![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছুদিন যাবত আড়িয়াল বিলে বিমানবন্দর স্থাপন নিয়ে এ এলাকার জনসাধারন এবং বর্তমান প্রশাসণের মধ্যে চলছিল চরম উত্তেজনা্ ।সভ্যতার উন্নতিকল্পে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বিমানবন্দর অবশ্যই প্রয়োজন।তবে এখনও বাংলাদেশে আনুপাতিক হারে উড়নযানসমষ্টির তুলনায় বিমানবন্দরের সংখ্যা মোটেও অপর্যাপ্ত নয়।ছোট্র একটি দেশে এতগুলো বিমানবন্দর থাকা সত্তেও পঞ্চাশ হাজার একর জায়গা দখল করে হাজার হাজার মানুষকে তাদের বসত এবং আবাদি জমি থেকে বিতাড়িত করে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে বিমানবন্দর স্তাপন বিলাসিতা এবং নিরীহ মানুষের উপর অন্যায়ভাবে নির্যাতন ছাড়া অন্য কোনভাবেই সংঙ্গাযিত করা সম্ভব কি না জানিনা ।তবে এখনও বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত ।ভাতের উৎস চাল,আর চালের উৎস ধান আর ধানের উৎস জমি ছাড়া নি:সন্দেহে অন্য কিছু হতে পারেনা।আর সেই চালের দাম যখন আকাশছোঁয়া (পয়তাল্লিশ টাকা্/কেজি প্রতি,দুই বছর আগেও যে চালের দাম ছিল আঠারো টাকা কেজি প্রতি)তখন হাজার হাজার একর জমি দখল করে ঐ এলাকার হাজার হাজার মানুষকে ভূমিহীন করার মধ্য দিয়ে একটা কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য দৃস্টিগোচর হয়না।তবে সুসংবাদ এই যে ঐ এলাকার মানুষের বিবেকগুলো ঠিক সময়ের মধ্যেই জাগ্রত হয়েছিল যার কারণে একটা রক্তক্ষয়ীআন্দোলনের মধ্য দিয়ে হলেও আপামর জনসাধারনেরই বিজয় অর্জিত হয়েছে অর্থাৎ সরকার শেষ পর্যন্ত একটা ভয়াবহ সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হয়েছ।নিজেদের অস্তিত্ত্ব রক্ষার্থে এদেশের মানুষ যে এখনও সচেতন তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ এ ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠে যেমনটি ১৯৭১ সালে দেখিয়েছিলেন এ ঐতিহ্যবাহী নিরীহ প্রতিবাদী মানুষেরাই।
আমার লেখাটা এ উদ্দেশ্যে লেখা শুরু করিনি যা এতক্ষন আমি বর্ণনা করেছি।অনেক দিন যাবৎ একটা অতৃপ্ত বেদনা হৃদয়ের গভীরে বসবাস করছে।আড়িয়াল বিলের উক্ত ঘটনা আমাদের সচেতন করে দেয় যে অন্যায় জুলুমের প্রতিবাদে আমরা আজও সোচ্চার।আমার লেখাটা উপরোক্ত লেখার চেয়ে একটু ভিন্ন অনেকটাই নিরস প্রকৃতির,অমূল্যবান।তবে এর উদ্দেশ্য জাতীয় সচেতনতা,জাতির সভ্যতা সংস্কৃতিতে যে ঘুন ধরেছে আর তা আমাদেরকে নিয়ে যাচ্ছে ধ্বংশের পথে আর সে ধ্বংশকে আমরা নীরবে সহ্য করছি অথবা তার চেয়েও একটু বেশি করছি অর্থাৎ ভালবেসে ফেলেছি।পাশ্চাত্যের বস্তুবাদী স্বার্থপূজারী সভ্যতা আর সমাজতণ্ত্রের নাস্তিক্যবাদী যে চিন্তাধারা আমাদের সমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে আর তার কুফল আমরা ফুলে ফুলে ভোগ করছি হত্যা,রাহাজানি,ছিনতাই,ধর্ষন,ইভটিজিং এর মত অপকর্মসমূহের মাধ্যমে যা রাতারাতি বেড়েই চলেছে একেবারে জ্যামিতিকহারে।জাতির নৈতিক অবক্ষয়ের কিছু প্রত্যক্ষ চিত্র আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।যেমন আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের নৈতিক অবক্ষয়টা এতই নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌছে গেছে যে আজকাল পিতামাতা এবং তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা মিলেমিশে বাংলাদেশের ছবিগুলোর অশ্লীল দৃশ্য অথবা ইন্ডিয়ান অশ্লীল গান অথবা ইংলিশ অশ্লীল রোমান্টিক দৃশ্য দেখেও বিন্দুমাত্র ইতস্ততা অনুভব হয়না যেগুলো আমাদের অবৈধ যৌন চেতনাকেই সুড়সুড়ি দেয় ।স্কুল,কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ এমন হয়েছে যে এখানে সিগারেট না খেলে,অথবা একএকজন ছেলে অথবা মেয়ের কয়েকজন করে বয়ফ্রেন্ড অথবা গার্লফ্রেন্ড না থাকলে যাদের সাথে অবাধে মেলামেশা এমনকি সন্ধ্যার পরও সময় কাটাতেও বাধা নেই, অথবা প্যান্ট কোমরের এতটুকু নিচে পড়তে হবে যাতে কাপড় যে উদ্দেশ্য পড়া হয়েছে তা্ই ব্যর্থ না হয় তা না হলে সে আনস্মার্ট বলে ধিকৃত হয়।পার্শ্ববর্তী শক্তিসম্পন্ন দেশের অদৃশ্য ইংগিতে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা,অর্থব্যবস্থা, বিচারব্যবস্থা এবং রাষ্ট্রব্যবস্থার কাজে অপরাধী এবং অযোগ্য লোকদের উপস্থিতিই প্রমাণ করে দেয় নৈতিক অপরাধের জাল যখন আমাদের পুরোসমাজকে গ্রাস করে ফেলেছে ঠিক সেই সময় আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমন ভাবে সাজানো হলো যে শিক্ষাব্যবস্থার প্রধান শত্রু হয়ে দাড়ালো ধর্মশিক্ষা যে ধর্মকে বাদ দিয়ে কোন যুক্তিতেই সৎ,দক্ষ অথবা দমেপ্রেমিক নাগরিক গড়ে তোলা সম্ভব নয়।অথচ দুর্নীতিমুক্ত,অপরাধমুক্ত,শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়ার জন্য হাজারও রকমের আনুষ্ঠানিকতা দিনদিন বেড়ই চলেছে।প্রগতিশীল সমাজ আজ দেশের উন্নতিকল্পে বিভিন্ন ধরনের মানব বন্ধন,রোডশো,লংমার্চ,প্রতীকী অনশনসহ বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের নাম করে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে।আর তার জন্য ফলাফলসমূহের সমস্টি শূন্য।ইভটিজিং প্রতিরোধের জণ্য বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে শপথবাক্য পাঠ করানো হচ্ছে,বখাটে ছেলেদের কান ধরে উঠানামা করানো হচ্ছে,মুচলেকা নেয়া হচ্ছে। আর অন্যদিকে বিভিন্ন কোম্পানির পক্ষ থেকে তাদের পণ্য প্রচার ও প্রসারের জন্য বিভিন্ন মেয়েদেরকে অশ্লীলভাবে উপস্ধাপন করছে যা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল এবং বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় যুবসমাজের সামনে লোভনীয়ভাবে প্রদর্শন করছে।এছাড়া ক্লোজআপ ওয়ান,লাক্স চ্যানেল আই সুপারস্টারসহ,পশ্চিমাদের মত সুন্দরী প্রতিযোগিতার নামে আমাদের দেশের অবুঝ যুবতীদেরকে চরিত্র হননের নিকৃষ্ট পদ্ধতির প্রচলন ঘটিয়েছে যা কোন সভ্য দেশের সংস্কৃতি চর্চা বলে বিবেচিত হতে পারেনা।আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবী সমাজ বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এবং টেলিভিশন চ্যানেলে এসব অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তাদের কণ্ঠ উচ্চারিত করেননা,তাদের ক্ষুরধার লেখনী এসব ধ্বংসাত্নক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে জেগে ওঠেনা।অথচ ইভটিজিং, যৌন নিপীড়ন ইত্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন নীতিবাক্য তোতাপাখির মত ঠিকই আওড়ান।এ পরিস্থিতিতে শামসুর রাহমানের পণ্ডশ্রম কবিতাটির কথা মনে পড়ছে চিলে কান নিয়েছে একথা শুনেই চিলের পিছনে দৌড়ানোটা যেমন বোকামি ছাড়া অন্য কিছু নয়।ঠিক তেমনি আমাদের জাতির নৈতিকতা যখন চরম পর্যায়ে ধ্বংসের সম্মুখীন তখন এ নৈতিক অবক্ষয়ের পতন রোধের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ না করে,নৈতিকতাবিরোধী নাস্তিক্যবাদী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করে শুধু ইভটিজিংবিরোধী সেমিনার করে,বিক্ষোভ মিছিল করে,মানব বন্ধন করে শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব নয় যে সমাজে পিতামাতা তার যুবতী মেয়েকেও কোন রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে পারবেন।আমি এখন আসল বক্তব্যে আসতে চাই।উপমহাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন ফকির বিদ্রোহ,ফরায়েজী আন্দোলনসহ সকলপ্রকার অন্যায়-জুলুমবিরোধীসহ বিভিন্ন সংস্কার আন্দোলন এদেশের আপামর জনসাধারনই সুসম্পন্ন করেছে এমনকি ছোট ছোট অন্যায় জুলুমের বিরুদ্ধে তাদের বর্তমান উচ্চারিত কণঠস্বর আজও প্রমাণ করে যে তারা ইচ্ছা করলেই পারে এ অবক্ষয়পূর্ণ অবহেলিত সমাজটাকে ধ্বংশের হাত থেকে বাচাতে ।যাদের একটুখানি সচেতনতাই পারে বর্তমান এ অবস্থা থেকে মুক্তি দিয়ে আগামীদিনে এ্কটা সুসভ্য জাতি উপহার দিতে। আর আমাদের এ আন্দোলনটা ঠিক তাদের বিরুদ্ধেই হওয়া উচিৎ যারা ক্ষমতায় এসেই আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনটাকে অশ্লীলতায় পরিপূর্ণ করে দিতে চায়,যারা যুব সমাজের অবক্ষয় সাধন করে আমাদের জাতীয় চরিত্রকে কলুষিত করতে চায,যারা এমন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন করে যা মানুষকে নাস্তিক করে গড়ে তোলে।
©somewhere in net ltd.