![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এস কে এস আলী
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অবস্থিত অর্থনৈতিক ও আধুনিকায়নে সমৃদ্ধশালী একটি দেশ হলো মালয়েশিয়া। অতি প্রাচীন কাল থেকেই এই অঞ্চলের সাথে ইউরোপীয়দের বানিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকায় একসময় পর্তুগীজরা এই অঞ্চলে বানিজ্যকুঠি স্থাপন করে। একে একে ব্রিটিশদেরও আগমন ঘটে এই অঞ্চলে এবং তারা একসময় পর্তুগীজদের থেকে মালয়েশিয়ার উপনিবেশিত্ব কেড়ে নেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান যখন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠে তখন তারাও মালয়েশিয়াকে শাসন করার চেষ্টা করে কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হেরে গেলে তাদের কর্তৃত্ব নষ্ট হয়। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মালয়েশিয়ায় যে জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়া ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। প্রথম প্রধানমন্ত্রি টেংকু আব্দুল রহমান থেকে শুরু করে বর্তমান নাজিব আব্দুল রাজ্জাক সবাই মালয়েশিয়ার জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষন এবং আঞ্চলিক সহযোগীতা বৃদ্ধিকে তাদের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান দিক বলে মনে করেন। তারা প্রতিবেশী এবং আসিয়াভূক্ত দেশ ও অন্যান্য বৃহৎ শক্তিগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষনে সদা তৎপর ছিলেন। বর্তমানে আমরা যে উন্নত মালয়েশিয়া দেখি বলা হয়ে থাকে তার জন্ম মাহাথির মোহম্মদের সফল ও যোগ্য পররাষ্ট্রনীতির সফলতা থেকে। নি¤েœ মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির একটি সংক্ষিপ্ত আলোচনা উপস্থাপন করা হলো।
মালয়েশিয়ার পরিচিতিঃ
ভৌগলিক ভাবে মালয়েশিয়ার অবস্থান দক্ষিন-পূূর্ব এশিয়ায়। মালয়েশিয়াকে দুটি খন্ডে ভাগ করা হয়ে থাকে পূর্বে হলো পূর্ব মালয়েশিয়া এবং পশ্চিমে পেনিনসুলা মালয়েশিয়া। পূর্ব মালয়েশিয়ার অবস্থান ব্রুনেই দ্বীপে এবং এর সীমান্ত ব্রুনেই এবং ইন্দোনেশিয়ার সাথে সংযুক্ত। পেনিনসুলা মালয়েশিয়ার উত্তরে থাইল্যান্ড, দক্ষিনে সিঙ্গাপুর এবং ইন্দোনেশিয়ার পূর্বে সুমাত্রা দ্বীপ দ্বারা বেষ্টিত। সূতরাং দেখা যায় মালয়েশিয়ার ভৌগলিক সীমানার উত্তরে থাইল্যান্ড সীমান্ত, দক্ষিণে সিঙ্গাপুর, পূর্বে ব্রুনেই ও দক্ষিণ চীন সাগর এবং পশ্চিমে ইন্দোনেশিয়া দ্বারা বেষ্টিত। মালয়েশিয়ার মোট ভূ-খন্ডের পরিমান ৩,২৯,৭৫০ বর্গ কিলোমিটার, যার মধ্যে ৩,২৮,৫৫০ বর্গ কিলোমিটার স্থল এবং ১,২০০ বর্গ কিলোমিটার জল দ্বারা বেষ্টিত। দক্ষিণ চীন সাগরের তীরবর্তি এই দেশটিতে রয়েছে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন, পেট্রলিয়াম, লোহা, প্রাকৃতিক গ্যাস ইত্যাদি। ১৯৫৭ সালের ৩১ আগষ্ট মালয়েশিয়া যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। ২০০৫ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মালয়েশিয়ার জনসংখ্যার পরিমান হলো ২,৩৯,৫৩,১৩৬ জন। মালয়েশিয়া প্রধান ধর্ম হলো মুসলিম, বৌদ্ধ, হিন্দু এবং খ্রিষ্টান। মোট জনসংখ্যার ৬০.৪% মুসলিম, ১৯.২% বৌদ্ধ, ৯.১%খ্রিষ্টান, ৬.৩% হিন্দু, ২.৬% চীনা ঐতিহ্যবাহী ধর্মের এবং বাকী ২% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। এর রাজধানী শহর হলো কুয়ালালামপুর এবং পুত্রজায়া হলো ফেডারেল সরকারের রাজধানী। মালয়েশিয়ায় সাংবিধানিক রাজতন্ত্র বিরাজমান। রাজা হলেন মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রপ্রধান এবং প্রধানমন্ত্রি হলেন এর সরকার প্রধান।
মালয়েশিয়ার সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
মালয়েশিয়া দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এমন একটি দেশ যার কৌশলগত নৌ পথ এশিয়া বা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ইউরোপীয় ও আরব বনিকদের আকৃষ্ট করতে সমর্থ হয়েছিল। যদি মালয়েশিয়ার আগের ইতিহস দেখা যায় তবে দেখব এখানে ভারতের হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্মেরও কিছু প্রভাব বিদ্যমান। ৭ম থেকে ১৪দশ শতাব্দি পর্যন্ত সুমাত্রা, জাভা এবং মালয় পেনিনসুলা অঞ্চলে শ্রীভিজয়া সভ্যতার প্রভাব বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে ১০ম শতকের দিকে মালয়েশিয়ায় ইসলাম ধর্মের আগমন ঘটেলেও মালাক্কা পেনিনসুলায় তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৪দশ বা ১৫দশ শতাব্দির দিকে। এসময় ইসলাম ধর্মের প্রভাবে মালাক্কার মতো অনেক সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। পর্তুগীজরা হলো প্রথম ইউরোপীয় শক্তি যারা মালয়েশিয়ায় সর্ব প্রথম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং ১৫১১ সালে মালয়েশিয়া দখল করেছিল। তবে ঐসময়ের ঔপনিবেশিক শক্তি হলো যুক্তরাজ্য যারা তাদের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য পর্তুগীজদের পরে এই অঞ্চলে তাদের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করে এবং জেসেলটোন, কুচিং, পেনাং ও সিঙ্গাপুর দখল করে। ১৮২৪ সালের এ্যাংলো-ডাচ চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশ মালয় এবং নেদারল্যান্ড ইস্ট ইন্ডিস (যা বর্তমানে ইন্দেনেশিয়া নামে পরিচিত) এর সীমানা নির্ধারিত হয়। ব্রিটিশরা তাদের অর্থনৈতিক কাজের প্রয়োজনে যে সকল ভারতীয় এবং চীনা শ্রমিকদের এই অঞ্চলে নিয়ে আসে তাদের মাধ্যমেই মূলত পেনিনসুলা এবং ব্রুনেই-এ ভারতীয় ও চীনা প্রভাব শুরু হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান মালয়েশিয়া আক্রমন করলে ব্রিটিশ কর্তৃত্ব বিনষ্ট হয়। এই সময় ১৯৪২-৪৫ সালের মধ্যে সেখানে জাতিয়তাবাদের ধারণা জোরালো হয়। পেনিনসুলায় মালায়ান কমিউনিস্ট পার্টি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করে। মালয়রা টহরঃবফ গধষধু ঘধঃরড়হধষ ঙৎমধহরুধঃরড়হ(টঘগঙ) নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করে। ১৯৪৮ সালে স্থানীয় জনগন, মালয় কমিউনিস্ট পার্টি এবং ইউএনএমও মিলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৫১ সালে টেংকু আব্দুল রহমান ইউএনএমও এর নেতৃত্ব নেন এবং মালয়েশিয়ার জাতীয় এবং স্বাধীনতা আন্দোলনকে আরো জোড়ালো করেন। ১৯৫৫ সালে মালয়েশিয়ায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় যাতে টেংকু আব্দুল রহমানের নেতৃত্বে ইউএনএমও জয় লাভ করে। ফলে চাপের মুখে ব্রিটিশ সরকার মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা প্রদানে বাধ্য হয় এবং দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়া স্বাধীনতা লাভ করে।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতি সমূহঃ
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি তিনটি মূলনীতির দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। এগুলো হলোÑ
১. বিশ্বাসযোগ্য নীতি মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে যে সকল নীতি মান্য করা হয় তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন হতে হবে। এছাড়া পররাষ্ট্রনীতিতে যাতে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষিত হয় সে দিকে লক্ষ্য রেখে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
২. ত্রুটি মুক্ত নীতি (ঊঘখওএঐঞঊঘঊউ ঢ়ড়ষরপু)ঃ মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির মূলনীতিতে বলা হয়েছে যে সকল ধরনের ক্রটি বিচ্যুতি থেকে পররাষ্ট্রনীতিকে মুক্ত রাখতে হবে এবং যাতে নাগরিক স্বার্থকে সবার আগে প্রধান্য দিতে হবে। যার লক্ষ্য থাকবে মালয়েশিয়ার জনগনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এবং সাফল্য লাভ এবং নিজ জনগনকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
৩. সঙ্গতিপূর্ন (ঈঙঘঝওঝঞঊঘঞ অঘউ ঈঙঐঊজঊঘঞ ঢ়ড়ষরপু)ঃ আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়াকে একটি গ্রহনযোগ্য এবং দায়িত্বশীল সহযোগী হিসেবে তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মালয়েশিয়াকে একটি সুসম্পর্কের মডেল হিসেবে তৈরি করতে সঙ্গতিপূর্ন পররাষ্ট্রনীতি প্রনীত হবে।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির উদ্দেশ্যসমূহঃ
প্রতিটি রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রেখে জাতীয় স্বার্থ রক্ষার ক্ষেত্রে সর্বদা পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারনে সচেতনতা অবলম্বন করতে হয় এবং প্রয়োজনে তা পরিবর্তন করতে হয়। তবে সকল রাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য থাকে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে সর্বদা জাতীয় স্বার্থকে সংরক্ষন করা যা মালয়েশিয়ার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকে মালয়েশিয়া তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে বহির্বিশ্বের সাথে একটি বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক বজায় রেখে গেছে। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির প্রধান কিছু উদ্দেশ্য হলোÑ
১. রাষ্ট্রীয় আদর্শ এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি লক্ষ্য না রেখে সকল দেশের সাথে শান্তিপূর্ন সম্পর্ক বজায় রাখা।
২. সকল জাতীর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক সহযোগীতা জোরদার করা বিশেষ করে আসিয়ান এবং অন্যান্য আঞ্চলিক বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র গুলোর সাথে।
৩. আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিষয়গুলোতে একটি স্বাধীন, জোট নিরপেক্ষ এবং দৃঢ়মূলনীতির অবস্থান গ্রহন করা।
৪. সামর্থ অর্জন এবং সংঘর্ষ নিবারনের শান্তিপূর্ন নীতি নির্ধারনের মাধ্যমে এই অঞ্চলে একটি শান্তিপূর্ন এবং স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখা।
৫. আসিয়ান, ন্যাম এবং ওআইসির মতো সংগঠনগুলোতে একটি নেতৃত্বশীল অবস্থান ধরে রাখা।
৬. অন্যায়, অত্যাচার দূরীকরন এবং আন্তর্জাতিক আইনের উন্নয়নে জাতিসংঘের সদস্য হিসেব কার্যকরি এবং অর্থপূর্ন ভূমিকা পালন করা।
৭. একটি উন্নয়নশীল এবং সহনশীল ইসলামিক জাতি হিসেবে মালয়েশিয়াকে সামনের দিকে চালিত করা।
একনজরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
প্রতিটি স্বাধীন রাষ্ট্রের মতো মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ঠ্য বিদ্যমান। স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির কিছু গুরুত্বপূর্ন দিক নিচে তুলে ধরা হলোÑ
১. আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের জন্য মালয়েশিয়া প্রজাতন্ত্রের সংবিধান অনুযায়ী পররাষ্ট্রনীতি প্রনীত হবে।
২. সকল রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক রাখবে এবং কোন রাষ্ট্রের স্বাধীনতা বা অভ্যন্তরীন বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না।
৩. জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সকলের সাথে সুসম্পর্ক এবং সকল ধরনের সংগঠনের (আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক) নীতিমালা গুলো মান্য করবে।
৪. স্বাধীনতার পর নতুন দেশের উন্নয়নের এবং পুনর্গঠনের জন্য টেংকু আব্দুল রহমান সমাজতন্ত্র এবং গণতন্ত্র নামের পুজিবাদী বিশ্বের প্রভাব থেকে মালয়েশিয়াকে দূরে রাখেন।
৫. মাহাথির মোহাম্মদের সময়ে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির কিছু গুরুত্বপূর্ন দিক হলো দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগীতা, পূর্বমুখী নীতি, জি-৭৭ ও জি-১৫ প্রতিষ্ঠা করন, আসিয়ান, ওআইসি এবং অন্যান্য সংগঠনগুলোতে নিজের ভূমিকা বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সাফল্যপূর্ন কিছু নীতি গ্রহন করা
৭. দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক ক্ষেত্রে প্রতিবেশী এবং অন্যান্য দেশগুলোর সাথে সহযোগীতার সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর মূলনীতিগুলো মেনে চলবে।
৯. আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, লাতিন আমেরিকা এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক সম্পর্কের আরো উন্নতি করতে হবে এবং পরিবেশ দূষণ রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে হবে। একই সাথে ২০২০ সালের মধ্যে মালয়েশিয়াকে একটি উন্নত এবং সমৃদ্ধ দেশে পরিনত করা হবে।
১০. সর্বদা বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাথে মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক অখন্ডতা রক্ষা, পারস্পারিক লাভ এবং সংকট নিরসনে শান্তিপূর্ন মিমাংসার চেষ্টা করবে।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির ক্রমবিবর্তন (১৯৫৭ থেকে বর্তমান)ঃ
একটা দেশের পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারন হলো একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। যার ফলে দেখা যায় মালয়েশিয়ার অভ্যন্তরীন রাজনৈতিক এবং নেতৃত্বের পরিবর্তন, অন্যদিকে বাহ্যিক নেতৃত্ব, অর্থনীতি এবং রাজনীতির পরিবর্তনের সাথে সাতে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে সর্বদা একধরনের গতিশীলতা বিদ্যমান ছিল। এভাবে বিশ্বায়নের ফলে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ সমূহ মোকাবেলা এবং সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতেও অনেক পরিবর্তন ঘটে। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন সরকারের সময়ে পররাষ্ট্রনীতি বিভিন্ন রকম ছিল এবং এক সরকারের নীতি থেকে অন্য সরকারের নীতিতে অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিভিন্ন সরকার প্রধানের শাসনাধীনে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির উল্লেখযোগ্য দিক ও বৈশিষ্ট্য গুলো নিচে আলোচনা করা হলোÑ
টেংকু আব্দুল রহমান (১৯৫৭-১৯৬৯)ঃ
১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়া সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত একটি দেশ। স্বাধীনতার পরেই এর প্রথম প্রধানমন্ত্রি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহন করেন টেংকু আব্দুর রহমান। এসময় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির প্রধান লক্ষ্য ছিল সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত দেশটির সংস্কার এবং উন্নয়নের দিকে নজর দেয়া। যেহেতু এটা ছিল ষাটের দশকে সূতরাং বলার অপেক্ষা রাখে না যেন, সে সময় বিশ্বে যে ¯œায়ুযুদ্ধ বিরাজমান ছিল তার একটা বড় প্রভাব পরেছিল মালয়েশিয়া তথা আব্দুল রহমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে। ফলে দেখা যায় এসময় মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক ব্লক এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুজিবাদী ব্লক থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রাখা। এছাড়া সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত অন্যান্য তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বা ন্যামের কার্যক্রমে সহায়তা করা। এসময়ের সবচেয়ে পররাষ্ট্রনীতির বড় সাফল্য হলো আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে জোটবদ্ধ হওয়া। ফলে দেখা যায় ১৯৬০ সালে আসা(অঝঅ), ১৯৬৩ সালে মাফিলান্ডো এবং ১৯৬৭ সালে আসিয়ান প্রতিষ্ঠিয় মালয়েশিয়ার অবদান ছিল অগ্রগন্য। বর্ণ বৈষম্য বিরোধী নীতিও ছিল আব্দুল রহমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম একটি ভাল দিক।
আব্দুল রাজ্জাক হোসেইন (১৯৭০-১৯৭৬)ঃ
১৯৭০ সালে টেংকু আব্দুল রহমানের পর মালয়েশিয়ার ক্ষমতায় আসেন আব্দুল রাজ্জাক সরকার। তার সময়ে মালয়েশিয়া ইসলামী সম্মেলন সংস্থার একটি সক্রিয় সদস্য হিসেবে নিজেকে মুসলিম দেশ হিসেবে পরিচিত করতে শুরু করে। নতুন নতুন বন্ধু এবং সহযোগী রাষ্ট্র খোঁজার জন্য মালয়েশিয়ার কাছে ন্যাম অনেক গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠে। এই সময়ে মালয়েশিয়া নিজেকে নিরপেক্ষ, স্বাধীন এবং শান্তিপূর্ন সহাবস্থানের নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত করতে সমর্থ হয়। আঞ্চলিকতাবাদের উপর অনেক বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয় এবং বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে অনেকক্ষেত্রে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এসময় মালয়েশিয়ায় প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়।
তুন হোসাইন ওন (১৯৭৬-১৯৮১)ঃ
হোসাইন ওন সরকারের সময়কে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি সুদৃঢ়করনের যুগ বলা হয়ে থাকে। এই সময় ১৯৭৫ সালে সায়গনের পতন (বর্তমান হো চি মিন সিটি), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার এবং ভিয়েতনাম কর্তৃক কম্পোচিয়া (বর্তমান কম্বোডিয়া) আক্রমনের ফলে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে আসিয়ান একটি অন্যতম নির্ধারকে পরিনত হয়। ১৯৭৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আসিয়ান সম্মেলনে মালয়েশিয়া অংশগ্রহন করে এবং বন্ধুত্বপূর্ন ও সহযোগীতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। তবে পূর্ববর্তি সরকারের মতো হোসাইন ওন সরকারও জোট নিরপেক্ষতার প্রতি জোর দিতেন, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতেন এবং বৃহৎ শক্তিগুলোর প্রভাব থেকে যথারীতি তিনি মালয়েশিয়াকে সমদূরত্বে রাখার নীতি গ্রহন করেছিলেন।
মাহাথির মোহাম্মদ (১৯৮১-২০০৩)ঃ
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম সফলতার যুগ বলা হয়ে থাকে মাহাথির মোহাম্মদের শাসনামলকে। মাহাথির মোহাম্মদ দীর্ঘ ২২ বছর মালয়েশিয়ার শাসন ক্ষমতায় ছিলেন এবং তাকে আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক বলা হয়ে থাকে। এসময়ই মূলত মালয়েশিয়া অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি লাভ করে। বিশেষ করে তিনি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক নতুন নতুন নীতি গ্রহন করেন যা আগে কখনো করা হয়নি। এছাড়া তিনি উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিকার আদায় এবং স্বার্থ সংরক্ষনের কথা বলেন এবং তিনি ছিলেন দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগীতা (তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মাঝে আন্ত সহযোগীতা) এর অন্যতম একজন পথপ্রদর্শক। মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতায় আসার পরেই অসংখ্য নতুন নীতি ঘোষনা করেন। যার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য কিছু নীতি হলোÑ
উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রধান সামাজিক বিষয় যেমন, পরিবেশ, মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের পক্ষ সমর্থন করা।
মালয়েশিয়ার উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক গুলো বিবেচনা এনে মালয়েশিয়ার উন্নয়ন নিশ্চিত করা।
ইসলামী ঐক্য প্রতিষ্ঠার জন্য মুসলিম দেশগুলোর সাথে সহযোগীতা বৃদ্ধি এবং দশম ওআইসি সম্মেলন আহ্বান ও সভাপতিত্ব করেন।
অর্থনৈতিক সহযোগীতা জোরদার করার জন্য ডি-৮ প্রতিষ্ঠায়ও তিনি অনেক বড় অবদান রাখেন।
জাতিসংঘের বিশ্বশান্তি এবং নিরাপত্তা নীতির সাথে একাত্মতা পোষণ করেন এবং বিভিন্ন দেশে যেমনÑকম্বোডিয়া, সোমালিয়া, বসনিয়া, কসোভো, পূর্ব তিমুর ইত্যাদি দেশে শান্তিরক্ষি মিশনে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেন।
মাহাথির মোহাম্মদের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম একটি নীতি হলো তিনি সন্ত্রাসবাদের তীব্র বিরোধী ছিলেন। ধর্ম বা জাতিসত্বাকে কাজে লাগিয়ে যে কোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড দমনে তিনি ছিলেন বদ্ধ পরিকর। এজন্য তিনি ২০০২ সালে সন্ত্রাসবাদ দমনে ওআইসি সম্মেলন আহ্বান করেন।
পররাষ্ট্রনীতির নতুন মাত্রাঃ
মাহাথির মোহাম্মদ তার পররাষ্ট্রনীতির নতুন মাত্রা হিসেবে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগীতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা এবং পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক, বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তিগত সহযোগীতা সম্প্রসারনের উদ্দ্যোগ গ্রহন করেন। এজন্য তিনি এসকল দেশকে মালয়েশিয়ান প্রযুক্তিগত সহযোগীতা প্রকল্পের (এমটিসিপি) আওতায় নিয়ে আসেন।
অর্থনৈতিক নীতিঃ
মাহাথির ক্ষমতায় থাকা কালে যে সকল নীতি গ্রহন করেছিলেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নীতি হলোÑ
ক্স তিনি পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগীতার কথা বলেন এবং পূর্বমুখী নীতি গ্রহন করেন।
ক্স তিনি আঞ্চলিক উন্নয়নের কথা বলেন।
ক্স শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো বেসরকারীকরন করার কথা বলেন।
ক্স ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর তিনি অধিক গুরুত্বারোপ করেন।
ক্স জনসংখ্যা এবং কৃষিতে নতুন নীতি গ্রহন করেন।
ক্স গ্রুপ অব-১৫ বা জি-১৫ গঠনের প্রথম ধারনা দেন মাহাথিম মোহাম্মদ।
আব্দুল্লাহ আহমদ বাদায়ী (২০০৩-২০০৮)ঃ
মাহাথির মোহম্মদের পরে আব্দুল্লাহ আহমদ বাদায়ী ক্ষমতায় আসেন। তার পররাষ্ট্রনীতির কিছু গুরুত্বপূর্ন দিক ছিলÑ
সমসাময়িক ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক হুমকি সমূহকে সঠিকভাবে মোকাবেলা করা।
মালয়েশিয়ার আদর্শকে সঠিকভাবে ধারণ করা।
বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে আরো বেশি গতিশীল করা এবং আরো বেশি সম্প্রসারিত করা।
ন্যাম, ওআইসি এবং আসিয়ানে প্রভাবশালী নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করা।
একটি সহনশীল এবং উন্নয়নশীল ইসলামিক দেশ হিসেবে মালয়েশিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করা।
বাদায়ী সরকারের সময়ে মালয়েশিয়া উন্নয়নশীল দেশগুলোর মাঝে আরো বেশি প্রভাব বৃদ্ধিতে সক্ষম হয়।
নাজিব আব্দুল রাজ্জাক (২০০৯-বর্তমান)ঃ
২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর নাজিব সরকার যে সকল পররাষ্ট্রনীতি গ্রহন করেন তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু নীতি হলো
মালয়েশিয়াকে আধুনিক, উন্নয়নশীল এবং অগ্রগামী ইসলামি দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বের কাছে তুলে ধরা।
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সকল ক্ষেত্রেই পারস্পারিক লাভের দিকে খেয়াল রেখে প্রতিবেশী দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা।
নাজবি সরকারের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম একটি দিক হলো তিনি ঐতিহাসিকভাবে সম্পর্কযুক্ত দেশ হিসেব চীন এবং ভারতের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে অনেক বেশি গুরুত্ব প্রদান করেন।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ সমূহ, মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন বর্তমান সরকারের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়ন, অর্থনৈতিক অসমতা দূরকরণ এবং বিশ্বব্যাপী আসিয়ানের প্রভাব বৃদ্ধি করতে ২০১৫ সালে আসিয়ান কমিউনিটি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখার দিকটি নাজিব সরকারের পররাষ্ট্রনীতির একটি মূখ্য বিষয়।
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি এবং আসিয়ানঃ
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে সর্বদা আঞ্চলিক সহযোগীতাকে অগ্রগন্য বলে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ফলে এই অঞ্চলের একটি সফল আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে আসিয়ানের গুরুত্ব সবসময়ই মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে প্রাধান্য পেয়ে আসছে। এমনও বলা হয়ে থাকে যে মালয়েশিয়ার বর্তমান যে উন্নত তার অন্যতম উদ্দ্যোক্তা হলো মালয়েশিয়া। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আসিয়ান সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নে অনেক বড় অবদান রেখে আসছে। ¯œায়ুযুদ্ধ পরবর্তি সময়ে আসিয়ানের গুরুত্ব শুধু মাত্র অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। বরং কৌশলগত, সামরিক, সাংস্কৃতি এমনকি এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতেও বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। এমনকি এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করার জন্য আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরাম (এআরএফ) গঠন করা হয়েছে। তাই দেখা যায় মালয়েশিয়া যে কোন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহনের ক্ষেত্রে আসিয়ানকে বাদ দিতে পারে না। বরং আসিয়ানের স্বার্থ গুলো বিবেচনায় এনে তবেই সে পররাষ্ট্র নীতি গ্রহন করে থাকে। তাই মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে আসিয়ান একটি অন্যতম উপাদান।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সম্পর্কঃ
মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির একটি গুরুত্বপূর্ন দিক হলো আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক সম্পর্ক বজায় রাখা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রগুলোর তুলনায় প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সমুদ্রসীমা নিয়ে যে বিরোধ বিদ্যমান তা সমাধানের চেষ্টা করা এবং এমন কোন নীতি গ্রহন না করা যা আঞ্চলিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়ায়। এমনকি প্রয়োজনে এই সমস্যাগুলো আন্তর্জাতিক আদালতের সহযোগীতায় সমাধানের কথাও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে বলা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের সাথে যে সকল ভূ-খন্ড নিয়ে সমস্যা বিদ্যমান সেগুলোকে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে সমাধান করা। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে সকল ক্ষেত্রে পারস্পারিক স্বার্থ সংরক্ষণ এবং দক্ষিণ চীন সাগরের বিরোধপূর্ন দ্বীপগুলোর সমস্যা সমাধানে মালয়েশিয়া ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনামের সাথে বিভিন্ন ধরনের যৌথ কমিশন গঠন করেছে। এককথায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ হিসেবে আসিয়ানভুক্ত প্রতিবেশি দেশগুলোকে কূটনৈতিক, সামরিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অন্যান্য সকল দিক থেকে অধিক প্রধান্য প্রদান করা মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির আর একটি গুরুত্বপূর্ন দিক।
বৃহৎ শক্তিগুলোর সাথে সম্পর্কঃ
আসিয়ানভূক্ত প্রতিবেশী দেশগুলো ছাড়াও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে বহির্বিশ্বের সাথে বিশেষ করে বৃহৎ শক্তিগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়কে অনেক গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তাই দেখা যায় স্বাধীনতার পর দেশটির প্রথম কূটনৈতিক মিশন স্থাপিত হয় লন্ডন, ওয়াশিংটন, ক্যানবেরা, নিউইয়র্ক, নয়া দিল্লি, জাকার্তা এবং ব্যাংককে। এভাবে ১৯৬৩ সালে ১৪টি এবং ১৯৬৭ সালের মধ্যে মোট ২১টি কূটনৈতিক মিশন স্থাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় বহির্বিশ্বের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বর্তমানে প্রায় ১০৫টি কূটনৈতিক মিশন বিদেশে কার্যকর রয়েছে। এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের উন্নয়নশীল দেশগুলোর সাথে দক্ষিণ-দক্ষিণ সহযোগীতার আওতায় সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি এই সকল অঞ্চলের বৃহৎ শক্তিগুলোর সাথেও মালয়েশিয়া অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। নি¤েœ কয়েকটি বৃহৎ রাষ্ট্রের সাথে মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।
মালয়েশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কঃ
স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই মালয়েশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, বানিজ্যিক, শিক্ষাগত সকল দিক থেকে পারস্পারিক সহযোগীতা বিদ্যমান ছিল। ১৯৬০ এর দশক থেকেই মালয়েশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মাঝে বানিজ্যিক সম্পর্ক বিদ্যমান। কিন্তু সে সময় দেশ দুটির সম্পর্ক উন্নয়নে বড় বাধা ছিল ¯œায়ুযুদ্ধ। মালয়েশিয়ার প্রথম প্রধানমন্ত্রী টেংকু আব্দুল রহমান সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় মেরু থেকে নিজেকে দূরে রেখে নিরপেক্ষতার নীতি গ্রহন করেছিলেন। এসময় তিনি যে সকল নীতি দেশের জন্য কল্যানমূলক হবে সেগুলো ধারন করার নীতিও গ্রহন করেন। ফলে এসময় দেশদুটির সম্পর্ক তেমন উন্নত না হলেও মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতা গ্রহনের পর দেশ দুটির সম্পর্কে অনেক উন্নতি ঘটে এবং এই ধারাবাহিকতা এখানো বিরাজমান। ২০০৪ সালে শুরু হওয়া টঝ-গধষধুংরধ ঋৎবব ঞৎধফব অমৎববসবহঃ ঘবমড়ঃরধঃরড়হ কে ২০০৬ সালে এসে অনুমোদন করা হয়। ২০১১ সালের ১৭-১৮ মে নাজিব রাজ্জাক যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এর সাথে দেশ দুটির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়নের সাথে অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক সম্পর্কেরও উন্নতি ঘটে। ২০০৯ সালে দেশ দুটির মাঝে বানিজ্যিক লেনদেনের পরিমান ছিল ২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১০ সালে মালয়েশিয়ার ‘ব্যাংক নিগার’ কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রকে চতুর্থ বৃহত্তম বানিজ্যিক পার্টনার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১১ সালে মালয়েশিয়ার পরিসংখ্যান বিভাগ থেকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেশ দুটির বানিজ্যিক সহযোগীতার পরিমান ৩৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।
মালয়েশিয়া-চীন সম্পর্কঃ
মালয়েশিয়া এবং চীনের মাঝে একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক বিদ্যমান। মালয়েশিয়া যখন বৃটিশ স¤্রাজ্যের অধীনে ছিল তখন তারা বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে মালয়েশিয়ায় চীনা শ্রমিকদের নিয়ে আসে। ফলে দেখা যায় মালয়েশিয়ার সংস্কৃতিতে চীনা সংস্কৃতির অনেক বড় একটা প্রভাব এখনো বিরাজমান। তবে স্বাধীনতার পর দেশ দুটির মাঝে প্রথম কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৭৪ সালে ¯œায়ুযুদ্ধ কালীন সময়ে এবং ২০০৯ সালে এসে দেশদুটি তাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৩৫তম বার্ষিকী উৎযাপন করে। ঐসময় তাদের সম্পর্কের তেমন উন্নতি না ঘটলেও সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে সম্পর্ক জোড়ালো হয় এবং উভয় দেশই এপেক এর পূর্ন সদস্যপদ লাভ করে। ১৯৯১ সাল থেকেই দেশ দুটির মাঝে দ্বিপাক্ষিক পরামর্শ কার্যক্রম । এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরিয় অঞ্চলে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে দেশ দুটির মাঝে সমঝোতা হয়। ২০১২ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয় চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে দেশ দুটি বানিজ্যিক লেনদেনের পরিমান ছিল ৮৮মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যেখানে ২০১১ সালের সারা বছরের বানিজ্যিক লেন-দেন ছিল ৯০মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে দেশ দুটির মাঝে সম্পর্কের ক্রমউন্নতি থাকলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে চীন এবং মালয়েশিয়ার মাঝে বিরোধ বিদ্যমান। যেমনÑ স্প্রাটলী ও প্যারাসেল আইল্যান্ডকে কেন্দ্র করে দেশদুটির মাঝে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। কিন্তু তারপরও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং সহযোগীতার জন্য আসিয়ান ও অন্যান্য আঞ্চলিক সংগঠনগুলোর সহযোগীতায় মালয়েশিয়া এই সমস্যা সমাধানে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
মালয়েশিয়া-রাশিয়া সম্পর্কঃ
১৯৬৭ সালের ৩ এপ্রিল সোভিয়েত ইউনিয়ন মালয়েশিয়ার সাথে প্রথম কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। কিন্তু ¯œায়ুযুদ্ধের প্রভাবে দেশ দুটির সম্পর্ক তেমন উন্নতির দিকে যায়নি। বরং ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন আফগানিস্থানে সৈন্য পাঠায় মালয়েশিয়া তখন আফগানিস্থানের পক্ষ গ্রহন করায় এ সম্পর্কে অনেক অবনতি ঘটে। কিন্তু ১৯৮১ সালে মাহাথির মোহাম্মদ ক্ষমতা গ্রহন এবং ১৯৮৯ সালে আফগানিস্থান থেকে সোভিয়েত সেনা প্রত্যাহার করা হলে তাদের সম্পর্কের মাঝে নতুন গতি সৃষ্টি হয়। ১৯৯৯ সালে মাহাথির মোহাম্মদ রাশিয়া সফর করেন এমনকি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন কয়েকবার মালয়েশিয়া সফর করেন। বানিজ্যিক ক্ষেত্রে তাদের সম্পর্ক আরো জোড়ালো হয়। মালয়েশিয়া-রাশিয়া বানিজ্যিক সম্পর্ক পরিচালিত হয় মূলত ১৯৮৭ সালে স্বাক্ষরিত । ২০০৭ সালে এক পরিসংখ্যানে দেখানো হয় রাশিয়ার মালয়েশিয়া থেকে আমদানির পরিমান ছিল ১,৪৬২ বিলিয়ন ডলার এবং রপ্তানীর পরিমান ছিল ৪,৪০১ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও দেশ দুটির মাঝে দ্বিপাক্ষিক সহযোগীতা বিদ্যমান।
মালয়েশিয়া-ভারত সম্পর্কঃ
মালয়েশিয়ার সাথে ভারতের এক ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ব্রিটিশ উপনিবেশ থাকাকালীন সময়ে ব্রিটিশরা ভারত থেকে অনেক লোক মালয়েশিয়ায় পাঠায়। যার ফলে মালয়েশিয়ায় ভারতীয় সংস্কৃতির ব্যপক প্রভাব লক্ষ্যকরা যায়। ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়ার স্বাধীনতার পর থেকেই দুদেশের মাঝে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বর্তমানে দুই দেশেই উভয় দেশের কূটনৈতিক মিশনের কার্যক্রম চলছে। মালয়েশিয়া এবং ভারত কমনওয়েলথের পূর্ন সদস্য হওয়ায় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক সাথে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক বলে খ্যাত মাহাথির মোহাম্মদ একজন ভারতীয় বংশোদ্ভুত নাগরিক। তার পিতা মোহাম্মদ ইস্কান্দার দক্ষিণ ভারতের একজন মুসলমান ছিলেন যিনি মালয়েশিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ফলে দুদেশের মাঝে একটি সাংস্কৃতিক বন্ধন লক্ষ্য করা যায়। এমনকি বানিজ্যিক ক্ষেত্রেও দুদেশের সহযোগীতার হাত সম্প্রসারিত। বর্তমানে দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যের পরিমান ১০.৫ বিলিয়ন ডলার যাকে ২০২০ সালের মধ্যে ২৫ বিলয়িন ডলারে উন্নীত করার উদ্যোগ হাতে নিয়েছে দেশ দুটি।
মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কঃ
বাংলাদেশের সাথে মালয়েশিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ১৯৭২ সালের নভেম্বরে। ১৯৭৩ সালে এইচ. ই. আলী বিন আব্দুল্লাহ মালয়েশিয়ার প্রথম কূটনীতিক হিসেবে বাংলাদেশে নিযুক্ত হন। বাংলাদেশকে স্বাীকৃতি দানকারী মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে মালয়েশিয়া অন্যতম। বাংলাদেশ মালয়েশিয়া থেকে অর্থনৈতিক এবং কারিগরি ক্ষেত্রে প্রচুর সহায়তা পেয়ে থাকে। অপরদিকে শ্রম সহলভ্য হওয়ার কারণে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে প্রচুর নির্মান শ্রমীক গ্রহন করে। আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগকারী হলো মালয়েশিয়া। ২০০৭ সালে ৫৯টি প্রকল্পের জন্য মালয়েশিয়া বাংলাদেশে ১.৩ বিলিয়ম মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছিল। বর্তমানে দেশদুটি কমনওয়েলথ, ওআইসি, আসিয়ান কো-অপারেশন ডায়লগ, ডি-৮ এর সদস্য হওয়ায় আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক সাথে কাজ করার সুযোগ লাভ করে। ফলে দুদেশের মাঝে সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর পক্ষে যৌথভাবে কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়।
মূল্যায়নঃ
স্বাধীনতার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতি একটি সামগ্রিক মূল্যায়ন যদি উপস্থাপন করা যায় তাহলে দেখব, মালয়েশিয়ার প্রতিটি সরকারই বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত তাদের জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে ভূল করেননি। ¯œায়ুযুদ্ধের সময় দুই বৃহৎ শক্তির প্রভাব বলয় থেকে টেংকু আব্দুল রহমান মালয়েশিয়াকে যেমন দূরে সরিয়ে রাখেন তেমনি তাদের থেকে আবার রাষ্ট্রীয় কল্যান মুলক কোন নীতি পেলে তা গ্রহন করেন। ন্যাম গঠন এবং ও আইসির সদস্য হিসেবে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর কাছে মালয়েশিয়া একটি অনুসরনীয় রাষ্ট্রে পরিনত হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক সহযোগী সংগঠ আসিয়ানের সদস্য হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সুসম্পর্ক স্থাপনের পাশাপাশি এই অঞ্চলে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে মালয়েশিয়া একটি বড় ভূমিকা পালন করে আসছে। মাহাথির মোহাম্মদ পূর্বমুখী নীতির মাধ্যমে চীন, জাপান সহ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সহযোগীতা বৃদ্ধি করা হয়। দ্বিপাক্ষিক এবং বহুপাক্ষিক বিভিন্ন ধরনের চুক্তির মাধ্যমে মালয়েশিয়া আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রেখে চলেছে। মাহাথিরের সময় বিশেষ করে ¯œায়ুযুদ্ধ পরবর্তি সময়ে উন্নত বিশ্ব তথা পাশ্চাত্যের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন হিসেবে জাতিসংঘের নীতিমালা মান্য করে বিশ্বরাজনীতি এবং অর্থনীতিতে অনেক বন্ধু প্রতিম রাষ্ট্রের সাথে একত্রে পথ চলছে বর্তমান আধুনিক মালয়েশিয়া। এত দ্রুত একটি অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক ক্ষেত্রে সফল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিা লাভের পিছনে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রনীতির উৎকর্ষতা এবং সফলতাকে অন্যতম এবং প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করলে ভূল হবে না।
উপসংহারঃ
পরিশেষে বলা যায় যে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি দেশ হিসেবে মারয়েশিয়া স্বাধীনতা লাভের পর যত দ্রুত গতিতে উন্নতি লাভ করেছে বিশ্বের আর কোন দেশের ক্ষেত্রে এমন নজির দেখা যায় না। দেশটির উন্নয়নের মূলে ছিল তার সফল এবং কৌশলগত পররাষ্ট্রনীতি। দেশটির স্বাধীনতার পর টেংকু আব্দুল রহমান দ্বিমেরু বিশ্বের প্রভাব থেকে মালয়েশিয়াকে দূরে সরিয়ে রাখেন একই সাথে নিজেদের জন্য যেসকল নীতি কল্যানকর তা তিনি গ্রহন করেন। আব্দুল রাজ্জাক হোসাইন, হোসেন ওন সরকারের সফলতা এবং আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক মাহাথির মোহাম্মদের যোগ্য নেতৃত্ব দেশটিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর মাঝে উন্নয়নের একটি রোল মডেলে পরিনত করে। যার ফলশ্রুতিতে বর্তমান নাজিব আব্দুল রাজ্জাক সরকারের সময়ে আসিয়ান, ওআইসি, জাতিসংঘ ইত্যাদি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং প্রতিবেশী ও বৃহৎ শক্তিগুলোর সাথে সহযোগীতার সম্পর্কের মাধ্যমে মালয়েশিয়া ক্রমাগত আরো উন্নত একটি দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাড়াবে বলে আশা করা যায়।
©somewhere in net ltd.