নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্ণব হোসেন

একমাত্র মনুষ্যত্বই আমাকে মানুষ হিসেবে গর্বিত করে এবং বিবেক আমাকে পরিচালিত করে সঠিক সিদ্ধান্তে। যদিও আমি নির্ভুল আর নিষ্পাপ নই তবুও অনিয়ম দেখলেই মানুষ হওয়ার যুক্তি স্বরূপ চিৎকার করে উঠি।

শ্লোগান০০৭

একমাত্র মনুষ্যত্বই আমাকে মানুষ হিসেবে গর্বিত করে এবং বিবেক আমাকে পরিচালিত করে সঠিক সিদ্ধান্তে। যদিও আমি নির্ভুল আর নিষ্পাপ নই তবুও অনিয়ম দেখলেই মানুষ হওয়ার যুক্তি স্বরূপ চিৎকার করে উঠি।

শ্লোগান০০৭ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হালকা সবুজ, হালকা হলুদ

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৪

চুপি ‍চুপি শীত পড়ছে। শরতের ষষ্ঠ প্রহর, শহরটা কেমন যেন মূর্তিময় । অনিক তখনো বারান্দায়, পরিবারের কারো কারো ধারণা তাকে নাকি জিনে ধরেছে। বন্ধুরা মাঝে মাঝে খোঁচা মারে... ইসস নতুন হিমু, থুক্কু নতুন পাগল। অনিক রাগে না, চোখের নিচটা কিছুটা আঙুলে ঘষে ফেক করে একটু হাসি দেয় । বন্ধুরা ভাবে সত্যিই কি অনিককে জিনে ধরলো ?

গত শ্রাবণে হুজুগের বাঙালির মতো হুমায়ুন স্যারের নুহাশ পল্লি ভ্রমণে যায় অনিক । রিফাত আর নুরও সাথে ছিলো, অনিকের চেয়ে দুজনই বুদ্ধিমান আর ছাত্র ভালো। অনিক সেশন জটে পরে এখনো অনার্সই শেষ করতে পারেনি, একটু ভিতু টাইপের, কারো সাথে তর্কে গেলেই বুড়োদের মতো ধুকধুকানি বেড়ে যায়, হাত পা পৌষের শীতের মতো বরফ হয়ে যায় । তবে তিন বন্ধুর কেউই হুমায়ুন স্যারের নামটা ছাড়া তাঁর কোন সৃষ্টিতেই হাত বুলায় নি। নাটক আর সিনেমার দৃশ্য, বিশেষ করে গাছের ওপর থরে থরে সাজানো ২টি উনো ঘর ই মুল আকর্ষণ তাদের কাছে । টিকেটের উচ্চ মূল্য, কৌশলে কিছুটা কমিয়ে প্রবেশ করলো সেই নুহাশ পল্লিতে । হাতে সেকেন্ড হ্যাণ্ড ডিজিটাল ক্যামেরা গায়ে স্ট্রাইপের শার্ট কেমন যেন হাবাগোবা লাগছিলো অনিককে । রিফাতের গায়ে এশ কালারের পাঞ্জাবি আর নূর পরেছিলো নেভী ব্লু শার্ট ।
ঢুকতেই সুইমিং পুলের মতো কিছু একটা তবে জল নেই সেখানে, ডান পাশে একজন নারী দাঁড়িয়ে একটি শিশু নিয়ে; অফ হোয়াইট রঙের মূর্তি । গিয়েই তড়িঘড়ি করে ছবি তোলা শুরু । আর সব ছবিতেই রিফাতের উপস্থিতি চাই । ক্যামেরা সে মোটেই হাতে নিবেনা । আর নূর ব্যাটা তো ছবি তুলতে একেবারেই উদাসীন, কেমন যেন অদ্ভুত একটা ভাব নিয়ে থাকে। কলিজার বন্ধু আবার কলিজার খোসাও নয় এমন ।
এখানে সেখানে ছবি তুলতে তুলতে, সন্ধ্যা আসি আসি ভাব । সব দর্শনার্থীদের বেরুতে হবে। হুইসেল হচ্ছে । সবার জানা ছিলো তবে ভাবনার উড়োউড়িতে স্যারের মাজার টা দেখার প্রবল ইচ্ছাটি একেবারে শেষ বেলায় এলো যেনো । গেটের কাছে যেতেই চোখের সামনে মাজারের গেট বন্ধ হয়ে গেল । নিজেদের প্রতি বিরক্ত তবে শেষ চেষ্টা স্বরূপ অনুরোধ করলো প্রহরীকে । একটু সম্মতি পেয়েই রিফাত আর অনিক তড়িঘড়ি করে ঢুকে গেলে । অথচ নূর বাইরেই দাঁড়িয়ে; হয়তো ভাবছিলো, ”ইসস.. মন থেকে শ্রদ্ধ্যাটাইতো যথেষ্ট আর বাইরে থেকেওতো দোয়া করা যায় অথবা হয়তো নেতিবাচক কিছু একটা ভাবছিলো, কে জানে!”। তবে সত্যি অনিক আর রিফাত যেন আশ্চর্য কিছু খুঁজে পেলো। সাদা ফক ফকা টাইলসে ঘেরা চারিদিক, স্যারের ঘুমন্ত সমাধি । ঘুমের মধ্যেও কেমন যেন আয় আয় করে ডাকছে । সবুজ ঘাসের ডগায় চোখের আলো জমে শিশিরের মতো দেখাচ্ছিলো। ঘাসের গায়ে কিছু শুকনো পাতা শুয়ে আছে । সন্ধ্যার আঁধার কেমন যেন প্রতিফলিত হয়ে উড়ে বসছে বৃক্ষের শাখায় শাখায় । পায়ের নিচে পৃথিবীটা কেমন যেন মেঘলা মেঘলা অথবা কোন মেঘ হয়তো মাটির গহীনে গিয়ে ঘুমিয়ে আছে । এই উপলব্ধিগুলো কিছু মুহূর্ত কি করে যে চুরি করলো তারা কেউ বুঝতেই পেলো না । নূর এর ডাকাডাকিতে হুশ ফিরে এলো । অবশেষে মোনাজাত ধরল। ঠোঁট পেঁচিয়ে কোন দোয়াই যেন আসছিলনা.. কী অদ্ভুত । তবুও কেমন যেন একটু বির বির করে শেষ করলো । কে যানে এ অভিনয় একে অন্যকে দেখাতে নাকি অলীক অনুভূতিতে তারা সত্যিই বাক রুদ্ধ । জীবনের এই প্রথম হয়তো এমন অনুভূতি উভয়ের । প্রহরীর ইশারায় পিছু না ঘুরে এক পা দু পা করে পিছুতে পিছুতে গেটের অনুকূলে যাচ্ছিলো এমন সময় অনিক কি যেন মনে করে ঘাসের উপর থেকে একটি আধো সতেজ পাতা হাতে তুলেই পকেটে গুজে নিল। কেমন যেন হালকা হলুদ আবার হালকা সবুজ । রিফাত হেসে দিলো । তবুও কেউ কোন কথা না বাড়িয়ে সেদিনের মতো যাত্রা বিরতি দিয়ে যে যার বাড়ি ।

সেদিনের পর থেকেই অনিক আয়নায় নিজেকে কেমন যেন সেই পাতাটির মতো দেখতে পায় । হালকা হলুদ আবার হালকা সবুজ, হয়তো কখনো নিয়ন বাতি কখনো এই শহরের বনসাই বৃক্ষগুলোর প্রতিফলন ।অথবা হয়তো তার মনেরই রঙ বদলে গেছে । হলুদ মগজে একটি প্রশ্নই বাজে তার, “এই দুটি রঙ মিলে, কোন রঙের সৃষ্টি হয় ?”
হয়তো কোন উত্তর আছে..তবুও সে উত্তর পেতে কাউকে প্রশ্ন করেনা কখনো ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.