![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(৩য় পর্ব)
এরপর আরও কয়েকদিন রাজীব রিপাদের বাসায় ফোন করে। কিন্তু বেশিভাগর সময় রিপাকে পাওয়া যায়না।কখনও রিপার মা ফোন ধরে কখনও বাবা। আর সঙ্গে সঙ্গেই রাজীব ফোনটি কেটে দেয়।একদিন রাজীব ফোন করলে ওপাশ থেকে রিপার কন্ঠ শোনা যায়,
- হ্যালো কে বলছেন?
- পরিচয় দিলে যদি রাগ না করেন, যদি কোন অন্যায় মনে না করেন, তাহলেই কেবল বলতে পারি আমি কে?
- ও তাই! আচ্ছা ঠিক আছে রাগও করলাম না, অন্যায়ও মনে করলাম না, এবার বলুন আপনি কে?
- আচ্ছা! তার আগে আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
- আবার কি প্রশ্ন?
- ধরুন এক ঝড়ো সন্ধ্যা, বাহিরে প্রচন্ড ঝড় আর বৃষ্টি। এর মাঝে রাস্তা দিয়ে এক পথিক যাচ্ছিল, ঝড়ের কবলে পড়ে পথিক দিশেহারা, আশে-পাশে আশ্রয় নেয়ার তেমন কিছু না পেয়ে আপনার বাড়িতে ঢুকে গেল। আপনি কি তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবেন?
- অবশ্যই দেব, কেন নয়? কারন সে চোর-ডাকাত না ভালো মানুষ, তা আমি কিভাবে জানি!
- আরে সে তো বিপদে পড়েই আপনার বাড়িতে ঢুকেছে।
- হ্যাঁ তাতে কি? বিপদের বায়না ধরেও তো ঘরে চোর ডাকাত ঢুকতে পারে, পারেনা?
- মনে করেন সে নিরীহ, তার হাতে কিছু নেই একদম খালি। তাহলে সে ডাকাতি কিভাবে করবে? আর চুরিও নিশ্চয় আপনার সামনে করা সম্ভব নয় কখনও।
- সে হয়ত আজকে দেখে গেল বাড়িতে কি আছে না আছে। তারপর আরেকদিন সুযোগ বোঝে নিয়ে গেল! এমন কি হতে পারেনা?
- সেটা হয়ত পারে। তাই বলে সবাই এমন হবে কেন?
- শোনেন এত কথা বাদ দিয়ে আপনার পরিচয়টা দেন এবং উদ্দেশ্যটা বলেন।
- আমি রাজীব।
- ও আপনি! আপনাকে তো নিষেধ করেছি ফোন করতে। তাহলে আজ আবার কি মনে করে?
- আরে এটাই তো সমস্যা!
- মানে?
- আপনি ফোন করতে নিষেধ করেছেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সে নিষেধ অক্ষরে অক্ষরে পালন করার।কিন্তু তারপর থেকে আমার খাওয়া, ঘুম সবকিছুতে কেমন যেন সমস্যা দেখা দিয়েছে। মানে কিছুই ঠিকমত হচ্ছেনা। কোন কিছুতে মন বসছেনা। এমনকি পড়া-লেখায়ও। আচ্ছা আপনি কি সেসব কাজ করতেও নিষেধ করেছেন?
- যা নিষেধ করেছি তা তো ঠিকই করেছেন!
- কোনটা?
- এই যে ফোন করতে নিষেধ করেছি তবুও করলেন আবার।
- ওহ! এটা?
- কয়টা কাজ আর মনে থাকে বলুন?
- নাম্বারটাতো ঠিকই মনে রেখে দিলেন! আবার একে ওকে দিয়ে বার বার ফোনও করছেন।
- সেটা হৃদয়ে গেঁথে গেছে।
- মানে?
- না কিছুনা। আসলে নাম্বারটা ঠিক মনে রাখিনি। তবে আপনার কারনে মনে রয়ে গেছে।
- সেটা কেমন?
- আপনার কথা ভাবতে ভাবতে আমার চোখের ঘুম, খাওয়া সবই কেমন বন্ধ হয়ে গেল। কিন্তু আপনার কথাটা, আপনার মিষ্টি-দুষ্টু হাসি সবই মনে রয়ে গেল।
- আমি আপনার সাথে হেসেছি! কখন?
- কখন সেটা আমি হয়ত সরাসরি দেখিনি। কিন্তু আপনি যে আমার ব্যাপার নিয়ে একটু হলেও মিষ্টি-দুষ্টু হাসি হেসেছেন সেটা কিন্তু আমি বুঝতে পারি।
- ও তাই! আমার আর কোন কাজ নেই বুঝি, যে আপনাকে নিয়ে আমি মধুর হাসি হাসব। আপনি কি আমার বেয়াই হন, না কি হন?
- হতে আর কতক্ষণ?
- মানে?
- মানে সহজ। মনে করুন আমার ছেলে বা মেয়ের সাথে আপনার ছেলে বা মেয়ের বিয়ে হল, আর আমরা হলাম বেয়াই-বেয়াইন।
- ওরে আমার আল্লাহ! দুনিয়াতে এত মানুষ থাকতে আপনাকে আমি বেয়াই বানাতে যাব!
- অসুবিধা কি? কেউ না কেউ তো বেয়াই হবেই। আর বর বানাতে তো বলছিনা, বলছি বেয়াই বানানোর কথা।
- এই যে মিস্টার, মুখ সামলে কথা বলুন।
- আরে! এত রাগ করার কি আছে? আজ হোক, কাল হোক কেউ না কেউ তো বর হবেই! আমি হলে দোষ কি?
- এই যে মিস্টার, আপনি কিন্তু সীমা অতিক্রম করছেন!
- ওহ! আমার ভুল হয়ে গেছে। আসলে কি বলতে চেয়েছিলাম আর কি বলে ফেললাম! আপনি কিছু মনে করবেন না। আমি আসলে এসব কিছু বলতে চাইনি। আমি মুলত বলতে চেয়েছিলাম আপনি কি করেন সেটা?
- আমার কি করা দিয়ে আপনার কাজ?
- কাজ তেমন নেই, আবার থাকতেও পারে।
- কি কাজ থাকতে পারে?
- এই ধরুণ আপনার এখনও বিয়ে হয়নি, তাহলে আপনার জন্য আমি ঘটকালি করতে পারি।
- আমার বিয়েতে আপনার ঘটকালি করা লাগবেনা। আমার বিয়ে নিয়ে আপনার চিন্তাও করা লাগবেনা। তারচেয়ে আপনি আপনার নিজের ঘটকালিটা আগে শেষ করুন, যদি সেটা বাকি থাকে।
- এই যা! এই জন্য কারও উপকারের চিন্তা করতে নেই। ভালো কাজ করতে চাইলাম আর উনি এসব কথা শোনাচ্ছেন!
- আমার ভালো আপনি করা লাগবেনা। তারচেয়ে আপনি নিজের চরকায় তেল দিন।
- চরকায় তো তেল দেব। এক কাজ তো করা যায়, আমারটা আপনি করলেন আর আপনারটা আমি করলাম।
- জি না। আমার ঘটকালি আমি নিজে করতে পারব। কাউকে দরকার হবেনা।
- আমি কিন্তু ঘটক হিসেবে খারাপ না।
- আপনার যদি আর কোন কথা বলার না থাকে তবে রাখতে পারেন।
- আর কখন কথা হবে?
- কখনও না! আর কখনও ফোন করবেন না।
- রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি তো খারাপ কিছু বলিনি!
- রেগে যাচ্ছিনা, শুধু ফোন করতে নিষেধ করেছি।
- ও তাই বলুন। আমি তো ভাবছি আপনি রেগে যাচ্ছেন।
- ঠিক আছে রাখি তাহলে।
- এই যে শুনুন শুনুন, আরেকটা কথা!
- আবার কি?
- না মানে আপনি কি করেন সেটা আর কি?
- কিছু করিনা, বসে আছি।
- না মানে আপনি কিসে পড়েন?
- ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার। কেন?
- না এমনি।
- ঠিক আছে তাহলে রাখি।
- ও আরও একটা কথা!
- আরও কি কথা?
- যেহেতু ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন তাহলে তো আপনি আমার ছোট তাই না?
- হ্যাঁ। তাতে?
- আপনাকে তাহলে তুমি বলি?
- আর কিছু?
- না আর কিছুনা।
- ঠিক আছে, রাখি তাহলে।
- রেখে দিবেন?
- তো কি করব?
- এই রিপা শোন শোন!
- কি?
- তুমি না অনেক সুন্দর?
- মানে?
- না তোমার কথা অনেক সুন্দর আর কি। তুমি অনেক সুন্দর করে কথা বল।
- রাখি, ধন্যবাদ।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.