নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী তুমি নরের সমান নও বরং ...

০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:১৩

- ক্যামনে দিবা জানি না, তুমি দিবা।

এই কমন কথাটা ছিলো রাগের কথা, জেদ এর কথা। এই রাগ, জেদ আমার মা সারা জীবন পুরণ করে এসেছেন। একবার ঘুড়ি কিনবো। মা'র কাছে টাকা নাই। শুরু হইলো, তুমি দিবা না? বলো, দিবা না?



পরে রাগের মাথায় হাতে লাঠি নিলাম। মা'র মাটির বড় বড় পাতিল একটা একটা করে ভাঙ্গা শুরু করলাম। আমার প্রিয় এমন করলে আমি কী করবো জানিনা। তবে মা সেদিন বাবা আমার, সোনা আমার বলে আমাকে থামালেন। বল্লেন

- বাবা, গাছে পেয়ারা আছে। বাজারে নিয়া বেচতে পারবি?

আমি বাজারে নিয়ে বেচবো পেয়ারা! একটা আত্মসম্মান আছে না? আমার রাগে আরো বাড়লো। মা আমার চেহারার দিকে তাকায়ে বল্লেন

- আচ্ছা যা, আমি ব্যবস্থা করতেছি।

মা এলাকার বিচ্ছু বাহিনী দিয়ে পেয়ারা পাড়ালেন। বাজারে বিক্রি করলেন। আমাকে ঘুড়ি কিনার টাকা দিলেন।



মা আমার গৃহিনী ছিলেন। আব্বা কোনদিনই মা'র হাতে টাকা দিতে পারেন নাই। স্কুল শিক্ষক বাবা সংসার চালাতেই হিমসিম খান। মা'র হাতে টাকা কিভাবে দিবেন?



অথচ আব্বাকে এত ভয় পেতাম! কোন দিন আব্বার কাছে কিছু চাওয়ার সাহস হয় নাই। চাওয়া মানে, মা। রাগ করা মানে মা'র কাছে। রাগের মাথায় কোন কিছু ভাঙ্গা মানে মা'র জিনিসপত্র ভাঙ্গা। ধমকাধমকি করা মানে মা। হুমকি দেওয়া মানে মা।



মা মাথায় তেল দিয়ে চুল টেনে দিতেন। তেল দেওয়া আমার পছন্দ না। তেল দিতে গেলেই বলতাম

- তেল দিবো না। যদি তেল দিতে দেই তো কী দিবা কও।

মা ঘুস হিসাবে এইটা, ওইটা দিতেন। এর পর মাথায় তেল দিয়ে দিতেন।



বড় হইলাম। আব্বার সাথে যুক্তি দিয়ে কথা বলতে ভয় পাই। আব্বার উপরের সব রাগ যুক্তি দিয়ে ঝাড়ি, তা ও মার কাছেই। আমার মা দুই পক্ষের উকিল হিসাবে কাজ করেন।



মা চলে গেলেন ডিসেম্বর এর ৩১ তারিখ। কোনদিন মা'কে বলা হয় নাই, মা তোমারে ভালোবাসি।

-০-



বিয়ে করলাম। সংসারের বাজার খরচটা পর্যন্ত আমি করতে পারি না। প্রিয়'র মা সব করেন। ভাত খেতে বসলে কমন ঘটনা হলো - বোন প্লেট, আর ঠান্ডা পানি থাকবে না। হুমকি দিয়ে বলি

- পাঁচ বছর সংসার করলা, বোন প্লেট আর পানি দিতে শিখলা না?

গিন্নি মাঝেমাঝে বলেন

- এইটা একটু নিজে নিতে পারো না?

আমি এমন একটা লুক দেই! যদি আমিই নিবো, তো তুমি কী করবা?



প্রিয়কে আদর করি। কিন্তু পাঁচ মিনিট কোলে রেখেই ক্লান্ত হয়ে যাই। এমন বাতুরবাতুর করে! বাপরে বাপ। হুমকি দিয়ে বলি

- সেই যে প্রিয়রে দিয়া গেলা আর নেওয়ার নাম নাই।



সংসারে মাসের শুরুতে প্রিয়'র মায়ের কাছে টাকা দিয়ে দেই। এরপর আমি সংসারের অতিথি। যাবতীয় ঝামেলা সব গিন্নির।



এর পরেও গিন্নিকে বলা হয় না, তুমি তো সংসারের জন্য অনেক করো।



মানুষ অতীত থেকে শিখে। তাই গিন্নির হাতে সব সময় আমি সমস্ত টাকা দিয়ে রাখি। তার সংসার সে যেভাবে ভালো মনে করবে চালাবে। প্রিয়'র জন্য যা দরকার তা কিনবে। প্রিয় বড় হলে সে যা চাইবে তা দেওয়ার মত মনে হলে দিবে।

-০-

কালচার বলতেওতো একটা বিষয় আছে। যা আমরা দেখে দেখে বড় হয়েছি। হঠাৎ করেই তা বদলানো সম্ভবনা। দেখতেও কটু লাগে। কথায় কথায় এখন গিন্নিকেও বলা সম্ভব না, হানি আই লাভ ইউ। কিন্তু বলাটা দরকার, খুব দরকার। আপাতত যা মুখে বলতে পারছি না, তা কাজে অন্তত বলার চেষ্টা করছি।



নারী মানে সংসাররের আশ্রয়। খটমট ভাষায় বলতে গেলে সংসার-জাহ্নবী। নারী ভালো নাই মানে সংসারের আশ্রয়স্থলটাই ভালো নাই। আর সেই সংসারে শুধু পুরুষই থাকে না। সে সংসারে থাকি আমরা সবাই। আর এখানেই নারী দিবসের প্রয়োজনটা এত বেশী। বছরে অন্তত একটা দিনে এসে পুরনো অবহেলাগুলোর ক্ষমা চেয়ে নিতে পারা। নতুন উদ্দমে আবার সম্মান, ভালোবাসাটা দিতে জানা। নারী তুমি নরের সমান নও বরং তুমি আরো বেশী আদরের, আরো বেশী সম্মানের, আরো বেশী ভালোবাসার ধন।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৩০

এম এ কাশেম বলেছেন: মায়ের কবরে গিয়ে জিয়ারট করেন ভাই
আর চুপি চুপি বলেন - মা , আমি তোমায় ভালবাসি
আর আল্লাহর কাছেই মায়ের মাগফেরাত কামনা করেন।

আল্লাহ আপ[নাকে ধৈর্য ধরার তাওফিক দিন।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:৩১

আনিসুল ইসলাম বলেছেন: নারী তুমি নরের সমান নও বরং তুমি আরো বেশী আদরের, আরো বেশী সম্মানের, আরো বেশী ভালোবাসার ধন।

অসাধারণ লিখেছেন।

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:১১

কাবিল বলেছেন: নারী মানে সংসাররের আশ্রয়। খটমট ভাষায় বলতে গেলে সংসার-জাহ্নবী। নারী ভালো নাই মানে সংসারের আশ্রয়স্থলটাই ভালো নাই।

খুব ভাল লাগল।

আল্লাহর কাছে আপনার মায়ের মাগফেরাত কামনা করছি।
ভাল থাকুন।

৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯

মারুফ মুনজির বলেছেন: আজ অফিসে এসে ১০ টার মতো পত্রিকা পড়লাম, আজ নারী দিবস হিসেবে নারীদের নিয়ে প্রচুর লেখা, গবেষনা রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, সফল নারীদের গল্পও প্রকাশিত হয়েছে অনেক, তার মধ্যে বনিক বার্তার প্রধান নিউজটা আমার ভালো লেগেছে, বাংলাদেশের সফল ১০ নারীর জীবন নিয়ে রিপোর্ট, এই রিপোর্ট পড়ার পর কিছু প্রশ্ন মাথায় এসেছে যা আমি নিউজ পরে জানতে পারিনি, জানা থাকলে জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন
১.এই সফল নারীরা কি বিয়ে করেছেন, তাদের স্বামীদের পেশা কি, তাদের দাম্পত্য সম্পর্ক কেমন ছিলো, এসব নারীরা কিভাবে এই সম্পর্ক ম্যানেজ করতেন, তাদের স্বামীদের কি ভুমিকা ছিলো, সেটা কতটা ইতিবাচক কতটা নেতিবাচক, নেতিবাচক হলে কিভাবে ম্যানেজ করেছেন। মোট কথা পারিবারিক জীবন কেমন ছিলো।
২. এসব নারীরা পরিবারে কিভাবে সময় ম্যানেজ করতেন, এদের কয়টা করে ছেলে মেয়ে রয়েছে, তাদের সন্তানরা কি কি করেন, তাদের সন্তানরা কি ভালোভাবে গড়ে উঠেছে নাকি স্পয়েল হয়েছে, যদি ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে তাহলে কিভাবে সেটা ম্যানেজ করেছেন, এই সন্তান লালন পালনে তাদের স্বামীদের কি ভুমিকা ছিলো।
৩. এই সফল নারীদের অর্থনেতিক হিসেব কেমন ছিলো, তাদের সম্পত্তি কিভাবে খরচ করেছেন।
৪. পরিবারে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতেন কিভাবে, স্বামী ও তার পরিবার এই পারস্পারিক দুই পরিবারের সদস্যদের সাথে কিভাবে সম্পর্ক ম্যানেজ করতেন।
৫. এই সকল সফল নারীদের কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ কেমন ছিলো, তাদের কলিগদের কি ধরনের ভুমিকা ছিলো, এই পর্যন্ত উঠে আসায় তাদের কি কি চ্যালেঞ্জ ছিলো।
৬. এরা যদি কেউ অবিবাহিত বা ডিভোর্সি হয়ে থাকেন তাহলে তাদের এ পর্যন্ত জীবন কিভাবে পরিচালনা করেছেন।
৭. এই সফলদের জীবনের এই বেলায় এসে জীবন সম্পর্ক ধারনা কি, তারা কি জীবনে ভুল করেছেন, নাকি সঠিক করেছেন।

০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১১

সুখী মানুষ বলেছেন: ভাইজান, এই লেখা কি আমার লেখার মন্তব্য? ;)
এনিওয়ে, আমি এর উত্তর দেওয়ার মত যোগ্য লোক নই। যদি কোনটার উত্তর জানি মনে হয়, তবে পুরনো ব্লগ ঘেটে এসে উত্তর দিবো কোন একদিন হয়ত।

ধন্যবাদ।

৫| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:১৬

শায়মা বলেছেন: বাহ ভাইয়া!!!!!!!

:)

৬| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:২৯

যুগল শব্দ বলেছেন:
সম্মান_ভালোবাসা জানানো অথবা
ক্ষমা চাওয়ার জন্য একটি একটি দিন যথেষ্ট নয়!

ভালোলাগা রইল ভাইজান, ++

৭| ১১ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:০০

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন: দারুন লিখেছেন । সত্যি বললে আমিও সব কিছু মা'র উপর ঝাড়ি । কিনতু বলতে পারি না , মা তোমাকে োনেক ভালবাসি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.