![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছে, "Don't Judge A Book By It's Cover." কথাটা ধ্রুবসত্য। ভেতরের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণ না করে শুধুমাত্র বইয়ের মলাট দেখে, চোখধাঁধানো প্রচ্ছদ দেখে কোনো বইকে বিচার করা কূপমণ্ডূকতার লক্ষণ। তবে, মাঝেমধ্যে, প্রচ্ছদ দেখে, সুন্দর মলাট দেখেই বই কিনতে ইচ্ছে করে। ভেতরের বিষয়বস্তুকে অজ্ঞাত কারণে উপেক্ষা করতে চায় হৃদয়ের অচেনা প্রকোষ্ঠ।
ফেব্রুয়ারির ২৮ তারিখ, সকাল ১১টায় মেলা শুরু হলো। ঘুরছি স্টল থেকে স্টলে। চট্টগ্রামের বাতিঘরের স্টল দেখলাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এক অংশে। চট্টগ্রামের "বাতিঘর" এ একবার গেছি, গিয়ে মুগ্ধ হয়েছি। বইয়ের সংগ্রহ তো বটেই, অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা সুস্থ, অভিজাত রুচির পরিচয় দিয়েছিলো। চট্টলাবাসী আর কিছু নিয়ে গর্ব করুক আর না করুক, এ "বাতিঘর" নিয়ে গর্ব করতেই পারে। রাজধানী ঢাকাতেও বইয়ের এরকম সংগ্রহশালা খুব কম আছে।
তো, বাতিঘরের স্টলে গেলাম। স্টলটাও অন্যান্য স্টলগুলোর চেয়ে ভিন্ন নকশার। মেঝেতে কাঠের পাটাতন। কাঠের তাকে বইয়ের সারি। যে বইটা পছন্দ বেছে নিলেই ঝামেলা চুকে যাচ্ছে। টাকা পরিশোধ করার বিষয়টিও সামঞ্জস্যপূর্ণ। বই দেখছি, হঠাৎ করে একটা বইয়ের ঝকঝকে মলাটের ওপরে চোখ আটকে গেলো। বইয়ের নামঃ "শহীদ কাদরীর সাথে কথাবার্তা।" শহীদ কাদরীকে খুব ভালোভাবে চিনেছি তাঁর মৃত্যুর পরে, লজ্জাজনক হলেও এটাই বাস্তব কথা। আমি বাংলাকাব্যের খুব একটা নিয়মিত পাঠক নই। আমার দৌড় জীবনানন্দ আর রবিঠাকুরেই শেষ। তাছাড়া, শহীদ কাদরী মাতৃভূমি ছেড়ে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছেন অনেক আগে। সুতরাং, পাঠক এবং কবির মধ্যে সংযোগসেতুটা ঠিক কখনোই ওভাবে গড়ে ওঠেনি।
তাঁর প্রয়াণের পরেই জানলাম, আমাদেরও এক অভিমানী কবি ছিলেন। যিনি লেখকদের নগ্ন দলবাজি, সস্তা সাহিত্যের গলাবাজি সহ্য করতে না পেরে একরকম পালিয়েই চলে গেছিলেন প্রবাসে। কলমের কালি তখনো শুকিয়ে যায়নি তাঁর। কিন্তু,বিদেশে গিয়ে আর লিখতে পারলেন না সেভাবে। তাঁর ভাষায়, "পাণ্ডববর্জিত এই মার্কিনমুলুকে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে রইলাম।" সেই শহীদ কাদরীকে নিয়ে বই। কয়েকটি পত্রিকা, কয়েকজন ব্যক্তিকে দেয়া তাঁর নির্মেদ সাক্ষাৎকারের ১২৮ পৃষ্ঠার একটি সংকলন। প্রথমেই বলেছি, এ বই মলাট দেখে কিনেছি। অসাধারণ সুন্দর একটি মলাট এ বইয়ের। প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা। তাকে একটি ধন্যবাদ এখনই না দিয়ে রাখলে পরে বিস্মৃত হয়ে গেলে বড় অন্যায় হবে।
বইয়ের প্রসঙ্গে আসি। সাধারণত, বইমেলা থেকে বই কিনলে আমি ফ্ল্যাপের লেখা আর দৈবচয়িত দুয়েক পৃষ্ঠা পড়ি। সব যদি আগেই পড়ে ফেললাম, গাঁটের পয়সা খরচ করে বই কিনে কী লাভ... এ বোধ ভেতরে ভেতরে পীড়া দেয়। তাই, বই পছন্দ হলেই হলো। দুম করে কিনে ফেলি। এক্ষেত্রেও সেটা হলো। কিনে ফেললাম বইয়ের বিষয়গত বা আঙ্গিকগত কোনো বিচার-বিশ্লেষণ না করেই।
গত সন্ধ্যায় পড়া শুরু করলাম। একটানা পড়তে পারিনি। সামাজিক মাধ্যমের নির্বাক অথচ শক্তিশালী আহবানে মাঝেমধ্যেই সাড়া দিতে হয়েছে। মাঝেমধ্যে, অন্য বইও পড়েছি। তবে, বইয়ের ২৫ পৃষ্ঠা অতিক্রান্ত হওয়ার পরেই তরতর করে পড়া শুরু হলো। চোখের সামনের ফুলস্কেপ কাগজে যেন "শহীদ কাদরী" নামক এক অভিমানী বৃদ্ধের চেহারা ফুটে উঠলো, অনেকটা সাদা কাগজে স্কেচের মতন।
যারা নব্য কবি, যারা দুয়েকটা ছন্দনির্ভর কবিতা লিখেই নিজেদের বড় মাপের কবি ভাবতে শুরু করেছেন, তাদের জন্যে এ বই অবশ্যই পাঠ্য। নানা জনের নানা প্রশ্নের উত্তরের মধ্য দিয়ে উঠে এসেছে কবিতা লেখার প্রয়োজনীয় কাঠামোর বর্ণনা, "কবিতা" শুধু যে কবিতাতেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত না, ইতিহাস, দর্শন, প্রযুক্তি, বিজ্ঞান... সবক্ষেত্রকে ছুঁয়ে যে কবিতাকে এগোতে হবে, এ মনোভাব শহীদ কাদরী কয়েকবারই ব্যক্ত করেছেন। কবিকে গ্রহণ করতে হবে সব, ধারণ করতে হবে সবকিছু। ইউরোপের সাহিত্য, প্যাটার্ণ, আবার চৈনিক নকশা, সেসাথে আমেরিকার কাব্য ফরম্যাট, সবকিছু নিয়েই কাজ করতে হবে কবিকে। নিতে হবে সবকিছুই, কিন্তু নিজের মন্তব্যটা প্রকাশ পেতে হবে স্বাধীন ভঙ্গিতে... অভিমানী কবির কথাতে এ বিষয়টি উঠে এলো স্পষ্টভাবে।
বই পড়ছি, পড়ে যাচ্ছি, একটা সময়ে খেয়াল করলাম আমি বইয়ের শেষপৃষ্ঠাতে চলে এসেছি। এর আগেই অবশ্য জেনে ফেলেছি কবির সাহিত্যজীবন শুরুর কথা, আরেক বিখ্যাত কবি শামসুর রাহমানের সাথে তাঁর ঘনিষ্ঠতার কথা, কবি আল মাহমুদের সাথে তাঁর বন্ধুত্বের কথা, প্রথম লেখা প্রকাশ হওয়ার কথা, লেখালেখি ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে না যাওয়ার আক্ষেপের কথা, দেশের জন্যে মনখারাপের কথা... শহীদ কাদরীর জীবনের অনেক দিক, বহুমাত্রিক প্রেক্ষাপট, বিভিন্ন উচ্চতা থেকে উঠে এলো ছোট এ বইটিতে।
বইটি শেষ করি শহীদ কাদরীর একটি কবিতার একাংশ দিয়ে। ছোটবেলায় আমরা রচনার উপসংহারে কবিতা জুড়ে দিতাম, নাম্বার বেশি পাওয়ার আশায়। এ লেখায় সে বালাই নেই, তবে, কেন যেন মনে হচ্ছে, এ অভিমানী কবির একটি কবিতার কয়েক লাইন না লিখে লেখাটা শেষ করলে, তিনি হয়তো ফের অভিমান করে বসবেন।
"একটু পরেই রাত, তারপর জল
আপন ঠান্ডা করাত দিয়ে ফালি-ফালি
কাটবে দু'জনকে।
মনে পড়বে আত্মীয়স্বজনকে, যারা, ঘুমে আত্মহারা
নতুন করোগেটের নিচে, এখন মিছে-
মিছি কপালে চপেটাঘাত ক'রে লাভ নেই,
দাঁড়াও, আমি আসছি
তোমাকে চাই ভাসতে-ভাসতে
ডুবতে-ডুবতে,
ডুবে যেতে-যেতে আমার
তোমাকে চাই
দাঁড়াও, আমি আসছি..."
২| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ১০:৪৮
কূপমন্ডূক বলেছেন: অবশ্যই।
৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪০
হাতুড়ে লেখক বলেছেন: সংগ্রহ করবো।
৪| ০২ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ১১:৪৫
কূপমন্ডূক বলেছেন: অবশ্যই। সংগ্রহে রাখার মতই বই এটি।
৫| ০৩ রা মার্চ, ২০১৭ রাত ৮:০৯
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: শহীদ কাদরীর সাথে আমার পরিচয়ও ভাসাভাসা। পাঠিক ও কবির মধ্যকার পরিচয়ের কথা বলছি। "তোমাকে অভিবাদন প্রিয়তমা" পড়েছি তাকে না জেনেই। কবিতা প্রিয় তালিকায় ছিল,
এরপর সৈয়দ হকের আত্মজীবনীতে তাকে জানার একটু সুযোগ হয়। বুঝতে পারি, কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তিনি আমাদের সাহিত্য।
পারলে সংগ্রহ করে নেব অবশ্যই।
আপনার লেখাটা সুন্দর। অনেক আবেগভরা। ঈর্ষাকরার মত গদ্য আপনার।
৬| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৭ বিকাল ৫:৪৪
কূপমন্ডূক বলেছেন: প্রথমেই ধন্যবাদ। একটা সময়ে শামসুর রহমান-শহীদ কাদরী-আল মাহমুদ এ তিনজন ছিলেন বাংলা কাব্যের ত্রিস্তম্ভ। কিন্তু, হুট করে কেন যেন মঞ্চের বাইরে অদৃশ্য হয়ে গেলেন শহীদ কাদরী
এ আফসোস চিরকালীন।
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:৫৮
আহা রুবন বলেছেন: ছয় সাত বছর আগে ওঁর একটি বই কিনেছিলাম। কতবার যে পড়েছি হিসেব নেই - যতবার পড়ি নতুন মনে হয়, নতুন করে উপলব্ধি করতে হয়। মনে হয় এটি তো আগে খেয়াল করিনি। অবাক করার বিষয় হল তিনি খুব সামন্যই লিখেছেন। তবু তাঁর নাম বাংলা সাহিত্যের আকাশে জ্বলজ্বল করবে। আমরা যারা নতুল লেখালেখি করি তাদের শহীদ কাদরী পড়া উচিত।