নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন

সাখাওয়াত জুলফিকার

সাখাওয়াত জুলফিকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাহার পথ চেয়ে

৩১ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৮

(১ম পর্ব)
রাজীব সাহেবের এভাবে জেগে উঠা দেখে হাসপাতালের সবাই অবাক হলেন, যে রাজীব সাহেব আজকে এতদিন কোমায় পড়ে আছেন যাকে বাঁচানোর আশা সবাই প্রায় ছেড়ে দিয়েছেন তিনি কিনা আজ হঠাৎ চোখ মেলে তাকালেন! কি এমন শক্তি পেলেন তিনি, কি এমন জাদুর কাঠি নিয়ে আসলেন এই মহিয়সী নারী আগুন্তুকটি? হাসপাতালে ডাক্তার, নার্স, রাজীব সাহেবের স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েরাও যখন এসব ভাবছেন তখন রাজীব সাহেব চলে গেলেন ৪০ বছর আগের স্মৃতিতে।

তখনও তিনি অনার্স ৩য় বর্ষে পড়ুয়া একজন তরুণ। বন্ধুদের সাথে আড্ডা, হৈ -হুল্লা এসব ছিল নিয়মিত কাজ। ক্যাম্পাসের সবাইকে তিনি মাতিয়ে রাখতে পছন্দ করতেন। কিন্তু প্রেম বলতে যেমন বোঝায় তেমন কোন সম্পর্ক তার ছিলোনা। ক্যাম্পাসে অনেক বন্ধু প্রেম করে। বইয়ের ভেতর করে একজন আরেকজনকে চিঠি দেয়া, অন্য বন্ধু বা বান্ধবীর সাহায্য নিয়ে প্রেয়সীর কাছে চিঠি পাঠানো এসব কাজে অনেকেই ব্যস্ত। তরুণ রাজীব আহম্মদও অনেককে চিঠি লিখতে সহযোগিতা করেন। কবিতার পঙতি লিখে দেন। বন্ধুরা অনেকেই জিজ্ঞেস করে কিরে কাউকে পছন্দ করিস?
- করি তো সবাইকে, কিন্তু প্রেম করব কার সাথে সেটাই তো ঠিক করতে পারছিনা। তাই আর প্রেম টেম করছিনা।
- তুমি মামু তলে তলে টেম্পো চালাও, আর আমরা বললে বল হরতাল!
- দুর শালা! কি সব বলিস। এসব প্রেম টেম আমাকে দিয়ে হবেনা।
- কেন মেয়েদের সাথে যে তুই টাংকি মারিস তা কি আমরা দেখিনা।
- সামনা সামনি তো একটু আধটু ফাজলামী সবাই করে। তাই বলে কি সেটা আর প্রেম হয়?
- পটি্য়ে ফেল, কতজনই তো আছে। তুই তো ভালো চিঠি লিখতে পারিস, মুখে বলতে না পারলে লিখে ফেল একটা চিঠি। আর না হয় আমাদেরকে বল আমরা বলি।
বাস্তবে রাজীবের কারও সাথে প্রেম করা হয় না। মেয়েদের প্রতি যে তার ভালো লাগা কাজ করেনা ঠিক তাও নয় করে। তবে তা কেউ যতক্ষণ সামনে থাকে ততক্ষন। পেছনে গেলেই তার কথা আর মনে থাকেনা তেমন। প্রেমের ক্ষেত্রে সে একেবারেই ভুলোমনা। সারাদিন হৈ-হুল্লা, আড্ডাবাজি, ফুটবল, ক্রিকেট এসবের পেছনে সময় চলে যায় অনেক। প্রেম নিয়ে আলাদা করে ভাবারই বা সময় কোথায়?
রাজীবের বন্ধু শাহিনের বাড়ি বগুড়ায়। গ্রীষ্মের ছুটিতে শাহিন বাড়িতে গিয়েছে অনেকদিন এখনও আসার নাম নেই। এদিকে সামনে পরীক্ষা ক্লাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ নোট রয়ে গেছে শাহিনের কাছে। ডায়রি থেকে শাহিনের বাসার ফোন নাম্বার বের করে ফোন করে রাজী্ব। ওপাশ থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ ফোনটা ধরে।
- হ্যালো এটা কি ০৫১০২৬৭৫৯
- দুঃখিত রং নাম্বার।
রাজীব ডায়াল নাম্বারটা আবার তার ডায়রির সাথে মিলিয়ে দেখে। কিন্তু নাম্বার তো ডায়রির সাথে ঠিক আছে তাহলে রং নাম্বার বলছে কেন? রাজীব আবার ফোন করে।
- হ্যালো।
- হ্যালো কে বলছেন?
- জী, আমি আসলে একটু আগে এই নাম্বারে ফোন করেছিলাম।
- হ্যাঁ কাকে চাই?
- এটা কি শাহিনদের বাসার নাম্বার?
- না, এখানে শাহিন নামে কেউ থাকেনা।
- আপনার নামটা?
- আমি বললাম এখানে শাহিন নামে কেউ থাকেনা। আপনি আবার আমার নাম জিজ্ঞেস করছেন কেন? কে আপনি?
- না মানে এই নাম্বারটা আমার এক বন্ধু দিয়েছিল, তার বাড়ি বগুড়ায়, নাম শাহিন। সে বাড়িতে গেছে এখনও আসেনি। তাই একটা দরকারে তাকে ফোন করা।
- কিন্তু আপনি ভুল নাম্বারে ফোন করেছেন। এখানে এই নামে কেউ থাকেনা।
- দয়া করে আপনার নামটা জানতে পারি?
- আপনি আমার নাম জেনে কি করবেন?
- না আসলে তেমন কিছুনা, তবুও জানতে চাইলাম আর কি।
- আমার নাম রিপা।
- পুরো নাম?
- জান্নাতি নূর রিপা। আর কিছু?
- না না আর কিছু লাগবেনা।
- এটা বগুড়ায় তো নাকি?
- হ্যাঁ বগুড়া।
- আপনি বলছেন কোথায় থেকে?
- জী মানে আমি চট্টগ্রাম থেকে বলছি।
- ও। আচ্ছা ঠিক আছে রাখি।
- আরেকটা প্রশ্ন ছিল!
- কি?
- আপনি কি সবসময় রেগে রেগে কথা বলেন?
- what nonsense! এসব কি ধরণের প্রশ্ন?
রাজীবকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়ে রিপা ফোনটি রেখে দিল। রাজীব মনে মনে ভাবল মেয়েটির কন্ঠ কত মিষ্টি অথচ কথা কেমন রাগী রাগী ভাব। দূর এটা কোন কথা! মনে হয় একটু দেমাগ দেখাচ্ছে। দূর চিনিনা জানিনা দেমাগ দেখালেই কি! কোথায় সেই বগুড়া আর কোথায় চট্টগ্রাম। তবুও কেন জানি মেয়েটার কথা রাজীব মাথা থেকে ফেলতে পারছেনা। বার বার তার কথাটি মনে পড়ছে। কেমন যেন ভাবনার অতল সাগরে ডুবে গেল রাজীব। রাতে ঘুমটিও ঠিকমত হলোনা। আরেকবার কি মেয়েটাকে কল দিয়ে দেখা যায়? না থাক। কি ভাবতে কি ভেবে বসে। এমনিতেই যা দেমাগ দেখাল! না তবুও কাল মনে হয় একবার কল দিয়ে দেখা যেতে পারে। কিন্তু ঐ ব্যাটা শাহিনকে পাব কিভাবে? এসব ভাবতে ভাবতে সেদিন শেষ রাতে রাজীব ঘুমিয়ে পড়ে।

(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.