নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তবু যে রাজনীতির কথাই বলতে হয়

২২ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:০৭

সিঙ্গাপুরের এক শপিংমলে ঘুরছি। সুন্দরী সেলস গার্ল। মেয়েটা এত সুন্দর যে তার দিকে সরাসরি তাকাতে লজ্জা লাগছে। হঠাৎ করে সে নিজেই আমাকে জিজ্ঞেস করলো- ইউ ফ্রম বাংলাদেশ?

সুরেলা কণ্ঠ যাকে বলে। না তাকিয়ে কি পারা যায়? একগাল হেসে বললাম- এত শিওর কিভাবে হলে? আমার চেহারাতো শ্রীলঙ্কানদের মতো কালো। অন্তত ইন্ডিয়ানওতো বলতে পারতে।

মেয়েটা চরম আত্মবিশ্বাস নিয়ে বললো- আমি মানুষ চিনি।

টুকটাক কথা বলা শুরু করলাম। তবু যে রাজনীতির কথাই বলতে হয়
এখন তাকে সুন্দরী মনে হচ্ছে কম, জ্ঞানী মনে হচ্ছে বেশি। খুব আন্তরিকতার সাথে বলল- তোমরা বাংলাদেশিরা খুব ভালো।

আমি মজা করে বললাম- রাজনীতিবিদরা ছাড়া। সে আরো মজার মানুষ। বাম হাতটাকে সুন্দর করে একটা ঝাঁকি দিয়ে বলল- ছাড়ো, দুনিয়ার সব রাজনীতিবিদরাই এক।

গল্প জমে উঠছে কেনাকাটা করতে এসে। বললাম- তোমার দেশের রাজনীতিবিদরা!

সে আবারো আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলল- দে অল আর সেম ওয়ার্ল্ডওয়াইড।

আমি মনে করতাম, আমরা বাংলাদেশিরাই রাজনীতিতে বিরক্ত। সিঙ্গাপুরের মতো এমন উন্নত একটা দেশের নাগরিকেরও দেখি একই বিরক্তি! মেয়েটা খুব যুক্তি দিয়ে কথা বলে। বলল- দেখো, সিঙ্গাপুর দেশটা ছোট, মানুষজন তোমাদের তুলনায় কম। তাই দেশটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ। আর যেহেতু আইনটা একটু কড়াকড়ি তাই শৃঙ্খলা সব জায়গায়।

মনে পড়লো, বহু বছর আগে এক আমেরিকান ভদ্রলোকের সাথে কথা বলছিলাম। জিম নামের সেই ভদ্রলোকও বলেছিলেন- রাজনীতি নিজেই হচ্ছে একটা সমস্যা। অথচ দুঃখের কথা হলো রাজনীতি ছাড়া দেশ চলে না।

দোকান থেকে বের হয়ে যাচ্ছি। একটু আগ্রহ নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম- তুমি বাংলাদেশ সম্পর্কে এত কিছু জানো কিভাবে?

মেয়েটা যথেষ্ট চটপটে। আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো- আমি তোমাদের গুলিস্তান, নওয়াবপুর, সদরঘাট- এইসব জায়গার নামও জানি।

মেয়েটা আমাকে যতটা অবাক করতে চেয়েছিল ততটা অবাক আমি হলাম। বত্রিশ পাটি দাঁত বের কলে বললাম- কিভাবে?

সে খুব সহজ করে উত্তর দিলো- মানুষজন আসে, আমি কথা বলি, এইভাবে। সিঙ্গাপুরে তোমাদের দেশ থেকে অনেক নির্মাণশ্রমিক আসে।

আমি একটু বাঁকা হাসি দিয়ে বললাম- তোমাদের সিঙ্গাপুরটা আমরাই তৈরি করে দিচ্ছি তাই না!

মেয়েটা যথেষ্ট বিনয়ী এবং রসবোধসম্পন্ন। উল্টো হাসি দিয়ে বলল- হ্যাঁ, তোমরা সিঙ্গাপুর তৈরি করে দিচ্ছো।

আরেকটা স্মৃতি বলি।

আমি আর আমার স্ত্রী নেপালে ঘুরতে গিয়েছি। কাঠমান্ডুর পথে পথে গল্প করছি আর হাঁটছি। পেছন দিক থেকে আসা একটা শব্দে আমাদের গল্পে ছেদ পড়ে- আপনারা বাংলাদেশ থাইকা আইছেন?

দেশি মানুষ পেয়ে খুশি হলাম। তবে বেশি খুশি হলাম যে তা নয়। কারণ প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে কয়েকশো লোক নেপাল ঘুরতে যায়। আর নেপাল ঘুরতে যাওয়া মানে সেই কাঠমান্ডু আর পোখাড়া। তাই পদে পদে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া পর্যটকদের দেখা যায়।

একটু খেয়াল করে দেখলাম, ভদ্রলোক লুঙ্গি পরা। আর ছোট্ট একটা মেয়ের হাত ধরে আছেন। বুঝে গেলাম ভদ্রলোক ট্যুরিস্ট না।

-ভাই, আপনি কি এইখানে থাকেন?

-হ ভাই, আমি স্বর্ণকার। এইখানে আইছি বেশ কয়েক বছর আগে।

ভদ্রলোকের সাথে অনেক্ষণ কথা হলো চলতে চলতে। তিনি প্রশ্ন করলেন, আমি উত্তর দিলাম। এখানেও গল্পের বিষয় রাজনীতি।

-ভাই, দুই দলের মইধ্যে একটা দলও কি একটু নরম হইবো না?

আমি রাজনীতি খুব একটা বুঝি না। কিন্তু আমি বাংলাদেশ থেকে মাত্র গিয়েছি। একটু ভাব দেখানোর সুযোগতো আছে। বিজ্ঞের মতো বললাম, হওয়া তো উচিত।

তিনি নাছোড়বান্দা।

-উচিততো ভাই সবাই জানি, লক্ষণ দেইক্খা কী মনে হয়?

আমি লোকটার সাথে কথা বলছি আর ভাবছি, পেটের টানে প্রবাস করছে। মনটা পড়ে আছে দেশে। দার্শনিকের মতো ভাবছি, জীবন একটা, পৃথিবীও একটাই। অথচ এই ছোট্ট পৃথিবীটাকেই আমরা নিজের করতে পারি না। নানান দেশে পৃথিবীটা ভাগ হয়ে আছে। এরই কোনো একটা ভাগে আমাদের জন্ম। আর জননী জন্মভূমিটাই শুধু আমরা নিজের ভাবি। একে ছেড়ে যেখানেই যাই, হৃদয়ে পড়ে থাকে জননী জন্মভূমি।

রাজনীতিবিদেরাও বিদেশ ঘুরতে যান। কিন্তু তারা থাকেন ফাইভস্টার হোটেলে। সেখান থেকে নেমে হয়তো শ্রমিকদের সাথে কখনোই মিশেন না। তাই যারা ডলার পাঠিয়ে পাঠিয়ে দেশের রিজার্ভের পরিমাণে রেকর্ড তৈরি করছেন তাদের হৃদয়টাও তারা দেখেন না। দেখলে হয়তো টের পেতেন প্রতিটা ডলার, তারা যা বাংলাদেশে পাঠান, তাতে কতটা মায়া জড়ানো থাকে। এই মায়া পরিবারের প্রতি মায়া। এই মায়া দেশের প্রতি মায়া। যে মায়ার টানে নিজে না খেয়ে, না পরে ডলার জমিয়ে দেশে পাঠিয়ে দেন তারা।

মাঝে মাঝে ভাবি, রাজনীতিবিদদেরকেও এমন করে বিদেশে কিছুদিন ফেলে রাখা হোক। দেশপ্রেমের বীজ তাহলে তাদের অন্তরে গেঁথে যেতে পারে।

তারপরও কথা একটা, রাজনীতিকে যত অপছন্দই করি না কেন। রাজনীতি ছাড়া দেশ চলে না। তাই অনেক দেশপ্রেমিক মানুষও রজনীতিতে নামেন। তারা বড় বড় নেতা হন। দুঃখজনক হচ্ছে, ভুল মানুষদের মতো তাদেরও মানুষ খারাপ ভাবে। তবু তারা পিছপা হন না। অপবাদের বোঝা মাথায় নিয়েই তারা রাজ্য পরিচালনার কাজ করেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ের একটা কথা মনে করিয়ে দিই। তখন হঠাৎ করেই চাউলের খুব সংকট দেখা দেয়। পাশের দেশ ভারত চাউল দেবে দেবে একটা ভাব করে। কিন্তু ফাইনালি তারা চাউল দেয়নি। থাইল্যান্ড থেকেও আমরা প্রয়োজনমত চাউল পাইনি। তখন চাউলের বড় একটা সংকট দেখা দেয়। মমতাজ তখন টিভিতে, রেডিওতে গান ধরেন- বেশি করে আলু খান, ভাতের উপর চাপ কমান।

এই সংকট কিন্তু তৈরি হয়েছিল রাজনীতিবিদদের অনুপস্থিতির কারণেই। আমলারা ভালো হিসাব হয়তো করতে পারেন, কিন্তু ভালো সম্পর্ক রেখে বিশ্ববাসীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন না। সেখানেই প্রয়োজন রাজনীতিবিদের। তাই রাজনীতি ছাড়া জীবন যে ভালো চলবে তাও না।

আমি বাংলাদেশ সম্পর্কে নিরাশাবাদী কখনোই ছিলাম না। এখন রিজনীতি নিয়েও নিরাশ না। পৃথিবীজোড়া রাজনীতি আসলেও এক। আগে রাজনীতি ছিল না, ছিল রাজা। ঘোড়ার পিঠে চড়ে ক্ষমতায় বসতেন। প্রজাদের গায়ে চাবুক মারতেন। এখন রাজা নেই, আছে রাজনীতি। এখন জনগণের নাম ভাঙিয়ে ক্ষমতায় বসেন। জনগণকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে রাজ্য শাসন করেন। আগে বিদ্রোহী ছিল, বিরোধী দল ছিল না। এখন যোগ হয়েছে বিরোধী দল। জনগণ এখন পড়েছে উভয় সংকটে।

সংকটের কথাটা বুঝিয়ে বলি। এক রমণীকে দুই পুরুষ ভালোবাসলে যা হয় তেমনি। এক জনগণকে ভালোবাসে দুই দল। এবার টানাটানির মাঝে পড়ে জান যায় জনগণের।

কবিগুরুতো বলেছিলেন-‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। তো আমাদের জনগণের মুক্তি তবে কিসে? আমাদের মুক্তিও আলোয় আলোয়। জ্ঞানের আলোয়। যে জ্ঞান হলে আমরা বুঝবো- আমি পেট্রলবোমা মারছি, আরেকজন হয়তো আমারই পরিবারের ওপর পেট্রলবোমা মারবে। যে জ্ঞান হলে আমরা বুঝবো, আমি কারো পাশে দাঁড়ালে আরেকজন আমার পাশে এসে দাঁড়াবে। এই পাশে দাঁড়ানোর অভিজ্ঞতা বয়ে চলবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

রাজনীতিতে নীতি খোঁজার কোনো মানে নেই। নিজে নীতিবান হলেই আশপাশের মানুষগুলো নীতিবান হবেন। রাজনীতিবিদরাও আমাদের আশপাশেরই মানুষ। আমাদেরই আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধব। তারাও বাধ্য হবেন নীতিবান হতে। হয়তো অদূরভবিষ্যতেই রজনীতি শব্দটা হয়ে যাবে মানবনীতি। তখন রাজদরবারে যাবার জন্য মানুষ রাজনীতি করবে না। তখন করবে মানবনীতি, মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্যে। হোক না সে স্বপ্ন। ‘স্বপন যদি মধুর এমন, হোক সে মিছেই কল্পনা/জাগিও না আমায় জাগিও না।’

http://ajkerpatrika.com/open-air/2015/03/22/26538

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:২২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: সংকটের কথাটা বুঝিয়ে বলি। এক রমণীকে দুই পুরুষ ভালোবাসলে যা হয় তেমনি। এক জনগণকে ভালোবাসে দুই দল। এবার টানাটানির মাঝে পড়ে জান যায় জনগণের। :)

হয়তো অদূরভবিষ্যতেই রজনীতি শব্দটা হয়ে যাবে মানবনীতি। তখন রাজদরবারে যাবার জন্য মানুষ রাজনীতি করবে না। তখন করবে মানবনীতি, মানুষের পাশে দাঁড়াবার জন্যে। হোক না সে স্বপ্ন। ‘স্বপন যদি মধুর এমন, হোক সে মিছেই কল্পনা/জাগিও না আমায় জাগিও না।’

ভাবতেতো ভালই লাগে ;)

+++

২| ২২ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:০৫

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ''একদিন ঝড় থেমে যাবে , পৃথিবী আবার শান্ত হবে ।''
আমিও আপনার মত আশাবাদী মানুষ ।

৩| ২৭ শে মার্চ, ২০১৫ দুপুর ২:৩৬

রাকীব হাসান বলেছেন: গিয়াসলিটন বলেছেন: ''একদিন ঝড় থেমে যাবে , পৃথিবী আবার শান্ত হবে ।''
আমিও আপনার মত আশাবাদী মানুষ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.