![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজকর্মে কিছুতেই মন নেই সাগিরের। সারাদিন আড্ডা আর আড্ডা। পড়ালেখাটাও ঠিক মতো করেনি। সব কিছুই খেয়েছে আড্ডাতে। এর জন্য প্রতিদিনই নানা কথা শুনতে হয় বাড়ীর লোকেদের কাছ থেকে। তবু লাজ লজ্বা বলেতে যেন ওর কিছুই নেই। বাড়ীর লোকদের বকাঝকা এক কান দিয়ে শুনে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়। কে শুণে কার কথা। নিজের নিয়মেই চলছে ওর জীবন।
বয়সটা কতো হবে ১৫ কি ১৬। অথচ এ বয়সেই কি সাংঘাতিক। মধ্য রাত পর্যন্ত আড্ডা দেয়াটা এখন ওর যেন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাড়ীর দিকে কোন খেয়াল নেই। নিজের শরিরের প্রতি তো খেয়াল একেবারেই নেই।
আজকাল আবার একটু রাজনীতির সাথেও জড়াচ্ছে। তবে এটাকে রাজনীতি বলা হয় না। রাজনীতির নামে যারা ক্যাডারি করে বেড়ায় তাদের পিছন পিছনই শুধু ঘুরে বেড়ানো। আজকাল ও যাদের পিছনে ঘুরে বেড়ায় এদের মধ্যে নেতা গোছের জনকে সাগির ভাই বলে সম্বধোন করে। শুধু ও-ই না। ওদের সাথে আরো যারা আছে সবাই ওই নেতাটিকে ভাই বলেই ডাকে।
সাগিরকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! কোথাও নেই সাগির! এদিক ওদিক নানা জায়গায় খুঁজেও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ওর। কেউ হয়তো মেরে এদিক সেদিক ফেলে দিয়েছে! এমনটি ভাবতে ভাবতেই কেঁদে সারা সাগিরের মা। মা-ই একমাত্র ওর আপন। বাবা নেই। সেই ছোট বেলায়ই বাবা মারা গেছেন। এরপর থেকেই নানা বাড়িতেই থাকা হচ্ছে। মা’র শাসনটা তেমন একটা আমলে নেয় না সাগির। তাই এতোটা বেয়ারা। যখন যা ইচ্ছে তাই করছে। মা’র দিকটা একটুও ভাবে না। অবশ্য সেই ভাবার বয়সটা ওর এখনো হয়ে উঠেনি।
৭ দিন ধরে সাগিরের কোন খবর নেই। মা এক রকম খাওয়া দাওয়া ছেড়েই দিয়েছে। সাগির বেঁচে নেই (!) এমনটিই ধরে নিয়েছে অনেকে। কেন না, বেঁচে থাকলে এই সাত দিনের মধ্যে একবার হলেও ওর খোঁজ পাওয়া যেতো। তাছাড়া ওর সাথের সকলেই বাড়ীতে আছে। ওর বন্ধুরাও বলতে পারছে না সাগির কোথায় গেছে। মাকে সকলেই শান্তনা দিচ্ছে। চিন্তা করে কোন লাভ নেই-এই জাতীয় শান্তনা। কিন্তু মা’র মন। ওই রকম শান্তনাতে কি আর মন মানে।
৮ দিন পর রাত ২টার সময় বাড়ীর গেটে এসে ডাকছে মা, মা, ও মা। মা বুঝতে পারলো সাগির এসেছে। এটি সাগিরের কন্ঠ। দৌড়ে এসে গেট খুলে মা। কোথায় গিয়েছিলি, কোথায় ছিলি? এইসব কিছু না জিজ্ঞেস করেই সাগিরকে জড়িয়ে ধরে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠেন। মা’র কান্নার শব্দে নানা-নানু ও ছোট মামার ঘুম ভেঙ্গে যায়। সাগিরকে দেখে সকলের চোখ কপালে উঠে। সে কি অবস্থা। নোংরা জামা কাপড়। চেহারার সে কি শ্রী।
মামা জিজ্ঞেস করে,কিরে এই কি হাল তোর?
সাগির কোন কথা বলে না। আবারো মামা জিজ্ঞেস করে, এ ক’দিন কোথায় ছিলি?
এবার ছোট করে উত্তর দেয়, কুমিল্লা ছিলাম।
কুমিল্লা (!) কেন? কার সাথে? ওই খানে কে?
কেউ না। মজিবরের সাথে গিয়েছিলাম।
মজিবর ওর এক নতুন বন্ধু। তবে ওর বয়সের চেয়ে অনেক বড়। তারপরও ওর বন্ধু। ওদের বাড়ি কুমিল্লার দ্বেবিদ্বার। এই ৮ দিন ও সেখানেই ছিলো। এক কাপড়ে যাওয়ার কারনে কাপড়ের অবস্থা একেবারেই ভালো না। ওই ৮দিন এক কাপড়েই ছিলো সে। তাই জামা কাপড় এক্কেবারেই নোংরা। যে কেউ দেখে টোকাই ভাবতে দ্বিধা করবে না।
এবার নানা বললো, যাবি ভালো কথা। বাসায় তো বলে যাবি। শার্ট প্যান্টও তো মানুষ নিয়ে যায়।
আমি কি জানতার এতোদিন থাকতে হবে।
তার মানে?
একদিনেই চলে আসবো ভাবছিলাম। তাই কারো কাছে কিছু বলে যাইনি।
কিন্তু তোর ভাবনায় এখানে সবাই যে একেবারে অস্থির সেই খেয়াল কি তোর আছে?
কেন আমি তো ডাকে চিঠি পাঠিয়েছি। সেও আবার রেজিষ্ট্রি করা চিঠি।
চিঠি!
হ্যাঁ। কেন তোমরা পাওনি?
কুমিল্লা যাওয়ার পর যখন বুঝতে পারলো এতো তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরা যাবে না। তখন ডাকে ওর অবস্থান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু এই আটদিনেও সেই চিঠি বাড়ির মানুষের কাছে এসে পৌছায়নি।
সাগির বাড়ি ফেরার ৩ দিন পর বাড়িতে পিয়ন হাজির। চিঠি, চিঠি, চিঠি!
©somewhere in net ltd.