েছিলাম মামনি, কচ্ছপের তো আজ জ্বর। কচ্ছপ বলেছে, জ্বর সারলেই তোমার কাছে আসবে।
-০-
যদি হৃদয়ে লেখো নাম সে নাম রয়ে যাবে... গানটা শুনতে ইচ্ছা করছে টুক্কুর। ভালো একটা মোবাইল ফোন থাকলে সে গানটা শুনতে পারতো। সে উল্টে পাল্টে তার মোবাইল ফোনটি দেখতে থাকলো।
রান্না চড়াতে ইচ্ছা করছে না। সে শুয়ে শুয়ে কল্পনা করছে মান্নাদে কিভাবে শুরু করেছিলো গানটা? গানের আগে কি হুমমম... করে একটা টান ছিলো? সে নিজে নিজেই গুনগুন করা শুরু করলো
হুমমম... যদি কাগজে লেখো নাম কাগজ ছিড়ে যাবে, পাথরে লেখো নাম পাথর ক্ষয়ে যাবে...।
আচ্ছা মেয়েটার নাম কেন জিজ্ঞাসা করলোনা সে? বাবা যখন প্রায় অচল হয়ে গিয়েছিলেন তখন মুচকি হাসি দিয়ে বলতেন
- বুচ্ছিস টুক্কু, বয়স হইছে, বার্ধক্য কূলনাশিনী।
আচ্ছা বাবার যৌবনকালটা কেমন ছিলো? জিজ্ঞাসা করলে হয়ত বলতেন, বেটা, যৌবন হইলো ঘুমনাশিনী।
টুক্কু সারা রাত না ঘুমিয়ে সকাল বেলা অফিসে রওয়ানা হলো। অফিস বলতে একটা অনলাইন-শপ অফিস। অনার্সে পড়ে এমন দুই জন বন্ধু মিলে এরা একটা ব্যবসা দিয়েছে। ছেলেগুলা বেশ চটপটে। বড়লোকের সন্তান, এর পরেও কত উদ্দমী, কত পরিশ্রমী! ইন্টরভিউ বোর্ডেই টুক্কুর মনে হলো সে এখানে চাকরী করবে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো
- কেন আপনি এখানে জব করবেন?
টুক্কু উত্তরে বলেছিলো
- দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আমি বেকার, একটা জব আমার প্রয়োজন।
ইন্টারভিও বোর্ডের একজন হাসি দিয়ে বল্লো
- প্রথমটা?
- প্রথমটা হচ্ছে আপনাদের দেখেই মনে হচ্ছে আপনারা সফল হবেন। একটা সফল বিজনেসের শুরু থেকে সাথে আছি এই কথা বলার সুযোগ পাবো।
সেই থেকে টুক্কু আছে। বিশ্বস্ত ও কেন্দ্রিয় মানুষ হিসাবেই আছে। তার তেমন কোন চাহিদাও নাই। একটা পরিবারের মতই চলছে এই ব্যবসা। তেজকুনি পাড়ায় অফিস। আজ অফিস শেষ করেই সে শাহবাগের দিকে হাটা শুরু করলো।
প্রেমের আসলে উত্তাপ থাকে না। প্রেমের থাকে শীতলতা। সমস্ত শরীর, মন সবকিছুতে ছেয়ে যায় কেমন যেন একটা শীতল অনুভূতি। প্রকৃতিতেও কিন্তু বিষয়টা একই। শীতের কুয়াশায় প্রকৃতিকে যত প্রেমময় মনে হয়, শীতল একপশলা বৃষ্টিতে ধরণীটাকে যতটা মোহনীয় মনে হয় চৈত্রের ঝাঝা রোদে কিন্তু তেমনটা মনে হয় না। চৈত্রের রোদে থাকে কেমন যেন একটা দ্রোহ ভাব। প্রেমে দ্রোহ থাকে না, প্রেমে থাকে সমর্পণের আকুতি। ছিনিয়ে নেওয়াকে তাই প্রেম বলেনা, লুটিয়ে পড়াই প্রেমের ধর্ম। তারপরেও কেন "প্রেমের আগুনে, প্রেমের আগুনে..." টাইপ গান হয়েছে কে জানে।
টুক্কু তার শীতল হৃদয় নিয়ে টুকটুক করে হাটতে হাটতে আবার যাদুঘরের সামনে এসে দাড়ালো। সে একই পথে হেটে যাবে। সময়ের সাথে সাথে যে মুখটা এত করে মনে পড়ছে সে মুখের মায়া নিশ্চয়ই কম মায়া না।
"এ পথে আমি-যে গেছি বার বার, ভুলি নি তো এক দিনও" গুনগুন করতে করতে টুক্কু একই পথ ধরে আবার টিএসসির সেই চায়ের দোকানে গিয়ে দাড়ালো। দাড়িয়ে দাড়িয়ে সে পথচারী দেখছে।
আমাদের মস্তিষ্কে কিন্তু সুন্দর একটা ফিল্টারিং সিষ্টেম অটো দেয়া আছে। বিষয়টা টুক্কু খেয়াল করলো যখন সে দেখলো একটা নির্দিষ্ট উচ্চতার মেয়েদের দিকেই সে একটু বেশী করে মনযোগ দিয়ে দেখছে। এছাড়া আর কে কে কী করছে তা টুক্কুর মাথায় তেমন ঢুকছেনা। ধাতুর খনিতে এই প্রসেসটা খুব কাজে দেয়। নির্দিষ্ট কোন ধাতু চুম্বকের টানে কতটা সাড়া দেয় তার উপর ভিত্তি করে রানিং চেইন থেকে ঐ ধাতু আলাদা করা হয়।
শাড়ী পড়া একটা মেয়ে কি সুন্দর করেইনা ছেলেটার কনুইটা ধরেছে! ছেলেটা হাটছে ধীরে ধীরে, মেয়েটার দিকে একবারও তাকাচ্ছেনা। তবু কী সুন্দর যে লাগছে। ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে সে পেয়েছে। যা পেয়েছে তা সে ফিরে ফিরে তাকিয়ে দেখতে হবে না। যাকে পেয়েছে সে আছে তার সর্বান্তকরণে। সে আছে তার জগৎজুড়ে। এমন করেই হয়ত প্রেম ছড়িয়ে যায় ছোট্ট একটা দেহ থেকে ধরাধামে।
টুক্কু পাশ করে বের হয়েছে বছর খানেক হলো। ইউনিভার্সিটি লাইফেও তার এমন কোন পরিস্থিতি হয়নি যে সে প্রেমে পড়বে। এমন কারো সাথে দেখা হয়নি যাকে দেখেই হৃদয়ের ঘন্টা বেজে উঠবে। সুন্দর লেগেছে, সমর্পণের ইচ্ছা জাগেনি। ইলেক্ট্রিক তারে ধরলেই গায়ে শক লাগে না। সে তারে ইলেক্ট্রিসিটি থাকতে হয়। প্রেমও এমন, কেউ কাছে আসলে, পাশে চললেই যে প্রেম হবে তা না। উপরওয়ালার একটা ইলেকট্রিকের খেলা আছে এর মধ্যে। সবার মাঝেই ইলেক্ট্রিসিটি আছে, তা জন্মগত। কিন্তু কার ইলেক্ট্রিসিটি কাকে শক করবে তাতেই লুকিয়ে আছে প্রেম। তাতেই লুকিয়ে আছে প্রকৃতির একটা খেয়াল।
হঠাৎ করেই রিক্সায় হুড তোলা একটা মেয়েকে দেখে মনে হলো ঐ মেয়েটা। নিমিষের মধ্যেই রিক্সাটা চলে গেলো। আজ একটু জ্যাম পরতেও এত আপত্তি ঢাকা শহরে? এক মুহূর্তের জন্য টুক্কুর হাত পা অবশ হয়ে আসছিলো। একটা কেমন যেন চঞ্চলতা। একটা কেমন যেন শিহরণ। কে আসিছে বলে চমকিয়ে চাই, কাননে ডাকিলে পাখী'র মত একটা শিহরণ।
টুক্কু নিজেকে সান্তনা দিলো - নাহ এই মেয়ে সেই মেয়ে হতেই পারেনা। হুড তুলে রিক্সায় বসার মত মেয়ে সে না। সে হবে রুদ্দুরের মত, চিরায়ত; গ্রহণের মত আড়ালে পড়ার মত মেয়ে সে না।
অনেক্ষণ দাড়িয়ে থেকে সে বাসায় ফিরলো। গেট এ এসে মনে হলো, এ হে আজওতো কচ্ছপ আনা হয়নি। আজ গেইটেই নীলান্তি দাড়িয়ে আছে। টুক্কু অপরাধী চেহারায়, নিচের ঠোঁট ওল্টে মন খারাপ করে নীলান্তির সামনে দাড়ালো। নীলান্তি আচ চোখ খোঁচ করে জিজ্ঞাসা করলো, চাচ্চু আনো নাই কচ্ছপ? টুক্কু মাথা নাড়লো। এবার নীলান্তি বল্লো, তুমি যে গতদিন বলছিলা কচ্ছপের জ্বর, এইটা যে তুমি বানিয়ে বলছো আমি জানি।
টুক্কু নীলান্তিকে কোলে টেনে নিয়ে বল্লো, জানবেনই তো, আপনি তো বুড়ী মা, বুলি বুলি বুলি মা, ম্যা ম্যা ম্যা মা....। নাক দিয় খোঁচা দিতেই মেয়েটা খিলখিল করে হাসা শুরু করলো।
-০-
অফিসের কাজের চাপে কয়েকদিন তার যাওয়া হলো না শাহবাগে। কিন্তু মন পড়ে রইলো। কল্পনায় কত কাহিনী যে দাড়া হচ্ছে। কেবল মনে হচ্ছে, রাস্তায় দেখা হয়ে গেলো। চট করে সে বলবে - আরে আপনি! মেয়েটা তাকে চিনবে না। তখন কী কী বলে চেনাবে এইসব সে প্রায়ই ভাবে। ভাবে আর ভাবে।
আজ নীলান্তির কচ্ছপ কিনতেই হবে। টুক্কু সরারসরী হাটা ধরলো কাঁটাবনের দিকে। দরদাম করে দুইটা কচ্ছপও কিনলো। খালেবিলে হাজারে বিজারে থাকে এমন দুইটা কচ্ছপের ছানা দাম নিলো একশো টাকা! কচ্ছপগুলো একটা পানি ভার্তি পলিথিনে নিয়ে নিলো। একটা কাঁচের জারও কিনলো দুইশো টাকা দিয়ে। পালিথিনে বাঁধা কচ্ছপ আর হাতে জার নিয়ে কাঁটাবন মসজিদের সিগনালে দাড়িয়ে আছে।
প্রেম সবসময় মাথায় থাকে না, ব্যস্ততা থাকে, কাজ থাকে, সংসার থাকে। কিন্তু যখন মাথায় প্রেম থাকে তখন আর কিছুই থাকে না। সিগনালে দাড়িয়ে সে ভুলেই গেলো তার মাথায় ক'দিন ধরে একটা টাইট করে চুল বাঁধা, শাড়ীপড়া মেয়ে ঘুরঘুর করছিলো। সে অপেক্ষা করছে কখন সিগনালটা ছাড়বে। এমন সময় পাশ থেকে কণ্ঠ এলো, আরে আপনি!
হাতে এক গাদা বই, মাথার চুল উসকু খুসকু, শাদা চাদরের মত একটা উড়না পিঠের দিক থেকে ঘার ঘুরিয়ে দুই দিকে ফেলে রাখা। জামা কাপর, সাজগোজের দিকে যে তেমন কোন আগ্রহই নাই এই বিষয়টা স্পষ্ট। টুক্কু অনেক দিন দেখা হওয়ার এই দৃশ্যটা কল্পনা করেছে। এত বড় ঢাকা শহরে অপরিচিত কারো দ্বিতীয়বার দেখা পাওয়া ভাগ্যের বিষয়। এই ভাগ্য টুক্কুর সহায় হয়েছে। সে কি বলবে এখন? এত দিনের অপেক্ষা তার প্রশ্নে ফুঁটে উঠলো
- আপনার নাম টা কি বলেন তো!
মেয়েটা মুখের ভঙ্গিটা একটু স্পেশাল করলো। খুব ভাব নিয়ে ধীরে ধীরে বল্লো
- আমার নাম ন-ন্-দি-নী।
বলেই ফিক করে হেসে দিলো। সে তার নামটা নিয়ে বেশ গর্বিত বুঝা গেলো।
গাড়ীর সিগনাল এখনো পড়েনি। নন্দিনী খুব কসরত করে দুই হাতের বইগুলো এক হাতে নিলো। যে হাতটা ফাঁকা হলো এই হাতে টুক্কুর হাত থেকে কচ্ছপের পলিথিন টা নিলো। পলিথিনটা উপরে তুলে খুব হাসি হাসি মুখ করে ঢং করে কথা বলতে শুরু করলো কচ্ছপগুলার সাথে।
- টুইটই, টুকি টুকি... কোথায় যাস্ পুকিপুকি...
আবার নাক দিয়ে পলিথিনের উপর দিয়েই একটা কচ্ছপকে গুঁতোও দিলো।
হঠাৎ করেই ভ্রু কুঁচকে বল্লো
- এ্যাই আপনিতো আসলেই বেকুব!
- কেন আজ আবার কি করলাম?
- কচ্ছপতো দুইটাই আপনি পুরুষ নিয়ে আসছেন!
টুক্কু হঠাৎ করে কী বলবে খোঁজে পেলো না। সে বলতে চেয়েছিলো, কচ্ছপের পুরুষ,স্ত্রী কিভাবে চেনে? এই প্রশ্ন না করে সে বোকার মত জিজ্ঞাসা করলো
- কচ্ছপের আবার পুরুষ স্ত্রী আছে নাকি?
নন্দিনী কিছু বল্লো না, ভ্রু আর ঠোঁট দুটো কুঁচকে, মেকি রাগের ভাণ করে কড়া করে একটা শ্বান নিতে নিতে টুক্কুর দিকে তাকালো। টুক্কু ফিক করে হেসে দিলো।
- চলেন, কোন দোকান থেকে কিনছেন চলেন। চেঞ্জ করে আনতে হবে।
- থাক না, কী আর হবে?
- কী আর হবে মানে? মানুষের জীবনেই রোমান্স থাকবে? আর এদেরকে জোর করে ধরেও আনবেন, আবার রোমান্সেরও সুযোগ দিবেন না?
দোকানে গিয়ে কোন স্ত্রী কচ্ছপ পাওয়া গেলো না। আগামী দিন দিতে পারবে জানালো। যে দু্ইটা কেনা হয়েছিলো এ দুইটা নিয়েই এরা দোকান থেকে বেরিয়ে আসলো। একটা খালি রিক্সা দেখেই মেয়েটা খুব পরিচিত একটা মায়া মায়া কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলো
- মামা, জিগাতলা?
রিক্সাওয়ালা আস্তে করে সাইড করলো। নন্দিনী উঠে গেলো রিক্সায়। যখন চলে যাচ্ছে তখন সর্বহারা আকুতি দিয়ে টুক্কু বল্লো
-আপনার ফোন নাম্বার!
রিক্সা চলা শুরু করে দিয়েছিলো। নন্দিনী আস্তে করে রিক্সা ওয়ালার পিঠে হাত রেখে থামতে বল্লো। এতক্ষণে দুইজনের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব বেড়েই গেছে। টুক্কু দৌড়ে সামনে গেলো। হোঁচট খেয়ে কচ্ছপ পড়ে গেলো। পড়তে পড়তেও পড়লো না কাঁচের জারটা। নন্দিনী রিক্সা থেকে নেমে আসলো। কচ্ছপ দুইটা দুই দিকে দৌড় মারছে। দুইজনে দুইটা ধরে নিয়ে আসলো। নন্দিনী কচ্ছপটার দিকে দুষ্টদুষ্ট করে তাকিয়ে বল্লো, টুইটুই কুই যাও...? আর টুক্কুর দিকে মেকি রাগের ভঙ্গি করে বল্লো, জানতাম..., নেন নাম্বর নেন।
নাম্বারটা বলেই রিক্সায় উঠে চলে গেলো। টুক্কু তাকিয়ে রইলো, নন্দিনী একটাবার ফিরেও তাকালোনা। আচ্ছা নন্দিনীতো টুক্কুর নামই জিজ্ঞাসা করে নাই? ছেলেটার প্রতি কি কোনই আগ্রহ নেই তার? টুক্কু কি স্বখাত সলিলে ডুবে মরছে শ্যামা?
আজ বাসায় ফুরফুরে মন নিয়ে সে ফিরলো। নীলান্তির কচ্ছপ তাকে দিয়ে আসলো। নীলান্তির মা জিজ্ঞাসা করলো, চাচা ভাতিজি কী শুরু করছে এই সব? দুই জন ই শব্দহীন হাসি দিয়ে রইলো। ভাত খাওয়ার জন্য খুব করে ধরলো নিলান্তীর মা। টুক্কু আরো বড় একটা নিঃশব্দ হাসি দিয়ে বের হয়ে চলে আসলো। ছোটদের সাথে খাতিরে লিমিট রাখতে হয়না। বড়দের সাথে খাতিরে লিমিট রাখতে হয়। লিমিটের উপর আরো কয়েকটা লিমিট রাখতে হয়। ছোটরা খোটা দিতে জানে না, বড়রা খোটা দিয়ে কিভাবে হৃদয় ভাংতে হয় তা জানে। এই পরিবারের সবার সাথেই টুক্কু লিমিট রেখেই চলে।
আজ বাসায় এসে আবার গান শুরু করলো, হুম...যদি কাগজে লেখো নাম..। কিন্তু আজ গানের সুর গেলো বদলে। ডিসকো ডিসকো একটা ঝংকার নিয়ে সে মাথা সামনে পিছনে ঝাকিয়ে গাইছে.. হুমমম..ইয়ে..যদি.. কাগজে...।
আচ্ছা টুক্কুকে যে নন্দিনী বল্লো, জানতাম.... কী জানতো? সে যে ফোন নাম্বার চাইবে এই বিষয়টা? নাকি দৌড়ে সামনে আগাতে গিয়ে যে কচ্ছপ পড়ে যাবে এই বিষয়টা? যদি ফোন নাম্বার ইস্যু হয় তবে তো বিপদ! সে তো আর দশটা ছেলের মতই সহজে কমন ষ্ট্রাকচারে পড়ে গেলো। মেয়েরা সব পুরুষকেই আগে ভয়ের নজরে দেখে। এই ভয় এদের আদিম ভয়। মেয়েদের ভয় পুরুষের প্রতি যতটা কেটে যায় ততটাই ভালোবাসা জাগে উঠে। পুরুষের ক্ষেত্রে তা উল্টো, প্রথমেই ভালোলাগা কাজ করে। ধীরে ধীরে মেয়েদের ভালোবাসায় গড়ে উঠা অভিযোগ অনুযোগে পুরুষের ভয় বেড়ে যেতে থাকে। ভালো কথাটা জিজ্ঞাসা করলেও তখন ভয়ে কেঁপে উঠে বাবে, আয় হায় আবার কি নিয়ে এখন অভিযোগ দিবে?
আধা ঘন্টার কথোপকথনে কত কিছুই যে কমতি রয়ে গেলো! আরে, আসল জিনিসটাইতো জিজ্ঞাসা করা হয়নি। কচ্ছপ ছেলে না মেয়ে তা বুঝে কিভাবে তাই তো জিজ্ঞাসা করা হয়নি!
ফোন নাম্বারটা তো আছে, জিজ্ঞাসা করাই যায়। কিন্তু ফোন দিতে কেনম যেন অস্বস্তি লাগছে। কি না কি মনে করে! টুক্কু মানুষ কেমন তা সে জানে, নন্দিনীতো আর আধা ঘন্টার পরিচয়ে জানবে না? তারউপর আবার নন্দিনী মনে হচ্ছে কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলেছিলো, জানতাম!
যত যা ই নন্দিনী জানুক। টুক্কু যে নাম্বার পেয়েও ফোন দিবে না তা তো আর নন্দিনী জানতো না! অতএব টুক্কুকে যেমনটা ভেবে বলেছিলো, "জানতাম" টুক্কু যে এই ভাবনার চেয়ে একটু আলাদা তা সে প্রামন করে দিবে। অবশ্য দৌড় দিতে গিয়ে যে কচ্ছপ পড়ে যাবে এই টা নন্দিনী জানতো তা ওতো হতে পারে! উফ... এত জটিল কেন জীবনে প্যাঁচ? নারী-পুরুষের মিল হবে, সংসার হবে, বাজর করা, ঘুরতে যাওয়া, বাচ্চাকাচ্চা হওয়া, একদিন বুড়ো হয়ে মরে যাওয়া এইসব হবে। কিন্তু এমন প্যাঁচ কেন হবে?
-০-
আজ আবারো কাঁটা বনে যাওয়া হলো। মেয়ে কচ্ছপ এই দোকানে পাওয়া গেলো না। আরেক দোকানদারের কাছ থেকে দুইটা মেয়ে কচ্ছপ নিলো টুক্কু। এই দুইটাও মেয়ে কি না কে জানে। দামতো নিলো দুইটার জন্য মাত্র চল্লিশ টাকা। কচ্ছপকূল কি মানবকূল থেকে ভিন্ন? ছেলে কচ্ছপগুলোর দামতো গতদিন রেখেছিলো একশো টাকা। আসলে বিষয়টা তা না, গতদিন তার কাছ থেকে দাম বেশী রেখেছিলো।
কচ্ছপ নিয়ে সে ফিরছ আর ভাবছে, আজও যদি এমন করে দেখা হয়ে যেতো! মানুষে মানুষে রাস্তায় দেখা হওয়ার প্রবাবিলিটি নিশ্চয়ই এত বেশী না যে প্রতিদন একই জায়গায় দেখ হয়ে যাবে। সে ইচ্ছা করে দুই তিনটা সিগনাল পার হলো না। কাঁটাবন মসজিদের পাশে দাড়িয়েই রইলো। কি মনে করে যেন সিগনাল পার হলো না, হাটা শুরু করলো টিএসসির দিকে। একটু পরপর পলিথিন উঁচিয়ে দেখছে চেনার আদৌ কোন উপায় আছে কি না, কচ্ছপগুলো ছেলে না মেয়ে। নাহ, কোন লক্ষণইতো নাই।
ঠিক যখন যাদুঘরের সামনে তখন আবার পাশ থেকে কণ্ঠ, এ্যাই... সমস্যা কি আপনার? পাগলের মত একটু পর পর কী দেখছেন পলিথন উঁচা করে?
ধরা খাওয়া টাইপ একটা বাচ্চা বাচ্চা হাসি দিয়ে টুক্কু বল্লো
- আরে আপনি! কচ্ছপ দুইটা ছেলে না মেয়ে তা বুঝার চেষ্টা করছি।
নন্দিনী পলিথিনটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ স্থির হয়ে রইলো। মুচকি হাসি অনেক্ষণ ধরে রেখে পরে খিক খিক খিক করে হাসি শুরু করলো
- আইজও আপনি পুরুষ কচ্ছপই আনছেন!
- কিভাবে চেনেন?
নন্দিনী ভ্রু নাচিয়ে বল্লো
-হুমহুম বলা যাবে না। নাথিং ইজ ফ্রি ইন দিস ওয়ার্লড। চা খাওয়ান তবেই বলি।
ছবির হাটে চা খেতে ঢুকলো। ঢুকেই নন্দিনী হাক ছাড়লো
- পোটলা দুই কাপ চা দে। বিল তোর এই মামা দিবে।
পটলা চা নিয়ে এলো, বিল কে দিবে এই বিষয়ে পোটলার কোন আগ্রহ দেখা গেলো না। সে নন্দিনীর জন্য চা নিয়ে এসেছে এদেই তার প্রায় বত্রিশটা দাত ওপেন হয়ে রইলো। টুক্কু একটু আগ্রহ নিয়েই জানতে চাইলো
- ওর নাম কি পোটলা?
- এ্যাঁহ পোটলা কারো নাম হইতে শুনছেন? আমি আদর করে ওরে পোটলা ডাকি। নাম দেওয়ার আমার স্বভাব আছে।
দাত না দেখিয়ে ইই করে একটা হাসি দিলো টুক্কু। নন্দিনী ফিক করে হাসি দিয়ে বল্লো
- আপনাকে তো প্রথম দিনই একটা নাম দিয়েছি, বেকুব।
- টুক্কুর আনন্দ এবার পোটলার চেয়ে কোন অংশে কম মনে হলো না।
- দেখেন দুলওয়ালা আপনাকে ঠকাইলো, কচ্ছপওয়ালা ঠকাইলো। বেকুব না হইলে কেউ এত ঠকে?
- ঠকি না, সমস্যা কই? যে ঠকাচ্ছে তাকেও আমার ঠক মনে হচ্ছে না। নিজে আমি ঠকেছি বলে মনেও হয় না। সংসারটা এমনই।
- বাহ বা, বেকুবনাথ ব্রহ্মচারী, হি হি হি।
এবার টুক্কুর হাত থেকে কচ্ছপের পলিথিনটা নিয়ে নন্দিনী উঁচা করে ধরলো।
- দেখেন, সহজভাবে চিনতে গেলে, কচ্ছপের ল্যাজটা যদি লম্বা এবং মোটা হয় তাহলে এইটা ছেলে। আর উল্টায়ে দেখতে হবে ল্যাজের ক্লোয়াকা কতটা দূরে। যদি বেশী দূরে হয় তাহলে ছেলে, আর যদি কাছে হয় তো মেয়ে।
টুক্কু আগ্রহ ভরে জানতে চাইলো, ক্লোয়াকা কী?
এবার নন্দিনী দুষ্ট দুষ্ট একটা হাসি দিয়ে বল্লো
- জ্বী না জনাব এত কিছু বলা যাবে না, নো ইউরসেলভ।
চা শেষ হয়ে গেলো। টুক্কু কোন কথা খোঁজে পাচ্ছে না। আশেপাশে কি কোন গাছে শিমুল ফুটেছে? নাকি নন্দিনী কোন পারফিউম দিয়েছে? গন্ধটায় কেমন যেন একটা নেশা নেশা আছে। সে শেষ হওয়া চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে রইলো। কথা শুরু করলো নন্দিনী
- খুব তো একটা পাট নিলেন গত দিন!
- কে?
- কে আবার, আপনি!
- কখন?
- ফোন নাম্বার নিলেন, কই কল তো করলেন না!
টুক্কু কী বলবে ভেবে পেলো না। নন্দিনী বল্লো
- দেখেন মিষ্টার বেকুব, আমার সাথে এমন মানসিক খেলা খেলে লাভ হবে না। এই ফালতু খেলাগুলো দিয়ে আমি বহুবার গিয়েছি। নতুন করে এইগুলো নতুন কোন ভ্যালু আ্যাড করে না, উল্টা বিরক্তই লাগে।
এই কথাগুলো বলতে বলতে মেয়েটার মন খারাপ হয়ে গেলো। টুক্কুর কাছে খুবই খারাপ লাগছে। নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে। সে এই মেয়েটার মন ভালো করার জন্য সব করতে পারবে, সব।
টুক্কু ছোটখাটো বিষয়গুলো নিয়ে খুব ভাবে। কনভোক্যাশন যখন হলো, তখন মাননীয় প্রেসিডেন্টের সামনে দাড়িয়ে হঠাৎ করেই মনে হলো, আ্য.... করে একটা চিল্লান দিলে এখন কী হবে? এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে নন্দিনীর হাত ধরে সে বলে, নন্দিনী!
ব্যাস এটুকুই বলতে ইচ্ছা করছে, নন্দিনী। আর কিচ্ছু না, বাকী যা বুঝার তা এই হাত দুটোই ঐ হাতকে বুঝাবে। মুখের ভাষার চেয়ে এই হাতের ভাষা অনেক বেশী সহজ, অনেক বেশী সুন্দর, অনেক বেশী কাব্যিক।
হঠাৎ করেই নন্দিনী উঠে গেলো। কিচ্ছু না বলে হন হন করে হাটা ধরলো। সামনে গিয়েই একটা রিক্সায় চড়ে বসলো। কিছু কি করেছে টুক্কু? এই সিচুয়েশনগুলোর নিয়ন্ত্রনের কি অন্য কোন ভাষা আছে। অন্য কোন উপায়?
-০-
©somewhere in net ltd.