নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখীমানুষ

সুখী মানুষ

সত্যিকারের সুখীমানুষের সাথে আমার একটাই পার্থক্য, সুখীমানুষের গায়ের জামা ছিলো না, আমার আছে।

সুখী মানুষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শৈশবের সখ

১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:২১



(বড় লেখা। শুধু তাই না, একেবারেই ব্যক্তিগত লেখা। সময় এবং ধৈর্য না থাকলে পড়ার দরকার নাই)

ছোট বেলায় দু্ইটা সখ ছিলো। একেবারে উথাল পাতাল সখ।

প্রথম সখটা হইলো একটা ওয়াটার পাম্প। সব সময় দেখতাম, পানি উপর থেকে নীচের দিকে যায়। এই প্রথম একটা যন্ত্র দেখলাম, যা নাকি নীচের পানিকে কী সুন্দর করে উপরে টেনে নিয়ে আসে! জমিতে সেচ দিতে এই যন্ত্র আনা হইতো। এই যন্ত্রটা যে ছেলেটা চালাইতো, তাকে খুব হিংসা লাগতো। ভাবতাম, কত বড় সৌভাগ্য হইএ এমন মেশিন চালানো যায়! শুধু কি তাই? এই কাজটা করার পরে উল্টা তাকে টাকাও দিতো লোকজন! ভাবা যায়? মা'র কাছে গিয়া বললাম
- মা আমারে একটা পানির পাম্প কিনে দাও।
মা হাসেন, পাত্তা দেন না। বলেন
- বাবু, পানির পাম্প দিয়া তুই কী করবি?
আমি খুব কনফিডেন্টলি বলি
- পানি হিচবো, উল্টা টাকাও পাওয়া যাইবো।

পানির পাম্প আর কেনা হয় না। এলাকায় যেখানেই পানি সেচের খবর পাই, সারা দিন মেশিনের পাশে দাঁড়ায়ে থাকি। কী অদ্ভুৎ সুন্দর একটা যন্ত্র! কিছু কিছু যন্ত্রে আবার একটা ছোট্ট পাইপ দিয়ে গরম পানি পড়ে! এত মজা'র যন্ত্র হয়! এত মজার! তিন, চার বছর বয়সেই বুঝে গেলাম, এই স্বপ্ন আমার সফল হবে না। বড় হওয়ার পর হঠাৎ করে পানির পাম্পের কথা মনে হইলো। দুই, তিন দিনের ইনকাম দিয়েই আমি একটা পাম্প কিনতে পারি। কিন্তু সেই স্বপ্নটা এখন কেবল শৈশবের একটা সুখকর-হাস্যময় স্মৃতি ছাড়া আর কিছুই না।



প্রাইমারী স্কুলে ভর্তি হইলাম। প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে আমার বন্ধু আনোয়ারের বাড়ী। ওদের বাড়ী যাওয়ার পথে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর জিনিসটা দেখলাম। একটা এয়ারগান। বন্দুকের সামনের নলাটা টান দিয়ে নীচের দিকে নামাতে হয়। একটা রাউন্ড (গুলি) পুড়াতে হয়। তারপর আবার নলাটা উপরে তুলে দিতে হয়। ব্যাস বন্দুক রেডি। বাম চোখ বন্ধ করে, ডান চোখে এইম করে গুলি করা লাগে। বন্ধুর বাড়ী আর যাওয়া হইলো না। বন্দুকওয়ালার পিছন পিছন ঘুরতে শুরু করলাম। গুলি করে হয়ত একটু ঘুঘু বা বক মারলো। বন্দুকওয়ালার সাথে আমরা দশ, বারোজন ফলোয়ার। দৌড় দিয়ে যাই, কে কার আগে পাখীটা ধরে জবাই করতে পারবে। সন্ধা হয়ে গেলো, ভুলেই গেলাম আমি গ্রামের রাস্তা খুব বেশী চিনি না। বন্দুকওয়ালার পিছন থেকে একে একে সবাই চলে গেলো। বাকী রইলাম কেবল আমি। ভদ্রলোক আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন
- মনা তুমি বাইত (বাড়ী) যাইতানা?

বাড়ীর কথা মনে হওয়ায় হঠাৎ ভয়ে একাকার হয়ে গেলাম। হায় হায় বাড়ীতো আমি চিনি না! বন্দুওয়ালা যে লোক, তারেওতো আমি চিনি না? শুরু করলাম কান্না। ভদ্রলোক আমাকে খুব আদর করলেন। আব্বার নাম জিজ্ঞাসা করলেন। আব্বার নাম বলার পর তিনি বললেন
- ও তুমি আউয়াল স্যারের পোলা!
তারপর বাড়ীতে নিজে এসে দিয়ে গেলেন। ভদ্রলোকের নাম সেলিম, বাদশা কাকু'র ছেলে। এর পর সুযোগমত থাকি কখন আবার সেলিম ভাইয়ের সাথে দেখা হবে। কখন আবার এয়ারগানের পিছু পিছু ঘুরবো। এমন করে অনেক দিন ঘুরলাম। একদিন আমাকে এয়ারগানটা ধরতেও দিলেন! সেইদিন উত্তেজনায় সারা রাত ঘুম হইলো না! শুধু কি তাই? আরো কিছু দিন পর, আমাকে একটা গুলিও করতে দিলেন। নিশানা ছিলো একটা লুঙ্গি। কী নিঁখুত ছিলো আমার নিশানা, আহা! দৌড় দিয়ে আবার রাউন্ডটা কুড়িয়ে ফেরতও দিয়েছিলাম।

কাকু তখন বছরে দুই একবার ঢাকা থেকে বাড়ীতে যান। বাড়ীতে গিয়ে মা'র কাছে শুনলেন, আমি পড়াশোনা করি না। সারাদিন এয়ারগানের পিছনে ঘুরে বেড়াই। কাকু বললেন
- ভালো রেজাল্ট করো, করলে তোমারে আমি একটা এয়ারগান কিনে দিবো।
জিজ্ঞাসা করলাম, কতটা ভালো রেজাল্ট করতে হবে?
কাকু'র দেয়া টার্গেটের চাইতেও ভালো রেজাল্ট করেছিলাম। কিন্তু এয়ারগান আর কাকু কিনে দিচ্ছেন না। জীবনে প্রথম অনুভব করলাম, "টাকা চেয়ে বাবাকে চিঠি লেখো" টাইপ চিঠি শুধু পরীক্ষার খাতায় লেখলেই চলবে না। এয়ারগান চেয়ে চিঠি বাস্তবে কাকুকেও লেখতে হবে। এক বন্ধুকে ধরে বাজারে গেলাম। পোষ্ট অফিস খোঁজে বের করলাম। দুই টাকা দিয়ে একটা হলুদ রঙ্গের খাম কিনলাম।

কাঁপা কাঁপা হাতে কাকুকে চিঠি লেখলাম

কাকু,
পত্রের প্রথমেই কুশল জানাই। আরো জানাই গোলাপ ফুলের শুভেচ্ছা...

এই চিঠি কাকু'র হাতে পড়ার আগেই পড়লো মেজো ভাইয়ের হাতে। মেজো ভাই তখন থাকেন ঢাকায়। পরের বার যখন তিনি বাড়ী গেলেন। এই চিঠিকে কেন্দ্র করে এমন অপমান করলেন, এমন অপমান! বাড়ীর সবার সামনেই বললেন
- কত বড় বেকুব হইলে, কাকুকে গোলাপ ফুলের শুভেচ্ছা দেয়! এই বুদ্ধি নিয়া জীবনে ভাত খাইয়া যাইতে পারবি? তোরে দিয়া কোন কিছু যে হবে না, তা আমি লেইখ্যা দিতে পারি...।

লেখা'র কারনে জীবনে এই প্রথম কাঁদলাম। তখন ক্লাশ সেভেনে পড়ি। আত্মসম্মানবোধ কোথায় যেন চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো। বুঝলাম, এয়ারগান কিনে দেওয়ার কথাটা কেবলমাত্র একটা সান্ত্বনা ছিলো। এও বুঝলাম, কাকু কেন আমাকে এয়ারগান কিনে দিবেন? একটা এয়ারগানের দাম তখন আঠারোশো টাকা। এ অনেক টাকা।

বড় হয়ে গেলাম। পাখী মারা এখন আমার বিবেকে আর সমর্থণ করে না। তবু এয়ার গানের সখটা আমার রয়ে গেছে। ঠিক ছোটবেলার মতই রয়ে গেছে। এখনো হুট করে মনে হয়, সেলিম ভাইয়ের পিছন পিছন যাই...। লেখালেখি নিয়ে এখনো সামনে, আড়ালে অনেকেই অপমান করেন। কিন্তু তা আমার কানে আসলেও গায়ে লাগে না। কারন লেখালেখির কারনে সবচেয়ে বড় অপমানটা আমার শৈশবেই আমি পেয়ে বসে আছি। শৈশবের অন্য সব অপমান প্রায় ভুলেই গেছি। কিন্তু এই অপমান ভুলি না। শৈশবের প্রায় সব সখই দেখলাম খুব সস্তায় কেনা যায়। কিছু সখ কিনে মিটিয়েছি, কিছু সখ হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেছি, হায় হায় এই সখও আমার ছিলো! কিন্তু এয়ারগানের সখটা এখনো ঠিক তেমনি আছে, ঠিক তেমনি। একটা এয়ার গান কিনবো, সময় নিয়ে, দেখে শুনে কিনবো...।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮

নাজমুল হাসান স বলেছেন: না পড়ে নিলাম। তবে এতটা বড় লেখে নয়। লেখনির ধরন টা অনেক বড়

১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৮

সুখী মানুষ বলেছেন: "ধরন টা অনেক বড়" টা বুঝি নাই ভাই।

২| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪

শূণ্য মাত্রিক বলেছেন: অসাধারণ লিখেছেন ভাই। :)

৩| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩২

শুভ্রা হক বলেছেন: ইন্টারেস্টিং শখ "ওয়াটার পাম্প।"
আহা শৈশব !
" শৈশবের প্রায় সব সখই দেখলাম খুব সস্তায় কেনা যায়। " ঠিক কিন্তু এখন বুঝি সেই " শৈশব " টাই সবচেয়ে দামি এখন, হায়!

৪| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮

ঢাকাবাসী বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন, শৈশবের কথা ভাল লাগল। বিনয়ের সাথে একটা কথা বলি, পাঠককে প্রথমেই কোন নেগেটিভ মেসেজ বা ধমকের সুরে লেখা নিয়ে কিছু অগ্রীম বলে দেয়াটা মনে হয় ঠিক না। বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে, কি বলেন? শুভকামনা।

১১ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১০

সুখী মানুষ বলেছেন: দুই একজন মাঝে মাঝে আমার লেখায় মন্তব্য করে বলেন, আপনার লেখায় একটা ম্যাসেজ থাকে। এই লেখাটা লেখার পর পড়লাম, দেখলাম কোন ম্যাসেজ নাই। কেবল ব্যক্তিগত না পাওয়ার গল্প। ভাই এমনিতেই আমার লেখার পাঠক নাই। তাই যে কয়জন আছে তারাও যেন হতশ হয়ে দূরে চলে না যান, তাই্‌ আগে থেকেই বলে দেওয়া।

যদি খারাপ লেগে থাকে তো অবশ্যই আমার চিন্তায় বিনয়টা বেশী ছিলো। এই জন্য দুঃখিত।

৫| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৭

অবুঝ অরণ্য বলেছেন: শুভ্রা হক বলেছেন: ইন্টারেস্টিং শখ "ওয়াটার পাম্প।"
আহা শৈশব !
" শৈশবের প্রায় সব সখই দেখলাম খুব সস্তায় কেনা যায়। " ঠিক কিন্তু এখন বুঝি সেই " শৈশব " টাই সবচেয়ে দামি এখন, হায়!


শৈশবটাকে ফিরে পেতে আমি আমার সব সঞ্চয় ব্যয় করতে রাজি, কিন্তু তাকে কি আর পাবো?
পাবো না । একটি দীর্ঘশ্বাস ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.