![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(৫ম পর্ব)
রিপার চিঠিটি যখন রাজীবের হাতে পৌঁছে তখন রাজীবের আনন্দের সীমা থাকেনা। রাজীব বিশ্বাস করতে পারেনি সত্যি রিপা তার চিঠির উত্তর দিবে! কি যেন ভীষণ ভালোলাগা রাজীবের মনে কাজ করে।ক্যাম্পাস, খেলার মাঠ সর্বত্র সে দাপিয়ে বেড়ায় এ আনন্দ সঙ্গে নিয়ে। তবে একটা বিষয় রাজীবকে খুব অবাক করে! রাজীব রিপাকে ভালোবাসার কথা বললেও বিয়ের কথা কিন্তু বলেনি। তবে কি রিপা বিয়ে পর্যন্ত চিন্তা করেছে! রাজীব মনে মনে খুব খুশি হয় আর ভাবে যদি একদিন সত্যি এই মেয়েটাই তার বউ হয়, তার জীবন সঙ্গীনি হয়! আজকের দিনটা এতবেশি সুন্দর আর ভালো লাগছে কেন বুঝতে পারেনা রাজীব। মনে হয় কতকাল কত যুগ অপেক্ষা করেছে সে এমন একটি দিনের জন্য। বাহিরে প্রকৃতি, গাছ-গাছালি, পাখি, দুর আকাশের মেঘগুলো সবই যেন রাজীবের সাথে কথা বলছে।
দুইদিন পর রাজীব রিপার কাছে ফোন করে। এটা সেটার বলার পর রাজীব এক সময় রিপার কাছে দুষ্টামি ভরা কন্ঠে জানতে চায়,
- শাস্তিটা কি বেশি হয়ে গেলনা!
- এর চেয়ে কমও তো দেয়ার সুযোগ নেই।
- তাই বলে লগু অপরাধে গুরুদন্ড!
- অপরাধ গুরুতর!
- কেন গুরুতর হবে কেন?
- আমার বাবা জানলে খবর আছে।
- বাবা জানবে কেন? আর জানলেই বা কি, মেয়ে কি সারা জীবন ঘরে বসিয়ে রাখবে! বিয়ে দিবেনা?
- ইশ! সখ কত। চিনিনা জানিনা, আবার আমাকে নাকি বিয়ে করবে!
- আরে ম্যাডাম চিনতে কতক্ষণ?
- হয়েছে আর চেনা লাগবেনা! তোমার মত ছেলেদের আমি চিনি।
- হায় কপাল! কতজনকে চেন?
- সেটা তোমাকে বলতে যাব কেন? তুমি আবার কে?
- আমি তোমার! আমি তোমার হবু বর।
- এই মিস্টার! মুখে যা আসে সব বলে দেন, না?
- কই আমি আবার কি বললাম? আমি তো কিছুই বলেনি!
- না বলাই ভালো।
- আচ্ছা!
- আর কি করা হচ্ছে?
- আমি তো তোমার সাথে কথা বলছি।
- বেকার? কাজ কর্ম নেই?
- কথা বলা সেটাও তো একটা কাজ।
- এভাবে টেলিফোন কর যেদিন বাবা টের পাবে সেদিন কিন্তু খবর আছে।
- আরে দুর কি যে বল! টের পাবে কেন? আমি ফোন করি উনারা ধরলে তো কেটে দিই।
- কেটে দেয়া ভালো। তো আবার যাদেরকে দিয়ে আমাকে ডাকতে বল তারা কারা?
- আমার বান্ধবী।
- বান্ধবী মানে?
- বান্ধবী মাকে বান্ধবী!
- তাহলে এত বান্ধবী থাকতে আমার সাথে কি?
- আরে তারা তো আমার ক্লাসমেট। একসাথে পড়ি।
- ও। আর আমি?
- তুমি! তুমি আমার!
- আমি তোমার কি?
- তুমি আমার টুনটুনি পাখি।
- হইছে। আর বলতে হবেনা।
- আচ্ছা চুপ করলাম।
এমন সময় রিপার মা রিপাকে ডাকতে থাকে। রিপা আর বেশি কিছু না বলে রাজীবকে পরে অন্যসময় ফোন করতে বলে ফোন রেখে দেয়। রিপার মা রিপার কাছে জানতে চায়,
- কিরে এত কথা কার সাথে বলিস?
- কার সাথে মানে! আমার বান্ধবী আমাকে ফোন করেছে। আর তুমিই তো আমাকে ডেকে দিলে!
- হ্যাঁ তা দিলাম। কিন্তু এত কি কথা? সে কি কলেজে যায়না?
- যায়, কিন্তু সে আজ যেতে পারেনি এদিকে স্যার আজ গুরুত্বপূর্ণ একটা নোট দিয়েছে সেটা নিয়ে কথা হচ্ছিল।
- আচ্ছা ঠিক আছে। তোকে তোর বাবা ডাকছে, কি বলে দেখ।
রিপা আর কোন কথা না বলে বাবার কাছে যায়। বাবা রিপাকে চশমাটা খুঁজে দিতে বলে। রিপা চশমা খুঁজে নিয়ে এলে বাবা জানতে চান,
- কিরে পড়ালেখা তোর কেমন চলছে?
- ভালো বাবা।
- তোর মা বলছে তুই নাকি নিয়মিত ক্লাস করিস না?
- বাবা তুমি মার এই কথা বিশ্বাস কর?
- সবকিছুই তো বিশ্বাস করি, এত বছরের সংসার। যা এই কথা না হয় বিশ্বাস করলাম না।
- তুমি অনেক ভালো বাবা।
- দেখ মা, তুমি আমার একমাত্র মেয়ে। কত স্বপ্ন তোকে নিয়ে।
- বেশি কিছুতো চাইনা, বাবার মানটা শুধু রাখিস।
- রাখবো বাবা সবসময় রাখব।
- ঠিক আছে আমাকে পত্রিকাটা দিয়ে তুই তোর কাজ কর।
এখন নিয়মিত রিপা আর রাজীবের মাঝে যোগাযোগ হচ্ছে। কখনও ফোনে কখনও চিঠিতে। ভালোবাসার তরীতে তারা একটি বছর অতিবাহিত করল। একদিন রাজীব রিপার কাছে একটি চিঠি লিখে।
রিপা,
যেদিন প্রথম তোমার সাথে কথা বলি সেদিন মনের অজান্তেই আমার ভেতরে এক ধরণের আলোড়ন সৃষ্টি হয়। জীবনে কোনদিন কাউকে নিয়ে এভাবে ভাববো তা কল্পনাও করিনি। আমার ছন্নছাড়া জীবন। কখনও কোন কিছুতে ঠিকমত স্থির হতে পারিনি। ছুটে চলাই আমার নেশা, হৈহুল্লা আড্ডাবাজি বন্ধুদের সাথে ঘোরাঘুরি এসব করেই কাটে সময়। সেই আমার মনটা তুমি কখন কিভাবে দখল করে নিলে নিজেই জানিনা। এখন আমার প্রতিটি সময়, প্রতিটি মূহুর্তের কল্পনায় শুধু তুমি। আর কিছু ভাবতে পারিনা, ভাবনায় আসেনা। তোমাকে প্রথম চিঠিটি লিখার সময় বার বার ভয় হচ্ছিলো। চিঠিটি পাঠাবো কি পাঠাবোনা অনেক ভেবে শেষে কিনা পাঠিয়েই দিলাম। আর ভাবছিলাম তোমার প্রতিক্রিয়া কি হয়। যেদিন প্রথম আমি তোমার হাতের চিঠিটি পেলাম সেদিনের সকালটা এত সুন্দর হবে, এত আনন্দময় কোন দিন যে আমার জীবনে আসবে তা আমি কখনও ভাবিনি।
তুমি কি পারবে আমার সারা জীবনের সঙ্গী হতে? আমার এই ছন্নছাড়া জীবনের ভাগ তুমি নিতে?
ইতি
রাজীব।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.