নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যক্তিগত পোষ্ট: ডাক্তার বন্ধুদের কাছে সরি...।

২২ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৫৬

উপকার করার চাইতে, উপকার নেওয়াটা বেশী কষ্টের। উদাহরণ দেই-

আমার এক ডাক্তার বন্ধু। আমার কাছ থেকে ভিজিট না নিলে একটা কথা ছিলো। তিনি আমার আত্মীয়, স্বজন এমনকি পরিচিতজনদের কাছ থেকেও ভিজিট নেন না। উল্টা সেম্পল হিসাবে পাওয়া ঔষধ ফ্রিতে দিয়া দেন। ডাক্তার বন্ধুর নাম বল্লাম না। কারন তিনি বিবাহিত। কোন ভাবে এই কথা তাঁর গিন্নির কানে গেলে ডাক্তারের খবর আছে। ভাততো বন্ধ হবেই হবে। উল্টা বলবে, আমারতো দুইটা টাকা দিলো ছত্রিশবার গুনো, আর অন্যদের জন্য দাতা হাতেমতাই হও!

খুব বুদ্ধি করে ডাক্তারকে একবার এক হাজার টাকা ফ্লেগ্জি লোড করলাম। উনি কেমনে কেমনে যেন বের করে ফেল্লেন এই কাজ আমি করছি। আমার উপর চরম রাগ করলেন। এমন শীতল ব্যবহার করলেন যে, আমি এই সাহস আর কোন দিন করলাম না।

বন্ধুদের কাছ থেকে ভিজিট না নেওয়া কিন্তু সত্যি সত্যি কোন ভালো কথা না। কারন ডাক্তারের মাস শেষে আমাদের মত কোন বেতন থাকে না। প্র্যাকটিস করে যা পান তা দিয়েইতো সংসার চলে। আমি এই বন্ধুকে কারনে, অকারনে ফোন দেওয়া কমিয়ে দিলাম। উদ্দেশ্য হলো, ফোনে কথা বলে দুই মিনিট নষ্ট না করে অন্তত এই ফাঁকে একটা রোগী দেখুক।

প্রিয়'কে ডঃ তাহমিনা ম্যাডামকে দেখাই। তিনি প্রতি দিন আশি, নব্বই জন রুগী দেখেন। প্রিয়কে দেখানোর মাস খানেক পর আবার ডাক্তারের কাছে গেলাম। ডাক্তার ভ্রু কুঁচকে বল্লেন
- এইটাতো এক মাস পরে নিয়ে আসার ঘটনা না! আপনাদেরকেতো বল্লাম চার মাস পরে আসুন।
ম্যাডামকে বলতে পারলাম না, ম্যাডাম মা বাবার মন তো, তাই এর আগেই চলে আসছি। এত রুগীর চাপ, এক মিনিটের বেশী সময় পাওয়া যায় না কথা বলার জন্য।

টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখাই। কোন্ ঔষধটার কী কাজ তা ওয়েবসাইটে ঘাটাঘাটি করে জানার চেষ্টা করি। যদি কোন হিসাব না মিলে তখনই টেনশানে পড়ে যাই। আর তখনই ডাক্তার বন্ধুদের ফোন দেই।
-০-
এত বিশাল ব্যক্তিগত ষ্টেটাসের শানে নজুল হইলো - আজ ঘুম থেকে উঠেই মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ডাক্তার বন্ধু তার ফেসবুক ষ্টেটাস দিলো। লেখলো, তার উপকার নিয়েছি অথচ তার ল্যাপটপটা ঠিক করে দিলাম না। সে বাইরে থেকে ইঞ্জিনিয়ার এনে ঠিক করছে। আমি আমার টাক মাথা বাজি রেখে বলতে পারি। উপকার বলতে ম্যাক্সিমাম তিন দিন ওরে আমি ফোন দিসিলাম ঔষধের নাম জিজ্ঞাসা করতে। এর মধ্যে এক দিনের কাহিনী বলি -

প্রিয়'র পনেরো দিন ডায়রিয়া গেলো, হাগুর রাস্তা লাল হয়ে ফুলে গেছে। শ্বশুরের হাসপাতালের ডাক্তারকে ডেইলি দেখাই (টাকা দিয়েই দেখাই)। এই দিন অলরেডি দেখায়ে ফেলছি। ভাবলাম ডাক্তারের কাছে গেলে আবার কী ভাববে! আর তাহমিনা ম্যাডামের কাছে গেলে আবার ঝাড়ি খাবো। দিলাম, প্রথম ডাক্তার বন্ধুকে ফোন। তিনি ফোন ধরছেন না। এই দিক দিয়ে গিন্নি বারবার প‌্যান প‌্যান করতেছে। আমারে ঝাড়ি দিয়া কয়
- যাইবা না ঔষধ আনতে! তাইলে আমিই গেলাম।
ভাবটা এমন যে দোকানদারকে বল্লেই ঔষধ দিয়ে দিবে, নাম লাগবে না।

আমিই ঔষধ আনতে বের হইলাম। ডাক্তার বন্ধুকে আবার ফোন দিলাম, ধরে না। আরেক বন্ধুকে ফোন দিলাম। বল্লাম, দোস্ত প্রিয়'র ডায়রিয়া আজ কয়েক দিন ধইরা। ডায়রিয়ার ঔষধ ডাক্তার দিসে। কিন্তু হাগুর রাস্তাটা লালা হয়ে আছে। কী করবো বলতো। সে আমারে একটা ঔষধের নাম বল্লো। দোকানদারকে এই ঔষধ বলার পর আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়ে আছে। বলতেছে, পাইল্স কার? আমি বল্লাম, পইলস না তো। এরই মধ্যে প্রথম ডাক্তার বন্ধু ফোন ব্যাক করলেন। তিনি বাথরুমে ছিলেন। ঔষধের নাম বলায় তিনি লাফ দিয়ে উঠলেন! বলেন কী! প্রিয়কে এই ঔষধ কেন দিবেন? পরে বল্লেন ড-রেশ লাগান। ডি-রেশের উপরে দেখলাম বাচ্চাদের ছবি আছে। ভিতরের কাজগটা পড়ে মনে হলো, এইটাই কাজে দিবে। বন্ধু ডাক্তাররাই যদি এমন করেন, তবে অপরিচিত ডাক্তাররা কেমন করবেন!

আমি কিন্তু ঐ ডাক্তার বন্ধুকে বলি নাই যে দোস্ত এইটাতো পাইলসের ঔষধ!
এবার নিজের প্রফেশন নিয়ে বলি, কাজ করি এমন একটা ইন্ড্রাষ্ট্রিতে যেখানে পারসোনাল লাইফ বলতে কিছু নাই। বিষয়টা নিয়ে আমার কোন অভিযোগ নাই। আমি আমার এই প্রফেশনটাকে পছন্দ করি। আর এই কারনেই এতটা বছর ধরে আছি। কারন আমি কম্পউটার ইঞ্জিনিয়ার, আমার ক্ষেত্র টেলিভিশনই শুধু না। আমার হাতে গড়া ছেলেপেলে আজ কয়েক লাখ টাকা বেতন পাচ্ছে বিভিন্ন সফ্টওয়্যার কোম্পানীতে। আমি নিজে ঐ লাইনে যাচ্ছি না, কারন আমি এই জবটা পছন্দ করি।

আমার জন্য ফোনে একটা বন্ধুর কম্পিউটার রিলেটেড সমস্যার সমাধান দেওয়া সম্ভব। যেখানে পরিবারকেই সময় দিতে পারি না, সেখানে বন্ধুর বাসায় গিয়ে কম্পিউটা ঠিক করে দেওয়াটা প্রায় অসম্ভব। তারপরে সে বন্ধু যদি ডাক্তার হয়, তাহলেতো কথাই নাই। দেখা গেলো আমি সময় করে গেলাম, তখন বন্ধু তার চেম্বারে ব্যস্ত। আর আমি বিবাহিত বন্ধুদের বাসায় বন্ধু ছাড়া ঢুকি না। এইটা আমার ব্যক্তিগত ষ্ট্রেটেজি।

তারপরেও নিজের বন্ধু ডাক্তার, ভাইয়ের বন্ধু ডাক্তার, বোনের বান্ধবী ডাক্তার, বউয়ের আত্মীয় ডাক্তার এদের কাছ থেকে খোঁচা কথা শুনে শুনে মনটা তিতা হয়ে আছে। ডাক্তাররা আমাদের উপকার করে করে বাঁচায়ে রাখছেন। অথচ আমরাই তাদেরকে দেবতাজ্ঞান করতেছিনা। এমন অভিযোগ শুনে মনে হয়, যা শালা সবইকে বন্ধুই ভাববো, কাউকে ডাক্তার বন্ধু ভাববো না।

আমি রাস্তা ঘাটের অপরিচিত মানুষদের উপকার করলে তা বলি। কেন বলি? যেন অন্যরাও এমন উপকার করে দেখতে পারেন, এতে কত সুখ। কিন্তু বন্ধুদের উপকার করে তা আমি বলি না। কারন, বন্ধুদের উপকার করি তাতে আনন্দ পাই এই জন্য। বলার জন্য না।

এই স্ট্যাটাস যে ডাক্তার বন্ধুগন পড়বেন। তাদের অনেকেই হয়ত হাফ ছেড়ে বাঁচবেন যে যাক অরুণের কাছ থেকে কোন উপকার নেই নাই। আবার অনেকেই হয়ত কৃতজ্ঞাতা স্বীকার করবেন, যে হ্যাঁ লোকটা সাধ্যমত চেষ্টা করছে।
-০-

আমার জানা মতে, আমার এমন কোন বন্ধু নাই যে নাকি উপকার করে খোঁটা দিছে। একমাত্র ডাক্তার বন্ধুগন ছাড়া। আমি জানি না, এই প্রফেশানটায় এত কী দুঃখ যে বন্ধুদেরও খোঁটা দিতে হয়। তাও কেবল মাত্র দুই, একবার ম্যাক্সিমাম ৩০ সেকেন্ড ফোনের সাহায্যের বিনিময়ে। এর বেশী কিছু না। কোনদিন রক্তও চাই নাই, সেম্পলের ঔষধও চাই নাই, কোন হাসপাতালের বিলও কমায়ে দিতে কই নাই।

ঠিক আছে বন্ধগন। আপনারা, তোমরা, তোরা এখন থেকে বন্ধু। ডাক্তার বন্ধু বলে একটু আলাদা করে দেখবো না। খুক খুক কইরা কাশি আসলেও, লাইন কেটে দিবো। আর না হয় মনে করা যেতেই পারে, হয়ত কাশির ঔষধের নাম জিজ্ঞাসা করতে ফোন দিসে। দুঃখিত আমি, করজোড়ে ক্ষমা চেয়ে দুঃখিত।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:২৩

সুমন কর বলেছেন: লেখাতে আপনার ক্ষোপ বা দুঃখ প্রকাশ পেয়েছে।

তা আপনার প্রিয়'র অবস্থা এখন কেমন? সুস্থ হয়েছে।

২২ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১:০৫

সুখী মানুষ বলেছেন: প্রিয় কিছুটা সুস্থ। খুবই দূর্বল হয়ে গেছে। আর ক্ষোভের কথা বলছেন!

ভাইরে, বন্ধু হইলো সে যারে গালি দিয়া বলা যায়, হারামজাদা কী ঔষধ দিছস, কাজ হয় না কেন? আর বন্ধু যদি উল্টা ফেসবুক ষ্টেটাসে বলে দেয়, যে উপকার করছে অথচ রিটার্ণ পায় নাই! তখন???

২| ২২ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:৩৮

আমি মুরগি বলেছেন: আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর!! হাসি দেখেই বুঝা যায় আপনার মনটাও সুন্দর।। শুভ কামনা আপনার আর প্রিয়র জন্য।

৩| ২২ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৮

কাবিল বলেছেন: আপনার ক্ষোপ বা দুঃখ প্রকাশ জরিত পোস্টটি ডাক্তার বাবুদের দৃষ্টিগোচর হোক।
প্রিয় কেমন আছে?



মন চাইলে গানটি শুনুন "ও ডাক্তার"

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৫৮

সুখী মানুষ বলেছেন: Priyo kiso ta valo...

৪| ২২ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৬

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: ডাঃ তাহমিনা কে মনে হইসে চরম অর্থলোভী মহিলা। ৬০০ টাকা ভিজিট দেই অথচ দুই মিনিট সময় নিয়েও আমার বাচ্চারে দেখে নাই...উল্টায়া পাল্টায়া দেইখা হড়বড় করে ওষুধের নাম বলতে থাকে...পাশের এক এসিস্ট্যান্ট ধুমায়া প্রেসক্রিপশন লেখে। পাঁচ-ছয়জন একসাথে রুমে ঢুকায়, সব ঘাড়ের উপর দাঁড়ায় থাকে। আপনি যে কিছু কথা বলবেন, কেন এটা হচ্ছে, কেন এমন করছে...কিছুই বলার সময় দেবে না...মেজাজটা বিগড়ায়া যায়। বুঝিনা এদরে পয়সা হালাল হয় কেমন।

২৫ শে জুলাই, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭

সুখী মানুষ বলেছেন: Bhai re korbo ta ki kon to :( ... Taka diya doctor dekhaiya o shukh pai na, bondhu jara ase tara o khuta dei... amader ki taile emni ee moron?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.