নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিথ্যার অন্বেষণে

অকৃতজ্ঞের চেয়ে অধম

এস কে এস আলী

আশায় আশায় বুক বেঁধে রই

এস কে এস আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

থুকিডাইডিসের ইতিহাস চিন্তার সাথে পূর্ববতী হেরোডোটাসের চিন্তার পার্থক্য । প্রকৃত ইতিহাসের জনক কে ?ক্য । প্রকৃত ইতহাসরেি জনক কে ?

০৫ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:৪৫



এস কে এস আলী



গ্রীক ঐতিহাসিক হোরোডোটাস ইতিহাস লেখার ও রচনার যে পথ নির্মান তা একটি প্রকৃত ভিত্তির উপর দাড় করান থুকিডাইডিস। আধুনিক গবেষনার লক্ষ্য করা যায় ইতিহাস রচনায় হেরোডোটাসের চেয়ে থুকিডাইডিস অনেক বেশি বস্তুনিষ্ট ছিলেন। তবে তিনি যুগের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে পারেননি। ইতিহাস রচনায়, তথ্যের গ্রয়োগে, তুলনামীলক তথ্য বিশ্লেষনে তিনি হেরোডোটাসের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন। তিনি যে বিষয়ে ইতিহাস লিখেরছন তিনি সে বিষয়ের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। ফলে বিষয়টি ভেতর থেকে দেখার সোভাগ্য তার হয়েছিল। দেশ শাসক ও ব্যক্তি এই তিনটিকে তিনি তার লেখনীতে ধারন করার চেষ্টা করেছেন। তার ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল গ্রীক জগত। আধুনিক যুগের মধ্যে বিশেষ করে তিনি বৃটিশ ঘরানার প্রতি অধিক গুরুত্ব দেন।

থুকিডাইডিসের জীবনী :

ঐতিহাসিক থুকিডাইডিস ৪৬০ বিসিতে এথেন্সের জন্মগ্রহন করেন। তার পিতা তলোরাজ ছিলেন এথেন্সের একজন ধনাঢ্য ব্যক্তি। ফলে বলা যায় থুকি আর্থিক এবং বংশ মর্যাদায় একজন অভিজাত পরিবারের সন্তান। এবং সেই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ছিল তার ব্যপক প্রভাব। ৪৩১ বিসিতে যখন তিনি পলনেশেয়িান যুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি যুদ্ধের গুরুত্ব‘উপলদ্ধি করে সচেতন নাগরিক হিসেবে ইতিহাস লেখা শুরু করেন। ধনাঢ্য ও প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির সন্তান হিসেবে ৪২৪ বিসিতে তিনি সামরিক স্ট্যাটিগস হিসেবে নির্বাচিত হন।স্ট্যাটিগস হবার পর থ্রেইস তার পাশ্ববতী অঞ্চলের নৌবাহিনীর দ্বায়িত্ব পান। তার সামরিক সদর দপ্তর ছিল থ্যায়োম। এখন র্স্পাটার সাথে এথেন্সের যুদ্ধ চলছিল। তারই এক দফায় যুদ্ধে তিনি ব্রাসিডিসের কাছে পরাজিত হন এবং এম্পীপলিস রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। এই ব্যর্থতার পরে আইন অনুযায়ী তার সামকি আদালতে বিচার হয় এবং তাকে বিশ বছর নির্বাসন দেওয়া হয়। এই এথেন্স এবং র্স্পাটার মধ্যে ৪০৪ বিসি পর্যন্ত যুদ্ধ হয়। ৪০৪ বিসিতে র্স্পাটা এবং এথেন্স শান্তি চুক্তি হয়। যুদ্ধের তিনি দেশে ফিরে আসেন। পরে তার মৃত্যু হয়।

এক্ষেত্রে একজন যোদ্ধা, যুদ্ধে পরাজিত জেনারেল শাসকের হাতে বন্দী হয়ে কারাদন্ড ভোগকারী থুকিডাইডিসের লেখায় পুরো বস্তুনিষ্ট ফুটে উঠেছে আমাদের সামনে। কেননা যুদ্ধে তার পরাজয়ের চিত্র ছিল সত্য তেমনি ইতিহাসে যুদ্ধে জয় পরাজয় আছে যুদ্ধে তার পরাজয় ছিল। আবার শাসকের প্রতি শ্রদ্ধাও ছিল।এজন্য র্স্পাটা ও গ্রীসের যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তার লেখনিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে বলে অনেক ঐতিহাসিক মত প্রকাশ করেছেন।

থুকিডাইডিসের গ্রন্থ পর্যালোচনা :

থুকিডাইডিসের গ্রন্থ মূল্যায়ন করতে গেলে প্রথমেই তার রচিত গ্রন্থ পর্যালোচনা করতে হবে। তিনিই প্রথম সমালোচনা মূলক ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করেন। তার বইয়ের নাম “পলনেশেয়িান যুদ্ধরে ইতহিাস”. বইটি তিনি ৪৩১ বিসিতে লেখা শুরু করেন। বইটি তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি। তবে তার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব যুদ্ধের একটি সামরিক, রাজনৈতিক এবং সর্বোপরি মনস্তাত্ত্বিক বিবরন তুলে ধরেছেন। আধুনিক ঐতিহাসিকরা তার গ্রন্থকে ৮টি ভাগে ভাগ করেছেন।

ইতিহাসের প্রথম খন্ডে ছোট সুচনার পর থুকিডাইডিস ক্রীট সভ্যার সময়কাল থেকে পারসিক যুদ্ধ পর্যন্ত সময়ের একটি সংকলিত বিবরন দেন। এখানে তিনি যুদ্ধের উৎপত্তির উভয় পক্ষের মূল কারন উদঘাটনের চেষ্টা করেন। যেসব ঘটনা প্রবাহ এথেন্স সা¤্রাজ্যের উদ্ভব ও বিকাশের সম্পর্কে দীর্ঘ প্রতিবেদন দেয়া হয়। শান্তি প্রতিষ্টার লক্ষ্যে এথেন্সে আলাপ আলোচনা, যুদ্ধে যাবার জন্য নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করার মানসে পেরিক্লিসের আবেগপূর্ন ভাষন এবং দুই প্রতিদ্বদ্বি পক্ষের মধ্যে ক’টনৈতিক সম্পর্ক ছেদের মধ্য দিয়ে প্রথম খন্ডের বিবরন শেষ হয়।

বইটির ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম খন্ডে বর্নিত হয়েছে ৪৩১ বসিি ও ৪২৯ বসিি এর যুদ্ধের ঘটনা প্রবাহ। এখানে তিনি প্রধানত তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এথেন্সের শাসকদের দ্বারা জনগনকে যুদ্ধে উদ্বদ্বুকরন , তাদের বহুমূখি যুদ্ধ পরিচালনা, ৪২৯ বসিি তে এথেন্স ও র্স্পাটার মধ্যে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তিনি মনে করতেন এই শান্তি চুক্তি ছিল যুদ্ধের কৌশল মাত্র। এতে যুদ্ধ বন্ধ হয়নি। এই কারনে থুকি ছিলেন শান্তির বিপক্ষের মানুষ। তিনি মনে করেন যুদ্ধের মাধ্যমেই শান্তি ফিরে আসতে পারে।

বইটির ৬ষ্ঠ ও ৭ম খন্ডে রয়েছে এথেন্থের বাহিনীর সিিিল দখলের কাহিনী এবং সর্বশেষ খন্ডের বিষয় বস্তু হল র্স্পাটা সেনাবাহিনী কতৃক এথেন্সের মূল ঘাটি ভিসিলিয়া দখল করা । সর্বোপরি এথেনীয়দের আতœসমর্পন এবং চুড়ান্ত শান্তি চুক্তি তার বইটির মূল বিষয়বন্তু। যদিও তার বইটি সমাপ্ত হয়নি।

থুকিডাইডিসের ইতিহাস চিন্তা :

তার ইতিহাস চিন্তার প্রতিফলন হয়েছে তার লেখা গ্রন্থে। পলেপনেসিয়া যুদ্ধে । এই দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল গ্রীস অঞ্চলের ২টি প্রধান ক্ষুদ্র রাজ্য গ্রীক ও র্স্পাাটার মধ্যে। এই যুদ্ধে তিনি নিজেই অংশগ্রহন করেছিলেন। এই লেখার মধ্যে তার চিন্তা ধারার সামগ্রিক প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়।

প্রথমত :

তিনি ছিলেন সুক্ষœ চিন্তার অধিকারী। সমালোচনা মূলক দৃষ্টিকোন থেকে ইতিহাসের পূর্বাপর সম্পর্ক, যুদ্ধের ঘটনাবলী, শাসকের কার্যাবলী – সবোপরি তার নিজের কার্যবলী দেখার চেষ্টা করেছেন।খারাপ ও ভাল, ইতিবাচক ও নেতিবাচক এই দৃষ্টিকোন থেকে ইতিহাসকে বিশ্লেষন করে তিনি হয়ে উঠেছেন ইতিহাসের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। যা ইতোপূর্বে হেরোডোটাসসের মধ্যে আমরা লক্ষ্য করিনি।

দ্বিতীয়ত :

তার লেখায় স্পষ্টভাবে ফটে উঠেছে ক্ষমতায় রাজনীতির চরিত্র, ক্ষমতায় রাজনীতির বিকাশ, অবক্ষয়, রাষ্ট্র পরিচালনায় ক্ষমতায় রাজনীতির ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক। যেহেতু তিনি ছিলেন অভিজাত পরিবারের সন্তান, সেকারনে তার পক্ষেক্ষমতার কেন্দ্রে অবস্তান করে ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের ব্যাপক অপকর্ম প্রত্যক্ষ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল।

তৃতীয়ত :

তিনি ইতিহাসকে দেখার চেষ্টা করেছেন প্রত্যক্ষ তথ্যের ভিত্তিতে। তিনি মনে করতেন যে, ইতিহাস হল প্রামান্য তথ্য নির্ভর। প্রামান্য তথ্য না থাকলে ইতিহাস গল্পে রুপান্তর হয়। তার চিন্তার এই দিকটা পরবর্তী ঐতিহাসেকদের প্রভাবিত করেছে।

১৯ শতকের জার্মান ঐতিহাসিক র‌্যাঙ্কে তার চিন্তা দ্বারা প্রভাবিত হন। র‌্যাঙ্কের ভাষায় হজিটরেি একচুয়লেি ইট ওয়াজ”. তিনি মনে করতেন, তথ্যের সাথে সম্পর্ক থাকা ইতিহাসবিদের বড় কাজ।



চতুর্থত :

তিনি বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছেন বস্তুনিষ্ট তথ্যের উপর। তিনি বলেন গুরুত্ব দিতে হবে সত্য অনুসন্ধানে এবং তাকে খুজে বের করতে হবে নির্ভর যোগ্য বইগুলো । একই সাথে ইতিহাসবিদের থাকতে হবে একই জাতীয় ইতিহাস খেলা, চিন্তা ও অনুশীলনের অভিঙ্গতা।

মানুষের বাস্বব অভিঙ্গতা মানুষের ঙ্গানকে সমৃদ্ধ করে। এই বিষয়টিকে ঙ্গান চর্চার অন্যতম বাহন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

পঞ্চমত :

তার মতে, ইতিহাসবিদকে হতে হবে চিন্তা-ভাবনা, মননে, আলাপচারিতায় এবং ব্যক্তিগত কর্মকান্ডে স্বাধীন এবং আতœনির্ভরশীল। শক্তিশালী স্বাধীন চিন্তা-চেতনা দ্বারা একজন মানষ অন্যের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া খুব স্বাভাবিক। এজন্য তিনি বলেছেন ইতিহাসবিদকে দেশের রাজনৈতিক কলহ, সামাজিক সংঘাত ও স্বার্থবাদী মহল থেকে দুরে থাতে হবে।

তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি সমকালীন ইতিহাস লিখেছেন।সমকারীন ইতিহাস লেখার বিষয়টি তিনিই চালু করেন।

ষষ্টত : তিনি ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে মৌলিক তথ্যসমূহ ব্যবহার করেছেন। বংশগত কারনে অর্থাৎ অভিজাত পরিবার থেকে আসার কারনে এবং যুদ্ধে অংশগ্র নের কারনে। তিনি সহজেই মৌলিক তথ্যসমূহ যাচাই করতে পারতেন।

সপ্তমত : তার বিশাল সম্পদ থাকা , সামাজিক প্রতিপত্তি ও দীর্ঘকাল নির্বাসনে অবস্থান এই তিনটি বিষয় তাকে ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে।

অষ্টমত : তার ইতিহাস লেখার ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল বা থাকত , সেইসব বিষয় সমূহ তিনি পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে যাচাই করে গ্রহন করতেন।

নবমত : তিনি প্রতিটি ঘটনা বর্ননার পাশিপাশি বিশ্লেষন ও ব্যাখ্যা করেছেন। বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের বর্ননাকে আদি থেকে অর্ন্ত পর্যন্ত বিশ্লেষন ছিল তার ইতিহাস লেখার একটা অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

দশম : তার ইতিহাস চিন্তায় মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ের প্রতি খুব গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি বলেছেন মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ঘটনা আবর্তিত করে ঘুরে। এজন্য তিনি ইতিহাস লেখার সাথে সাথে সেই ইতিহাসের নায়ক-নায়িকার মনস্তাত্ত্বিক দিকটা আলোচনা করেন।

সমালোচনা :

তার ইতিহাস পদ্ধতি সমালোচনার উর্দ্ধে নয়। তার ইতিহাস চিন্তার সমালোচনা :

– তিনি তার ইতিহাস গ্রন্থে সমকালীন সমাজের ইতিহাস বাদ দিয়েছেন।

– তিনি ইতিহাসকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন সামরিক ও কূটনীতির মধ্যে। এর বাইরে মানুষের সৃষ্টি ও সমাজকে গুরুত্ব দেননি।

– তিনি প্রাসঙ্গিক কে বজায় রাখতে গিয়ে ঐতিহাসিক সনিাধক্ষনে হেরোডোটসের মতো ভোগোলিক প্রভাবের গুরুত্ব উপলম্বি করার মত প্রগাড় অনুভ’তি তার ছিল না।

– তিনি তার ইতিহাসে ঐ সময়ের সাংস্কৃতিক ইতিহাসকে তুলে ধরেননি।

মূল্যায়ন:

এতদাসত্ত্বেও থুকিডাইডিসকে মুল্যয়ন করতে হলে প্রত্যেক আধুনিক ঐতিহাসিকের উচিত হবে আধুনিকত্বের বেড়াজাল ছিন্ন করে ২৪০০ বছর পূর্বে গ্রীসের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট অবগাহন করা তাহলেই বোঝা যাবে তিনি ইতিহাসের জন্য কি রেখে গেছেন এবং ইতিহাসে তার মূল্য কতটুকু।

হেরোডোটাসের সাথে তার চিন্তার পার্থক্য :

ইতিহাস চিন্তার ক্ষেত্রে হেরোডোটাসের সাথে তার চিন্তার পার্থক্য ছিল। যেমন ্ইতিহাস লেখায় হেরোডোটাসের মধ্যে তথ্য বিন্যাসের ক্ষেত্রে যে ঘাটতি দেখা গিয়েছিল তার সময় তা ঘটেনি। হেরোডোটাস ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করেছেন অতীত কর্মকান্ডের বিবরনী বলেঅ কিন্তু থুকিডাইডিস বৈঙ্গানিক ভিত্তিতে ইতিহাসকে ব্যাখ্যা করেছেন। তাই তাকে বৈঙ্গানিক ইতিহাসের জনক বলা হয়।

সতারং আমরা বলতে পারি আজও কোন ঐতিহাসিক নিজেকে থুকির সব করষতার দাবি করতে পারিনি। তাই সমগ্র ইতিহাসে স্মরনীয় হয়ে আছেন তার পতিভার মাধ্যমে।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.