নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিথ্যার অন্বেষণে

অকৃতজ্ঞের চেয়ে অধম

এস কে এস আলী

আশায় আশায় বুক বেঁধে রই

এস কে এস আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিবেশ রক্ষায় আমাদের করণীয়

০৬ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১২:০৬



এস কে এস আলী



বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত চলছে জনসংখ্যা বৃদ্ধির তীব্রতা, অন্যদিকে বাসা বাড়ির ভাড়া বৃদ্ধি। হারিয়ে যাচ্ছে সবুজের সমারোহ। বৃদ্ধি পাচ্ছে নানা ভাবে পরিবেশ দূষণ। আর সবকিছুর মধ্য দিয়ে এই নিরবিচ্ছিন্ন সংকটকে পুজিঁ করে কেবল ব্যবসা করে যাচ্ছে কিছু সংখ্যক মানুষ। অথচ পরিবেশ ও এর প্রয়োজনীয়তার বাস্তবতা মাথায় রেখে অবশ্য সেটা করা যায়। শুধু বিল্ডিং আর উন্নয়নই এর সমার্থক নয়। আগামী তিন বছর পর ঢাকায় পানি সংকট চরমে উঠবে । ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ এরই মধ্যে কমতে শুরু করেছে। ঢাকা শহরের আশে পাশে যেসব নদী আছে তার পানি বিশুদ্ধ করে ব্যবহারের অনুপযোগী। ওয়াসাও বর্তমানে তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে দূরে অবস্থান করছে।

আমাদের অপরিকল্পিত অতীত আর স্বেচ্ছাচারি বর্তমানকে উপেক্ষা করে হয়তোবা অনেক কথাই বলা সম্ভব। কিন্তু বাস্তবতার নিরিখে বলতে আমরা এখনো আমাদের অস্তিত্বের সংকটে পড়ে আছি। এ সংকট নিরসনের জন্য একটি সঠিক , নির্ভররযোগ্য ও সুপরিকল্পিত সমাধান আজও আমাদের নজরে আসেনি।

দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব আমাদের চারিদিকের পরিবেশের উপর স্থায়ী হচ্ছে দিনে দিনে। এ ব্যাপারে সরকারসহ স্থানীয় প্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া জরুরী। এসব নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যার পাশাপাশি দীর্ঘদিনের আলোচিত অন্যান্য পরিবেশের সমস্যার মধ্যে রয়েছে আন্তর্জাতিক নদীর পানি ব্যবস্থাপনা , নদী ভাঙ্গন, বিদেশী তেল গ্যাস কোম্পানির আগ্রাসী ব্যবসা পরিচালনা , জীববৈচিত্র্য ধ্বংস ইত্যাদি। এসব সমস্যা সমাধানে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ নেই। তবে পরিবেশ রক্ষায় আইন ও পদ্ধতির প্রণয়ন, এবং কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার প্রতিফলন হলেও এগুলোর প্রয়োগহীনতা এতই প্রবল যে, আইনগুলো অনেকাংশে লেজুড়ভিত্তিক ইশতেহারে পরিণত হয়েছে। পরিবেশ ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে আইনের এ তীব্রতা সবল রাখাই আমাদের কাজ। দেশের মানুষের উন্নয়নের আকাঙ্খা ও মানসিকতার সঙ্গে সঙ্গে দেশের পরিবেশেরর নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পরিবেশের দূষণ কে এখনই প্রতিরোধ করা না গেলে আগামীর দিনগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

বাংলাদেশ মিঠা পানির মাছ উৎপাদনের দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে সেটা কমতে থাকবে, যা এরই মধ্যে অতি মাত্রায় কমতে শুরু করেছে। কারণ সমুদ্রের নোনা পানি ভেতরে প্রবেশ করতে থাকবে। আর আমাদের ফসল উৎপাদনে বিরুপ প্রভাব পড়বে। বর্তমানে আমাদের অমূল্যবান সম্পদ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার পথে। এসব প্রাকৃতিক বিপর্যায়ে মানব স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাপমাত্রা বেড়ে যাবে, যার প্রভাব ক্ষতিকর। সর্বোপরি বলা যায় জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের সার্বভেীমত্বের ওপর আঘাত আসবে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হবে। আর দেশের সার্বভেীমত্ব ও মানবাধিকার রক্ষায় সরকার ,ব্যবসায়ী, জনসাধারণ সবাইকে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসতে হবে। তাছাড়া আমাদের সামনে আর কোন প্রশস্ত পথ নেই। দেশের মানুষের ওপর নির্ভর করে পরিবেশের সুরক্ষা। আমাদের প্রত্যেকের প্রাণী হিসেবে শ্বাস প্রশ্বাসের প্রয়াজন হচ্ছে। আমরা অভুক্ত থাকলেও আমাদের প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হচ্ছে নিঃশ্বাসের। তাই এখন আর অসম্ভব কথাটি চাইলেও বলা সম্ভব নয়। নিজেদের অস্তিত্বের মতোই পরিবেশের অস্তিত্বের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। গুরুত্বের পাশাপাশি আমাদের বাড়িয়ে তুলতে হবে আরো বেশী সচেতনতা। শাসকগোষ্টী বরাবরই এ ব্যাপারে উদাসীন। তাই শুধু সরকারের দিকেব তাকিয়ে বসে না থেকে আমাদেরকেই এর দায়িত্ব নিতে হবে।

দ্বিতীয় বার বলার আর প্রয়োজন নাই যে পরিবেশগত দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিপর্যায়ের মুখোমুখি। সামগ্রিক বিশ্বে ধীরে ধীরে জলবায়ুর পরিবর্তন হচ্ছে। দেশের কৃষির আবস্থা আরো নাজুক হয়ে উঠছে এবং বর্তমানে কৃষককে তাদের বিপরীত মেরুতে অবস্থান করতে হচ্ছে। সে জন্য দরকার কৃষি খাতকে আরো বেশী শক্তিশালী।

অন্যদিকে বাংলাদেশের যে উন্নয়নের জোয়ার চলছে তা অত্যন্ত পরিবেশবিধ্বংসী। প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। বন ধ্বংসকারী , পানির অব্যবস্থাপনা , অপরিকল্পিত নগরায়ন সর্বাপেক্ষা এক পরিবেশ বিধ্বংসী সময়ের ভেতর দিয়ে আমরা সামনের পথ চলা অব্যহত রেখেছি। এখনই সময় রুখে দাড়ানোর বিবিধ স্বেচ্ছাচারি পরিবেশ বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে। বাংলাদেশে নানারকম দূষণ রোধে পর্যাপ্ত আইন থাকলেও ব্যবহারের অক্ষমতায় সেগুলোতে আজ মরিচা পড়ে গেছে। বাংলাদেশের জলাভূমি, বনভূমি ও পাহাড় রক্ষায় পর্যাপ্ত আইন রয়েছে। নদী রক্ষায় তেমন কোন আইন না থাকলেও যেসব প্রতিষ্ঠানকে নদী রক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা যদি আত্মপ্রত্যয়ী হয় তাহলে দেশের নদী গুলো রক্ষা করা সম্ভব।

কিন্তু সরকার এবং সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রত্যয় ও দায়িত্ব পালনের অভাব প্রকট। নদী ভরাটের বিরুদ্ধে স্থানীয় জনগণ আগের চেয়ে অনেক বেশী সচেতন হচ্ছে।পরিমাণে কম হলেও অনেকেই এখন নিজ উদ্যোগে এগিয়ে এসেছেন নদী রক্ষায়। আমাদের এ সংখ্যা যত বেশী বাড়বে ততই আমদের পরিবেশ রক্ষার সম্ভাবনা আরো বেশী উজ্জ্বল হবে। বর্তমানে সরকার অনেক ক্ষেত্রেই এ বিষয়ে চাপের মুখে কাজ শুরু করেছে। তবে আন্তরিকভাবে যদি আইনি প্রয়োগ করা হয় তবেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

আশার কথা একটাই যে, সরকার দেরিতে হলেও কাজ শুরু করেছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে সচেষ্ট হচ্ছে। তবে পরিবেশগত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হলে আইন প্রণয়নই শেষ কথা নয় , তা দেশের প্রধান পরিবেশের সমস্যাগুলোর বর্তমান অবস্থার আলোকেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আইন প্রয়োগ না করা বা আইন প্রয়োগের অভাবের সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো, আইন ভঙ্গকারীদের সংখ্যা দ্বিগুণ, তিনগুণ উৎসাহে আইন অমান্য করতে থাকে। আর উন্নয়নের দোহাই দিয়ে প্রশাসনকে বলী আর জনস্বার্থকে পদদলিত করে। তাছাড়া পরিবেশ রক্ষায় সরকার যতটা না আইনি শক্তি প্রয়োগ করে আইন অমান্যকারীরা শুধু ব্যবসায়িক স্বার্থরক্ষায় বা আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার জন্য তার বেশী শক্তি সঞ্চয়ের পথ আবিষ্কার করে ফেলে। তাই এই কঠিন মুহুর্তে সরকারের দিকে তাকিয়ে না থেকে তাকাতে হবে নিজেদের শক্তি সামর্থ্যরে প্রতি । যার যার অবস্থান থেকে নিজেদের কর্মকান্ডের প্রতি সচেতন হতে হবে। আগামী প্রজন্মের চিন্তা করে পরিবেশ রক্ষায় সজাগ থাকতে হবে সবাইকে। আমাদের ভুলে গেলে চলবে না আমাদের সম্মিলিত ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধই পরিবেশ ধ্বংসের প্রধান কারণ। সরকারের দায়িত্ব যেমন পরিবেশ রক্ষায় জনগণকে উৎসাহিত করা তেমনি জনগনের উচিত সরকারের কাজে সহযোগিতা করা। আমাদের শত সংকটময় পরিবেশের দেশে কখনোই সরকারের একার পক্ষে এটি সম্ভব নয়। বাংলাদেশের প্রায়ই পরিবেশ দূষনের জন্য জনসাধারণকেই দায়ী করা হয়। এ ধারণা একেবারেই ভিত্তিহীন। কারণ আমাদে দেশে যারা পরিবেশ দূষণ করেন তাদের একান্ত স্বেচ্ছাসেবীর জন্য প্রতিনিয়ত এ ঘটনা ঘটাচ্ছেন শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীরা। তাদের অজ্ঞ ও অসচেতন বলার কোন কারণ আমি দেখিনা। কারণ তারা তাদের নিজেদের আখের গোচাতে ব্যস্ত তারা তাদের আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করেনা। তাদের একটাই চিন্তা কত লাভ আর কত লোকসান। উপার্জনই যাদের একমাত্র লক্ষ্য তাদের আবার কিসের পরিবেশ ! আর কত উপার্জন করা সম্ভব? তাদের ধনী হওয়ার কোন সীমাবদ্ধতা নেই। ৪ হাজার একরের আবাসন ব্যবসার বদলে মাত্র ২০ একরের কাজ করেই ধনী হওয়া যায়। কিন্তু তাদের লক্ষ্য তো দেশের আবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন। যে ভাবনায় তাদের চোখে নেই ঘুম আর মাথায় তো পরিবেশের কথাই নেই। তারা ভালো আছেন আর তাদের ছেলে মেয়েরা আছেন দেশের বাহিরে। এ দেশ শুধু তাদের ব্যবসা ক্ষেত্র। প্রবাদ আছে সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই আর তাদের ক্ষেত্রে সবার উপরে ব্যবসা সত্য তাহার উপরে নাই।

একটা বিষয় লক্ষনীয়, বনভুমি উজাড়, পাহাড় কাটা, কৃষিজমিতে লবনাক্ততা, নদী দূষণ যাই বলি না কেন ধনী শিল্পপতিরাই এসবের জন্য দায়ী। পরিবেশ দূষণ করছে তারা জেনে বুঝে, সচেতনভাবে। উপরন্তু পরিবেশ রক্ষায় সরকারের সামগ্রিক নীতিনির্ধারণ ও সমন্বয় সাধনে রয়েছে পশ্চাৎপদতা । আর এ দু পক্ষের প্রত্যক্ষ মদদেই সবধরনের উন্নয়ন , উপার্জনের কেন্দ্রবিন্দু করা হচ্ছে ঢাকা নগরীকে। কাঙ্খিত পরিবেশ রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সামাজিকভাবে আমাদের সম্পর্ক যেন পারস্পারিকের মধ্যে বজায় থাকে, তেমনি পরিবেশের মূল্যবোধও তেমন। পরিবেশ যেমনি আমাদেরকে প্রতিনিয়ত দিচ্ছে তেমনি পরিবেশকেও আমাদের দেওয়ার আছে। আগামী প্রজন্মের কথা চিন্তা করতে হবে এখনই, কারণ বর্তমান প্রজন্মের সময় শেষ হতে চলেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.