![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
"ধক্" বিষয়টার সাথে ছোটনের পরিচয় হয়েছে কিছুদিন হলো।
সে ক্লাশ নাইনে পড়ে। ক্লাশের রওশন মেয়েটার দিকে তাকাতেই বুকের একেবারে কেন্দ্রে এই ঘটনাটা ঘটে। অনেকটা ঢোলের বারির মত, ধক্।
সে কয়দিন ধরে চুপি চুপি ঘাড় না ঘুড়িয়ে চোখটা শুধু ঘোরাচ্ছে। এমন ভাবে ঘুড়াচ্ছে যেন রওশনকে দেখা যায়। রওশনকে দেখা যতটা রোমাঞ্চের ততটা ভয় হলো কেউ দেখে ফেলে কি না। কেউ তো কেউ একদিন স্বয়ং রওশনের চোখেচোখ পড়ে গেলো! ঘটনাটা প্রথম ঘন্টায়। একেবারে শেষ ঘন্টা পর্যন্ত সে ওই দিকে তাকায়ইনি। অষ্টম ঘন্টায় যখন ছুটি হয় হয় তখন টুক করে একটাবার তাকিয়েছিলো। তখনও চোখে চোখ পড়ে গেলো। রওশন ফিক করে হেসে দিয়েছিলো। এই হাসি মোটেও পাত্তা দেওয়া হাসি না। তুই হাবলু আমার দিকে তাকিয়ে আছস কেন টাইপ হাসি। তবু কি যে ভালো লাগলো ছোটনের!
সে বাড়ী ফিরার পথে একটা গোলাপ ফুলের টব কিনে বাসায় ফিরলো। ছোটনের বোন সায়রা এতে বেশ মজা পেয়েছে।
- কি রে ছোটন হঠাৎ ফুলগাছ কেন?
- আপু বাগান করবো।
- তো বাগান কি এক ফুল গাছে হয়? চাড়া আনতি অনেকগুলান।
ছোটন কোন উত্তর দিলো না। তার একটু লজ্জা লাগছে। পড়ার টেবিলের উপরে নিয়ে টবটা সে রেখে দিলো।
ছোটনের ভাগ্নের নাম পুটু। নাম ছোট কিন্তু দুষ্টামিতে বিশাল উস্তাদ। পুটু কাজগ ছেড়া খুব পছন্দ করে। আপু কিছুতেই কাগদ দিবে না। ছোটন গোপনে বাসার পুরনো পেপার পুটুকে ছিড়তে দেয়। কিন্তু আজ পুটুর নজরে পড়েছে গোলাপ গাছ। সে গোলাপ গাছের পাতা ছিড়বে। সে টেবিলে উঠতে পারে না। তার হিসু করার পট এনে রেখেছে টেবিলের পাশে। এর উপর দাড়া হয়ে টেবিলে কিভাবে উঠা যায় এই বুদ্ধি সে করছে। ছোটন ছিলো বাথরুমে। ফিরে এসে এই কীর্তি দেখে তার মহা মেজাজ গরম হয়েছে। পুটুকে ফুটু করে ফেলবে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়েছে তার দিকে।
পুটু স্মার্ট ছেলে। সে তার মায়ের কাছে গিয়ে কেঁদে একাকার। ঘটনা হলো তাকে মামা মেরেছে। শুধু মেরেছে বলেই সে ক্ষান্ত হয়নি। তাকে এম্নে এম্নে মেরেছে বরে দেখালোও। পুটুকে শান্ত করার জন্যই সায়রা বকুনি দিলো ছোটনকে। ছোটন রাতে না খেয়েই শুয়ে পড়লো। শুয়েই মনে হলো, আয়হায় ফুল গাছ তো টেবিলে! যদি ছিড়ে ফেলে! কিন্তু ছোটন তো রাগ করে আছে এই অবস্থায় তো সে ফুলগাছ নিয়ে কিছু করতেও পারবে না। ছোটনের সারা রাত গেলো টেনশানে, পুটু তার গাছ ছিড়ে ফেলে কি না। আর সায়রাও সারা রাত না খেয়েই কাটিয়ে দিলো। মা বাবা মরা ভাইটাকে বকেছে বলে।
সকাল বেলা সায়রা চিন্তা করলো একটু তো ভাব করতে হয়।
- ছোটন তোর ফুল গাছ কই?
- টেবিলে আপু
- ঘরের ভিতর কি ফুল গাছ হয়রে পাগল! যা নিয়ে আয় রোদে দিয়ে দে।
ছোটন যে এই কথা ভাবেনি তা না। কিন্তু ভয় পেয়েছে যদি পুটু পাতা ছিড়ে ফেলে। বিষয়টা মনে হয় সায়রা ধরতে পেরেছে। সুন্দর একটা হাসি দিয়ে বল্লো
- যায় ঘর থেকে টব টা নায়ে আয়। আমি বারান্দায় উপরে বেঁধে দিচ্ছি। ওই খানে পুটু নাগাল পাবে না।
ছোটন আজ বুদ্ধি করে পিছনের বেঞ্চে বসেছে। সে ভালো ছাত্র, টিচাররা এসে তাকে প্রথম বেঞ্চে না দেখে একটু অবাকই হয়েছে
- কি ছোটন তুমি আজ পিছনে কেন?
ছোটন উত্তর দেয়নি। একটু লজ্জিত হাসি হেসেছে।
ছোটন আজ ইচ্ছা হলেই রওশনকে দেখতে পারছে। যদিও রওশন বসেছে মেয়েদের দুই নম্বার রো তে। তবু পিছনে থেকে রওশনের বেণী দেখা যাচ্ছে। এমনকি ফর্সা কানের উপর সোনালি চুলগুলোও বুঝা যাচ্ছে। আজ ছোটনের বুকে ধক্ করছে না। কেমন যেন একটা প্রশান্তি ছেয়ে যাচ্ছে। আহা...
আজ বাসায় এসেই সে ফুল গাছে পানি দেওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে গেলো। সায়রা আপু মুচকি হাসি দিলো ছোটনের এই কান্ড দেখে। এই হাসিটাও একটু সন্দেহজনক ছোটনের কাছে। আপু কি কিছু টের পাচ্ছে? একটু খারাপ লাগছে এই ভেবে, আপু কি সুন্দর করে মায়া মায়া একটা মুচকি হাসি দিচ্ছে। আর রওশনের হাসিটা একেবারেই কেমন যেন। ছোটন ভলো ছাত্র। সব ভালো ছাত্ররাই কি বোকা হয়!
ছোটন মনে মনে ঠিক করেছে যেদিন এই গাছে ফুল ফুটবে সেদিন সে এই ফুল হাতে নিয়ে রওশনকে প্রপোজ করবে।
এরপর এমন করে বেশ কিছুদিন গেলো। একটু একটু করে রাতের ঘুম কমে যাওয়া। দিনের সক কাজে কর্মে ঘুরে ফিরে রওশনের কথা মাথায় আসা। এই উঠতি বয়সে যা যা হয় সব কিছুর মধ্য দিয়েই এই ছেলেটা গেলো।
ছোটনের গাছে কলি ধরেছে। সে অপেক্ষায় আছে কবে কলি থেকে ফুল হবে। কিন্তু এদিক দিয়ে একটা সমস্যাও হয়েছে, রওশন স্কুলে আসছেনা। যাক হয়ত ছুটিতে কোথাও গিয়েছে।
-০-
পরিশেষে
একদিন পুটুর হাতে ছোটনের গাছের ফুল। সায়রা খুবই ভয় পেয়েছে। আহ হায় পুটু বারান্দার এত উপর থেকে কিভাবে ফুল ছিড়ে আনলো! ছোটন আজ বাসায় ফিরলে খবর আছে। অবাক হয়ে জানতে চাইলো
- বাবন সোনা ফুল ছিড়লে কিভাবে?
- আমি থিলিনি, মামা দিয়েতে।
মামা দিয়েছে! ঘটনা কী?
ছোটনের ঘর অন্ধকার। এমন সময় মোবাইলে একটা ফোন এলো। ওপাশ থেকে পরিচিত কেউ একজন বল্লো
- সায়রা জাসন নাকি, ছোটনের স্কুলের এক মেয়ে প্রেম করতো পাড়ার এক ছেলের সাথে। সে তো এই মেয়ের ভিডিও ছড়ায়ে দিয়েছে। মেয়েটার জীবনটা শেষ।
সায়রা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেল্লো। দুই এ দুই এ চার হয়েছে। ছোটন ছেলেটার জন্য তার ভিতরটা হুহু করে কেঁদে উঠলো। আহারে বাপ মা মরা ছোট্ট এই ভাইটা তার। ছোটনের রুমে ঢুকে সায়রা লাইট জ্বালালো না। অন্য একটা ভুবনের মায়ার ক্ষমতা উপরওয়ালা মেয়েদের দিয়েছেন। এর সমস্তটুকু ঢেলে ছোটনের মাথায় হাত রেখে ভাইটাকে আদর করে ডাকলো
- ছোটন
ছোটন ফ্লোরে বসে খাটে মাথা রেখে চাপা স্বরে কাঁদছিলো। বোনের মমতায় সে কান্নায় আগুনে যেন ঘি পড়লো। আপুকে জড়ায়ে ধরে ছোট্ট এই ছেলেটা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না শুরু করলো।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৮
নিলু বলেছেন: লিখে যান