নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন

সাখাওয়াত জুলফিকার

সাখাওয়াত জুলফিকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাহার পথ চেয়ে

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ৯:৪৪

(৪র্থ পর্ব)
এখন প্রায় সময় সুযোগ পেলে রাজীব রিপাদের বাসায় ফোন করে আর রিপার সাথে কথা বলে। কখনও বাহিরের টেলিফোন বুথ থেকে, কখনও বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে নিজেদের বাসার ফোন থেকে। তবে বাহিরের বুথ থেকে ফোন করা হয় বেশি। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় রাজীব তার ক্লাসের কোন বান্ধবীর সহযোগিতা নেয় রিপাকে ফোনে পাওয়ার জন্য। সুযোগ পেলেই কথা বলে দুইজনে। একদিন কথায় কথায় রাজীব রিপার বাসার ঠিকানাটাও নিয়ে নেয়। তার দুই সপ্তাহ পর রাজীব রিপার কাছে একটি চিঠি লিখে।

প্রিয় রিপা,
কোন বিশেষণে তোমাকে বিশেষায়িত করব তা জানিনা বলেই অন্যকোন সম্মোধন ব্যবহার না করে শুধু নাম ধরে সম্মোধন করছি। কেমন আছ? নিশ্চয়ই ভালো! তোমার ভালো থাকাটাই আমার একান্ত কামনা।

এখন বর্ষাকাল, তোমাকে যখন চিঠিটা লিখছি তখন বাহিরে টিপ টিপ বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টির মাঝে আনমনে কেন জানি তোমাকে নিয়ে ভাবছি খুব। যদিও তোমাকে নিয়ে আমার এই ভাবনা নতুন কিছু নয়। প্রথম যেদিন রং নাম্বারে তোমার সাথে কথা হয় তারপর থেকেই কেন জানি আমার সমস্ত ভাবনার জগৎটা তুমি দখল করে নিয়েছ। যে আমি বাউন্ডুলে স্বভাবের মানুষ। কোনদিন কাউকে নিয়ে ভাবতে হবে এটা কল্পনা করিনি কখনও, সে আমি কিনা প্রতিটি মূহুর্ত তোমাকে নিয়ে ভাবি! কেন আমার ভাবনার জগৎটা এমন হল? তবে কি এর নাম প্রেম! নাকি ভালোবাসা, নাকি অন্যকিছু? আমি নিজে ঠিক জানিনা এর নাম কি। তবে শুধু জানি প্রতিটি দিন প্রতিটি মূহুর্ত আমি শুধু তোমার কথা ভাবি। আচ্ছা আমি যদি তোমাকে ভালোবাসার কথা বলি তবে কি তা খুব বেশি অন্যায় হবে? অথবা তুমি কি আমাকেও ভালোবাসবে? যদিও আমি এসব কিছু জানিনা, তবে আমার মনে হয় আমি তোমাকে ভালোবাসি। সত্যি বলছি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। এই চিঠি পড়ার পর তোমার অনুভতি কি হবে জানিনা। তবে যদি তোমার কাছ থেকেও এমন একটি চিঠি পাই তবে আমার যে কি আনন্দ হবে তা তোমাকে বোঝাতে পারবনা। তুমি নিশ্চয় আমাকে সে আনন্দ থেকে বঞ্চিত করবেনা? আমি তোমার চিঠির অপেক্ষায় থাকব।

শ্রাবণের এই মেঘে ঢাকা বিকালে, বৃষ্টির টিপ টিপ ছন্দের সাথে, আকাশের সব রং নিয়ে, নীলিমার সব নীল দিয়ে এই বর্ষায় তোমাকে জানাই বৃষ্টিভেজা সিক্ত শুভেচ্ছা।

ইতি,
রাজীব।

চিঠিটি রাজীব ছোট একটি খামে ঢুকিয়ে রিপার কলেজের ঠিকানায় পাঠিয়ে দেয়। তিনদিন পর চিঠিটি রিপার হাতে গিয়ে পৌঁছে। রিপা যে কলেজে পড়ে সেই আজিজুল হক কলেজেই রয়েছে পোস্ট অফিস। পোস্ট অফিসের পিয়ন রিপার ক্লাসে গিয়ে চিঠিটি রিপার হাতে দেয়।
পিয়ন যখন রিপাকে খোঁজ করে তার হাতে চিঠিটি দিতে যায় রিপা খুব অবাক হয়! কারন তার নামেতো কোন চিঠি আসার কথা না তাও আবার কলেজের ঠিকানায়! চিঠির খামে প্রেরকের ঠিকানা পেয়ে রিপা আবারও অবাক হয়। এভাবে রাজীব তার কাছে চিঠি পাঠাবে সে কখনও তা ধারণাও করেনি। কলেজে রিপার বান্ধবীরা সবাই জানতে চায় কিরে কার চিঠি? হঠাৎ সবার এমন প্রশ্নে রিপা কিছুটা অপ্রস্তুত হাসি হেসে বলে,
- আরে না কিছুনা ভাইয়ার চিঠি পিয়ন কলেজে আমার হাতে দিয়ে গেছে আর কি। ভাইয়ার কোন এক বন্ধু পাঠিয়েছে বিদেশ থেকে।
- বিদেশে থেকে!
- দেখি বের করতো, খাম দেখলাম বাংলাদেশি আর তুই বলছিস বিদেশের চিঠি!
- কি জানি! আমি এতকিছু খেয়াল করিনি। আচ্ছা বাদ দে তো। কে না কে পাঠিয়েছে। চিঠিতো আমার না আমি তেমন কিছু জানিও না।
- ভাইয়ার চিঠি না তোর চিঠি? দেখিস আবার আমাদেরকে না বলে ডুবে ডুবে জল খাসনে যেন!
- কি যে বলিস না! আরে তেমন কেন হবে? কারও সাহস আছে আমাকে চিঠি লিখার?
- হুম। দেখা যাবে পরে।
- আচ্ছা পরে দেখলে দেখিস, এখন চল যাই আজ।
বাসায় যাওয়ার সময় রিপা কেবল ভাবতে থাকে কি এমন লিখেছে চিঠির মধ্যে! কেন বা হঠাৎ করে চিঠি পাঠালো! রিপার মনের মধ্যে এক ধরণের অস্থিরতা কাজ করে। বাসায় গিয়ে নিজের রুমে চিঠিটা খুলবে এমন সময় মা রিপাকে ডাকতে ডাকতে তার রুমে ঢোকে। রিপা তৎক্ষণাৎ চিঠিটা ব্যাগের মধ্যে রেখে দেয়।

সারাদিন অনেক চেষ্টা করেও চিঠিটা খোলার সাহস পায়নি রিপা। যদি কেউ দেখে ফেলে! যদি বাবা-মা বা কারও হাতে যায়! যদি জানতে চায় কার চিঠি? এসব ভেবে সারাদিন আর চিঠিটি বের করেনি। রাতে খাওয়া শেষ করে তড়িঘড়ি করে রুমে ঢোকে রিপা। ঘুমানোর ভান করে রুমের লাইট নিভিয়ে দেয়। তারপর তার টেবিল লাইটটা জ্বালিয়ে রাজীবের চিঠিটা বের করে রিপা। চিঠিটা পড়ে কিছুক্ষণ নিজে নিজে চুপ করে থাকে রিপা। যেন নিজের সাথে নিজেই কোন কথা বলতে পারছেনা। কেমন এক ভালো লাগায় সারারাত ঘুম আসেনা রিপার। সারারাত কত কি ভাবনায় আসে তার কিছুই ঠিকমত বুঝে উঠতে পারেনা। পরদিন কলেজে যায় কিন্তু মনটা কেমন যেন সেই চিঠির উপর আর চিঠির মানুষটির উপর পড়ে থাকে। যে মানুষটাকে কোনদিন দেখেনি তাকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকে রিপা। দুইদিন পর রিপাও রাজীবের উদ্দেশ্যে একটি চিঠি লিখে।

জনাব,
শ্রাবণের বৃষ্টিভেজা সিক্ত শুভেচ্ছাটা নিজ দায়িত্বে নেয়ার পরামর্শ দিলাম।
একটি অবুঝ নাবালিকা কন্যাকে ফোনের মাধ্যমে পটিয়ে তুমি শেষ পর্যন্ত তার কাছে চিঠি লিখে বসলে, তাও কিনা সরাসরি প্রেম নিবেদন। আবার দুনিয়ার যাবতীয় কাজ ফেলে সেই কন্যাকে নিয়ে ভাবনায় ডুবে থাকাও কিন্তু মারাত্বক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এভাবে কাউকে প্রেম নিবেদন করা এবং তাকে নিয়ে দিনরাত ভাবনায় ডুবে থাকার শাস্তি কি হতে পারে সেটা তোমার জানা উচিৎ। এই মূহুর্তে নাবালিকা কন্যা তোমাকে কঠিন কোন শাস্তির কথা বলছেনা। তবে সামনে পেলে তোমাকে শ্রাবণের বৃষ্টির পানির মধ্যে চুবিয়ে তারপর বুঝিতে দিত কাউকে প্রেমের চিঠি দেয়ার শাস্তি কি হতে পারে। এই মুহুর্তে সামনে নেই বলে সেই শাস্তি থেকে হয়ত তুমি বেঁচে গেলে। যাইহোক তুমি কাকে ভালোবাস না কি কর সেটা তুমি জান। তোমাকে ভালবাসতে, বিয়ে করতে আমার বয়েই গেছে! কত ছেলেই আমার জন্য পাগল! আমি তো শুধু তোমার চিঠির উত্তর দিচ্ছি তুমি চেয়েছ তাই।
বৃষ্টির পানিতে চুবানোর শাস্তিটা আপাতত না হয় জমা থাকল। ভবিষ্যতে কোনদিন দেখা হলে পেয়ে যাবে।

ইতি,
রিপা।

(চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.