![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(১৩ ই অক্টোবর আমেরিকার উপনিবেশ ও দখলদার বিরোধি দিবস।)
১৩ই অক্টোবর, মেক্সিকো, বলিভিয়া, ভেনেজুয়েলাসহ সমগ্র উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার আধিবাসীরা উপনিবেশ ও দখলদার বিরোধী দিবস পালন করছে। ১৪৯২ সালের ১২ই অক্টোবর কলম্বাসের আমেরিকা আবিস্কারের মধ্যদিয়ে আমেরিকায় ইউরোপীয় দখলদারিত্বের সূচনা ঘটে। কলম্বাস তার দলবল নিয়ে যখন বাহামা দ্বীপপুঞ্জে পৌছে তখন সেখানকার আধিবাসীরা তাদেরকে সরলমনে অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেছিল। আধিবাসীরা তাদের রীতি অনুযায়ী অতিথিদেরকে হীরা, সোনা প্রভৃতি মুল্যবান পাথর উপহার দিয়েছিল। আর অতিথিরা দিয়েছিল শামুকের মালা, মাটির পুতুল ইত্যাদি সস্তা জিনিস।
কলম্বাসের হাতে একটি তরবারি ছিল। আদিবাসীরা কোনদিন তরবারি দেখেনি। কলম্বাসের হাতে চক চকে একটি উজ্জল অদ্ভুত জিনিস দেখে তারা অবাক হল। কলম্বাস তাদেরকে তরবারিটা ধরতে দিলে সহজ সরল আধিবাসীরা তরবারিটার ধারালো অংশ ধরতে যায়, তখন একে একে যারা ধরে সবার হাত কেটে যায়, রক্ত বের হয়। আধিবাসীরা এই ভেবে অবাক হয় যে, তারা তরবারিটা ধরতে গেলে হাত কাটে কিন্তু কলম্বাস বা তার সঙ্গিদের কাটেনা কেন? আধিবাসীরা ভয় পেয়ে গেল। তারা কলম্বাস এবং তার সঙ্গিদেরকে মহাশক্তিধর কোনকিছু মনে করে। ভাবে, এরা দেবতা জাতীয় কিছু হবে। কলম্বাস ও তাদের সঙ্গিরা আধিবাসীদের সরলতাকে দুর্বলতা হিসেবে নেয়।
কলম্বাস স্পেনের রানীকে চিঠি লিখে, “এখানে যারা বাস করে তারা সবাই খুব বোকা। নারী-পুরুষ সবাই উলঙ্গ চলাফেরা করে। তাদের কোন লোহা, ইস্পাত বা অন্যকোন অস্ত্র সস্ত্র নেই। তারা এসবের ব্যবহার জানেনা। তাদের গায়ে প্রচন্ড শক্তি, তবে তারা অত্যন্ত ভীরু। তাদেরকে ইউরোপে নিয়ে গেলে দাস হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। ক্ষেত-খামার ও কারখানার শ্রমিক হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। যদিও কোন মসলা পাওয়া যায়নি তবে এখানে প্রচুর মুল্যবান পাথর ও খনিজ সম্পদ রয়েছে যা এশিয়া ও ইউরোপে বিক্রি করলে প্রচুর টাকা পাওয়া যাবে (উল্লেখ্য কলম্বাস মসলার ব্যবসা্ করার উদ্দেশ্যে ভারতীয় উপমহাদেশে আসতে ছেয়েছিলেন। কিন্তু পথ ভুল করে আমেরিকায় চলে যান।)। এরা এতই সরল আর উদার যে তা নিজ চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।।”
কিন্তু আধিবাসীদের এই সরলতা আর উদারতা তাদের জন্য কাল হল। যাদেরকে তারা সরল আর উদার মনে অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেছিল, সেই অতিথিরা তরবারির ভয় দেখিয়ে তাদের মুলবান পাথর, হীরা, সোনা সব কিছু দখল করে নেয়। জাহাজে অনেকদিনের নারী সঙ্গসুখ বঞ্চিত ইউরোপীয় নাবিকগণ জোর করে আধিবাসি নারীদের ধর্ষণ করে। বিনিময়ে তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয় সিফিলিস, গনোরিয়া এইডসের মত প্রাণঘাতী যৌনরোগ। যা এর আগে সেখানে ছিলনা। ইউরোপিয়দের মাধ্যমেই প্রথম আমেরিকাতে ম্যালেরিয়া, টাইপয়েড ইত্যাদি রোগ ছড়ায়। যেহেতেু আধিবাসিরা সম্পূর্ন প্রাকৃতিক পরিবেশে জীবন যাপন করত, তাই তাদের মধ্যে আগে এসব রোগ ছিল না।
কলম্বাস ও তার সঙ্গীরা ইউরোপে যাওয়ার সময় স্পেনের রানীর নির্দেশে পাঁচশত আধিবাসীকে জোরপুর্বক জাহাজে উঠিয়ে নেয়। কিন্তু জাহাজে তাদের কোন খাবার দেয়া হত না। ক্ষুদার যন্ত্রণায়, সেই সাথে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেয়ার সময় প্রচন্ড ঠান্ডার কারনে তিনশত আধিবাসী জাহাজে মৃত্যুবরণ করে। বাকি দুইশকে ইউরোপে নিয়ে দাস হিসেবে বিক্রি করে দেয়া হয়। আর তখন থেকেই ইউরোপে দাস ব্যবসার নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হয়। এর আগে শুধু আফ্রিকার লোকদেরকে ধরে নিয়ে দাস হিসেবে বিক্রি করা হত। এরপর থেকে আমেরিকা থেকেও নেয়া শুরু হয়। যে দাস প্রথা ও দাস ব্যবসা বিংশ শতাব্দির কিছুকাল পর্যন্ত ইউরোপ ও আমেরিকাতে অব্যহত ছিল।
ইউরোপিয়রা শুধু আধিবাসীদেরকে দাস হিসেবে ব্যবহার করে বা তাদের মধ্যে বিভিন্ন মহামারি রোগ ছড়িয়ে দিয়ে ক্ষান্ত থাকেনি। জোর করে তাদেরকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করে। যারা ধর্মান্তরিত হতে চায়নি তাদের উপর চলতো খ্রিস্টান পাদ্রী ও ধর্মযাজকদের কঠোর নির্যাতন। তারা আধিবাসীদের ভূমি, সম্পদ সব কিছু দখল করে নেয়। আধিবাসীদের মাতৃভাষা পর্যন্ত কেড়ে নেয়া হয়, তার বদলে সেখানে চালু করা হয় স্পেনীশ ও পর্তুগীজ ভাষা। ইংরেজ, ফরাসি, স্পেনীস, পর্তুগীজ প্রভৃতি ইউরোপিয় জাতির মধ্যে শুরু হয় আমেরিকা দখলের প্রতিযোগিতা।
আজকে যে দুই আমেরিকার বিভিন্ন দেশে সাদা চামড়ার মানুষ দেখা যায়, তারা সবাই ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনকারিদের বংশধর। ইউরোপীয়রা হাজার হাজার আধিবাসীকে হত্যা করে, তাদের ভুমি, সম্পদ, দেশ সবকিছু দখল করে নেয়। শুধু তাই নয় তাদেরকে দিয়ে দাস ব্যবসা আর দাস হিসেবে বিভিন্ন কলকারখানায়, খামারে কঠিন আর পরিশ্রমের কাজ করতে বাধ্য করে। যেহেতু তারা দাস, তাই বিনীময়ে তাদেরকে কিছুই দেয়া হত না। সেই সাথে সাদা আর কালো চামড়ার দোহাই দিয়ে শুরু হয় বর্ণপ্রথা আর বর্ণ বৈষম্য। কালোদের ছিলনা কোন অধিকার, শেতাঙ্গদের ব্যবহৃত কোন হোটেল, গাড়ী, সিনেমা হল কিছুতেই কালোদের প্রবেশাধিকার ছিলনা। যা থেকে বিশ্ববিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী পর্যন্ত রেহাই পায়নি। তবে সাদা চামড়ার মানুষগুলো কালোদের এত ঘৃনার চোখে দেখার পরও কৃঞ্চাঙ্গ নারীর দিকে লোলুপ দৃষ্টিতে তাকাতে একটুও লজ্জাবোধ করত না। যখন তখন কৃঞ্চাঙ্গ নারীদের ধরে নিয়ে ধর্ষণ করত। সাদা চামড়ার মানুষ যা ইচ্ছা তা করতে পারে, প্রয়োজনে কৃঞ্চাঙ্গ নারী ধর্ষণ করার অধিকারও তারা রাখে। তাই তাদের কোন বিচার হতনা।
আর আজ সেই বর্বর অত্যাচারি, নীপিড়ক মানুষগুলো বিশ্বব্যাপি গণতন্ত্র আর মানবাধিকারের সবক দেয় সভ্যতার দাবি করে! আবার প্রয়োজনে ইরাক আর আফগানিস্তানে অন্যায়ভাবে হামলা করে। ইরানকে হুমকি দেয় আর ইসরাইলকে দেয় আসকারা!
সত্যি বিশ্বসভ্যতা বড়ই উলঙ্গ, নির্লজ্জ আর বেহায়া!!!!!!
©somewhere in net ltd.