নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিথ্যার অন্বেষণে

অকৃতজ্ঞের চেয়ে অধম

এস কে এস আলী

আশায় আশায় বুক বেঁধে রই

এস কে এস আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বখ্যাত ইবনে খালদুন ও আমাদের বর্তমান কাল প্রেক্ষিত

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:০৯



এসকে এস আলী

বিশ্বখ্যাত মুসলিম মনীষীদের মধ্যে ইবনে খালদুন এক বিশেষ মর্যাদার আসনে আসীন হয়ে আছেন বিশ্বাসী মানুষের আবেগ ও ভালবাসার মানসপটে।

১৩৩২ খ্রিস্টাব্দে ইবনে খালদুন তিউনিশিয়ার এক মনোরম পল্লীর সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম ইবনে খালদুন, ওয়ালী আলদীন আবদুর রহমান বিন মুহাম্মদ বিন মহাম্মদ বিন আবি বাকার মুহাম্মদ বিন আল হাসান। তৎকালীন আরব মুসলিম সংস্কৃতির পুরোধা পুরুষ হিসেবে ইবনে খালদুনের নাম স্ববিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিশেষ করে ইসলামী ঐতিহ্যও সংস্কৃতির বিকাশে তার অবদান অবিস্মরণীয় হয়ে আছে।

মুসলিম ইতিহাসে ইবনে খালদুনকে সমাজ বিজ্ঞানের জনক ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও বিশ্বের বুকে অন্যান্য মর্যাদায় ভূষিত করা হয়। বিশ্ব মুসলমানদের সভ্যতা সংস্কৃতি বিকাশে ইবনে খালদুনের রচিত অমর গ্রন্থ ‘‘আল মুকাদ্দিমা’’ এক বিস্ময়কর অবদান। এই গ্রন্থই তাকে বিশ্ব দরবারে অনাগত কাল অবধি সুখ্যাতির প্রদীপ্ত জয়টিকা পরিয়েছে।

ইবনে খালদুনের গোটা বর্ণাঢ্য জীবন পঞ্জীকে তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত করেছেন ঐতিহাসিকগণ। প্রথমত জন্ম থেকে ২০ বছর পর্যন্ত শৈশব-কৈশোর এবং শিক্ষাজীবন ব্যাপৃত। দ্বিতীয় অধ্যায় কেটেছে তার গভীর অধ্যবসায়, গবেষণা ও উচ্চশিক্ষা অর্জনের নিমিত্তে। এ অধ্যায়ে খালদুনের রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বিশেষ ভূমিকা ও দুঃসাহসিক অভিযাত্রার প্রমাণ পাওয়া যায়। এবং তৃতীয় অধ্যায়ে ইবনে খালদুন একজন যুগ সংস্কারক বুদ্ধিজীবী এবং বিচারক হিসেবে সমাজ বিবর্তনে বিশেষভাবে নিজেকে নিয়োজিত করেন। উপরিউক্ত তিনটি অধ্যায়ের প্রথম দু'টি অংশ তিনি পাশ্চাত্য মুসলিম সভ্যতা বিকাশে ব্যয় করেন এবং শেষাংশ কাটে পশ্চিমা দেশগুলোয় এবং মিশরে।

তিউনিশিয়ায় জন্মগ্রহণ করে সেখানে তার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষালাভের সুযোগ হলেও দুরন্ত কৈশোর জীবন পেরিয়ে যৌবনে পদার্পনের পরই তিনি নিজেকে একটি কর্মসংস্থানে দাঁড় করানোর প্রয়াস চালান। তাতে তিনি সফলতাও পান। কর্মব্যাপদেশে ইবনে খালদুন তৎকালীন মিশরীয় শাসক সুলতান বারকুক-এর অধীনে চাকরি লাভ করেন। এখানে তিনি তার যোগ্যতা ও মেধার প্রশংসনীয় স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। কিন্তু একজন অনুসন্ধিৎসু জ্ঞান-পিপাসুকে কি একটি জীবিকার জন্য চাকরি নিয়ে পড়ে থাকা মানায়? খালদুন তার জীবনের মোহনীয় ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়ে জ্ঞানের তপস্যায় উচ্চতর গবেষণা ও বিদ্যা অর্জনের লক্ষ্যে তিনি মিশর ত্যাগ করেন। কিন্তু দেশন্তরী হয়েও খালদুন নিজস্ব ক্যারিয়ার তথা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় বাধার সম্মুখীন হন।

তৎকালীন সমসাময়িক রাজনীতিকদের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘ মেয়াদী দ্বনদ্ব-সংঘাত এবং সামগ্রিক আর্থ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দরুন খালদুনের উচ্চশিক্ষা ও জ্ঞান গবেষণা প্রচেষ্টায় কিছুটা হলেও বিঘ্নিত হয়ে পড়ে। কিন্তু তাতে দমে যাননি। সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ওপর ভরসা করে তিনি নানা প্রতিকূলতা অতিক্রম করে তার আধ্যাত্ম্য ও বৈষয়িক জ্ঞান সাধনা নিরলসভাবে চালাতে থাকেন। অতঃপর আলজেরিয়ার একটি ছোট গ্রাম কালাত বিন সালামায় প্রায় তিন বছর যাবৎ উদ্বাস্তর মত জীবনযাপনের মধ্যেও কঠোর অধ্যবসায় ও জ্ঞানান্বেষনের কাজ অব্যাহত রাখেন। এখানেই তিনি তার জীবনের অত্যন্ত পরিশ্রম-সাধ্য সাফল্যটি অর্জন করেন। আর তা হচ্ছে ইবনে খালদুনের বিশ্ব বিখ্যাত ইতিহাস গ্রন্থ ‘‘আল মুকাদ্দিমাহ’’। সমসাময়িক বিশ্বের রাজনৈতিক, ইতিহাসবিদ, সমাজতাত্ত্বিক এবং দার্শনিকদের কাছে এই গ্রন্থটিই খালদুনকে বিশ্ব ইতিহাস যুগান্তকারী সুখ্যাতি ও অমরত্ব দান করেছে।

অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে প্রবাস প্রতিকূলতার সাথে নিরন্তর সংগ্রাম করে অতঃপর জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে মিশরেই ফিরে আসেন তিনি। এখানেই ইবনে খালদুন তার জীবদ্দশার বাকী ২৪টি বছর শিক্ষা বিস্তার এবং বিচারকের পদে থেকে পরম নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। মিশরের বিশ্ব বিখ্যাত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। পাশাপাশি খালদুন চীফ মালাকাইট জজ হিসেবে সম্মানজনক পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। কিন্তু এ পর্যায়ে এসে জীবনের অন্তিম সময়ে তিনি স্থানীয় কিছু লোকের কাছে চরম ঈর্ষা ও বিদ্বেষের পাত্র হন। এর ফলশ্রুতিতে এক পর্যায়ে এই সম্মানজনক উচ্চাদালতে বিচারকের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়।

ইবনে খালদুনের বিষ্ময়কর প্রতিভা ও মেধার স্বাক্ষর কেবল ইতিহাস কিংবা ঐতিহাসিকতা নির্ভর ছিল না। দর্শনশাস্ত্র, সমাজ বিজ্ঞান ও জুডিশিয়াল অঙ্গনেও তার অসামান্য অবদান আজও বিপুলভাবে সমাদৃত হচ্ছে। তিনি মুসলমানদেরকে সমাজ-সংস্কৃতি এবং সমসাময়িক রাজনৈতিক সচেতন হবার প্রয়াসে বিভিন্ন উদ্বুদ্ধকরণ মূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন।

বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর বিশ্ব প্রেক্ষাপটে চুলচেরা বিশ্লেষণধর্মী একটি গ্রন্থ রচনায় নিজেকে ব্যাপৃত করলেন, যা পরবর্তীতে ‘‘আল মুকাদ্দিমাহ’’ ইবনে খালদুনের এই মহৎ উদ্দেশ্য একদিন ফুলে-ফলে সুশোভিত হয়ে অনুপম একটি বিশ্ব ইতিহাস গ্রন্থের আকারে প্রকাশিত হয়। প্রথম পর্বটি এই খ্যাতিমান মনীষীকে বিশ্বের দরবারে আরো বেশি উচ্চশিক্ষিত ও মহিমান্বিত করে। ‘‘আল মুকাদ্দিমাহ’’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন বইয়ের ভূমিকা বা মুখবন্ধ। এই অসামান্য গ্রন্থখানিই ইতিহাস, দর্শন ও সমাজদর্পন হিসেবে বিশ্ব সুধীমহলে মূখ্য আলোচিত হয়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত ও প্রশংসিত হয়। খালদুন তার অমর সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে ইসলামিক আর্থ-সামাজিক পরিবেশগত এবং মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার সাথে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করার প্রয়াস পেয়েছেন। এর ফলে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় মানব সভ্যতার বিকাশে তার এই অতুলনীয় অবদানটি দেশ-কাল, জাতি ও ভৌগোলিক সীমাবদ্ধতার গন্ডি পেরিয়ে তার সৃষ্টিকর্মকে আন্তর্জাতিক মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছে। তিনি তার এই অনবদ্য গ্রন্থে মুসলিম কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ হবার প্রতি বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমেই কেবল মানব সভ্যতার বিকাশ এবং আদর্শ প্রচার সম্ভব। ইবনে খালদুনের পরিবেশগত, সামাজিক, মনস্তাত্ত্বিক এবং অর্থনৈতিক বিষয়ে পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রমের ওপর জোরালো বক্তব্যকে উচ্চকিত করে তার ব্যাপক ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করেছেন অনেক প্রাজ্ঞ প্রাচীন লেখকগণ। এসব বিষয় ছাড়াও ইতিহাসকে বৈজ্ঞানিক মর্যাদা ইন্নীতকরণ এবং সমাজ বিজ্ঞানের ভিতরচনার ক্ষেত্রে খালদুনের কর্ম প্রয়াস সুধীজনের কাছে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

ইবনে খালদুনের বর্ণাঢ্য জীবনধারায় আল মুকাদ্দিমার বাইরে স্বতন্ত্র যেসব বহুল আলোচিত গ্রন্থ রচনা করেছেন তার মধ্যে বিশ্ব ইতিহাস গ্রন্থ কিতাব আল-ই-বার ব্যাপক প্রসিদ্ধিলাভ করে। এ গ্রন্থে আবরদের ইতিহাস, সমসাময়িক মুসলিম শাসক, সমসাময়িক ইউরোপীয় শাসক, আরবদের প্রচীন ইতিহাসসহ ইহুদী, গ্রীক, রোমান, ইরান প্রভৃতি সভ্যতার বিকাশ ও ইতিবৃত্ত অত্যন্ত দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সাথে তুলে ধরা হয়েছে। যা সত্যিই প্রায় এক অসম্ভব আয়াসসাধ্য প্রচেষ্টার ফসল হিসেবে বিশ্ব মনীষীদের কাছে সমাদৃত হয়েছে। এতে আরো উদ্ধৃত হয়েছে ইসলামের স্বর্ণালী ইতিহাস, মিশরীয় ও উত্তর আফ্রিকীয় ইতিহাস বিশেষ করে ঐসব ভৌগোলিক অঞ্চলের বসবাসকারী সভ্যতার আলোহীন উপজাতীয় মানুষদের তাবৎ কৃষ্টি ইতিহাসও।

সর্বশেষ খন্ডে খালদুন তার স্বীয় জীবনের খুটিনাটি আলোচিত ও আলোকিত অধ্যায়ের বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন। এই খন্ডের নাম আল তাসরীক। এটি কেবল একটি ইতিহাস গ্রন্থই নয় বরং এতে আত্ম চরিত লেখনের কলাকৌশল ও আর্টের এক অভিনব বিশ্লেষণধর্মী শিল্প নির্দেশনাও বটে।

ইবনে খালদুনের শ্রেষ্ঠতর অবদান হচ্ছে ইতিহাস ও ঐতিহাসিক মনস্তত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব, রাজনৈতিক বিজ্ঞান প্রভৃতি যা তার জীবদ্দশা থেকে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে আসছে। তার গ্রন্থসমূহ প্রাচ্য-প্রাশ্চাত্য উভয়াঞ্চলের বহু ভাষায় অনূদিত ও বিশ্লিষ্ট হয়েছে। মুসলিম সভ্যতা ও আদর্শ বিকাশের ক্ষেত্রে এক ব্যাপক বৈপ্লবিক অবদান রেখে এই মহান মনীষী ১৩৮২ খ্রিস্টাব্দে ইহলোক ত্যাগ করে গোটা মুসলিম মিল্লাতকে মুক্তির এক স্বপ্নীল রাজতোরণের সন্ধান দিয়ে চিরতরে জান্নাতবাসী হন। তার দেয়া তথ্যে সভ্যতা (শাসক)ধ্বংসের যে কারণ বলা হয়েছে তা আমাদের শাসক বর্গের মাঝে সমান হারে যেখা যাচ্ছে। অর্থ্যাৎ তারা যখন উৎপাদন মুলককাজ থেকে বিরত হয়ে বিলাশবহুল জীবন যাপন,পরামর্শ না নেয়া, জনগণের উপর অত্যাচার করা চালু করে তখন সেই শাসক বা সভ্যতার ধ্বংস হয় । যেহেতু আজ পযর্ন্ত ইবনে খালদুনের এই তথ্য মিথ্যা হয়নি সেহেতু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কি হবে তা বিবেচনার ব্যাপার……………

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.