![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।
আমার_দেখা_রাতগুলি - ০৬
জ্বীন দেখে পাশের বাড়ীর এক রিক্সাওয়ালা ভয়ে মরেমরে দশা। তার নাম মিজান, মিজানকে দেখতে গেলাম। ভয়ে বেচারার আমাশা হয়ে গেছে। পরিচিত মুখ দেখছেও চমকায়ে উঠে। কুমিল্লার ভাষায় যাকে বলে ছেবড়া খাইয়া উঠা। ঘটনা মিজানের মুখে শুনতে পারলাম না। সুঠাম দেহের একটা পুরুষ, ভয়ে চুপশায়ে একাকার। কথাটা পর্যন্ত বলতে পারতেছে না। অন্যের মুখে যা শুনলাম তা হইলো, গত রাত্রে সব রিক্সাওয়ালারা যখন বাড়ী ফিরে গেলো। তখনো মিজান বসে আছে আরেকটা খেপের জন্য। রাত বারোটার দিকে দুইজন লোক তার রিক্সায় উঠলো। ব্রাহ্মণপাড়া ঈদগাহ মাঠের কাছে আইসাই নাকি বলছে, তুমি একটু দাঁড়াও আমরা আসতেছি। এই বলে দুইজন নেমে গেলো। মনের সুখে এই ফাঁকে মিজান একটা বিড়ি ধরাইলো। কিছুক্ষণ পর লোক দুইটা আইসা বলছে, চালাও। সামনে বাঁশ ঝাড়। যেই ঝাড়ের নীচে ঢুকছে তখনই নাকি শুরু হইলো মচর মচর আওয়াজ। পিছন ফিরা সে দেখে দুইজন আসলে মানুষ না, তারা জ্বীন। ঈদগাহ এর পাশে যে কবরস্থান আছে, এইখান থেকে তারা লাশ চুরি করে নিয়া আসছে। এই লাশ তারা মচর মচর কইরা চাবায়ে খাচ্ছে। ব্যাস, মিজান অজ্ঞান হয়ে গেলো।
ঘটনা শুনলাম। কিন্তু উত্তেজিত হইতে পারলাম না। কারন জ্বীন কেন রিক্সায় উঠবে? আর এত রাত্রে যাত্রীরা কোথায় গেলো এই দিকে একটুও নজর দিবে না তাও হইতে পারে না। এমন নানাবিধ যুক্তি দিলাম, কোন যুক্তিতেই ঘটনা সত্য তা মনে হইলো না। বেচারা ভয় পাইছে সত্য, কিন্তু না জানি ভয় পাইতে গিয়া যাত্রীকেও কতটা ভয় দিলো তা কেউ ভাবতেছে না।
গ্রামের ভিতরতো রাতের বেলা অনেক হাটাহাটি করলাম। ভাবলাম, এবার সদর রাস্তা ধরে রাতের বেলা হাটবো। প্রতিদিন সকাল বেলা যে সড়কটা দিয়ে স্কুলে যাই, এই সড়কের রাতের রুপটা কেমন তা দেখা দরকার। হয়ত মনের কোনায় মিজানের ভয় পাওয়া জায়গাটা দেখার একটা লোভ ছিলো। স্কুলের মাঠ পার হয়ে আমি বাজারের দিকে হাটা দিলাম। লালু নামের যে কুকুরটা বাচ্চা দিয়েছিলো সে আমার সঙ্গ দিতে এগিয়ে এলো। এবারের সিজনের তার একটা বাচ্চাও টিকে নাই। পরিচিত মানুষ দেখলেই সে একটু কাছে ঘেঁসার চেষ্টা করে। হয়ত একটু সমবেদনা আশা করে। বললাম
- লালু কেমন আছস?
লালু আওওও... করে একটা শব্দ করলো। মনে হইলো, সে হয়ত বলার চেষ্টা করতেছে- আমি লালু কেমন আছি এই কথাটা আর কেউ জিজ্ঞাসা করে নাই। সন্তানহারা মা যেমন থাকে, আমিও তেমন আছি। কামাইরা খালের পুল পর্যন্ত লালু আমার পিছ পিছ গেলো। কুকুরের এলাকা ভাগ করা থাকে। ভাবলাম, শুধু শুধু লালুকে বিপদে ফেলে লাভ নাই। বললাম, লালু ফেরত যা, আর আসা লাগবো না। ঈশারা দিয়ে বললাম, যাহ যাহ। লালু আবারো পিছন পিছন আসা শুরু করলো, বললাম যাহ রে বাবা, আমি ভয় পাবো না। লালু কী মনে করলো কে জানে। লেজটাকে গুটায়ে মাটিতে বসে পড়লো। তারমানে ঠিক আছে সে যাবে না, তবে অপেক্ষা করবে।
বাজারের ভিতর ঢুকলাম। বাজারের তিনটা গলি পার হওয়ার পরেই মেইন সড়ক। সুনসান নিরবতা। গলির মুখে মুখে মাঝেমাঝে দুই একটা কুকুর দেখা গেলো। কানটা একটু খাড়া করে কিছু একটা বুঝার চেষ্টা করে। তারপর আবার ঘুমায়। এরা হয়ত চোর পাহাড়া দেয়। হাটার ভঙ্গি দেখে অথবা থট রিডিং করে হয়ত এরা বুঝে যায়, কে চোর আর কে না। সৃষ্টির নিম্নবর্গীয় প্রাণীদেরকে উপরওয়ালা উচ্চামার্গীয় ক্ষমতা দিয়ে দিয়েছেন। ভূমিকম্পের বহু আগেই পিপড়া টের পায়। ঝড়ের অনেক আগেই ইদুর টের পায়। মানুষতো পাশের মানুষের মনে কী আছে তাই টের পায় না, প্রকৃতিতে কী টের পাবে?
একটা দোকানের ভিতর থেকে দেখলাম মেয়ে মানুষের চাপা হাসির শব্দ ভেসে আসছে। রাতের বাজার অনেকটা বিচ্ছিন্ন জনপদের মত। এখানে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটাই স্বাভাবিক। আমি যতটা সম্ভব শব্দ না করে ধীরে ধীরে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম। রাতের সৌন্দর্য শুধু পথে পথেই না। ঘরের ভিতর থেকেও রাতের সৌন্দর্য্য ভোগ করা যায়। আমি আকাশের দিকে তাকাইলাম। অন্ধকারের এত রুপ! অন্ধকারের এত মায়া! রাতের পৃথিবীকে উপরওয়ালা এত সুন্দর করে সাজিয়ে রাখেন! বিয়ে বাড়ীতে মানুষ যেমন করে বিশেষ অতিথির জন্য আলোকসজ্জা করেন। তেমনি করে সৃষ্টিকর্তাও রাতের আঁধারে লক্ষকোটি তারকা দিয়ে আলোকসজ্জা করেন। বিশেষ সেইসব অতিথিদের জন্য যারা রাতের সৌন্দর্য্য ভোগ করতে পথে নামে।
মহাসড়ক ধরে হেটে যাচ্ছি। হালকা হালকা শীত পড়ছে। বোকামী করে শীতের কাপর পড়ি নাই। আমি জুবুথুবু হয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। দেখি ব্রহ্মণপাড়া ঈদগায়ে এমন কী আছে ভয় পাওয়ার। কেফায়েতউল্লাহ নামের এক ভদ্রলোকের বাড়ী ঈদগাহএর কাছে। ঠিক বাঁশঝাড়টা যেখানে শুরু এখান দিয়ে ঢুকতে হয়। তিনি কোন একজন শিক্ষকের রিপ্লেসমেন্ট হিসাবে কিছুদিন আমাদের ক্লাশ নিয়েছিলেন প্রাইমারী স্কুলে। কেফায়েত স্যারের বাড়ীর কাছে যাওয়া মাত্রই একটা চাপা কান্নার শব্দ শুনতে পেলাম। কান্নাটা কবরস্থানের পাশ থেকেই আসছে। কান্নাটা আমার দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে শুরু করলো। আমার পিছনে তখন শুরু হয়ে গেলো মচর মচর শব্দ।
আমি জানি, রাতের দুনিয়ায় ভয় ছাড়া আর অতিরিক্ত কিছুই থাকে না। আমার শীত লাগছে। ভালো শীত লাগছে। মনে পড়লো, লালুকে সাথে নিয়ে আসলেই হয়ত ভালো ছিলো। কান্নার শব্দটা একটু কমে গেলো। এখন কেমন যেন বাতাসের সাথে দুলছে শব্দটা। খেয়াল করে দেখলাম, একটু আগে দমকা বাতাস এসেছিলো। বাতাসে বাঁশের ঝাড়ে শব্দ হয়েছে। এবং কান্নাটাও বয়ে নিয়ে এসেছে। হয়ত বাতাস যেদিক থেকে আসছে, সেদিকেই কেউ একজন কান্না করছে। আমার রাতের ঘুরাঘুরির অভিজ্ঞতায় কত নারীর কান্না যে শুনতে পেলাম! সংসার নামক যন্ত্রটা যারা চালিয়ে নিয়ে যান, তাদের কেন এত কষ্ট পোহাতে হয় তা আমি জানি না। আশেপাশেই কোন একজন রমনী কান্না করছেন। আমাকে এই গভীর রাতে দেখতে পেয়ে হয়ত ভয় পাবেন না হয় বিব্রত হবেন। কী দরকার? আমি উল্টা পথে হাটা দিলাম, আমার জন্য লালু অপেক্ষা করে বসে আছে কামাইরা খালের পুলের কাছে। আমি জানি লালু অপেক্ষা করে থাকবে। পশু পাখীরা ভালোবাসায় আমৃত্যু অপেক্ষা করে। আমরা মানুষেরাই শুধু ভালোবেসে অপেক্ষা করি না। আমরা দ্রুত ক্যালকুলেটিভ ডিসিসান নেই।
২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০৪
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:১৯
আজমান আন্দালিব বলেছেন: অর্থবহ লেখাটা। ভালো লাগা জানিয়ে গেলাম।