![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিক পিরোগের "হেনরি বিনস" সিরিজের বড় ভক্ত আমি। সেই সিরিজের বইগুলোর বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত প্রকাশনালয় থেকে নিয়মিত বিরতিতে অনুবাদও বের হচ্ছে। অনুবাদের মানও যথেষ্ট ভালো। পড়ছি শুরু থেকেই, হেনরি বিনস আর ল্যাসির ভক্ত হতেও খুব বেশি সময় লাগেনি।
বেশ কয়েকদিন আগে নিক পিরোগ তার ফেসবুক আইডি থেকে মোটামুটি একটু অপমানই করলেন আমাদের। তার "হেনরি বিনস" সিরিজের বইগুলো নাকি তাঁর অনুমতি ছাড়াই বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে। দেখে একটু অবাকই লাগলো। যে প্রকাশনী থেকে বইগুলো বের হয়েছে, সে প্রকাশনী তুমুল জনপ্রিয় বাংলাদেশের পাঠকশ্রেণির কাছে।
তারা এরকম কাজ কীভাবে করলো? সত্য-মিথ্যা কিছুই জানিনা। শুধু নিক পিরোগের ফেসবুকের লেখাটাই দেখেছি। পাইরেসির এ অভিযোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রকাশনীর কর্তাব্যক্তিদের অফিশিয়াল মন্তব্য এখনো পাইনি। তবে, বিষয়টা যদি সত্য হয়, দুঃখজনক হবে।
এবার আসি আরেক প্রসঙ্গে। বেশ কিছুদিন আগে বাদল বসুর আত্মজীবনী "পিওন থেকে প্রকাশক" পড়লাম। প্রয়াত বাদল বসু, পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান আনন্দ পাবলিশার্স এর প্রকাশক ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গের অনেক খ্যাতনামা লেখকের বিখ্যাত বিখ্যাত বই তার আমলেই প্রকাশিত হয়েছে। সত্যজিৎ, সুনীল, সমরেশ, প্রতিভা, নীরোদ সি চৌধুরী, তসলিমা নাসরীন... অনেকের জনপ্রিয় বইয়ের প্রকাশক তিনি। তাঁর এ আত্মজৈবনিক ঢাউস সাইজের বইটির এক অংশে আমাদের নীলক্ষেতের কথা ছিলো। বইয়ের সে অংশটুকু পড়ে বিষাদে মনটা ভরে গেলো। আমাদের নীলক্ষেতে তথাকথিত "নীলক্ষেত প্রিন্ট" নামের বইগুলো যে পাইরেটেড বই, সে সম্পর্কেই তিনি লিখেছেন। পশ্চিমবঙ্গের লেখক, প্রকাশক, প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান... কাউকে না জানিয়েই এ দেশের বই ব্যবসায়ীরা দেদারসে বইগুলোর ফটোকপি করছেন। আনন্দ, পত্রভারতী, মিত্র এন্ড ঘোষ, দে'জ... সবার বইয়ের ওপরেই এদেশের ব্যবসায়ীরা করালগ্রাসী থাবা বিস্তার করেছেন।
এতে পাঠকদেরও বেশ লাভ। ভারতের বই বাংলাদেশে এলে ১ রুপি= ১.৮ টাকা হয়ে যায়। অর্থাৎ, যে বইয়ের দাম ১০০ রুপি, সে বইয়ের জন্যে ১৮০ টাকা খরচ করতে হয়। প্রায় দ্বিগুণ মূল্য হয়ে যায় বইগুলোর। একটা বইয়ের জন্যে প্রায় দ্বিগুণ দাম খরচ করতে অনেকেই চাইলেও পারেননা। এদেশের পাঠকশ্রেণির সিংহভাগই স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী। তাদের আয়ের উৎস হয়তো টিউশনি কিংবা হাতখরচ থেলে বাঁচানো টাকা। যেখানে ৫০০ টাকায় এক ছাত্রের এক সপ্তাহের মেসের খাবার হয়ে যায়, সে টাকায় একখন্ড নীললোহিত কেনা শুধু বাড়াবাড়িই না, অমোচনীয় পাপ, আকাশসমান ধৃষ্টতা।
নীলক্ষেত প্রিন্ট থাকায় বইগুলো পাওয়া যায় স্বল্পমূল্যে। হয়তো বাইন্ডিং এর অবস্থা থাকে নড়বড়ে পুলসিরাতের মতন, পৃষ্ঠা বিবর্ণ, নিউজপ্রিন্টের, অক্ষরগুলো ষাটোর্ধ বুড়োর ছানিপড়া চোখের মতন ঘোলাটে, তাতে কী? দাম যে খুবই কম। এই একটা দিক বিবেচনা করে, অনেকগুলো দিককে উপেক্ষা করে যাওয়াই যায়। কিন্তু...
আমরা নাহয় অল্পদামে বই পাচ্ছি। কিন্তু, আমরা যা করছি, সেটা তো চুরি। সাদা চোখে, সোজা বাংলায়, চুরি করছি। লেখক- প্রকাশকের অনুমতি না নিয়ে লেখকের লেখা, প্রকাশনীর লোগো ব্যবহার করছি বইয়ে। পাইরেটেড বই ছাপিয়ে অন্যদেশের সামনে নিজের দেশকে অপদস্থ করছি। বাদল বসুও ঠিক একই কাজ করলেন, আমাদের অপদস্থ করলেন আরেকবার।
তাকে দোষ দেবোনা। তারা কষ্ট করে একটা বই বের করেন, আমরা সে বই না বলেকয়ে মেরে দিচ্ছি, সামান্য জানানোর ভদ্রতাটাও দেখাচ্ছি না। এ কেমন সভ্যতা?
তাঁর বই পড়েই জানলাম, তিনি সমরেশ মজুমদারসহ একবার বাংলাদেশে এসে সেসময়ের প্রধানমন্ত্রী (বর্তমানেরও প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার কাছে এ বিষয়ের একটি সমাধান চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীও বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেছিলেন। কতটুকু দেখেছেন, সে তো নীলক্ষেতে গেলেই বোঝা যায়। বলার প্রয়োজন মনে করছিনা।
"পিওন থেকে প্রকাশক" পড়ে আরো জানা গেলো, বাংলাদেশেও আনন্দ পাবলিশার্সের আরেকটি শাখা খোলার পরিকল্পনা ছিলো বাদল বসুদের। সেটা হলে, ভারতের বই যেমন এদেশে সহজলভ্য হতো, তেমনি তাদের ইচ্ছে ছিলো, তারাও এদেশের লেখকদের বই প্রকাশ করবেন, সে বইগুলো ভারতেও সহজলভ্য হবে। কিন্তু, সে পরিকল্পনার বাড়াভাতে ছাই ঢেলে দিলেন এদেশের প্রকাশকেরাই। তারা রীতিমত আন্দোলনে নামলেন, যাতে এদেশে আনন্দ প্রকাশনীর শাখা খোলা না হয়। এতে নাকি, এদেশের প্রকাশকেরা মাঠে মারা যাবেন!!!
আনন্দের দ্বিতীয় শাখা বাংলাদেশে আর খোলা হয়নি, হবেওনা বোধহয় কোনোদিন।
সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত গোয়েন্দাচরিত্র "ফেলুদা" যে বাংলাদেশ ব্যাপক জনপ্রিয় তা তিনি (সত্যজিৎ রায়) জানতেন না। একবার একজন এসে তাকে জানালেন যে, তাঁর ফেলুদা বাংলাদেশের পাঠকদের ব্যাপক পছন্দ। শুনে তিনি খুশিই হয়েছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে পাশে থাকা আরেকজন ফোঁড়ন কাটলেন, "ওরা চুরি করে ছাপাচ্ছে।" সত্যজিৎ রায়ের উৎসাহ দমে গিয়েছিলো। এখনো বাংলাদেশের একটি প্রকাশনী প্রতিষ্ঠান সত্যজিৎ রায় এর বইগুলো নিজেদের প্রচ্ছদ, নিজেদের মলাট ব্যবহার করে ছেপে যাচ্ছেন। অথচ, সত্যজিৎ রায় এর বইগুলো বের করার অধিকার একমাত্র আনন্দ পাবলিশার্স এর। আর কাউকেই সে অধিকার দেয়া হয়নি। তবুও, এদেশে সে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চলছে সবকিছু।
আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণির। তলাবিহীন ঝুড়ির এ দেশটি আস্তে আস্তে তলা খুঁজে পাচ্ছে। অধিকাংশ মধ্যবিত্তের এদেশে দ্বিগুণ দামের বই কেনা যেমন বিলাসিতা, তেমনি নকল করা বই কিনলে ওপাশ থেকে লেখক, প্রকাশক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমনিতেই, উপমহাদেশের লেখকশ্রেণিকে রাখা হয় নগণ্য অবস্থানে। লোকজনের কটাক্ষ আর ভ্রুকুটির মাঝখানে লেখককে কাটাতে হয় মানবেতর জীবনযাপন। অনিশ্চিত জীবনের আলোকবর্তিকা হয়ে তাকে পেরোতে হয় কুয়াশায় ভেজা ধূসর জমিন। তাদের মস্তিষ্কজাত বইগুলো যখন অন্যদেশে নকলে নকলে সয়লাব হয়, তাদের জন্যে আক্ষেপ লাগে। আবার, নিজে যখন বই কিনি, তখন কষ্টে জমানো ঘামেভেজা নোটগুলোর জন্যে আক্ষেপ লাগে। তখন হাত চলে যায় পাইরেটেড বইগুলোর দুর্বল পৃষ্ঠার দিকে। অল্প দামে অধিক বই কেনার নীতিতে বিশ্বাসী হতে চায় মন, তীব্র দংশন করে বিবেক।
সরলদোলকের মত দুলতে থাকি এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে। কোনদিকে যাবো বুঝে উঠতে পারিনা। কোনপ্রান্তে সমর্থন জানানো উচিত, বোধগম্য হয়না। সরলদোলকের মত একবার লেখকের দিকে, অন্যবার পাঠকের দিকে চলে যায় সমর্থন। বিবেক আর অ-বিবেক এর দুষ্টচক্রে ঘুরপাক পায় সবকিছু।
২| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:০৪
কূপমন্ডূক বলেছেন: ধন্যবাদ, মন্তব্যের জন্যে
পাঠকদের সচেতন হওয়া দরকার। কিন্তু, সেখানেও সমস্যা আছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের একটা বই দেখলাম। নামঃ দেখি নাই ফিরে। লেখকঃ সমরেশ বসু। এ বইয়ের বাংলাদেশ মূল্য ২৭০০ টাকা। Pdf এ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ১০০ মেগাবাইটের বিনিময়ে। পাঠক নিশ্চয়ই ২৭০০ টাকা খরচ করে বইটি কিনতে যাবেনা। আসলে, এ দ্বন্দ্বটা বারমুডা ট্রায়াঙ্গল এর মতই রহস্যময় যেন। কোনোকিছুই ঠিক মিলছেনা।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:৩১
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেক সুন্দর লিখেছেন। আবেগময় কিন্তু যুক্তহীন নয়। মডারেটরদের উচিৎ ছিল লেখাটাকে নির্বাচিততে নেয়া। কিন্তু সমস্যাটা হলো, আপনি ফুল, পাতার ছবি তুলে পোস্ট করুন- সেটা সাথে সাথেই নির্বাচিততে যাবে, গুরুত্বপূর্ন কিছু হয়ত তাদের চোখেই পড়বে না।
যাক।
চুরি সবসময় চুরি। আমরা যখন একটা পাইরেটেড বই পড়ি, তখন চুষে খাই একজন লেখকের রক্ত। অ্যামেচার সাহিত্যিক তো সবাই নন। যাদের বই সাধারণত পাইরেসির খপ্পরে পড়ে, তারা ফুলটাইম রাইটার। লেখাই তাদের পেশা, নেশা। বই বেচেই পেট চলে। সেই লেখকদের বই মেরে দেয়া মানে তাদেরই মেরে দেয়া।
এর প্রতিকার কী জানি না। তবে পাঠকদের উচিৎ পাইরেটেড বই না কেনা,না পড়া। না বলে পিডিএফ তৈরীকরে অনলাইনে ছেড়ে দেয়াও পাইরেসি।
গোটা পৃথিবী যখন পাইরেসির বিপক্ষে তখন আমাদের নামিদামি প্রকাশকেরা পর্যন্ত চোখ বন্ধ করে একাজ করে চলেছেন!