নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিথ্যার অন্বেষণে

অকৃতজ্ঞের চেয়ে অধম

এস কে এস আলী

আশায় আশায় বুক বেঁধে রই

এস কে এস আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ চাই

১৯ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১:৩১



সেদিন ঢাকা থেকে হলে ফেরার পর মাস্টার্স শেষ করেছেন এমন দুইজন ভাই গল্প প্রসঙ্গে একজন বলে উঠলেন আরেকটি মুক্তি যুদ্ধ হলে মনে হয় ভালো হত আরেকজন ভাই বলে উঠলেন তাহলে ওরাই তো (দুর্নীতিবাজরা) আগে দেশ ছেড়ে পালাবে, কাদের সাথে যুদ্ধ করবেন ।সরকারী একজন ঝাড়ুদার নিয়োগ থেকে শুরু করে বিচারক নিয়োগ পর্যন্ত ঘুষ আর দুর্নীতির সয়লাবে ছেয়ে গেছে যেখানে সেখানে মেধার মূল্যায়ন কি করে হবে?পিএসসি ,বিসিএস,পুলিশ,ফায়ার সার্ভিস,সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী,শিক্ষক নিয়োগ কোন ক্ষেত্রই বাদ পড়েনি দুর্ণীতির এই নাগপাশ থেকে ।আমার একজন মেয়ে রিলেটিভ পুলিশ সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সপ্তাহখানেক আগে তার জন্য তাকে সেলামি গুণতে হয়েছে নগদ দুই লাখ টাকা,আমার বেয়াই ময়মনসিংহের কোন একটি থানার ব্লক সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আমার চোখের সামনে দেখা নগদ সাড়ে ছয় লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে তাকে,বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে আমার একজন অতি পরিচিত ভাই বার লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন ।এরকম অসংখ্য ঘুষের নজির রয়েছে প্রায় প্রতিটি চাকরিতেই ।শোনা যায় এখন বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান পিএসসিতে এমপি মণ্ত্রীদের অনুরোধে আর উপরি টাকার উপর ভিত্তি করে আর দলীয় ক্ষমতার বলে আর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিয়োগ পাচ্ছেন ।তাহলে আমাদের মত সাধারন ছাত্র যারা প্রতি আসনের বিপরীতে ৩০০ বা ৪০০ জন ছাত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় মেধাতালিকায় টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ৫ বা কখনো ৬ টি বছর অক্লান্ত পড়ালেখা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছি কিন্তু আমাদের সবার তো মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নেই,আমাদের তো মামা খালু নেই,আমরা সবাইতো ঐ ঘৃণ্য অপরাজনীতির সাথে জড়িত নই যার কারনে দলীয় পরিচয়ে আমাদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে ।তাহলে আমরা কোথায় যাবো আমাদের মেধার মূল্যায়ন না করে দুর্নীতি করে নিয়োগ দেয়া হবে আর ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার মিথ্যা শ্লোগান আর বক্তব্যে হয়তো মাইক্রো ফোন কাপানো যেতে পারে,রাজনীতির মাঠ গরম করা যেতে পারে, রেডিও টেলিভিশনসহ সকল মিডিয়াতে বাহবা পাওয়া যেতে পারে কিন্তু ক্ষুধার্তের প্রয়োজনীয় খাবার ক্ষুধার্তদের পেটে না গিয়ে দুর্নীতিবাজদের অথবা লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে যারা চাকরি নিয়েছেন তাদের পেটেই যাবে,ঐ মিথ্যা বক্তব্য আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানব বন্ধনের কোন ফলাফল পাওয়া যেতে পারেনা ।কারণ আমার ঐ ব্লক সুভারভাইজার ভাইটি তার চাকরি নেয়ার সময় তার প্রদেয় সাড়ে ছয় লাখ টাকার কথা যখন মনে করবে তখন সে কখনোই চাইবেনা কৃষককে বিনামূল্যে বীজ অথবা কম দামে সার সরবরাহ করতে একারনেই পত্রিকার পাতায় আমরা প্রধান শিরোনাম দেখি একদিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ অন্যদিকে কৃষকের মরণ ।বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন ছা্ত্রকে নিয়ে তার বাবা মাযের আশার শেষ থাকেনা আর আমার জানামতে আমরা যারা বিশ্ববিধ্যালয়ে পড়ালেখা করি তাদের অধিকাংশই খুবই সাধারন পরিবারের ছেলেমেয়ে ।আর যখন একটি ছেলে বা মেয়ে তার পড়ালেখা শেষ করে তখন সাথে সাথেই তার একটি চাকরির প্রয়োজন ।কিন্তু যখন চাকরি খুজতে গিয়ে দেখে এমন দুর্ণীতি আর ঘুষের কারবার তখন স্বভাবতই চোখ কপালে উঠে বাস্তবতাটা জিনিসটা সে খুব কাছে থেকে উপলদ্ধি করতে পারে ।কিন্তু এটাই কি আমাদের প্রত্যাশা ?মেধার মূল্যায়ন কি তাহলে হবেনা?টাকা,মামাখালু,দলীয় পরিচয় আর অবৈধভাবে যোগাড়কৃত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটেই কি আমাদের প্রকৃত মেধার মূল্যায়ণ?সরকারদলীয় বা বিরোধদলীয় এমনকি প্রশাসনের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি নিজেদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি বলে দাবি করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলে ঘোষনা করেন ।কিন্তু কতিপয় এই দুর্নীতিবাজদের প্রতিষ্ঠিত রাখাই কি আমাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া ?১৯৭১ সালের যে মহান মুক্তিযুদ্ধকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি আর ২৬ মার্চ ১৬ ই ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম করে করে গলা চিৎকার করি আর তাদের লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি পুস্পস্তপক অর্পণ করি,শহীদদের স্মরণে র্যালি করি,মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করি এগুলো কি আমরা বিনাকারনে করি?।তাহলে দুর্নীতি আর দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয়াই কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া?তাহলে আমরা কি ধরে নেবনা যে সরকার দলীয়,বিরোধলীয় এবং প্রশাসনিক নেতৃত্বে যারা আছেন তারা মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এই বুলি বারবার আওড়িয়ে সাধারন জনগণকে একটা ধোকার মধ্যে ফেলে রাখতে চান আর বুঝাতে চান যে তারাই শুধু মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া বুঝেন আর আমরা মুক্তিযুদ্ধের কিছু বুঝিনা ।সত্যি বলতে কি নেতৃবৃন্দের ভালো কিছু করার ক্ষমতা অবশ্যই আছে শুধুমাত্র সদিচ্ছা আর পরিবর্তনের জন্য একটু উদ্যোগ গ্রহণের অভাব ।আমি আপনাদেরকে একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টা ক্লিয়ার হবে ।৪ বা ৫ মাস আগে যোগাযোগমণ্ত্রী হিসেবে আবুল হোসেনকে সরিয়ে যখন ওবায়দুল কাদেরকে নিয়োগ দেয়া হল তখন যানজট প্রতিরোধের জন্য তিনি নিজে মাঠে নামলেন এবং প্রচার প্রচারণা চালালেন তখন বেশকিছুদিন পুরো ঢাকাশহরে যানজট একদম কমে গিয়েছিল এবং চারদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল । অবশ্য যদিও এখন তিনি সে হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং ঢাকাশহর আবার আগের মতই যানজট অবস্থায় পিরে গিয়েছে ।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন এই অবৈধ নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ হবে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন গরীব কৃষক যারা রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারা দেশবাসীর জন্য ফসল ফলায় তাদের ফসলের ন্যয্য মূল্য পাবে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন এই সকল দুর্নীবাজদের মুখোশ উন্মোচন করে সাধারন জনসাধারনের সামনে তাদের উপর কার্যকরী শাস্তি প্রয়োগ করা হবে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন অপরাধীদের যথাযথ বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হবে,যেদিন ইভটিজিং,শ্লীলতাহানি বন্ধ করতে সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন বিশ্বজিতের মায়ের মত অস্ত্রের এ অপরাজনীতির কবলে খালি হবেনা অসংখ্য মায়ের বুক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন গার্মেন্ট্স কর্মীরা তাদের ন্যায্য বেতন নিয়ে একটু সুখে দিনযাপন করার সুযোগ পাবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অসংখ্য মানুষের একটা ব্যবস্থা হবে ।এইরকম কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা যারা মুক্তিযুদ্ধের বুলি আওড়াতে আওড়াতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন তাদের উচিৎ দেশ এবং জনসাধারনের জন্য তাদের কিছু করে দেখানো ।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সরকারদলীয় এবং প্রশাসনিক নেতৃত্বে যারা সমাসীন তারা হচ্ছেন সাধারন জনসাধারনের মডেল,সাধারন জনগণ পেপার পত্রিকায় রেডিওটেলিভিশনে তাদেরকে দেখেন এবং তাদের প্রতিটি কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেন ।সুতরাং তারা যদি দুর্নীতির কবলে পড়ে সাদা বিড়াল কালো বিড়াল নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন তাদের উপর সাধারন জনসাধারণ কিভাবে আস্থা রাখবেন বা তাদের জনপ্রিয়তা বজায় রাখবেন ?আজকে নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নিয়োগের পন্থা অবলম্বন করা হয় এবং গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে কোন ছাত্র কোন প্রকার ঘুষ প্রদান না করে তার নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে আত্ননিয়োগ করেন তখন তিনি কখনোই লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে যিনি চাকরি নেন সেই ব্যক্তির মত সেই ঘুষের টাকা উশুলের নাম করে জনগণের টাকা রাষ্ট্রের খাত থেকে আত্নসাৎ করার অপচেষ্টা করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন ।দিন যত গড়াচ্ছে বিশ্ব ততই আধুনিক হচ্ছে কোন ঘটনাই আড়াল থাকছেনা ।সুতরাং সভ্যতা যত উন্নত হচ্ছে বিশ্বের খুটিনাটি বিষয় তত দ্রুত আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসছে আর সত্য জিনিসটাও বের হয়ে আসছে সাথে সাথেই ।আশার সংবাদ এটাই যে গণমাধ্যমগুলো আজকে অনেক সক্রিয় এবং যে কেউ ভাল কাজ করুক আর মন্দ কাজ বা দুর্নীতি বা যে কোন ধরনের অপরাধ করুকনা কেন দিনের আলোর মত তা দেশবাসীর সামনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছি । সুতরাং দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবেই ।মালয়েশিয়ার মত একটি দেশ যদি আমাদের বাংলাদেশের পরে স্বাধীন হয়ে আমাদের চেয়ে বিজ্ঞান,প্রযুক্তি,যোগাযোগ ব্যবস্থায় ও অর্থনীতিতে উন্নতি লাভ করতে পারে আমাদেরও পারা উচিৎ ।যেহেতু বাংলাদেশ গণতাণ্ত্রিক দেশ এবং বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বে ক্ষমতাকে কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তির পক্ষে কেন্দ্রীভুত করে রাখা সম্ভব নয় এবং দেশের সমস্ত ক্ষমতা আইন,অর্থনীতি,বিচার,প্রশাসন,মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত তাই এখানে এমন ব্যবস্থা আর নেই যে কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছাচারী হয়ে গণবিরোধী কোন সিদ্ধান্ত নেয় তার প্রতিবাদ করার মত কেউ থাকবেনা ।সম্প্রতি পাকিস্তানের কথাই ধরুন সেদেশের প্রধানমণ্ত্রীর বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে সেদেশের প্রশাসন বিভাগ ।লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি হাজার কোটি ডলার দুর্নীতি করে শেষ পর্যন্ত তাকে করূন পরিনতির শিকার হতে হয়েছে ।মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক সেও হাজার কোটি ডলার দুর্নীতি করে টিকে থাকতে পারেনি ।সুতরাং সাংবাদিক,বুদ্ধিজীবী ও দেশপ্রেমিক সকল সচেতন নাগরিক যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি তাহলেই সরকার এবং প্রশাসনকে আমরা বাধ্য করতে পারবো দুর্নীতি নামের উন্নয়ন এবং মানবতাবিরোধী অপশক্তিটার মূলোৎপাটন করতে ।যার ফলে আমরা ফিরে পাবো সেই ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ যার মুক্তির জন্যই আমাদের সকলের এই পথ চলা ।



প্রসঙ্গ : আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ চাই

সেদিন ঢাকা থেকে হলে ফেরার পর মাস্টার্স শেষ করেছেন এমন দুইজন ভাই গল্প প্রসঙ্গে একজন বলে উঠলেন আরেকটি মুক্তি যুদ্ধ হলে মনে হয় ভালো হত আরেকজন ভাই বলে উঠলেন তাহলে ওরাই তো (দুর্নীতিবাজরা) আগে দেশ ছেড়ে পালাবে, কাদের সাথে যুদ্ধ করবেন ।সরকারী একজন ঝাড়ুদার নিয়োগ থেকে শুরু করে বিচারক নিয়োগ পর্যন্ত ঘুষ আর দুর্নীতির সয়লাবে ছেয়ে গেছে যেখানে সেখানে মেধার মূল্যায়ন কি করে হবে?পিএসসি ,বিসিএস,পুলিশ,ফায়ার সার্ভিস,সেনাবাহিনী,নৌবাহিনী,শিক্ষক নিয়োগ কোন ক্ষেত্রই বাদ পড়েনি দুর্ণীতির এই নাগপাশ থেকে ।আমার একজন মেয়ে রিলেটিভ পুলিশ সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন সপ্তাহখানেক আগে তার জন্য তাকে সেলামি গুণতে হয়েছে নগদ দুই লাখ টাকা,আমার বেয়াই ময়মনসিংহের কোন একটি থানার ব্লক সুপারভাইজার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন আমার চোখের সামনে দেখা নগদ সাড়ে ছয় লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে তাকে,বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে আমার একজন অতি পরিচিত ভাই বার লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন ।এরকম অসংখ্য ঘুষের নজির রয়েছে প্রায় প্রতিটি চাকরিতেই ।শোনা যায় এখন বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান পিএসসিতে এমপি মণ্ত্রীদের অনুরোধে আর উপরি টাকার উপর ভিত্তি করে আর দলীয় ক্ষমতার বলে আর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সার্টিফিকেট দেখিয়ে নিয়োগ পাচ্ছেন ।তাহলে আমাদের মত সাধারন ছাত্র যারা প্রতি আসনের বিপরীতে ৩০০ বা ৪০০ জন ছাত্রের সাথে প্রতিযোগিতায় মেধাতালিকায় টিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় ৫ বা কখনো ৬ টি বছর অক্লান্ত পড়ালেখা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে বের হচ্ছি কিন্তু আমাদের সবার তো মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট নেই,আমাদের তো মামা খালু নেই,আমরা সবাইতো ঐ ঘৃণ্য অপরাজনীতির সাথে জড়িত নই যার কারনে দলীয় পরিচয়ে আমাদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে ।তাহলে আমরা কোথায় যাবো আমাদের মেধার মূল্যায়ন না করে দুর্নীতি করে নিয়োগ দেয়া হবে আর ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার মিথ্যা শ্লোগান আর বক্তব্যে হয়তো মাইক্রো ফোন কাপানো যেতে পারে,রাজনীতির মাঠ গরম করা যেতে পারে, রেডিও টেলিভিশনসহ সকল মিডিয়াতে বাহবা পাওয়া যেতে পারে কিন্তু ক্ষুধার্তের প্রয়োজনীয় খাবার ক্ষুধার্তদের পেটে না গিয়ে দুর্নীতিবাজদের অথবা লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে যারা চাকরি নিয়েছেন তাদের পেটেই যাবে,ঐ মিথ্যা বক্তব্য আর দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানব বন্ধনের কোন ফলাফল পাওয়া যেতে পারেনা ।কারণ আমার ঐ ব্লক সুভারভাইজার ভাইটি তার চাকরি নেয়ার সময় তার প্রদেয় সাড়ে ছয় লাখ টাকার কথা যখন মনে করবে তখন সে কখনোই চাইবেনা কৃষককে বিনামূল্যে বীজ অথবা কম দামে সার সরবরাহ করতে একারনেই পত্রিকার পাতায় আমরা প্রধান শিরোনাম দেখি একদিকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ অন্যদিকে কৃষকের মরণ ।বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন ছা্ত্রকে নিয়ে তার বাবা মাযের আশার শেষ থাকেনা আর আমার জানামতে আমরা যারা বিশ্ববিধ্যালয়ে পড়ালেখা করি তাদের অধিকাংশই খুবই সাধারন পরিবারের ছেলেমেয়ে ।আর যখন একটি ছেলে বা মেয়ে তার পড়ালেখা শেষ করে তখন সাথে সাথেই তার একটি চাকরির প্রয়োজন ।কিন্তু যখন চাকরি খুজতে গিয়ে দেখে এমন দুর্ণীতি আর ঘুষের কারবার তখন স্বভাবতই চোখ কপালে উঠে বাস্তবতাটা জিনিসটা সে খুব কাছে থেকে উপলদ্ধি করতে পারে ।কিন্তু এটাই কি আমাদের প্রত্যাশা ?মেধার মূল্যায়ন কি তাহলে হবেনা?টাকা,মামাখালু,দলীয় পরিচয় আর অবৈধভাবে যোগাড়কৃত মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটেই কি আমাদের প্রকৃত মেধার মূল্যায়ণ?সরকারদলীয় বা বিরোধদলীয় এমনকি প্রশাসনের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি নিজেদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি বলে দাবি করেন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বলে ঘোষনা করেন ।কিন্তু কতিপয় এই দুর্নীতিবাজদের প্রতিষ্ঠিত রাখাই কি আমাদের জন্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া ?১৯৭১ সালের যে মহান মুক্তিযুদ্ধকে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি আর ২৬ মার্চ ১৬ ই ডিসেম্বরসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম করে করে গলা চিৎকার করি আর তাদের লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করি পুস্পস্তপক অর্পণ করি,শহীদদের স্মরণে র্যালি করি,মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করি এগুলো কি আমরা বিনাকারনে করি?।তাহলে দুর্নীতি আর দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয় দেয়াই কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া?তাহলে আমরা কি ধরে নেবনা যে সরকার দলীয়,বিরোধলীয় এবং প্রশাসনিক নেতৃত্বে যারা আছেন তারা মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী এই বুলি বারবার আওড়িয়ে সাধারন জনগণকে একটা ধোকার মধ্যে ফেলে রাখতে চান আর বুঝাতে চান যে তারাই শুধু মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়া বুঝেন আর আমরা মুক্তিযুদ্ধের কিছু বুঝিনা ।সত্যি বলতে কি নেতৃবৃন্দের ভালো কিছু করার ক্ষমতা অবশ্যই আছে শুধুমাত্র সদিচ্ছা আর পরিবর্তনের জন্য একটু উদ্যোগ গ্রহণের অভাব ।আমি আপনাদেরকে একটা উদাহরণ দিলেই বিষয়টা ক্লিয়ার হবে ।৪ বা ৫ মাস আগে যোগাযোগমণ্ত্রী হিসেবে আবুল হোসেনকে সরিয়ে যখন ওবায়দুল কাদেরকে নিয়োগ দেয়া হল তখন যানজট প্রতিরোধের জন্য তিনি নিজে মাঠে নামলেন এবং প্রচার প্রচারণা চালালেন তখন বেশকিছুদিন পুরো ঢাকাশহরে যানজট একদম কমে গিয়েছিল এবং চারদিকে ধন্য ধন্য পড়ে গিয়েছিল । অবশ্য যদিও এখন তিনি সে হাল ছেড়ে দিয়েছেন এবং ঢাকাশহর আবার আগের মতই যানজট অবস্থায় পিরে গিয়েছে ।মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন এই অবৈধ নিয়োগ বানিজ্য বন্ধ হবে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন গরীব কৃষক যারা রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সারা দেশবাসীর জন্য ফসল ফলায় তাদের ফসলের ন্যয্য মূল্য পাবে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন এই সকল দুর্নীবাজদের মুখোশ উন্মোচন করে সাধারন জনসাধারনের সামনে তাদের উপর কার্যকরী শাস্তি প্রয়োগ করা হবে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন অপরাধীদের যথাযথ বিচারের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হবে,যেদিন ইভটিজিং,শ্লীলতাহানি বন্ধ করতে সরকার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন বিশ্বজিতের মায়ের মত অস্ত্রের এ অপরাজনীতির কবলে খালি হবেনা অসংখ্য মায়ের বুক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন গার্মেন্ট্স কর্মীরা তাদের ন্যায্য বেতন নিয়ে একটু সুখে দিনযাপন করার সুযোগ পাবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সেদিনই সফল হবে যেদিন রাস্তার পাশে পড়ে থাকা অসংখ্য মানুষের একটা ব্যবস্থা হবে ।এইরকম কথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা যারা মুক্তিযুদ্ধের বুলি আওড়াতে আওড়াতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন তাদের উচিৎ দেশ এবং জনসাধারনের জন্য তাদের কিছু করে দেখানো ।বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সরকারদলীয় এবং প্রশাসনিক নেতৃত্বে যারা সমাসীন তারা হচ্ছেন সাধারন জনসাধারনের মডেল,সাধারন জনগণ পেপার পত্রিকায় রেডিওটেলিভিশনে তাদেরকে দেখেন এবং তাদের প্রতিটি কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেন ।সুতরাং তারা যদি দুর্নীতির কবলে পড়ে সাদা বিড়াল কালো বিড়াল নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন তাদের উপর সাধারন জনসাধারণ কিভাবে আস্থা রাখবেন বা তাদের জনপ্রিয়তা বজায় রাখবেন ?আজকে নিয়োগের ক্ষেত্রে যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নিয়োগের পন্থা অবলম্বন করা হয় এবং গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে কোন ছাত্র কোন প্রকার ঘুষ প্রদান না করে তার নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে আত্ননিয়োগ করেন তখন তিনি কখনোই লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে যিনি চাকরি নেন সেই ব্যক্তির মত সেই ঘুষের টাকা উশুলের নাম করে জনগণের টাকা রাষ্ট্রের খাত থেকে আত্নসাৎ করার অপচেষ্টা করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন ।দিন যত গড়াচ্ছে বিশ্ব ততই আধুনিক হচ্ছে কোন ঘটনাই আড়াল থাকছেনা ।সুতরাং সভ্যতা যত উন্নত হচ্ছে বিশ্বের খুটিনাটি বিষয় তত দ্রুত আমাদের হাতের মুঠোয় চলে আসছে আর সত্য জিনিসটাও বের হয়ে আসছে সাথে সাথেই ।আশার সংবাদ এটাই যে গণমাধ্যমগুলো আজকে অনেক সক্রিয় এবং যে কেউ ভাল কাজ করুক আর মন্দ কাজ বা দুর্নীতি বা যে কোন ধরনের অপরাধ করুকনা কেন দিনের আলোর মত তা দেশবাসীর সামনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে পেয়ে যাচ্ছি । সুতরাং দুর্নীতির করাল গ্রাস থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবেই ।মালয়েশিয়ার মত একটি দেশ যদি আমাদের বাংলাদেশের পরে স্বাধীন হয়ে আমাদের চেয়ে বিজ্ঞান,প্রযুক্তি,যোগাযোগ ব্যবস্থায় ও অর্থনীতিতে উন্নতি লাভ করতে পারে আমাদেরও পারা উচিৎ ।যেহেতু বাংলাদেশ গণতাণ্ত্রিক দেশ এবং বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বে ক্ষমতাকে কোন স্বতন্ত্র ব্যক্তির পক্ষে কেন্দ্রীভুত করে রাখা সম্ভব নয় এবং দেশের সমস্ত ক্ষমতা আইন,অর্থনীতি,বিচার,প্রশাসন,মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত তাই এখানে এমন ব্যবস্থা আর নেই যে কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছাচারী হয়ে গণবিরোধী কোন সিদ্ধান্ত নেয় তার প্রতিবাদ করার মত কেউ থাকবেনা ।সম্প্রতি পাকিস্তানের কথাই ধরুন সেদেশের প্রধানমণ্ত্রীর বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে সেদেশের প্রশাসন বিভাগ ।লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার গাদ্দাফি হাজার কোটি ডলার দুর্নীতি করে শেষ পর্যন্ত তাকে করূন পরিনতির শিকার হতে হয়েছে ।মিশরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক সেও হাজার কোটি ডলার দুর্নীতি করে টিকে থাকতে পারেনি ।সুতরাং সাংবাদিক,বুদ্ধিজীবী ও দেশপ্রেমিক সকল সচেতন নাগরিক যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি তাহলেই সরকার এবং প্রশাসনকে আমরা বাধ্য করতে পারবো দুর্নীতি নামের উন্নয়ন এবং মানবতাবিরোধী অপশক্তিটার মূলোৎপাটন করতে ।যার ফলে আমরা ফিরে পাবো সেই ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ যার মুক্তির জন্যই আমাদের সকলের এই পথ চলা ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.