![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একমাত্র মনুষ্যত্বই আমাকে মানুষ হিসেবে গর্বিত করে এবং বিবেক আমাকে পরিচালিত করে সঠিক সিদ্ধান্তে। যদিও আমি নির্ভুল আর নিষ্পাপ নই তবুও অনিয়ম দেখলেই মানুষ হওয়ার যুক্তি স্বরূপ চিৎকার করে উঠি।
সে অনেক দিন আগের কথা, আমার হিমেল নামের বন্ধুটির কণ্ঠস্বর তবুও অতীত দৃশ্যপট থেকে প্রায়ই তুলে এনে আবৃত্তি করি, যেহেতু তার অস্তিত্ব এখন আর বর্তমান নেই। এইচ, এস সি’র রেজাল্ট পেয়ে খুব স্বাভাবিক হাসি মাখা মুখ নিয়ে আমাকে এক সন্ধ্যায় জানিয়েছিলো, ”মাকে এখনো ফোন দেইনি বন্ধু, ভাবছি সরাসরি গ্রামে গিয়েই মাকে চমকে দিবো আর সুসংবাদটি জানাবো” । অতঃপর পরবর্তী সন্ধ্যায় জানতে পেলাম সুসংবাদটি আর পৌছাতে পারেনি আমার বন্ধু, সড়ক দুর্ঘটনা মায়ের মুখ দর্শনের আকুল ইচ্ছাটিকেও পরিণত করেছিলো মৃত্যুর শেষ নিঃশ্বাসে । ছেলে মৃত্যুর দুঃসংবাদ হয়তো পৌঁছে যাবে মায়ের কাছে কারো হাত ধরে ।
গবেষণায় দেখা গেছে বিগত দুর্নীতির মতো সড়ক দুর্ঘটনাতেও বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন সারা বিশ্বে । পুলিশের হিসাবে প্রতি বছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্র বলছে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী এই সংখ্যাটি ১২ হাজার থেকে ২০ হাজারও হতে পারে।বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ২০২০ সালের মধ্যেই দেশে দুর্ঘটনার সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। সংস্থার সড়ক নিরাপত্তা-বিষয়ক বৈশ্বিক প্রতিবেদন ২০১৩-এ বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ জিডিপির ১.৬ শতাংশ।
সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য ভাণ্ডার এবং ক্ষতির বিবেচনায় এ অতি ক্ষুদ্র বনর্ার২ । স্বজন হারানোর পরবর্তী ক্ষতিও দুর্দশার হিসেব হয়ত বিশ্বের কোন গবেষণা সংস্থাই দিতে পারবেনা ।এক এক ফোঁটা অশ্রু মানব উপলব্ধির কতটা খনিজ তা মূল্যায়ন করা অসম্ভব । যার দায়ভার কখনো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি অথবা প্রশাসন নিতে এগিয়ে আসেনি, হয়তো সে স্পর্ধাও দেখাবেনা কখনো ।
দুর্ঘটনার কারণগুলো বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনা গবেষণা সেন্টার-এআরআই দেখেছে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলা; অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গাড়ি চালানো; নির্দিষ্ট গতি-সীমা না মানা; মাত্রাতিরিক্ত যাত্রী বা পণ্য পরিবহন; গাড়ি চালানোর আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকা; বিপদজনকভাবে ওভারটেক করা; প্রতিযোগিতা করা, সামনের গাড়ির সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব বজায় না রাখা; ত্রুটিপূর্ণভাবে গাড়ি চালানো; চালকের বদলে সহকারী দিয়ে গাড়ি চালানো; ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে অসচেতনভাবে গাড়ি চালানো; যথাসময়ে যথোপযুক্ত সঙ্কেত দিতে ব্যর্থতা; যথাযথ লেনে গাড়ি না চালানো; প্রয়োজনীয় বিশ্রাম না নিয়ে অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় একটানা গাড়ি চালানো; নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো; মানসিক অস্থিরতা বা অতিরিক্ত চাপ ও শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে গাড়ি চালানো; দৈহিক অযোগ্যতা নিয়ে গাড়ি চালানো, শিক্ষার স্বল্পতা, পেশাগত জ্ঞানের অপর্যাপ্ততা ইত্যাদিই দায়ী বেশিরভাগর দুর্ঘটনা পেছনে।
দুর্ঘটনার কারণগুলো আমরা সূক্ষ্ম ভাষা এবং বর্ণনায় না জানলেও দৈনন্দিন জ্ঞানে আমাদের অজানা নয় । তবুও দুর্ঘটনা হচ্ছে যেহেতু কারণ জানাটাই যথেষ্ট নয় প্রয়োজন নিজ নিজ অবস্থান থেকে সততা এবং সচেতনতা।
জীবিকা নির্বাহের দায় দেখিয়ে আমরা কেউ ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স নিচ্ছি কেউ দিচ্ছি, ট্রাফিক সার্জেন্টকে ঘুষ দিয়ে দুর্ঘটনার কারণ বাহি বিষয়গুলো সাধিত করছি । এমনি করে প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রশাসন থেকে পথচারী পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী । অথচ আমরা একে অপরের প্রতি আঙুল দেখিয়ে নিজ স্বজন হারানোর পথটিকে করে রাখছি সুরক্ষিত ।
অধ্যাপক হাসিব বলেন, পরিসংখ্যান দেখলে বুঝা যায় দেশে স্বাভাবিকের তুলনায় ঈদে সড়ক দুর্ঘটনার হার বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এর অন্যতম কারণ মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফার আশায় অতিরিক্ত ট্রিপ চালানো। কোনো কোনো সময় চালকরা ২৪ ঘণ্টা গাড়ি চালান। বেশিরভাগ দুর্ঘটনাই ঘটে ভোরে বা রাতে
নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, দেশের চালক-পথচারী কেউই ঠিকমতো আইন মানেন না। আবার এই অপরাধের কোনো শাস্তিও হয় না।
বুয়েট পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাসিব মোহাম্মদ হাসান বলেন, বেশিরভাগ দুর্ঘটনার পর এখন আর মামলা হয় না। কারণ, মামলা হলেও বিচার হয় না। তাই ভুক্তভোগীরা এই পথ মাড়াতে চান না।
পরিশেষে বলতে হয়, ঘর থেকে বেরুলেই আমরা প্রত্যেকেই যেন এক একটি হিমেল । তবে হিমেলের পরিণতি থেকে সুরক্ষা পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার এবং সেই সাথে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা আমাদের ব্যক্তিক সচেতনতার অন্যতম অংশ । এবং আমাদের একটাই কামনা “আমাদের ঘরে ফেরা হোক নিরাপদ ।”
©somewhere in net ltd.