নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্ষুধা

১৬ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৫২

(ইহা বানানো গল্প নহে। তবে দুই একটা কথোপকথন হয়ত নিজের মত করে লেখা।)

স্কাউটদের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বিপাকে পড়ে গেলাম।
বন্ধু তানজিল দেশের সেরা স্কাউট হয়েছে। তাই সাথে যাওয়াটা একান্ত কর্তব্য মনে করেই গেলাম। সমস্যা হইলো, স্কাউটদের ভাষা আমি বুঝিনা। জাম্বুরী, দড়ি গিট্টু আরো কী কী সব জটিল বিষয়। তাই তাদের গল্প শুনি আর বেকুবের মত জ্বী, জ্বী মাথা দোলাই।

একটু দূরে দেখি গ্রামের এক লোক উদাস ভঙ্গিতে বসে আছে। ভাবলাম তার সাথে আড্ডা দেই। বয়স হবে চল্লিশের মত। গায়ে একটা মলিন শার্ট, পড়নে তারচেয়েও মলিন একটা লুঙ্গি। লুঙ্গিটায়ও মনে হয় কোন একটা জায়গায় বড় ধরণের ছেড়া আছে। তাই লুঙ্গির একপার্ট গুটায়ে হাটুর উপরে পড়া। বাহাদুরপুর রোভারপল্লির যে পাশটায় ধানি জমিন আছে এই পাশটায় সিঁড়িতে বসে আছেন তিনি। পাশে দাঁড়ায়ে জিজ্ঞাসা করলাম
- কী নাম ভাইজান?
পান খাওয়া মুখে খুব আন্তরিকতার সাথে বল্লেন
- আকরাম মিয়া। মাইনসে কয় আকরাম পাগলা।
একটু রঙ্গ করে বল্লাম
- কেন আপনি নিজে পাগলা মনে করেন না নিজেকে?
কোন একটা গোপন কথা বলবেন এমন ভঙ্গিতে ঘাড়টা উঁচা করলেন। আমিও কান নীচা করলাম। বল্লেন
- আমি নিজেরে পাগল বলমু কেন? আমিতো জানি আমি পাগলের অভিনয় করি!

বেশ। আমি মনে মনে ভাবা শুরু করলাম, এইতো পেয়ে গেছি গল্প লেখার ক্যারেক্টার। সব বুঝে গেছি এমন ভঙ্গিতে সাপোর্ট দিয়ে বল্লাম
- ঘটনা পরিষ্কার। এবার উদ্দেশ্যটা বলেন।
এক মিনিটেরও কম পরিচয়। খুব বিশ্বাস করে ফেলেছে এমন ভাবেই গল্প শুরু করলো
- বুজ্ছেন আমারতো পরীর সাথে সম্পর্ক আছে। বহুত বেগার্তা করছে আমারে। এর পর রাজী হইছি।
আঙ্গুল উঁচা করে দেখায়ে বল্লো
- ঐখানে আমার লগে দেখা হয়। যা খাইতে চাই তাই নিমিষেই হাত বাড়াইয়া আইনা দেয়।

আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা, লোকটা কি পাগল! নাকি হ্যালুসিনেশনের রোগি। আমি খুব আন্তরিকতার সাথেই বল্লাম
- পরীর সাথে সম্পর্ক থাকাতো ভালো।
আকরাম মিয়া ফিক করে একটা মুচকি হাসি দিলো। লজ্জা মাখা মুখ নিয়া বল্লো
- আপনে যেইটা ভাবতাছেন হেইডার কোন সুযোগ নাই। খালি খাওয়া দাওয়া দেয়। আর দূর থেইকা মুচকি মুচকি হাসে।

এরপর লোকটার সাথে গল্প করলাম আরো অনেক্ষণ। সব গল্পই খাওয়া দাওয়া কেন্দ্রীক। সে পাগল সেজে আছে কারন কেউ যদি দেখে ফেলে যে তার হাতে এত খাবার, তখন কী হবে? ঠোঁটটা বাঁকা করে বল্লো
- এত খাবার দাবার ভালা লাগে না। ঐদিন আমারে আইনা দিলো তিলের মিষ্টি।
আমি মাথাটা ঝাঁকি দিয়ে ঠিক করে দিলাম। বল্লাম
-ওঁহো, তিলের পিঠা। মিষ্টি না তো।
আকরাম মিয়া এমন সুন্দর করে চোখ টিপে হাসলেন! ভাবটা এমন যে, এই খানেইতো কেরামতি! খুব কনফিডেন্স নিয়ে বল্লেন
- জ্বী না, তিলের মিষ্টি।

ঘন্টাখানেক গল্প শোনলাম। আজব আজব অনেক আইটেমের নামও জানলাম। ভাবদৃষ্টে মনে হচ্ছে যে পরীর পাল্লায় ভদ্রলোক পরছেন সেই পরী মনে হয় পরীদের সিদ্দিকা কবির।

খাওয়া দাওয়ার ডাক পড়লো। তৃপ্তি নিয়ে খাওয়া দাওয়া করলাম। আমার পাশে বসলেন এক সমু কুস্তিগীর। ভদ্রলোকের পেট এত বড় যে তিনি একটু পরে পরে পেট ইন করছেন। পেট ইন করা বলতে, শার্ট ইন করলে যেমন কাত চিত হয়ে বেল্টের ভিতর শার্ট ঢুকাতে হয়। ঠিক তেমনি ভদ্রলোক কাত চিত হয়ে পেন্টের বেল্টের ভিতর তার পেটের ভাঁজ ঢুকাচ্ছেন। এই ভদ্রলোক খাওয়া যে শুরু করেছেন তো করেছেনই। সবার খাওয়া দাওয়া শেষ। এই ভদ্রলোকর মনে হয় হলো শুরু। আমরা বেশ কয়েকজন মনযোগ দিয়ে ভদ্রলোকের খাওয়া দেখছি। ঘামছেন অঝোরে। ঘাম টপটপ করে তার প্লেটেও পড়ছে। এই দিকে খেয়াল নাই। ভদ্রলোক খেয়েই যাচ্ছেন। সবার খাওয়া দাওয়া যেহেতু শেষ। তাই টেবিল গুছানোর কাজ চলছিলো। আমাদের টেবিল গুছাতে পারছেনা ঐ সমু কুস্তিগিরের জন্য।

দূরে তাকিয়ে দেখি ফেলে দেওয়া খাওয়া, খাওয়ার ঝুটাগুলা নিয়া একদল লোক কাড়াকাড়ি করছে। এই প্রথম খেয়াল করলাম আকরাম মিয়ার একটা পায়ে সমস্যা আছে। সে আঁকাবাঁকা হয়ে অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ফেলে দেওয়া খাওয়া নিতে চেষ্টা করছে। কিন্তু পায়ের সমস্যার জন্য পারছেনা। ধাক্কাটা খেলাম তখনই। বুঝলাম, খাবারের প্রতি কতটা তীব্র আকর্ষণ থেকে তার গল্পগুলো সব খাবারকেন্দ্রীক।

খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো, তানজিলকে বলে খাবার ম্যানেজ করি। এরপর আকরাম মিয়াকে বলি - খান, কত খাইবেন খান। আমি মুগ্ধ হয়ে আপনার খাওয়া দেখি। কিন্তু কিছুতেই আর দ্বিতীয় দৃষ্টি দিতে পারছিলাম না আকরাম মিয়ার দিকে। কেবল মনে হচ্ছিলো, যদি চোখাচোখি হয়ে যায়! যদি লোকটা এতক্ষণের গল্পের কারনে লজ্জা পায়।

সেদিন খুব বৃষ্টি ছিলো। আমরা যখন চলে আসি, তখন আমাদের গাড়ী বৃষ্টির পানিতে আটকা পড়ে আছে। চাকা জায়গায় ঘুরছে। তখন দেখি আকরাম মিয়া একাই বাস ঠেলছে। মুখটা বেশ মলিন। ফেলে দেওয়া ঝুটা খাবারের মনে হয়না কিছুই ভাগে পেয়েছেন। তার মনে হয়ত ইচ্ছা ছিলো, গাড়ী ঠেল্লে যদি কয়েকটা টাকা পাওয়া যায়। আবারো খুব ইচ্ছা হলো, হাজার খানেক টাকা আকরাম মিয়ার হাতে দিয়ে বলি যান তিলের মিষ্টি জাতীয় কিছু একটা খেয়ে আসেন। কিন্তু তখনো পারলাম না চোখাচোখি হওয়ার সাহস যোগাতে। কেবল মনে হচ্ছিলো যদি লোকটা লজ্জা পায় আমাকে দেখে!

গাড়ী যখন ফুল স্পিডে চলা শুরু হয়েছে তখনই আমার মনে হলো, যাই হোক লোকটাকে হাজার খানেক টাকা দিয়ে আসি। কিন্তু এত এত অপরিচিত মানুষের কাছে আমার এই আবেগ একান্তই বিরক্তিকর হবে ভেবে আর পারলাম না কিছু বলতে। ফুল ভলিওমে হেডফোনে গান ছাড়লাম। গান বাজছে -

We will raise a family
A boy for you
And a girl for me
Can't you see how happy we would be

আর কল্পনা করছি - জোড়া আমগাছের উপরে পরী বসে আছে। পরীর সাথে আকরাম মিয়ার বিয়ে হয়েছে। আকরাম মিয়াই যেন এই গান গেয়ে তার পরীকে বলছে।

একটা পরিবার হবে এমন
ছেলেটা দিবো তোমাকে
আর মেয়েটা হবে আমার
তুমি কি দেখছো না কতাটা সুখী আমরা হবো?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.