![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অল্পতে রেগে যাওয়ার অভ্যাসটা সেই পুরনো একটা ব্যাপার সাগিরের। হুটহাট করে ক্ষ্যাপে যাওয়ার কারনে ওর জীবনের কোন উন্নতি হয়নি আজও। কারো সাথে সম্পর্কও তেমন একটা টিকে না। আত্মীয় স্বজনদের সাথেও ওর তেমন একটা ভালো সর্ম্পক নেই। বর্তমানে ওর পৃথিবীটাও খুবই ছোট।
সাগিরের পৃথিবী বলতে, ওর ছেলে স্বপ্ন আর স্ত্রী সততা। এর বাইরে পত্রিকা অফিস। ব্যাস এইটুকো।
কথা নেই বার্তা নেই ধুম করে ক্ষেপে যাওয়াটা ওর জন্য নতুন কিছু নয়। তবে সবচে নতুন হলো সাগির এখন আর আগের মতো কারো উপর হুটহাট করে ক্ষেপে যায় না। কারো উপর খুব বেশী বিরক্ত হলে সে এখন আর গলা ছাড়ে না, হাতও তুলে না। তবে এখন সে বেশী মাত্রায় কারোর উপর ক্ষিপ্ত হলে সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করে শব্দ করতে থাকে। বিষয়টা তার কাছাকাছি বসা থাকলে বুঝা যায়। এছাড়া যদি রাগটা একেবারেই ধরে রাখতে না পারে তাহলে খুব দ্রুত স্থান ত্যাগ করে। কোন রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে।
মা মারা যাওয়ার পর থেকে আজ ১ বছর হলো সাগির শ্বশুড় বাড়িতে উঠেছে। এটা ঘর জামাই বলা যায়। তবে ওর শ্বশুর শ্বাশুড়ি অত্যান্ত ভালো মানুষ। ফলে সাগিরকে তারা জামাই’র মতো দেখেন না। ঘরের ছেলের মতোই মনে করেন। শ্বশুড়-শাশুড়ির আদর যতœটা অনেকটাই বাবা-মা’র অভাব বোধটা দূর হয়েছে ওর।
সাগির ওর বউটা নিয়ে মোটে তুষ্ট নয়। যদিও ওরা প্রেম করে বিয়ে করেছে। সেও আবার মোবাইল প্রেম। মোবাইলের মাধ্যমেই সততার সাথে ওর পরিচয়। অত্যাধিক বদমেজাজী একটা মেয়ে। তবে মনটাও অত্যাধিক ভালো। সাগিরের চেয়ে সততার রাগটা কয়েক ডিগ্রি বেশী। গলাটাও অনেক বড়। ওর রাগ উঠলে কে বাবা, কে মা, কিংবা কে স্বামী, সে দিকটা বেমালুম ভুলে যায়। তবে ওর একটা বিষয় খুবই ভালো। যতো তাড়াতাড়ি ও রেগে যায়,ততো তাড়াতাড়ি আবার রাগটাও দমে যায়। তবে নি:সন্দেহে সততাকে স্বামী পাগল একটা মেয়ে বলা যায়।
সাগিরের শ্বশুড় বাড়িটা ঢাকার কোনাপাড়া কাঠের পুল এলাকায়। এখান থেকে প্রতিদিন তাকে নারায়ণগঞ্জে আসতে হয়। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় ওর অফিস। নিজে একটা স্থানীয় দৈনিক সম্পাদনা করছে। ছড়া, গল্প লেখার অভ্যাস থেকেই সাংবাদিকতায় আসা। সেই থেকে তার স্বপ্ন সে একদিন সম্পাদক হবে। তাই হয়েছে। তবে মোটেও ভালো নেই। আর্থিক টানাপোড়ন লেগেই থাকে। কেবল রক্ষে শ্বশুড় বাড়িতে থাকছে বলে। চাল-ডাল, তরিতরকারি কিছুই কিনতে হয় না ওর। বাচ্চার দুধটা পর্যন্ত না। বউকে কালে ভদ্রে ২ একটা জামা কিনে দিতে হয়। ছেলের জন্য মাঝে মাঝে এক আধটুকুন ফলটল কিংবা হরলিকস নিতে হয়। এছাড়া যাবতীয় সব কিছুই ওর শাশুড়ি কিনে দেন। আর এর জন্যেই ও এখনো সাংবাদিকতাটা ধরে রাখতে পেরেছে। আর ধরে না রেখেই বা কি করবে। এইটা ছাড়া যে ও তেমন কিছুই শিখেনি। জীবনের অধিকাংশ সময়টাই ওর কেটেছে আড্ডা আর আড্ডা দিয়ে। যদি কখনো কখনো কিছু রোজগার করেছে সেও উড়িয়েছে ধুপের মতোই। সম্বল বলতে কয়েকটা গল্প আর ছড়ার-কবিতার পেপার কাটিং। সে আবার এতো কবি সাহিত্যিকের ভিরে অখাদ্যই হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই সাগির লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত। অনেক ইচ্ছে ছিলো একটা বই প্রকাশ করবে। কিন্তু ঘাটের টাকায় বের করতে হবে বলে তা আর করা হয়নি। কিন্তু এখন অদম্য ইচ্ছে জেগেছে বই বের করার। সেও আবার ছেলেটার জন্য স্মৃতি সরূপ রেখে যাওয়ার ইচ্ছে। অন্তত্য ছেলেটা যাতে বড় হয়ে বাবার লেখা বইটা হাতরাতে পারে। অন্তত বলতে যেন পারে এটা আমার বাবার লেখা বই।
সাগির ভালো করেই জানে-ওর লেখা বই বাজারে অখাদ্যই হবে। এটি টাকা দিয়ে কেউ-ই কিনবে না। তাতে কি (!) একটি বইয়ের গর্বিত মালিক তো সে হতে পারবে।
সাগিরের বই লেখার ভূতটা আজকাল একটু বেশী করে চেপে বসার পিছনে আরো একটা কারণ রয়েছে। আজকাল ও মৃত্যুটাকে নিয়ে খুব বেশী ভাবে। এই বুঝি মরে যাবো। প্রায়ই এমনটি মনে হয় ওর কাছে। এছাড়া চলতে ফিরতে নানা ধরনের ভয় কাজ করে। সবচে বেশী ওর ভয়টা সড়ক দূর্ঘটনা। আজকাল যে হারে সড়ক দূর্ঘটনা বাড়ছে তাতে ভয় না হয়ে পারে? এছাড়া গুপ্ত হত্যার ভয়টাও ওর কম নয়। লেখালেখি করতে গিয়ে টাকা পয়সার মালিক হতে না পারলে গুটা দশ এক শত্র“র মালিক সে হয়েছে। আর সেই শত্র“রা যদি তাকে মেরে অজ্ঞাত স্থানে ফেলে দেয়! কেউ কোন খোঁজ পাবে না (!) অবশেষে পুলিশ বেওয়ারিশ হিসেবেই দাফন করবে! এছাড়াও আজকাল ছিনতাইকারীদের হাতেও অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। রাতবিড়াতে ওকে অফিস থেকে বাসায় ফিরতে হয়। তখন যদি কোন ছিনতাইকারী ওর কাছে থাকা ল্যপটপটা ছিনিয়ে নিতে আসে! অবশ্য এই ল্যাপটপটা ও কিছুতেই ছাড়তে চাইবে না। আর তখনই ছিনতাইকারিরা ওকে উপর্যপোরি ছুড়িকাঘাত করবে। এর পর মাটিতে লুটিয়ে পড়বে। আশপাশের লোক এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু পথিমধ্যে তীব্র যানজটের জন্য অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হবে সাগিরের।
©somewhere in net ltd.