![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৬৪৭ সালে নারী অধিকার নিয়ে সর্বপ্রথম কথা বলা শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেসময় মার্গারেট ব্রেন্ট নামের এক নারী ম্যারিল্যান্ডের অ্যাসেম্বলিতে প্রবেশের দাবি করলে পুরুষ-তন্ত্র তা নাকচ করে দেয়।
এর সূত্র ধরে ১৬৬২ সালে মার্গারেট লুকাস নামের আরেক নারী রচনা করেন 'নারী ভাষণ' শিরোনামে একটি গ্রন্থ। যা বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম নারীবাদী সাহিত্য। এই সৃষ্টিকর্মে নারীর পরাধীনতা ও অসম অধিকারের বিষয় তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে আলোচনা করেছেন।
এদিকে মার্গারেট লুকাস রচিত 'নারী ভাষণ' প্রথম নারীবাদী সাহিত্য হলেও পলেইন ডি লা ব্যারকে বিশ্ব ইতিহাস প্রথম নারীবাদী হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। তিনি ১৬৪৭ সালে ফ্রান্সের প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। নারী স্বাধীনতা, নারী অধিকার তথা নারীবাধে নিয়ে তিনি 'equality of the two sexes, speech physical and moral where it is seen the importance to demolish itself prejudge' এই প্রবন্ধটি লিখেন ১৬৭৩ সালে। যা ব্যাপক আলোড়িত করে নারী সমাজকে।
পুরুষতান্ত্রিক অথবা পিতৃতান্ত্রিক সমাজ নিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘পুরুষ কর্তৃক নারী সম্পর্কে যা কিছু লেখা আছে, তার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করতে হবে। কারণ, এক্ষেত্রে পুরুষ একই সঙ্গে অভিযুক্ত এবং বিচারকের আসনে আসীন’।
অন্যদিকে ফরাসি বিপ্লবের সময়, সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতার যে আহ্বান করা হয়েছিলো ১৭৮৯ সালে সে আহ্বানে অভূতপূর্ব সাড়া দিয়েছিলেন বিশ্বব্যাপী নারী কর্মীরা। ধারণা করা হয়েছিলো, ফরাসি বিপ্লবের পর নারী স্বাধীনতা তথা নারী মুক্তি ঘটবে। কিন্তু, কাঙ্ক্ষিত সেই নারী মুক্তি আসেনি।
ফরাসি বিপ্লবের দুই বছর পর তথা ১৭৯১ সালে ‘নারী অধিকার এবং মহিলা নাগরিকদের ঘোষণা’ প্রকাশ করেন দেশটির নাট্যকার ও বিপ্লবী নারী ওলিম্পে দ্যা গগ্স।
ওই ঘোষণাতে তিনি বিশ্বব্যাপী নারীদের জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘নারী জেগে উঠো; গোটা বিশ্বে যুক্তির সঙ্কেত ধ্বনি উচ্চারিত হচ্ছে। তোমার অধিকারকে আবিষ্কার করো। প্রকৃতির শক্তিশালী সাম্রাজ্য এবং পক্ষপাত, গোঁড়ামি, কুসংস্কার ও মিথ্যা দিয়ে অবরুদ্ধ নয়। সত্যের শিখা পাপ ও অন্যায় দখলের মেঘকে দূর করে দিয়েছে।'
নারী আন্দোলন, পুরুষতান্ত্রিক তথা পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ভেঙে বৈষম্যহীন একটা সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন ওলিম্পে। তার আহ্বানে বিশ্বের নারী সমাজও জেগে উঠেছিলো। যা মেনে নিতে পারেনি পুরুষতান্ত্রিক সমাজ। যার ফলে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলতে হয়েছিল তাকে।
১৭৯৩ সালে এই নারী আন্দোলনের সাহসী মানুষটিকে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করে ফ্রান্স। যা ছিল নিষ্ঠুর ও অত্যন্ত বর্ববর একটি অধ্যায়। তবে অসীম সাহসী ওলিম্পে ফাঁসির কাষ্ঠে যাওয়ার আগে দুরন্ত সাহস নিয়ে বলেছিলেন, ‘নারীর যদি ফাঁসি কাষ্ঠে যাবার অধিকার থাকে, তবে পার্লামেন্টে যাবার অধিকার থাকবে না কেন’?
এদিকে ওলিম্পেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেই ক্ষান্ত হননি ফরাসি শাসক গোষ্ঠী। এর পাশাপাশি নারীবাদ নিয়ে তার সকল কার্যক্রমও নিষিদ্ধও করেছিল দেশটির শাসক শ্রেণী। তাই বলে দমে যায়নি নারী মুক্তির আন্দোলন। বরং ওলিম্পের মৃত্যুতে নারী মুক্তির ভিত আরও শক্তিশালী হয়েছিল।
ইংল্যান্ডের মেরি ওলস্ট্যানক্রাফট ছিলেন একজন লেখক, দার্শনিক ও নারীবাদী। নারীবাদ নিয়ে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ 'A Vindication of the Rights of Woman' বা 'নারী অধিকারের ন্যায্যতা' প্রকাশিত হয় ১৭৯২ সালে। বলা হয়ে থাকে, এই মেরিই নারীবাদকে প্রথম সংগঠিত করেছিলেন।
মেরি তার বিখ্যাত সেই নারীবাদ গ্রন্থে নারীর উপর পুরুষ-তন্ত্রের নির্যাতন, নিপীড়নচিত্র ব্যাপকভাবে তুলে ধরেন। তার সেই গ্রন্থের মূল বিষয় ছিল, ‘নারী কোন ভোগের সামগ্রী বা যৌন জীব নয়। তারা বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ। তাই তাদের স্বাধিকার দিতে হবে’।
এত আন্দোলন আর ত্যাগের পর তখনও পুরোপুরিভাবে নারীবাদী চেতনা বিকশিত হয়নি। তবে ১৮৪০ সালে আমেরিকার দাসপ্রথা বিলুপ্তির আন্দোলনের মাধ্যমে উনবিংশ শতাব্দীতে এসে বিকশিত হয় নারীবাদী চেতনার। এ সময় নারী আন্দোলন ব্যাপকভাবে আলোড়িত করেছিলেন, এলিজাবেথ কেডি স্ট্যান্টন, লুক্রেশিয়া মটো, সুশান বি অ্যান্টনি, লুসি স্টোন, অ্যাঞ্জেলিনা এম গ্রিমকে, সারা এম গ্রিমকে প্রমুখ। এরমধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ গোষ্ঠীর দুই বোন অ্যাঞ্জেলিনা এম গ্রিমকে এবং সারা এম গ্রিম'কের ভূমিকা ছিল সব থেকে বেশি আলোচিত।
অ্যাঞ্জেলিনা এম গ্রিমকে এবং সারা এম গ্রিম ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম যুগের নারীবাদী সংগঠক। এই দুই বোন দাসপ্রথা বিলুপ্তিসহ নারী অধিকারের জন্য যুগপৎ আন্দোলন করেন। তবে দাস প্রথার আন্দোলনের শুরুটা ছিল ১৮৩৭ সালে। সেসময় আমেরিকায় দাসপ্রথা বিরোধী প্রথম নারী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ১২টি রাজ্যের ৮১ জন ডেলিগেট অংশ নিয়েছিলেন। ওই সম্মেলনের মাধ্যমে মার্কিন নারীরা প্রথমবারের মত রাজনীতির সুযোগ পায়।
নারী-পুরুষের অভিন্ন অধিকারের ব্যাপারে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরে ১৮৬৮ সালে এলিজাবেথ কেডি স্ট্যান্টন ও সুশান বি অ্যান্টোনি যৌথভাবে নারীবাদী সাময়িকী 'দি রেভ্যুউলিশন' প্রকাশ করেন। শুধু তাই নয়, ১৮৯১ সালে কেডি স্ট্যান্টনসহ আরও ২৩ জন নারী সম্মিলিতভাবে রচনা করেছিলেন 'নারীর বাইবেল'।
বিশ্বের প্রথম নারী অধিকার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৮৪৮ সালের ১৯ ও ২০ জুলাই। এটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল নিউইয়র্কের সেনেকা ফলস-এ। ওই সম্মেলন থেকে আমেরিকার ঘোষণার অনুরূপ 'ডিকারেশন অব সেন্টিমেন্ট' ঘোষিত হয়। এর ফলে আমেরিকার সংগ্রামী নারীদের লড়াই-সংগ্রাম এবং নারীবাদী চেতনাকে ত্বরান্বিত করেছিল।
©somewhere in net ltd.