![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
#ঘটনা-১: আমার ছোট আপাকে আমরা বুবু ডাকি। এটা নিয়ে আমার ভাগিনা-ভাগনিদের খুব রাগ। বুবু ডাকটা নাকি সেকেলে তাই তাদের কাছে ভালো লাগেনা! আমিও মজা করে বলি, ডাকিতো আমরা তোরা তো ডাকিসনা তাহলে তোদের কেন খারাপ লাগে? কিন্তু তারা মানতে নারাজ। আমরা যেন ওদের মাকে বুবু না ডেকে আপা/আপু ডাকি! তবুও আমরা আমাদের ডাক পরিবর্তন করিনা। ছোটবেলা থেকে যা ডেকে অভ্যস্থ তা তো আর পরিবর্তন করা যায়না।
একদিন ছোট ভাগনিকে কাছে ডেকে বললাম, শোন হিন্দুরা বড় বোনকে দিদি ডাকে। এই দিদি ডাকটাতে কোন পরিবর্তন কিন্তু তারা আনেনি। শুধু তাই নয়, মাসি, পিসি, কাকি, কাকা/কাকু, মেসো, পেসো কোন ডাকেই তারা পরিবর্তন আনেনি। কারন তারা এসব পরিবর্তনকে দরকারি মনে করেনা, সেটা আসলেই অপ্রয়োজনীয়। কিন্তু যত সমস্যা মুসলমানের মাঝে। আব্বা, আম্মা, কাকা, জেঠা, জেনু, জেইয়া, চাচি আম্মা, জেঠি আম্মা, খালাম্মা এই সম্মোধনগুলোকে এখন সবাই সেকেলে ভাবে। অথচ এসব ভাবনা একদম অযৌক্তিক এবং ফালতু। সে হয়ত বুঝেছে তাই আর কিছু বলেনি কখনও।
#ঘটনা-২: আমার কিছু নাতি-নাতনি আছে। একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে আমার ভাগিনাকে এক নাতনি ছোট কাকা বলে ডাকলো। কারন বাসায়ও ছোট কাকা ডাকা হয়। কিন্তু আমার ভাগিনা সে ডাকে বিব্রতবোধ করলো। তাঁর কাছে কাকা ডাকটা সেকেলে এবং গেঁয়ো। তাই বাসায় গিয়ে পিচ্চিদের খুব বকাবকি করলো, কেন তারা কমিউনিটি সেন্টারে সবার সামনে আংকেল না ডেকে কাকা ডেকেছে? এরপর থেকে ঘরের মধ্যে কাকা ডাকলেও বাহিরের কারো সামনে আংকেল। কিছুদিন পর খেয়াল করলাম তারা ঘরে বাইরে সব জায়গায় আংকেল ডাকছে আর কাকা ডাকটা হারিয়ে গেছে!
#ঘটনা-৩: বেশকিছু দিন আগে আমার কাছে এক ছোট ভাইয়ের একটা মেসেজ আসলো,
- অমুককে চিনেন?
- হ্যাঁ চিনি, আমার বোন হয়। আপনি কিভাবে চিনেন?
- উনি আমার মামানি!
- মামানি মানে বুঝলাম না!
- মানে উনি আমার মামার স্ত্রী।
- মামার স্ত্রী মানে তো মামী। কিন্তু মামানি সেটা আবার কি? এই শব্দ আমি আজ প্রথম শুনলাম……………।
কিছুদিন আগে এক বড় আপা বললেন, বুয়াকে বুয়া ডাকলে তারা কষ্ট পায়। তখন আমি বললাম, বুয়া ডাকার দরকার কি? খালা ডাকলেই তো হয়! উনি বললেন খালা ডাকলে আবার খালা (মায়ের বোন) মাইন্ড করে! তেমনিভাবে বাদামওয়ালা, রিক্সাওয়ালা এদেরকে মামা/ চাচা বললে নাকি নিজের মামা/ চাচা মাইন্ড করে!
আচ্ছা, বাঙালীর সবকিছূতে এত হীনমন্যতা, ন্যাকামী আর মাইন্ড করা কেন?
আংকেল-আন্টি শব্দগুলো বাহির থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসা শব্দ। তারচেয়ে বড় কথা এগুলো দিয়ে ঠিকমত বোঝাও যায়না ঐ ব্যক্তি আসলে তার কি হন? কারন পাড়ার পরিচিত কোন ভদ্রলোককেও ডাকা হচ্ছে আংকেল, অপরিচিত লোককেও ডাকা হচ্ছে আংকেল; আবার নিজের মামা, চাচা, খালু, ফুপা এদেরকেও ডাকছে আংকেল। এত আংকেলের ভীড়ে কোনটা যে কেমন আংকেল তা চেনা মুশকিল! আন্টির বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য।
আবার কাকা/ চাচা/ জেঠা, খালু, ফুপা, কাকি/ চাচি/ জেঠি, খালা/ খালাম্মা/ ফুফু এসব সম্মোধনের মাঝে যে হৃদ্যতা বা আন্তরিকতা ফুটে উঠে তা আংকেল - আন্টির মাঝে ফুটে উঠেনা। একটা সময় অপরিচিত, কম পরিচিত বা পরিচিত কিন্তু অনাত্মিয় ব্যক্তিকেও খালা - খালু, চাচা - চাচি ডাকা হত। কালক্রমে সেটা আংকেল - আন্টির দখলে চলে গেছে।
ঘরোয়া আবহে আমরা নিকট আত্মীয়দেরকে হয়ত চাচ্চু, মামানী, লুলু, বুলু, কুলু, টুলু ………………. অনেক কিছু ইচ্ছামত ডাকতে পারি। কিন্তু কথা হচ্ছে আপনি যদি তাদেরকে চাচ্চু, মামানী, লুলু, বুলু, কুলু, টুলু ……………… ইত্যাদি ডাকতে পারেন। তাহলে আরেকজন কেন আব্বা, আম্মা, আপা, বুবু, মিঁয়া ভাই, বদ্দা, ভাইজান, ভাইছা, কাকা, চাচা, মামা, মামী, খালাম্মা, জেনু, জেঠা, জেইয়া, জেঠিমা, জেইয়ামা, জেঠি আম্মা, চাচি আম্মা, খালু সাব, ফুপা সাব; এসব ডাকতে পারবেনা?
ঘরোয়া আবহে বা পারিবারিক পরিবেশে এবং সম্মোধন করার সময় আমরা নিকট আত্মীয়দেরকে যা ডেকে অভ্যস্থ তা ডাকতে পারি। কিন্তু বাহিরের কারও সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় উনি আমার লুলু বা বুলু না বলে চাচা/মামা/খালু/ফুপা/জেঠা; সম্পর্কে যেটা হয় সেটা বলেই পরিচয় করিয়ে দেয়া উত্তম। সার্বজনীন শব্দ ব্যবহার করলে সবারই বুঝতে সুবিধা হয়। আর আপনার বলা কোন শব্দ বা ভাষা যদি কেউ না বুঝে তবে তা বলা আর প্রলাপ বকার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। দিন দিন এসব ন্যাকামীর ভীড়ে মানুষের মাঝ থেকে মৌলিকত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। সবকিছুতে কেমন যেন কৃত্রিমতা চেপে বসছে আর মানুষ দিনকে দিন ভাঁড়ে পরিণত হচ্ছে।
যাইহোক ন্যাকামী আমার ভালো লাগেনা তাই এসব বললাম। কারও ন্যাকামী ভালো লাগলে তিনি আমার কথার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন।
©somewhere in net ltd.