নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খাপ খোলা কলমে শাণিত হোক মঞ্চ...

কূপমন্ডূক

জানা ভালো, না জানা খারাপ, ভুল জানা অপরাধ

কূপমন্ডূক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আপোষ

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ ভোর ৬:১৬


আপোষহীনতার স্বপক্ষে শক্ত শক্ত সব গল্প বলা খুব সোজা। আপোষহীনতা নিয়ে ফেসবুকে, ব্লগে মাইকেল মধুসূদনের "মেঘনাদবধ"র মত আরেকটা মহাকাব্য লেখা তো আরো সহজ। দুই আঙ্গুলের কিছু ইতস্তত ছোটাছুটি, একটুখানি মেগাবাইট, হয়ে গেলো আপোষহীনতার পক্ষে আমাদের সোচ্চার অবস্থান।

বাবার কাছ থেকে মাসশেষে "বই কেনার টাকা লাগবে" বলে সে টাকায় গোল্ডলীফ, বেনসনের কাগজের দেহে টান দিতে দিতে, আমরা ভেতরের পশুসত্ত্বার সাথে আপোষ করে ফেলি প্রতিদিনই।

বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে রিক্সাভাড়া, বাসভাড়া, সিএনজি ভাড়া দ্বিগুণ, তিনগুণ হয়ে যায়। আমরা টু শব্দটা করিনা। সেই দ্বিগুণ, তিনগুণ ভাড়া দিয়ে আমরা রিক্সাওয়ালার অন্যায় আবদারের সাথে আপোষ করে ফেলি। কোনোদিন একবারের জন্যে বলিওনি, ভাড়া বেশি দেবো কেন?

মাছের বাজারে সব মাছে ফরমালিন, ফলের দোকানে সবখানেই কার্বাইড মাখানো ফল, আমরা তা জানিও, কিন্তু, প্রতিবাদ কেন করবো? কী দরকার? আপোষ যে আমাদেরও আষ্টেপৃষ্ঠে আটকে রেখেছে।

চোখের সামনে ছিনতাইকারী সর্বস্ব লুটে নিচ্ছে একজনের। আমরা সুবিধাজনক দূরত্বে দাঁড়িয়ে দেখছি তা। কাছে যাচ্ছিনা, আপোষ করে ফেলছি অন্যায়ের সাথে।

রাস্তায় কেউ এক্সিডেন্ট করলো, আমরা কেউ তাকে হাসপাতালে নিচ্ছি না, আমরা কেউ তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিনা। আমরা মোবাইলে ছবি তুলছি, আপোষের সাথে ঐক্যজোট করে ফেলছি সাথেসাথেই।

জিপিএ-৫, স্বর্ণ জিপিএ পাওয়ার জন্যে ছেলেমেয়েদের দাঁড় করাই অসম সমীকরণে। আপোষ করে ফেলি, কাগজের সার্টিফিকেটের সাথে। আপোষ করে ফেলি, প্রশ্নবিদ্ধ এক ফলাফলের ইঁদুরদৌড়ের সাথে। আপোষ করে ফেলি কিছু ছেলেমেয়ের জীবনের সাথেও।

ষাটোর্ধ বয়স্ক লোকটার পেনশনের কাগজপত্র আটকে টেবিলের নীচ দিয়ে বৃদ্ধের দুর্বল হাত থেকে ঘুষ নিতে নিতে আপনি, আমি বিবেকহীনতার পক্ষে আপোষ করে ফেলি নিয়মিতই। আহা! ওগুলোকে ঘুষ বলবেন না। এগুলো উপরিকামাই।

পরীক্ষার হলে মোবাইলে বইয়ের ছবি তুলে নিয়ে সুযোগমত নকল করে "Dishonesty Is The Best Policy"র পক্ষে আপোষ করছি আমরা স্বাচ্ছন্দ্যেই।

ফাস্টফুডের দোকানে গিয়ে ১৫ টাকার মিনারেল ওয়াটারের বোতল ৩৫ টাকায় কিনে আপনি, আমি আপোষ করছিনা? কোনোদিন প্রশ্ন করেছি, যে জিনিসের দাম ১৫, তার জন্যে ৩৫ টাকা দেবো কেন?

ময়লা ফেলার ডাস্টবিনের ভেতরে ময়লা না ফেলার আপোষে আমরা সবাই সিদ্ধহস্ত। অথচ, রাতে ফেসবুকে লগইন করে "দেশটা এত নোংরা, গত মাসে সিঙ্গাপুর গেলাম, ঝকঝক করছিলো" টাইপের স্ট্যাটাসও দিতে আমাদের হাত কাঁপেনা।

বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের খেলার দিনে চান-তারা খচিত পতাকাটা শরীরে জড়িয়ে আপনি যখন স্টেডিয়ামে "I Love Pakistan" লেখা প্ল্যাকার্ডটা উঁচিয়ে ধরেন, বিশ্বাস করুন, সেই মুহুর্তে আপনি ত্রিশ লাখ লাশের সাথে আপোষ করে ফেলেন, দুই লাখ ইজ্জতকে আপোষের প্রাচীরের ওপারে ছুঁড়ে ফেলেন হেলায়।

আপনার মিউজিকের প্লেলিস্ট যখন পিঙ্ক ফ্লয়েড, জাস্টিন বিবার, পিটবুলের গানে ভর্তি থাকে, অথচ সেখানে একটা বাংলা গান নেই, একজন আলতাফ মাহমুদ নেই, একজন আব্দুল জব্বার নেই, আপনি ঠিক সেই মুহুর্তেই আপোষ করে ফেলেন বিদেশী সংস্কৃতির সাথে।

আপনি, আমি আপোষহীনতার পক্ষে এত শক্ত শক্ত লেখা লিখি কীভাবে? দুমুখো সাপও তো এ দৃশ্য দেখলে লজ্জা পাবে। আমাদের মুখে "আপোষহীনতা" শব্দটা যে কুমীরের কান্নার চেয়েও অদ্ভুত, অস্বাভাবিক।

এতক্ষণ আপোষের গল্প বললাম, আপোষহীনতার গল্পও কী আমাদের কম আছে?

আপোষহীনতার গল্পজুড়ে তাঁরাই, যারা ১৯৫২ সালে পাকসার জমিন সাদবাদকে বর্বাদ করার জন্যে মিছিলে লাল রক্তের স্রোত বইয়েছিলো।

বিদেশের উচ্চশিক্ষার বিনিময়ে বুলেটের সামনে বুক পেতে দিয়ে আপোষের উলটোপথে হেঁটেছিলো রুমী।

আপনি, আমি বায়না ধরি, ভাতের সাথে এটা খাবোনা, ওটা খাবোনা। আজাদ এতকিছু চায়নি, মায়ের কাছে শুধু এক প্লেট ভাত চেয়েছিলো, পায়নি। তবুও টর্চার সেলে এক টুকরো শব্দও বের হয়নি আজাদের মুখ থেকে। ঠোটের কোণে অল্প একটু রক্ত মাখিয়ে হাসিমুখে চলে গিয়েছিলো নো ম্যানস ল্যান্ডে।

আপোষ করেনি বদি, ইন্টেরোগেশন রুমে যাকে বস্তার ভেতরে ঢুকিয়ে বস্তার চারপাশ বালি দিয়ে ভর্তি করে পিটিয়েছিলো হানাদারেরা।

আপোষ করেনি বধ্যভূমির মাংসবিহীন খুলিগুলো, আপোষ করেনি আজো দুঃস্বপ্নে চমকে ওঠা বীরাঙ্গনারা। আপোষ করেনি ক্রাচের কর্নেল তাহের, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে কবিতা পড়ে গিয়েছিলেন "জন্মেছিলাম, দেশটাকে কাঁপিয়ে যেতে, কাঁপিয়েই গেলাম।"

অথচ, এত অজস্র আপোষহীনতার গল্পগুলোকে হারিয়ে দিই আমরা, নির্লজ্জ আপোষে। আমরা আজো বিশ্বাস করি, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ-টুদ্ধ কিছু হয়নাই। সামান্য গণ্ডগোল হয়েছিলো। ভারত, দুই মুসলিম দেশকে ভাগ করে দিয়েছিলো ষড়যন্ত্র করে।

আমরা, আপোষে আপোষে দিন পার করি, নির্লজ্জ আত্মসমর্পণ করি আপোষের শঙ্খনীল কারাগারে।
আর, ওদিকে, আপোষহীনতার গল্পগুলো আস্তে আস্তে ঝাপসা হতে থাকে, অস্পষ্ট হতে থাকে।

আমরা আপোষে আপোষেই দিন পার করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.