![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২০০৩ সালের দিকের কথা, কোন এক জায়গায় খেলার মাঠে একটি ছেলের সাথে আমার পরিচয় হল। ছেলেটির নাম সালেহ জঙ্গি। এর আগে পিছে আর আর কিছু আছে কিনা তা জানা হয়নি। সবাই তাকে জঙ্গি জঙ্গি বলে ডাকছে, তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমার নাম আসলে কি? তখন সে জানালো মুহাম্মদ সালেহ জঙ্গী। তবে নামটি শুনে খুব বেশি অবাক আমি হইনি। কারন ছোট বেলায় এমন একটি নাম আমার আম্মার মুখে অনেকবার শুনেছি। কিন্তু সেটা কার নাম ছিলো তার বিস্তারিত আম্মা বলেছিলেন কিনা বা বললেও এখন আর মনে নেই।
বর্তমানে জঙ্গী শব্দটা আমাদের কাছে বড়ই আতঙ্ক। সে আতঙ্কের কারন অবশ্য ব্যাখ্যা করার দরকার নেই। কিন্তু এই জঙ্গী শব্দটা যতবার আমার কানে আসে বা কোন লিখার মধ্যে পাই ততবার দুটি জিনিস আমার মনে আসে।
১. ঐ জঙ্গী নামের ছেলেটির কথা,
২. ছোট বেলায় আম্মার মুখে শোনা নামটির কথা
তখন আমার মনে হতে থাকে, এই জঙ্গী শব্দটার সাথে বিখ্যাত কারও নাম জড়িয়ে আছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও এতদিন তা পাইনি। তবে আজ পেলাম, আর এই জঙ্গী নামটা হচ্ছে “আবু সালেহ মুছা জঙ্গী” যিনি বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) এর পিতা ছিলেন। অর্থ্যাৎ বড়পীরের পিতার নামই ছোটবেলায় আমার মায়ের মুখে শুনেছিলাম। তার মানে ঐ ছেলেটা যার নামও মুহাম্মদ সালেহ জঙ্গী তার বাবা-মা বা পরিবারের মরুব্বিদের কেউ বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) এর পিতার নামেই ছেলেটার নাম রেখেছিলেন। কিন্তু তারাতো তখনও জানতেন না যে এই জঙ্গী শব্দটাই একদিন নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার হবে!
বাংলা অভিধানে জঙ্গী শব্দের অর্থ যোদ্ধা, আর ইংরেজিতে militant। আর যুদ্ধ বিমানের আরেকটি নাম জঙ্গি বিমান।
অক্সফোর্ড ডিকশনারিতে militant এর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে,
Favouring confrontational or violent methods in support of a political or social cause.
‘the army are in conflict with militant groups’
{উইকিপিডিয়াতে বিশেষ্য এবং বিশেষণ হিসেবে দুইভাবে জঙ্গি শব্দের সংজ্ঞায়িত করা হয়েছেঃ
বিশেষণ হিসেবেঃ
জঙ্গি সংস্কারকের মত সংজ্ঞার ন্যায় "বিশেষত কোন কারণের সমর্থনে পুরোদমে সক্রিয় ও আগ্রাসী ব্যক্তিবর্গকে বোঝায়। দ্য আমেরিকান হেরিটেজ ডিকশনারি অফ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজে জঙ্গিকে "বিশেষ কোন কারণের সমর্থনে যুদ্ধ-মনোভাবী চরিত্রের অধিকারী, আগ্রাসী" হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
বিশেষ্য হিসেবেঃ
জঙ্গি হল একজন ব্যক্তি যে একটি উদ্দেশ্য সাধনের লক্ষ্যে জঙ্গী পদ্ধতি অবলম্বন করে। জঙ্গী শব্দটি প্রায়শই কিছু ধর্মীয় চক্রের মাঝে খ্রিস্টানদের চলমান যুদ্ধ (গির্জার সদস্যদের ভাষ্য অনুযায়ী) অথবা পাপের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত খ্রিষ্টান গির্জাকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। নির্দিষ্টভাবে, রোমান ক্যাথলিক গির্জা চার্চ জঙ্গি ও চার্চ বিজয়ীদের মধ্যে পার্থক্য করে থাকে।সেভেন্থ ডে এডভান্টিস্ট চার্চ-এর প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে একজন এলেন জি. হোয়াইট বলেন, "বর্তমানে গির্জাই হল জঙ্গিবাদী। বর্তমানে আমরা অন্ধকারাচ্ছন্ন একটি বিশ্বের সম্মুখীন, যা বলতে গেলে পুরোটাই পৌত্তলিকতার/ব্যক্তি পূজার কাছে সমর্পিত।"
জঙ্গিবাদ রাজনৈতিক বর্ণালীর একটি অংশ, যার মধ্যে বর্ণবাদী, বৈষম্যবাদী, ধর্মীয় আধিপত্যবাদী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, গর্ভপাত বিরোধী ও পক্ষপাতী ও পরিবেশবাদীগণও অন্তর্ভূক্ত। উদাহরণস্বরূপ বামপন্থী, ডানপন্থী ও মানবাধিকার দলসমূহের জঙ্গীগণ যার মধ্যে অছে জঙ্গী সংস্কারকগণ, জঙ্গী নারীবাদী, জঙ্গী প্রাণী অধিকারকর্মী, জঙ্গী নৈরাজ্যবাদীর কথা বলা যেতে পারে। বিভিন্নরকম গোপন সংগঠন যেগুলো সশস্ত্র হিসেবে পরিচিত তারাও জঙ্গি সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।}
বর্তমানে বিভিন্ন দেশের শাসকগণ যাকে তাকে জঙ্গী বলার কারন হল জঙ্গী শব্দটা যুদ্ধ ও সশস্ত্র সংগ্রামের সাথে জড়িত। যার সাথে জড়িত চরমপন্থাও। চরমপন্থিরা কখনও কোন দেশের আইন, কানুন, বা বিধি বিধানকে মানেনা। এই না মানার কারনে তারা এই চরমপন্থি বিশেষণে ভূষিত হয়। আর যুদ্ধের ময়দানে কাউকে হত্যা করলে সেটা নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তোলেনা। এখন যুদ্ধ ছাড়া আপনি কাউকে বিনা প্রশ্নে কিভাবে মারবেন, বিচার বহিভূতভাবে? তখন একটাই পথ খোলা থাকে আর সেটা তার গায়ে জঙ্গী বা চরমপন্থির তকমা লাগিয়ে দেয়া।
যাইহোক কে জঙ্গী বা কে জঙ্গী নয় সে বিশ্লেষণে যাওয়ার মত মগজ আমার ছোট মাথায় নেই। তাই শুধু বলবো, কোন একটি শব্দ সবসময় খারাপ নয়। খারাপ সে শব্দটির অপব্যবহার। অন্যের উপর আধিপত্য বিস্তারের জন্য যেমন জঙ্গী হতে পারে, তেমনি কারও আধিপত্যমুক্ত হওয়ার জন্যও জঙ্গী হতে পারে। কোন দেশ দখল করার জন্য বা কোন জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য যেমন জঙ্গী হতে পারে। দেশের স্বাধীনতার জন্য, নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যও জঙ্গী হতে পারে। তাই কে জঙ্গী সেটা বড় কথা নয়, কেন জঙ্গী সেটাই বড় বিষয়।
আর জঙ্গীবাদিরা সবসময় দাঁড়ি টুপি পড়েনা, তারা ধুতি, গেরুয়া পোশাক, টাই স্যুট অনেক কিছু পড়তে পারে। চাইলে বিবস্ত্রও থাকতে পারে
©somewhere in net ltd.