নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার_দেখা_রাতগুলি - ০৫

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১:০৩

আমার_দেখা_রাতগুলি - ০৫

নান্টু নামের এক হুজুরের কথা বলতেই হবে। লোক বলতো নান্টু পাগল। সম্ভবত এই ভদ্রলোককে দেখেই রাত বিরাতে ঘুরাঘুরি'র নেশা জাগে আমার। থুতনির মধ্যে সামান্য কয়েকটা দাড়ি ছিলো। কণ্ঠটা ছিলো যথেষ্ঠই চিকন এবং মারাত্মক সুরেলা। আমাদের গ্রামের চার পাঁচটা গ্রাম দূরের কোন এক গ্রামের মানুষ তিনি। গ্রমাের নাম সম্ভবত নাগাইস টাইপ কিছু একটা হবে। তখন উনার বয়স ছিলো চল্লিশের মত। কয়েক মাস পর পরই রাত তিনটা, চারটা'র সময় ঘুম ভেঙ্গে যেতো নান্টু পাগলের গানে।

আমা'র মা তাকে প্রচন্ড আদর করতেন। আদর বড় খারাপ জিনিস। রাস্তার একটা কুকুরতে আদর করে "আতু চু চু" করে ডাক দিলেই কুকুর ল্যাজ নাড়ানো শুরু করে। পরপর দুই দিন ডিক দিলে দেখা যাবে তিন দিনের দিন আপনার জন্য হয়ত জান দিয়ে দিবে। আর মানুষতো আদরের আরো বড় কাঙ্গাল। মায়া'র দৃষ্টিতে একবার তাকাইলেই মানুষ জান দিয়ে দিতে পারে। নান্টু পাগল আমাদের এলাকায় আসতেন রাতে, গভীর রাতে। থাকতেন কবরস্থান, পুকুরপাড় এমন নির্জন জায়গায়। খুব সকাল বেলা চলে আসতেন আমাদের বাড়ী। উঠানে আইসাই চিকন অথচ বেশ সুন্দর গলায় ডাকাডাকি শুরু করতেন
- আমার বইনে কই? বইনে, ও বইনে...

মা খুব বকাঝকা করতেন। বলতেন
- কি চাস সকাল সকাল?
প্রাণ খোলা বেকুব বেকুব হাসি দিতেন নান্টু পাগল। বলতেন
- বইনে, এলাকায় আইলে আপনের চেহারাটা সবার আগে দেখি। দেন খাবার কী আছে দেন।

রাতে গানের কণ্ঠ শুনেই মা টুকটাক খাবার রেডি করে রাখতেন। রাতে চলাচল যেন না করে এই জন্য উপদেশ দিতেন। একটু অপমান করেই বলতেন
- রে নান্টু, ফকির দরবেশ হইতে গেলে কি রাইতেই ঘুরতে হয়? এই শীতের রাইতেও গাছ তলায় ঘুমাইতে হয়?
নান্টু পাগল মিটমিট করে হাসতেন। বলতেন
- রাইতের দুনিয়া আরেক দুনিয়া বইনে।

নান্টু পাগল আমার মা'কে ডাকতেন বোন, আমাকে ডাকতো ভাতিজা। আমি আগ্রহ নিয়া জানতে চাইতাম
- কাকু জ্বীনের দেখা পান?
উনি রহস্য হাসি দিয়া বলতেন
- হ পাই ভাতিজা।
পান খাওয়া লাল মুখে সুন্দর করে হাসতেন। মাঝেমাঝে দার্শনিকের মত বলতেন
- রাইতের দুনিয়ায় ভাতিজা সবই জ্বীন। এই যে নান্টু পাগল আমি হাটি, আমিও অনেকের কাঝে জ্বীন। মাঝে মইদ্যে ভাতিজা নিজের পায়ের শব্দ, নিজের ছায়াটাও নিজের কাছে জ্বীন। রাইতের দুনিয়া হইলো ভাতিজা জ্বীনের দুনিয়া। এইখানে সবাই জ্বীন।

একবার জিজ্ঞাসা করলাম
- কাকু গত রাইতে কই আছিলেন?
বললেন
- তোমার দাদা'র কবরের কাছে আছিলাম ভাতিজা।
তারপর আমার কানের কাছে ফিসফিস কইরা বললেন
- তোমার দাদায় একটা কামেল লোক আছিলো। আমি প্রমান পাইছি।

কী প্রমান পাইলেন, কিভাবে পাইলেন, কিছুই বললেন না। তবে এর কিছু দিন পর যখন আমি দাদা'র কবরের কাছে ঘুরাঘুরি করি তখন কোন প্রমান আমি পাই নাই। আর দশটা কবরস্থানের মতই শুনশান নিরবতা। গ্রামের বাড়ীর পুকুর পাড়গুলাই সাধারণত কবরস্থান হয়। বাঁশঝাড়ে ঢাকা থাকে সেই এলাকা। বাঁশে বাঁশে থাক্কা লেগে যে কড়মড় শব্দ হয়, এই শব্দই জ্বীনের শব্দ বলে সবাই মনে করে।

নান্টু পাগলকে মা যতই তুচ্ছ তাচ্ছিল্লো করে মায়াভরা গালি দিতেন, নান্টু পাগল ততই বিনয়ের সাথে হাসতেন। মা'কে খুব পছন্দ করতেন। মাকে একদিন তিনি বলেছিলেন
- বইনে, আমি নান্টুতো অনেক বড় ফকিই অইয়াম একদিন।

কয়েক বছর আগের কথা। আমার ডিপার্টমেন্টের একটা ছেলে ঢাকা থেকে উরশে যাবে কুমিল্লায়। অনেক বড় ফকির। কয়েকশো গরু জবাই হয়। ফকিরের হেন ক্ষমতা, তেন ক্ষমতা। যোগ বিয়োগ করে দেখি এই ফকির হইলো নান্টু ফকির। তিনি এখন অনেক বড় বাবা। মাঝে মাঝে ইচ্ছা করে এত বড় ফকির বাবা'র কাছে যাই। গিয়ে কানে কানে বলি, নান্টু কাকু আমি সাবেবাবাদের আপনের বইনা'র ছেলে অরুণ। আপনের বইনা আর এই দুনিয়ায় নাই। তিনি মারা গেছেন প্রায় এক বছর হয়ে যাচ্ছে। নান্টু ফকির যদি ফেল ফেল করে চোখের পানি ফেলে তাহলে বুঝতে হবে মায়া বড় খারাপ জিনিস। পীর, ফকিরও এর উর্ধে না।

আমাদের বাড়ীতে দুইটা বুক শেল্ফ ছিলো। আমি যখন ক্লাশ এইটে পড়ি, তখন বহু বই আমার পড়া শেষ। এর মধ্যে আছে শরৎসমগ্র। তখন আমি শ্রীকান্ত পড়ে জেনেছি মরা'র কোন জাত থাকে না। আর গত কিছুদন ধরেই ঠিক মাঝ রাতের দিকে একটা অদ্ভুৎ ঘটনা ঘটছে। পুকুরের যে পাশটা সব চেয়ে ভয়ংকর। যে পাশটায় তেতুল গাছ এবং শেওড়া গাছ আছে। সেই পাশটায় একটা আদ্ভুৎ আলো দেখা যায়। আলোটা বাতাসের সাথে কেমন যেন ঢেও খেলে যায়। পুকুরের কোনাটার একটু দূরেই একটা শ্মশান। খালের উপর হিন্দুদের লাশ পোড়ানো হতো। তাই খালের নাম হয়ে গেলো চিতা-খাল। ছোট বেলায় মনে করতাম চিতা-খাল মানেই হিন্দুদের লাশ পোড়ায়। একটু বড় হয়ে জেনেছি, শুদ্ধ ভাষায় তাকে শ্মশান বলে।

রাতের বেলা কোন ঘটনা ঘটলে তা আমি বুদ্ধি দিয়ে মেপে দেখার চেষ্টা করতাম। কারন তখন অনেক বই আমার পড়া। আবার নান্টু কাকার কথাও মনে পড়তো। মাঝেমাঝে হাসতাম। ভাবতাম, নান্টু কাকার সাথে আমার মিল আছে। আবার অমিলও আছে। মিল হলো, আমরা দুইজনই রাতের দুনিয়ার কোন কিছুই ভয় পাই না। আর অমিল হলো, তিনি মনে করে নেন এইসব জ্বীন। আর জ্বীনকে ভয় পাওয়ার কিছু নাই। উল্টা জ্বীনই নাকি মানুষকে ভয় পায়। আর আমি যতবারই এমন কোন ঘটনার সামনে পড়েছি, ততবারই মনে করেছি, এর পিছনে রহস্যটা কী? রহস্য ভেদ করার পর মনে মনে হাসতাম। বলতাম নান্টু কাকা হইলে এইটাকে জ্বীন মনে করে বসে থাকতেন। সমাধানের নেশা উনার রক্তে নাই।

একদিন রাত বারোটা বেজে গেলো। নেশা'র মত আমার ঘোর তৈরী হয়ে গেছে। আমাকে বের হতে হবে। ঘুরতে হবে রাতের দুনিয়ায়। এই দুনিয়ায় আমি একা, শাহেনশা'র মত একা। হঠাৎ করেই মনে হলো, যাই শেওড়া গাছের কাছে আলো'র ঘটনা কাছে যাই। চুপি চুপি উঠান পার হয়ে যাচ্ছি। মা ডাক দিলেন
- কে?
আমি চুপ করে দাঁড়ায়ে রইলাম। অনেক্ষণ দাঁড়ায়ে রইলাম। দেখলাম আলোটা নাই। আবার আস্তে আস্তে ঘরে এসে বসে রইলাম। ঘন্টা খানেক পর উঠানে গিয়ে দেখি আলোটা দেখা যাচ্ছে। আস্তে আস্তে হাটা শুরু করলাম শেওড়া গাছের দিকে। এই হাটাটায় একটা ঘোর কাজ করে। শেওড়া গাছের কাছে গিয়ে দেখি, আলো আরো দূরে। ছাতনা গাছ ছিলো একটা পাশে, তার ফাঁক দিয়ে আলোটা আসছে। পুকুরের পাড় দিয়ে হেটে হেটে ছোট একটা জঙ্গল পার হলাম। সামনেই চিতা খাল। শ্মশানে কিছুদিন আগে বৈরাগী নামের এক হিন্দুকে বুড়োকে পোড়ানো হয়েছে। অন্ধকার রাত, শ্মশানের এক কোনায় দেখি একটা কুপি জ্বলছে।

রাতে হাটি বহুদিন হয়ে গেলো। এরই মধ্যে আমি বুঝে গিয়েছি, রাতের মানুষ অন্য মানুষকেই ভূত বলে মনে করে বেশী। শাড়ি পড়া সাধারণ কোন এক বুড়ী তখন হয়ে যায় সাদা কাপড় পড়া এক পেত্নী। যে গল্প শুনো স্বয়ং এই বুড়ীরও ভয়ে শরীর কাটাকাটা দেয়। আমি ভাবলাম, আর একটু কাছে গেলো আমাকে দেখে উল্টা ভয় পাবে। খুব সাবধানে, আস্তে আস্তে আগানো শুরু করলাম। খুব নাকি স্বরে কান্নার আওয়াজ আসছে। আশেপাশে তখন কোন বাড়ীঘর ছিলো না। নিরাপদ দূরত্বে আমি একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে আছি। ঘোর অন্ধকার। চিকন খালের ঐ পাড়ে আলোটা জ্বলছে। পাশেই মাথায় ঘোমটা টেনে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি। খুব চাপাস্বরে কাঁদছেন। তিনি বৈরাগী'র বিধবা মেয়ে। স্বামীর মৃত্যুর পর আর সংসারে ঠাঁই হয় নাই। তিনি বাধ্য হয়ে চলে এসেছেন বাবা'র বাড়ী। জন্মের পর যে বাড়ীটাকে নিজের মনে করে হেসে খেলে বড় হলেন। এই বাড়ীতে ফিরেই দেখেন এই বাড়ী এখন আর তার বাড়ী নাই। এই বাড়ী এখন কেবল তার ভাইদের বাড়ী। তাও বাবার আশ্রয়ে ছিলেন। বুড়ো বাপটাও যখন চলে গেলো, তখন এতবড় দুনিয়াটায় আর তার নিজের বলে কোন ঠাঁইই রইলো না।

গভীর রাতে বাবা'র লাশ যেখানে পোড়ানো হয়েছে এখানে তিনি তাই হয়ত কয়দিন ধরে আসছেন। বাবার মৃত্যু শোক তার কাছে বড় নাকি ঠাঁইহীন এই রমনীর ঠাঁই না থাকার কষ্টটাই বড় তা কে বলবে? আর বললেই বা কে শুনবে? তাই নিজের যত কষ্ট, সব তিনি বাবার চিতায় এসে পুড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

সংসারে আমি নারীর ভোগান্তি দেখে দেখে বড় হয়েছি। সংসারে পদে পদে নারীর অপমান দেখে দেখে আমি বড় হয়েছি। সংসারে নারীর ঠাঁইয়ের বড়ই অভাব দেখে দেখে আমি বড় হয়েছি। তাই আর এইসব আমি সহ্য করতে পারি না। আমি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর না। তিনি বিধবা বিবাহ সহ আরো অনেক সমস্যার সমাধান করে গিয়েছিলেন। আমি তার নখের যোগ্যও যদি কোন দিন হই। আমি নারীর নিরাপদ ঠাঁই এর ব্যাবস্থা করে যেন যেতে পারি। জগৎ সংসারে প্রত্যেকটা নারীর যেন একটা সুন্দর ঘুমানোর জায়গা থাকে। যেন নিরাপদ মনে করে সেখানে ঘুমাতে যেতে পারে। এবং ঘুম থেকে উঠে নিশ্চিন্তে সে যেন দুই হাত প্রসারিত করে ভাবতে পারে, আজকে সূর্য্যের আলো'র রংটা কি একটু বেশী লাল হবে?

রাতের দেখা দুনিয়ায় এই প্রথম আমি কাঁদতে কাঁদতে বাড়ীর দিকে রওয়ানা দিলাম।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ২:৩৮

কোলড বলেছেন: You have a way with words and what an uplifting story!

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৬

সুখী মানুষ বলেছেন: আমার লেখা'র পাঠক নাইরে ভাই :(
দেখেন আপনারা তিন জন মাত্র মন্তব্য করেছেন। অথচ "কেমন আছেন / ভালো আছি" টাইপ পোষ্টেও কয়েকশো মন্তব্য পড়ে সামহোয়্যারে। তারপরেও লেখে যাই। কোন না কোন সময় আমার মত মনের মানুষের কাছে হয়ত লেখাগুলা ভালো লেগেও যেতে পারে।

ধন্যবাদ ভাই।

২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৫:৩৭

টরপিড বলেছেন: আমি আপনার পুরো উলটো। রাত্রে গাছের পাতা নড়লেও যারা জ্বীন মনে করে আমি তাদের দলে :D । একবার ভোরের দিকে, তখনো আলো পরিস্কার হয়নি, দেখি মস্ত এক সাপ রাস্তার এপার ওপার শুয়ে আছে, আমি অর্ধেক পথ থেকে ফিরে গেলাম। সকাল হলে দেখি, পিপড়া মাটি তুলে তাদের রাস্তা তৈরী করেছে। যেটাকে আমি অন্ধকারে মস্ত সাপ ভেবেছিলাম!

আপনার পুরো লিখাটাই খুব সাবলীল। যেভাবে শুরু করে যেভাবে শেষ করলেন, চমৎকার!

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৪

সুখী মানুষ বলেছেন: টরপিড ভাই, রাত হইলো মেয়ে মানুষের মত। রাতের ভিতর অনেক মায়া। তাই সে একটা আস্তরণ তৈরী করে সবাইকে দূরে রাখে। একবার যদি শুধু আপন করে নিতে পারেন। তখন দেখবেন কি অসম্ভব মায়া এর ভিতর। শুরু করে দেন রাতের হাটাহাটি...

৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:১৪

জাহাঙ্গীর গুরু বলেছেন: ভাইজানের বাড়ী কি কুমিল্লা নি? নাগাইস আমার মামুর বাড়ী। আপ্নের লেখনের স্টাইলডা ভালা। পছন্দ হইসে ................।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫২

সুখী মানুষ বলেছেন: হুম ভাই, সাহেবাবাদ আমার বাড়ী কুমিল্লার।
আলহামদুলিল্লাহ, লেখার ষ্টাইল ভালো লাগার জন্য। লেখার ভিতরের মায়া, মমতাগুলান যেদিন ভালো লাগবো সেইদিনই আমি লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করবো ভাই আমার ;)

৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭

প্রামানিক বলেছেন: পুরোটাই পড়লাম। লেখা ভাল লাগল। ধন্যবাদ

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:০৯

সুখী মানুষ বলেছেন: ধন্যবাদ তো আমি দিবো :)

৫| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০০

রানা আমান বলেছেন: ভালো লেগেছে লেখাটা ।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:০৩

সুখী মানুষ বলেছেন: পরের পর্বে আপনাকে আরো ভালো কিছু দেওয়ার ইচ্ছা রইলো। ধন্যবাদ ভাই আমার...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.