![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এক ভাই অনেক আন্তরিক। দীর্ঘদিন ধরেই তার সাথে পরিচয়। প্রায় সময় আসেন তিনি আমার অফিসে। গল্প করেন। বেশ আন্তরিকতাও দেখান। তিনি আসলেই আমাকে বলবেন ‘ভাই আপনি আমার ছোট ভাইয়ের মতো। এতো ভাবেন ক্যান? মনে ফুর্তি রাইখা কাম কইরা জান। এই ভাই আপনের পাশে আছে। যহন যা লাগব আমারে কইবেন, আমার সহযোগিতা সবসময়ই পাইবেন’।
ভালো লাগে মানুষটার আন্তরিকতা। হতাশার মধ্যেও তার আন্তরিকতা আমাকে সাহসি করে। তিনি প্রায় সময় আমাকে অনেক কিছুরই অফার করেন। এই যেমন, চাইনিজ খেতে যাওয়া, বিশেষ দিনে ড্রিংক করা। এমন আরও অনেক কিছু। কিন্তু আমিই তাকে সময় দিতে পারি না। আসলে সময় দিতে পারি না তা নয়, ইচ্ছে হয় না।
ক’দিন ধরেই হাতের অবস্থাটা ভালো যাচ্ছে না। টাকা পয়সার খুউব টানাটানি যাচ্ছে। হতাশারা বেশ ঝেকে বসছে। কারো কাছ থেকে যে ধার চাইব,খারাপ সময়টা পার করব। তা আর পারছি না। আসলে কারো কাছে ধার চাইতে পারি না। এটা আমার অনেক পুরনো অব্যাশ। সবার দ্বারা সব কিছু হয় না।
গতকাল রাতে শোবার সময় ভাবছিলাম, কারো কাছে ধার কিছু টাকা চেয়ে নেই। কিন্তু কার কাছে চাইব ? চাইলে যদি না পাই ? সে ত অনেক লজ্জার। এমনটা ভাবলাম অনেকক্ষন। এরপরই মনে হলে সেই ভদ্রলোকটির কথা। তিনি আমার প্রতি যে আন্তরিক সে ক্ষেত্রে একমাত্র তার কাছেই চাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এটা ভাবতেই লজ্জা হচ্ছিল। কি না কি মনে করেন তিনি।
আজ আর উপায় নেই। আমার কিছু টাকার খুবই দরকার। তাই ঘুম থেকে উঠে প্রথম মনে করলাম সেই ভদ্রলোকটিকে। তিনি ব্যবসায়ী মানুষ। তার কাছে সবসময়ই টাকা থাকে। ২০/৫০হাজার টাকা তার কাছে চাইলেই পাওয়া যেতে পারে।
সেলফোনটা উঠিয়ে কিছুটা সংকোচে ভদ্রলোকটির নাম্বারে ডায়ল করলাম। সেই আগেকার মতোই আন্তরিকতায় তিনি বললেন, ‘আরে ভাই কি সৌভাইগ্য। ভাই, কন ক্যামন আছেন? কি খবর’? এমন এক নিঃশ্বাসে তিনি আরও অনেকগুলো কথা বললেন। আমি আমতা আমতা করে বললাম ‘ভাই আপনার সাথে একটু কথা ছিল’।
‘হা ভাই, কন কন, কি কইবেন’।
‘না মানে আপনার সাথে দেখা করে বললে ভালো হতো’।
‘তাইলে ভাই চইলা আসেন, আমি বাসায়ই আছি’।
‘তাহলে বেশ, আজ শুক্রবার নামাজ শেষ করে আসি’?
‘হ তাইলে ভালাই অয়, দুই ভাইয়ে বইসা আড্ডা দেওন যাইব’।
নামাজ শেষ করে আমি গেলাম সেই ভদ্রলোকের বাড়ি। কিছুটা সংকোচ বুকে। আমাকে দেখে তিনি আন্তরিকতার সাথেই তার পাশে বসালেন। মুখে আবারও সেই আন্তরিকতার ফুলঝুড়ি। ভালো লাগছে, মনে হচ্ছে আমার এই সময়টাতে তিনিই আমাকে সাহয্য করতে পারবেন,করবেন।
অনেকক্ষণ ধরে তিনিই বলে যাচ্ছেন। আমি তেমন কিছুই আর বলার সুযোগ পাচ্ছি না। এরমধ্যে তার এক লোক এসে তাকে ২টি ১হাজার টাকার নোটের বন্ডিল দিয়ে গেলেন। তার স্ত্রী-মেয়েও বের হলেন মার্কেটের উদ্দেশ্যে। কিন্তু আমি এখনও তাকে বলতে পারছি না আমি কেন এসেছি। আসলে তা নয়, তিনিই আমাকে বলার সুযোগ দিচ্ছেন না।
অনেকক্ষণ পর তিনি বললেন, ‘কি জানি ভাই কইবেন কইছিলেন’?
যাক, আমি সুযোগ পেলাম। এখন বলা যেতে পারে। আমতা আমতা করে এই সুযোগে তাকে বললাম ‘আসলে ভাই একটা বিপদে পড়ে আপনার কাছে আসা’।
তিনি আবার শুরু করলেন। ‘আরে বিপদ। আমি থাকতে আপনের কিয়ের বিপদ’? এই বলে আবার কিছুক্ষণ তিনি বকবক করলেন। এরপর বলতে পারলাম তার কাছে ‘আমার ৫০হাজার টাকা খুব দরকার। মাসেকখানিক পর ফেরৎ দিয়ে দিব’।
কথা শুনে তিনি চুপসে গেলেন। হাতে সেল ফোনটা তুলে নিলেন। এরপর তিনি কার সাথে যেন বলছিলেন, ‘আরে ভাই এমন করেন কে, কইছি ত আইজই আপনেরে টেকা দিমু। আইজ না দিলে আপনে যা খুশি কইরেন’।
এরপর তিনি বিষন্ন মনে আমার দিকে ফিরলেন। বললেন, ‘ভাই এমন সময় আপনে আমার কাছে আইলেন, খুউব সমস্যার মধ্যে। আমার অনেক খারাপ লাগতাছে। আপনার বিপদে পাশে দাঁড়াইতে পারতাছি না। অন্য কোনখান থেকে লন,আমি পড়ে দিমুনে’।
‘না না, তা লাগবে না’ আচ্ছা ভাই আজ তাহলে উঠি’। বের হলাম তার বাসা থেকে। আসলে তিনি চাইলে আমাকে দিতে পারতেন। তিনি আমার সামনে পাওনাদারের সাথে কথাকাটাকাটির নাটক করেছেন। তা বেশ বুঝতে পেরেছি। কেন না, ওই সময় তিনি কারো সাথেই কথা বলছিলেন না। আমার সামনে নাটক করছিলেন। তার ওই নাটকটা কাচা ছিল। লাইনের ও-প্রান্তে কেউ না থাকায় তার কানের কাছে থাকা মোবাইলটায় বেশ শব্দ করেই রিংটোন বেজে উঠে। আমি বুঝে-ও না বুঝার ভান করি। আসলে আমাকে ধার দেয়ার ইচ্ছেটা তার ছিল না। তাই সে ওই নাটক করলেন। তার আন্তরিকতা সত্যিই মুখে মুখেই ছিল। অন্তরে না। তা বুঝতে পারলাম।
আমি রাস্তার ফুটপাত ধরে হাটছি আর ভাবছিলাম। ‘আচ্ছা মানষ কেন এমন হয়? মুখে এক আর অন্তরে তাদের আরেক?
©somewhere in net ltd.