![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
জীবন স্যার একদিন ভরা ক্লাশে জিজ্ঞাসা করে বসলেন
- এই, সিনেমা হলের সামনে সারা দিন দাড়াইয়া কী দেখোস!
ক্লাশ ভরা সুন্দরী মেয়ে। পড়ি ক্লাশ এইটে। এই বয়সেই বুঝে গেছি, অপমান ভরা বাজারে সহ্য করা যায়। কিন্তু একজন সুন্দরীর সামনেও তা সহ্য করা যায়না। স্যার ঝারি দিয়া বল্লেন
- ক্লাশ শেষে বই খাতা নিয়া আমার সাথে দেখা করিস।
চরম স্মার্ট টিচার। আমি ঠিক ততটাই গবেট মার্কা এবং আনস্মার্ট ষ্টুডেন্ট। স্যার স্কুলেরই একটা রুমে থাকতেন। ভয়ে ভয়ে গেলাম। সারা দিন ক্লাশ নিয়ে স্যার ক্লান্ত। আমাকে ইশারা দিয়ে বসতে বল্লেন। ক্যাসেট প্লেয়ারে তখন রবীন্দ্রসংগীত বাজছে - তাই হোক তবে তাই হোক, দ্বার দিলেম খুলে। সাগর সেনের সাথে এই আমার প্রথম পরিচয়।
স্যার তেমন কিছুই বল্লেন না। পরের দিন বন্ধের দিন ছিলো। স্যার শুধু বল্লেন, আগামী দিন সকাল বেলা চলে আসিস। গেলাম পরের দিন। স্যার টুক টাক কাজ করছেন। ফাঁকে ফাঁকে আমাকে পড়া দেখাচ্ছেন। সেই থেকে শুরু, প্রতি দিন স্যারের কাছে চলে যাই। চরম স্মার্ট টিচারটা স্কুলের চরম ক্ষেত ছাত্রটাকে তার ভালোবাসা ঢেলে দিলেন। জীবন স্যার আমার জীবনে আসলেন শিক্ষাগুরু হয়ে, তিনি আসলেন বাবা হয়ে, তিনি আসলেন জীবনের প্রখম ধ্রুব তারকাটি হয়ে।
স্যার রবীন্দ্রসংগীত শুনেন, আমিও রবীন্দ্রনাথের ক্যাসেট কেনা শুরু করলাম। স্যার ভাজা মাছ দিয়ে পান্তাভাত খান। আমিও বাড়ী ফিরে মা'কে পান্তা দিয়ে ভাজা মাছ দিতে বলি। স্যার রেগে যান, পরে আবার তার কারন ব্যাখ্যা করেন। আমিও কারো সাথে রাগ করলে, পরে তাকে রাগের কারন ব্যাখ্যা করি। জীবনে প্রথম অন্য একটা মানুষ হতে ইচ্ছা করা শুরু করলো। তিনি আমার জীবন স্যার, জীবন কৃষ্ণ ভদ্র স্যার।
স্যার এখন কুমিল্লা জিলা স্কুলে আছেন। কুমিল্লা গেলে, স্যারের সাথে দেখা করি। পা ছুঁয়ে সালাম করি। স্যার মাঝে মাঝে "তুমি" করে বলেন। স্যারকে মিন মিন করে বলি, স্যার তুমি করে কেন বলেন?
স্যার সুন্দর একটা মুচকি হাসি দেন। বলেন, এখন বড় হইছো না?
আমি আরো মিনমিন করে বলি, স্যার আপনার কাছে কোন দিন বড় হবো?
শেষ করবো শুরুর দিকের একটা ঘটনা দিয়ে।
স্যার কতগুলো অংক দিয়ে গোসলে ঢুকলেন। আমি ভয়ে ভয়ে অংক করছি। পারা অংকগুলোও গুলায়ে ফেলছি। স্যার গোসল শেষে নাস্তা করতে বসলেন। চিনি দিয়ে পরটা খাচ্ছেন স্যার। আমাকে বল্লেন, নে খা।
ছেলে বেলায় আশেপাশে প্রচুর হিন্দু পরিবারে দেখে বড় হয়েছি। তারাই সবচেয়ে বড়লোক ছিলেন এলাকার। হিন্দু বাড়ীর উপর দিয়ে যখন স্কুলে যাতায়াত করতাম, কিছুটা ভয় কাজ করতো। গাছের পাতাটা পর্যন্ত ধরা যেতো না। ধরলেই এরা চিল্লাচিল্লি করতো, শেখের জাতে ছুঁইয়া ফালাইছে।
সেই ভয় থেকে আমি স্যারের প্লেট থেকে পরটা খাচ্ছি না। স্যার আবার ধমক দিলেন, কি হইলো খা!
আমি একটা আস্ত পরটা হাতে তুলে নিলাম। কিন্তু চিনির প্ল্যাট থেকে চিনি নিচ্ছি না। স্যার অনেক্ষণ পরে খেয়াল করলেন। স্যারের কান মোচড় দেওয়ার অভ্যাস ছিলো। কান ধরে মোচড় দিয়ে বল্লো, গাধা, খালি পরটা খাচ্ছিস কেন? চিনি দিয়া খা!
আমি একটু সাহস করে বল্লাম, স্যার আপনার প্ল্যাট থেকে নিবো?
স্যার একটা মুচকি হাসি দিয়ে বল্লেন, তাইলে? চিনির বয়াম থেকে নিয়া খাবি, গাধা!
তখনো রফি সাহেবের এই গান শুনিনি, তু হিন্দু বানে গা না মুসলমান বানেগা, ইনসানকে আওলাদ তু ইনসান বানেগা।
কিন্তু মনে মনে আমি বুঝে গেলাম, ধর্মটা শুধু বিশ্বাসেই হয়ত আলাদা হয়। কিন্তু মানুষে মানুষে কোনই ফাড়াক নাই।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:০৮
কাবিল বলেছেন: ভাল লাগল।
আপনার ব্লগ আপনার জীবনের একটা ডায়েরী হয়ে থাকবে।