![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(২য় পর্ব)
পরদিন বিকালে একটা টেলিফোন বুথ থেকে ফোন করে রাজীব। একজন পুরুষ কন্ঠ ফোনটি ধরে। ওপাশ থেকে হ্যালো বলতেই রাজীব ফোনটি রেখে দেয়। বার বার ভাবে কি করা যায়। ইশ! শাহিনকে পাওয়া গেলে হয়ত তার মাধ্যমে মেয়েটার সাথে যোগাযোগ করা যেত। কিন্তু সেটাই বা কিভাবে হবে? আমি নিজেইতো এখনও কোন নাম ঠিকানা জানিনা। তাহলে শাহিন কিভাবে খুঁজবে? এসব কিছু বার বার রাজীবের মাথায় ঘুরছে। আবার ভাবছে একদিনইতো কেবল টেলিফোনে কথা বলা, তাকে নিয়ে এত ভাবার তো কিছু নেই।
তারপরও কোন কিছুতে মন বসেনা রাজীবের। প্রতিদিনের ক্যাম্পাসের আড্ডা, বিকালে বন্ধুদের সাথে আড্ডা, খেলার মাঠ কিছুই যেন তার ভালো লাগেনা। ক্লাসে বন্ধুরা জানতে চায়, কিরে তোর কি হয়েছে?
- কই কিছুনা তো।
- কোন কথা বলছিসনা যে? কেমন যেন চুপচাপ হয়ে আছিস, কোন সমস্যা?
- না এমনে।
- চল বাহিরে গিয়ে বসি, একটা গান ধরি। গান ধরলে ভালো লাগবে।
ক্যাম্পাসে খেলার মাঠের পাশে কৃঞ্চচুড়ার তলায় যেখানে প্রতিদিন তারা আড্ডা দেয় সেখানে গিয়ে সবাই একসাথে গান ধরে। বাসায় ফিরে বিকালে খেলার মাঠে যায়। তার দৈনন্দিন কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু একটু একা হলেই যেন ফোনের সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে যায়। তাকে নিয়েই ভাবনার জগতে হারিয়ে যায়। দুইদিন পর রাজীব আবারও ফোন করে। এবার একটা মধ্যবয়সী নারীকন্ঠ শোনা যায়। রাজীব কিছু না বলেই ফোন রেখে দেয়। পরদিন ক্লাসে গেলে তার বন্ধু রাশেদকে মেয়েটির বিষয়টা খুলে বলে রাজীব। রাশেদ বিষয়টা গুরুত্ব না দিয়ে উড়িয়ে দেয়।
- দুর ব্যাটা! এমন রং নাম্বারে কত জায়গায় কত ফোনই তো যায়। বাদ দেয় তো।
রাশেদের কথায় হতাশ হয় রাজীব। আবার ভাবে, কথাতো ঠিক, এমন রং নাম্বারে ফোনতো যেতেই পারে। কিন্তু ভাবনা থেকে কেন ফেলতে পারছেনা সেটা রাজীবের প্রশ্ন? রাজীব কিছু না বলে চুপ করে থাকে। পরদিন রাজীব তারই ক্লাসের নীলাকে ডেকে বিষয়টি জানায়। মেয়েটির সাথে ফোনে কথা বলার জন্য নীলার সাহায্য চায়।
- ও তুই তাহলে শেষ পর্যন্ত ঐ বগুড়ায় গিয়ে পড়লি? তাও কিনা রং নাম্বারে! কেন আমাদেরকে পছন্দ হয়না বুঝি? আমরা কোনদিক দিয়ে খারাপ তাই বল?
- ফাজলামী করিসনা, বিষয়টি সিরিয়াস।
- হঠাৎ তোর কি এমন হল যে এত দুরের একটা মেয়ের জন্য এতটা সিরিয়াস হয়ে গেলি? তুই তো কোনদিন তাকে দেখিসনি!
- এত কথা না বলে কিছু করতে পারবি কিনা বল?
- তো! আমি আপনাকে কিভাবে সহযোগিতা করতে পারি জনাব?
নীলাকে সাথে নিয়ে রাজীব একটি টেলিফোন বুথে যায়। সেখান থেকে রিপাদের বাসার নাম্বারে ফোন করে রিসিভারটি নীলার হাতে ধরিয়ে দেয়।
- হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
- ওয়ালাইকুম সালাম। কে বলছেন?
- জি আমি রিপার বান্ধবী বলছিলাম, রিপা কি বাসায় আছে?
- হ্যাঁ আছে।
- তাকে কি একটু দিতে পারবেন?
রিপার মা রিপাকে ডেকে দেয়। রিপা ফোন ধরতেই এপাশ থেকে রাজীব নীলার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে কথা বলে,
- হ্যালো রিপা বলছেন?
- জি! কে বলছেন?
- আমি রাজীব।
- রাজীব! কোন রাজীব?
- আরে ঐ যে সেদিন কথা বললাম আপনার সাথে। শাহিনের বাসায় ফোন করতে গিয়ে আপনাদের এখানে চলে গেল।
- তো! সেটা তো সেদিনের সমস্যা। আজ আবার কি?
- না মানে তেমন কিছুনা।
- তাহলে আজ আবার কেন ফোন করলেন?
- না মানে আপনি কেমন আছেন তা জানার জন্য আর কি!
- আমি কেমন আছি তা জেনে আপনার কাজ?
- না মানে ঐদিন আপনার সাথে কথা বলে মনে হল আপনার মন খারাপ।
- আপনাকে কি আমি বলেছিলাম আমার মন খারাপ?
- আমি ভালো আছি। আপনি আর ফোন করবেন না।
রাজীবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিপা ফোনটি রেখে দেয়। নীলা রাজীবের কাছে জানতে চায়,
- কিরে কি বলে?
- কিছুনা রে?
- কিছুনা মানে, তাহলে এতক্ষণ কি বললি?
- বলার সুযোগ পেলাম কোথায়? কথা শুরু করতেই তো সে ফোন রেখে দেয়!
- শোন এভাবে হবেনা। তারচেয়ে এসব বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মন দেয়। আর এখানে কাউকে পছন্দ করে তার সাথে প্রেম কর। এত দুরে প্রেম করার কি দরকার?
- শোনেন ম্যাডাম, এত উপদেশ দেয়া বন্ধ করেন। আর আমি প্রেম করার জন্য ঐ মেয়েকে ফোন করিনি। ঐদিন রং নাম্বারে ফোন চলে গেছে সেটা সমাধান করার জন্য ফোন করেছি শুধু।
- সেটাতো সেদিনই শেষ। আজ আবার ফোন করার কি আছে!
- তুই এত কিছু বুঝবিনা।
- তুই যে মেয়েটার প্রেমে পড়েছিস, তাকে পটানোর জন্য এসব করছিস তা কি আমরা বুঝিনা?
- বেশি বুঝতে যাসনে? তোকে আনাই আমার ভুল হয়েছে!
- ও তোর কাজ শেষ আর এখন বেঈমানের মত এমন বলছিস না? ঠিক আছে আর কোনদিন যদি আমি তোর সাথে আসি!
- বেশি বকিস না তো, ভাল লাগেনা এত বকাবকি। চল এখন যাই।
- আরে যাব কি? আগে চটপটি খাওয়াবি, তারপর যাওয়া।
- সারাদিন তো শুধু খাই খাই করিস! আচ্ছা চল, মুটকি কোথাকার। খেতে খেতে তো আটার বস্তা হচ্ছিস দিন দিন।
- সামান্য চটপটির জন্য এতকথা শোনাচ্ছিস, না? খাবনা তোর চটপটি।
- আচ্ছা চল, এত রাগ করিস কেন? চল আমারও খিদা পেয়েছে।
©somewhere in net ltd.