নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শিরোনামহীন

সাখাওয়াত জুলফিকার

সাখাওয়াত জুলফিকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:১৬

আমার একটি টিউশন ছিল। ছাত্র চট্টগ্রাম শহরের একটি নাম করা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ত। আমার প্রতি অভিবাবকের নির্দেশ ছিল আমি যেন ছাত্রের সাথে ইংরেজিতে কথা বলি। আমি ইংরেজিতে মোটেও ভাল নই। তারপরও কোন ভাবে চালিয়ে যেতে লাগলাম। আমার পড়ানোতে তারা মোটামুটি খুশি ছিল। একদিন ছাত্রের মা বলল, আমি যেন পড়াগুলো তাকে বাংলায় বুঝিয়ে দিই। এবার তাই করতে লাগলাম।
একদিন বিজ্ঞান বিষয়ের একটা অধ্যায় ছিল Difference of Air, Gale And Breeze. সেদিন আমি বাংলা ব্যবহার না করে তাকে ওটা ইংরেজিতে বুঝিয়ে দিই। আমার ছাত্রের স্মৃতি শক্তি মাশায়াল্লাহ খুব ভাল ছিল। সে অল্প সময়ের মধ্যে তা মুখস্থ করে সম্পুর্ণ নির্ভুলভাবে আমাকে লিখে দেখায়। এবার আমি তাকে বিষয়টা বাংলায় বুঝিয়ে বলতে বলি। আমি আশ্চর্য হলাম, যখন দেখি সে বিষয়টা নিভূলভাবে মুখস্থ বললেও আসলে এগুলো কি, সে সম্পর্কে তার কোন ধারণা নাই। এরপর প্রায় সময় তাকে কোন কিছু পড়াতে গিয়ে ইংরেজিতে বললে বলত এর বাংলা কি? আবার বাংলায় বললে বলত ইংরেজি কি?
যেকোন বিষয় পড়ার মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে সে বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। বিজ্ঞানের একই একটা অধ্যায় ধরা যাক ’মানব দেহ’ তা দুইজন সমান মেধাবী ছাত্রের একজন ছাত্র পড়ল বাংলা বা অন্যকোন ভাষায়, যা তার নিজস্ব মাতৃভাষা। যে ভাষায় সে সবার সাথে বা বেশির ভাগ মানুষের সাথে কথা বলে। আর অন্য একজন পড়ল ইংরেজি বা অন্য কোন বিদেশী ভাষায়, যার ব্যবহার তার প্রাত্যহিক জীবনে সীমিত। তাহলে ঐ একই অধ্যায় একজন পড়ল মাতৃভাষায়,অন্যজন পড়ল বিদেশী ভাষায়। তাহলে জ্ঞান অর্জন কার বেশি হবে, বা কে বিষয়টি ভাল ভাবে বুঝবে?
শুধু এই ছাত্র নয়, টিউশনির সুবাধে এরকম অনেক ছেলে মেয়েকে আমি দেখেছি যারা pink colour, yellow colour এসব নাম জানে কিন্তু সেগুলো যে তার সামনে থাকা গোলাপী আর হলুদ রং তা জানেনা। Hilsha fish যে তার বাবা বাজার থেকে কিনে আনা ইলিশ মাছটির নাম তাও জানেনা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী সাহিত্যের প্রাক্তন অধ্যাপক, বর্তমানে ULAB এ আছেন। যিনি প্রথম আলোতে নিয়মিত কলাম লিখেন। একটা কলামে লিখেছেন “ পৃথিবীতে জাপান নামে একটা দেশ আছে, যেই দেশটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কল্যানে পৃথিবীর অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি। যে দেশের ২০ জনেরও বেশি বিজ্ঞানী বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নোবেল পেয়েছেন। অথচ ঐ দেশের ৯৫% ভাগ মানুষ ইংরেজি জানেনা। তবে কি তারা মূর্খ। তা যদি হয় তবে তো মূর্খ ভাল।” ইংল্যান্ডের অনেক মানুষ স্কুল জীবন শেষ করতে পারেনি। শুধু ইংরেজি জানে বলে কি তারা শিক্ষিত?
বর্তমান বাস্তবতায় ইংরেজি ভাষা শিখা অবশ্যই জরুরী। কিন্তু ভাষা শিখা আর জ্ঞান অর্জন করা এক কথা নয়। ভাষা শিখার উদ্দেশ্য মানুষের সাথে কথা বলা, আর জ্ঞান অর্জনের উদ্দেশ্য জীবন, জগৎ এবং বিশ্বকে জানা।
এই দেশে কথা বলার মানষের অভাব নাই। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমানের মত রাস্ট্রনায়ক, কিংবা মাকসুদুল আলম, জামাল নজরূল ইসলাম, ড. মুহাম্মদ ইউনুস, ফজলুল রহমান খান, হরিপদ কাপালি মত লোকের সংখ্যা একদম বিরল। দেশের উন্নতির জন্য তাদেরকে চাই।
নিজের আভিজাত্য জাহির করতে গিয়ে,নিজেকে আর দশজন থেকে ভিন্ন রাখতে গিয়ে, যেসব অভিবাবক একটা শিশুকে অজানা অচেনা একটি ভাষায় না বুঝে পড়া মুখস্ত করতে বাধ্য করছেন। অন্যের কাছে গল্প করার অভিলাষ থেকে একটি শিশুর লুকানো প্রতিভা, নিজস্ব বুঝার শক্তি আর সৃজনশীলতাকে গলা টিপে হত্যা করছে। ভবিষ্যতে এর দায় কে নিবে?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.