![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভূমিকা
যুগযুগ ধরে আল্লাহ তা’লা ইসলামের পতাকা পৃথিবীতে বিদ্যমান রেখেছেন তাঁর প্রেরিত নবী, রাসূল ও ওলামায়ে কেরামদের দ্বারা। বিশ্বনবী মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ শেষ নবী হওয়ায় কেয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবীর ধর্ম প্রযোজ্য হবেনা। এই ইসলাম যাতে সকল মানুষের নিকট যুগোপযোগী ও সহজে পালনীয় হয়ে উঠে তার জন্য ইসলামের দাওয়াতী যুগ থেকে আজ পর্যন্ত সাহাবী, তাবেয়ী,আলেম উলামাগণ আপ্রাণ চেষ্টা করে আসছেন। বিশেষ করে আল ফিক্হ হচ্ছে এমনি একটি শাস্ত্র যা অধ্যয়ন করলে সাধারণ মানুষও শরীয়াতের বিধিবিধানগুলো সহজে জানতে পারবে। আর এই ফিক্হ এর উন্নতি সাধনে চার ইমাম এর অবদান অপরিসীম। আর পরবর্তীতে মাযহাব কেন্দ্রিক গ্রন্থ রচনার যুগে ইমাম আবূ জাফর তাহাভী (র) এর অবদান হানাফি মাজহাবে অনেক বেশি। যার ফলে তাকে হানাফি মাজহাবের সপক্ষে যুক্তিনির্ভর দলিল উপস্থাপনকারীও বলা হয়।
নাম ও বংশ পরিচিতি ঃ
তাঁর নাম আহমদ, পিতার নাম মুহাম্মদ, উপনাম আবূ জাফর, দাদার নাম সালামা, নিসবতী নাম তাহাভী, আযদী, মিসরী, হাজরী।
জন্ম পরিচিতিঃ
তিনি ২২৯ হিজরী মোতাবেক ৮৫১ ইংরেজী মিশরের নিভৃত পল্লী তাহা নামক স্থানে জন্ম গ্রহণ করেন।
শৈশব বৃত্তান্তঃ
তাঁর শৈশবকাল ছিল অত্যন্ত পূতঃপবিত্র ও নির্মল। তিনি কখনো পাপাচার ও গর্হিত কাজের সাথে জড়িত ছিলেননা। শৈশবকাল হতেই শিক্ষার প্রতি অসাধারণ অনুরাগ পরিলক্ষিত হয়।
শিক্ষা জীবনঃ
তাঁর শিক্ষা জীবনের সূচনা হয় তাঁর মামা আবূ ইবরাহীম ইসমাঈল ইবনে ইয়াহিয়া মুযানী (র) এর নিকট। মুযানী শাফেয়ী মাজহাবের একজন প্রখ্যাত আলেম ছিলেন। আল্লামা মুযানী তখন মিশওে অবস্থান করতেন। ইমমি আবু জাফর তাহাবী (র) জ্ঞান পিপাসার নিবৃত করার মানসে স্বীয় আবাস স্থল থেকে মিশওে আসেন।
তিনি জ্ঞান আহরণের নিমিত্তে অনেক জায়গা সফর করেন। যেখানে কোন জ্ঞান তাপসের সংবাদ পেতেন সেখানে যেতেন এবং তাঁর নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করেতেন।
২৬৮ হিজরী সনে তিনি সিরিয়া ভ্রমণ করেন। তা ছাড়া বায়তুল মুকাদ্দাস,আসকালান সহ প্রভৃতি স্থানে বিভিন্ন মনীষীদের থেকে হাদীস শ্রবণ করেন।
দামেশকের আবু আযেম আব্দুল হামীদ থেকে ইলমে ফিকহের জ্ঞান অর্জন করেন। বিভিন্ন দেশের মনীষীদের থেকে জ্ঞানার্জন শেষে ২৬৯ হিজরীতে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
শিক্ষক মন্ডলী ঃ
তিনি অসংখ্য উস্তাদ থেকে ফিকহ্, তাফসীর, হাদীস, আরবী সাহিত্য, নাহু, সরফ, বালাগাত,মানতিক সহ বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন। তাঁর প্রসিদ্ধ শিক্ষকগণ হলেন
১. ইব্রাহীম ইবনে আবূ দাউদ বারলাছী
২. ইব্রাহীম ইবনে মানকাদ খাওলানী
৩. ইব্রাহীম ইবনে মুহাম্মদ
৪. ইব্রাহীম ইবনে মারযুখ বসরী
৫. আহমদ ইবনে কাসেম সূফী
৬. আহমদ ইবনে দাউদ সাদূসী
৭. আহমদ ইবনে সাহল রাযী
৮. আহমদ ইবনে আছরাম মুযানী
৯. আহমদ ইবনে মাসউদ মাকদাসী
১০. আহমদ ইবনে সাঈদ ফাহরী
১১. আবূ বশির আহমদ দুলাবী
১২. ইসহাক ইবনে ইব্রাহীম
১৩. ইসহাক ইবনে হাসান
১৪. ইসমাঈল ইবনে ইয়াহিয়া মুযানী
১৫. বাহার ইবনে নসর খাওলানী
১৬. বাকার ইবনে কুতাইবা
১৭. মুহাম্ম ইবনে সালামা তাহাবী প্রমুখ।
সহচর ও ছাত্রবৃন্দ ঃ
তিনি যেমন বহু উস্তাদের নকিট জ্ঞানার্জন করেছেন তেমনি অনেককে জ্ঞান শিক্ষাও দিয়েছেন। তাঁর ছাত্রবৃন্দের মধ্যে যারা প্রধান ছিলেন তারা হলেন।
১. আবূ উসমান আহমদ ইবনে ইব্রাহীম
২. আহমদ অবিনে আবু ওয়ায়েস যুজাজ
৩. আহমদ ইবনে মুহামাম দামেগানী
৪. আবূ মুহাম্মদ হাসান ইবনে কাসেম
৫. সুলায়মান ইবনে আমদ তিবরানী
৬. আবূ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ ইবনে হাদীদ
৭. আব্দুর রহমান ইবনে ইসহাক জাওহারী
৮. আবুল কাসেম উবায়দুল্লাহ ইবনে আলী দাউদী প্রমুখ ।
তাঁর ধীশক্তি ঃ
ইমাম তাহাভী (র) অসাধারণ ধীশক্তি এবং তীক্ষ মেধার অধিকার ছিলেন। তীক্ষ মেধা শক্তির বলেই তিনি ফিকহ্ শাস্ত্রের পন্ডিত হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করেন।
তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে আলেমদের বর্ণনা ঃ
ইমাম তাহাভী (র) মহা মর্যাদা ও মহা সম্মানের অধিকারী ছিলেন। আল্লামা আইনী (র) “নাফাখুল আফতার” নামক গ্রন্থে বলেছেন,“ইমাম তাহাভী(র) এর নির্ভরযোগ্যতা, আমানতদারীতা, মর্যাদার পূর্ণতা, হাদীসের দক্ষতা, নাসেখ ও মানসুখ হাদীসের পার্থক্য করণের দক্ষতার ব্যাপারে ইজমা হয়ে গিয়েছে”।
মাসলামা ইবনে কাসেম কুরতবী আস্ সিলাহ নামক গ্রন্থে বলেন,“ইমাম তাহাভী (র) নির্ভরশীল মহা মর্যাদার অধিকারী, ফিকহবিদ এবং আলেমদের মতভেদপুর্ণ মাসয়ালায় অন্তর্দৃষ্টির অধিকারী ছিলেন”।
ইমাম জূযী (র) তাঁর মুনতাজিম নামক গ্রন্থে বলেন,“ ইমাম তাহাভী (র) নির্ভরশীল, সুদৃঢ়, সুবিজ্ঞ ও প্রখ্যাত ফিকহ্বিশারদ ছিলেন”।
আল্লাম ইমাম যাহাবী (র) তাঁর তারিখে কবির গ্রন্থে বলেছেন,“তিনি ফিকহবিদ, মুহাদ্দিস,হাফিজ,বিশিষ্ট ইমাম, নির্ভরশীল, ধীশক্তি সম্পন্ন ও দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন”।
ইমাম তাহাভী (র) এর কর্ম ঃ
ইমাম তাহাভী (র) মানুষ হিসেবে তারঁ দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ স¦াভাবিক ভাবে সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু তার নানামুখী কর্মের মাঝে জীবন্ত হয়ে আছে তাঁর রচিত বহু গ্রন্থ এবং এইসকল গ্রন্থের রচনা কৌশল। তিনি প্রায় একশত গ্রন্থ রচনা করেছেন। নি¤েœ তাঁর কিছু প্রসিদ্ধ গ্রন্থের নাম দেয়া হল।
১. মুসকিলূল আছার
২. শারহু মায়ানীর আছার
৩. ইখতিলাফুল উলামা
৪. মুখতাছারু ফিল ফিক্হ
৫. শারহু জামীয়িল কাবির
৬. শারহু জামীয়িছ ছগীর
৭. কিতাবুশ শুরুতিল কাবির
৮. শুরুতুল আওছাত
৯. শুরূতুছ ছগীর
১০. আল মুহাযির
১১. আছছি-জিল্লাত
১২. আল ওছিয়া
১৩. আল ফারায়িদ
১৪. আল মুখতাছারুল কাবির
১৫. আল মুখতাছারুছ ছগীর
১৬. তারিখুল কাবির
১৭. আহ্কামুল কুরআন
১৮. মুখছারুত তাহাভী
১৯. আক্দিাতুত তাহাভী
২০. সুনানুশ- শাফিয়ী
২১. কিতাবুন নাহল
২২. শারহুল মুগনী
২৩. নাওয়াদিরুল ফিকহ্য়িা
২৪. নাওয়াদিরুল হ্কিায়িয়াহ
উপরিউক্ত গ্রন্থ সমূহের মধ্যে শারহু মায়ানীর আছার গ্রন্থটি সর্বাধিক আলোচিত একটি কিতাব। ি
ন¤েœ এর কিছু বৈশিষ্ঠ্য তুলে ধরছি।
১. এ গ্রন্থে হাদীসের আলোকে ফিকহী মাসয়ালার বিবরণ পেশ করা হয়েছে
২. এ গ্রন্থে এমন অনেক হাদীস রয়েছে যা অন্য কোন গ্রন্থে পাওয়া যায় না।
৩. এ গ্রন্থে বর্ণিত হাদীসসমূহের সনদ জোরালো। দুর্বল সনদের কোন হাদীস এ গ্রন্থে নেই।
৪. এ গ্রন্থে গ্রন্থকার প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিসের অসংখ্য উক্তি পেশ করেছেন।
৫. গ্রন্থকার হানাফি মাজহাবকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আহনাফের দলীল সমূহ উল্লেখের পাশাপাশি বিরুদ্ধবাদীদের দলিল সমূহ বর্ণনা করেছেন এবং তা বিশ্লেষণ করেছেন।
৬. এ গ্রন্থে একই সনদের অসংখ্য হাদীস আনা হয়েছে। যা অপর কোন গ্রন্থে পাওয়া যায়না।
৭. এ গ্রন্থে সাহাবী ও তাবেয়ীদের হাদীস, ফিক্হবিদদের উক্তি এবং ইমামদের জারহ্ ও তা”দিল বর্ণনা করেছেন।
মোট কথা উক্ত গ্রন্থের বৈশিষ্ঠ্য গুলো প্রমাণ করে যে তার কর্ম নিপুনতা কেমন শক্তিশালী ছিল।
ইমাম তাহাভী (র) এর কর্ম পদ্ধতি ( রচনা পদ্ধতি) ঃ
প্রথমতঃ কুরআনুল কারীম থেকে দলিল ঃ
ইমমি তাহাভী (র) তাঁ কিতাবে দলিল গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম কুরআনুল কারীম থেকে আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়েছেন।
দ্বিতীয়তঃ রাসূল (স) এর সুন্নত থেকে দলিল ঃ
তিনি কুরআনের পরে রাসূল (স) এর হাদীস দলিল হিসেবে গ্রহণ করতেন। এক্ষেত্রে তিনি হাদীসের সনদ বিশ্লেষণ কওে যা সহীহ বলে জেনেছেন একমাত্র তা-ই উল্লেখ করেছেন। তিনি কোন দুর্বল হাদীস দলিল হিসেবে গ্রহণ করেননি।
তৃতীয়তঃ সাহাবীদের ঐক্যমত্য থেকে দলিল ঃ
সংশ্লিষ্ট বিষয় সাহাবীদের এজমা তথা ঐক্যমত্য আলোচনা কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
চতুর্থত ঃ সাহাবীদের বক্তব্য থেকে দলিল ঃ
সাহাবীদের থেকে যে সকল উক্তি ইমাম তাহাভীর নিকট ধারাবাহিক ভাবে পৌছেছে, সে সব দলিল হিসেবে তিনি তাঁর কিতাবে বর্ণনা করেছেন।
পঞ্চমত ঃ তাবেয়ীদের বক্তব্য থেকে দলিল ঃ
তাবেয়ীদের মধ্যে যাদের বক্তব্য ধারাবাহিকভাবে ইমাম তাহাভীর নিকট পৌছেছে তিনি তাদের ববক্তব্য ও দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন।
ষষ্টত ঃ পরস্পর দুই হাদীসের সমাধান ঃ
দলিল বর্ণনায় পরস্পর বিরোধী দুটি হাদীস পাওয়া গেলে তা বিশ্লেষণপূর্বক হাদীসের আলোকেই তন্মধ্যে একটিকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। আর এ ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফা (র) এর অভিমতই প্রাধন্য পেয়েছে।
সপ্তমত ঃবাস্তবসম্মত যুক্তি পেশ ঃ
ইমাম তাহাভী(র) যুক্তি ও বাস্তবতার নিরিখে কুরআন ও হাদীসের অপূর্ব সমন্বয় ঘটিয়েছেন, ফলে প্রদত্ত দলিল আরো সুদৃঢ় ও শক্তিশালী হয়েছে।
অষ্টমত ঃ প্রসিদ্ধ ইমামদের বক্তব্য পেশ করণ ঃ
দলিল বর্ণনায় তিনি অপরাপর ইমামদের বক্তব্যও তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে কোন মতবিরোধপূর্ণ বক্তব্যহলে তাঁর দলিল উল্লেখপূর্বক তা খন্ডন করে নিজের দলিলকে শক্তিশালী করেছেন। এজন্যই আল্লামা আতকানী (র) বলেন,“ যদি কেউ :শারহু মায়ানির আছার: এর প্রতি গভীর চিন্তা করে তবে তার হানাফী মাযহাব ব্যতিত অন্যান্য মাযহাবের জ্ঞানও অর্জিত হবে।
ইমাম তাহাভী (র) এর মৃত্যু ঃ
ইবনে খাল্লেকান ওয়াফিয়য়াতুল আ’য়িয়ান গ্রন্থে বলেছেন,“ যুগ শ্রেষ্ঠ ফিক্হবদি, আলোড়ন সৃষ্টিকারী জ্ঞান তাপস আল্লামা আবূ জাফর তাহাভী (র) ৩২১ হিজরী সন মোতাবেক ৯৪৩ খ্রিস্টাব্দে ৯২ বছর বয়সে যিলকদ মাসের চাঁদনী রজনী বৃহস্পতিবার ইন্তিকাল করেন। ইন্নালিল্লাহি ..............
উপসংহার ঃ
পরিশেষে বলা যায় যে,ইমাম আবূ জাফর আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আত তাহাভী (র) বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী এক কালজয়ী মহাপুরুষ। তাঁর তুলনা তিনি নিজে এবং তার রচিত গ্রন্থ সমূহ। তাঁর রচিত গ্রন্থাবলী যুগে যুগে জ্ঞান পিপাসুর জ্ঞান পিপাসা নিবৃত করবে। বিশেষ কওে শারহু মায়ানিল আছার গ্রন্থেও জন্য হানাফী মাজহাবের অনুসারীগণ তাঁর কাছে চিরদিন ঋনী হয়ে থাকবে।
২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪২
তানজিব বলেছেন: +
৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:১২
টু-ইমদাদ বলেছেন: আরো পড়ুন . . .
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৩০
সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: Good post +++