নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস এম শাহনূর

কবি,লেখক ও গবেষক।

এস এম শাহনূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাদকাতুল ফিতর কি,কেন দেব,কাকে দেব এবং পরিমান?

১৩ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:২৬

সাদকাতুল ফিতর ভাবনা-১
************************
মহা মহিয়ান সর্বশক্তিমান অাল্লাহকে এক ও অদ্বিতীয় জেনে পরম মায়া মমতা জড়িত সেবার নামই সাদাকা। ‘সাদাকা’ শব্দটির সাধারণ বাংলা অর্থ হল ‘দান’। জুরজানী বলেন: পারিভাষিক অর্থে সাদাকা বলা হয়, এমন দানকে যার মাধ্যমে আল্লাহর নিকট সওয়াব আশা করা হয়। [আত্ তা’রীফাত/১৩৭]
ফিতরাকে শরীয়তে ‘ যাকাতুল ফিতর এবং সাদাকাতুল ফিতর ’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফিতরের যাকাত বা ফিতরের সাদকা । ফিতর বা ফাতূর বলা হয় সেই আহারকে যা দ্বারা রোযাদার রোযা ভঙ্গ করে। [আল মুজাম আল ওয়াসীত/৬৯৪]
আর যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঐ জরুরী দানকে যা, রোযাদারেরা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অভাবীদের দিয়ে থাকে। [প্রাগুক্ত]
যেহেতু দীর্ঘ দিন রোযা অর্থাৎ পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতার বা আহার শুরু করা হয় সে কারণে এটাকে ফিতরের তথা আহারের যাকাত বলা হয়। [ ফাতহুল বারী ৩/৪৬৩]

সাদকাতুল ফিতর ভাবনা-২
************************
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: ‘সাদকাতুল ফিতর হচ্ছে রোযাদারের জন্য পবিত্রতা এবং মিসকিনদের জন্য খাদ্য। আর যে তা ঈদের নামাজ পড়ার পূর্বে আদায় করে তা কবুল করা হয়। আর যে তা ঈদের নামাজ আদায় করার পর আদায় করে, তা সাদকাতুল ফিতর না হয়ে সাধারণ সদকাহ হিসাবে আদায় হয়ে যাবে।’ (সুনানে আবু দাউদ ১/২২৭ ও ইবনে মাজাহ্)
হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘সদকাতুল ফিতর দ্বারা রোজা পালনের সকল দোষ-ত্রুটি দূরীভূত হয়, গরিবের পানাহারের ব্যবস্থা হয়।’ (আবু দাউদ) অর্থহীন, অশালীন কথা ও কাজে রোযার যে ক্ষতি হয় তা পূরণের জন্য এবং নিঃস্ব লোকের আহার যোগানোর জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকাতুল ফিতরকে অপরিহার্য করেছেন। সুতরাং খুশিমনেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে।
কেননা তাতে রয়েছে ফকিরদের জন্য দয়া এবং তাদেরকে ঈদের দিনে অন্যের নিকট চাওয়া হতে বিরত রাখা। ঈদের দিনে তারা যেন ধনীদের মত আনন্দ উপভোগ করতে পারে এবং ঈদ যেন সবার জন্য সমান হয় সেটাই সাদকাতুল ফিতরের মুখ্য উদ্দেশ্য। আর এর মধ্যে আরও রয়েছে সাম্য ও সহমর্মিতা, সৃষ্টিজীবের জন্য ভালবাসা, ভ্রাতৃত্ব। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা আমাদের ওপর অপরিহার্য করেছেন তা মানা আমাদের জন্য জরুরি। এ সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
• ﴿ ﻣَّﻦ ﻳُﻄِﻊِ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻓَﻘَﺪۡ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﭐﻟﻠَّﻪَۖ ﻭَﻣَﻦ ﺗَﻮَﻟَّﻰٰ ﻓَﻤَﺎٓ ﺃَﺭۡﺳَﻠۡﻨَٰﻚَ ﻋَﻠَﻴۡﻬِﻢۡ ﺣَﻔِﻴﻆ ﺍ ٨٠﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ٨٠ ]
যে রাসূলকে অনুসরণ করল, সে আল্লাহ তাআলাকে অনুসরণ করল। আর যে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিল, তবে আপনাকে তো আমরা তাদের উপর রক্ষক (প্রহরী) করে প্রেরণ করিনি। (সূরা নিসা, আয়াত ৮০)
আর আল্লাহ বলেন-
• ﴿ ﻭَﻣَﻦ ﻳُﺸَﺎﻗِﻖِ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝَ ﻣِﻦۢ ﺑَﻌۡﺪِ ﻣَﺎ ﺗَﺒَﻴَّﻦَ ﻟَﻪُ ﭐﻟۡﻬُﺪَﻯٰ ﻭَﻳَﺘَّﺒِﻊۡ ﻏَﻴۡﺮَ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﭐﻟۡﻤُﺆۡﻣِﻨِﻴﻦَ ﻧُﻮَﻟِّﻪِۦ ﻣَﺎ ﺗَﻮَﻟَّﻰٰ ﻭَﻧُﺼۡﻠِﻪِۦ ﺟَﻬَﻨَّﻢَۖ ﻭَﺳَﺎٓﺀَﺕۡ ﻣَﺼِﻴﺮًﺍ ١١٥﴾ ‏[ ﺍﻟﻨﺴﺎﺀ : ١١٥ ]
আর যারা তাদের নিকট হিদায়াত পৌঁছার পরও রাসূলের বিরোধিতা করে এবং মুমিনদের ব্যতীত অন্যদের পথের অনুসরণ করে, তারা যেভাবে ফিরে যায়, আমরাও তাদেরকে সেদিকে ফিরিয়ে রাখব এবং জাহান্নামে দগ্ধ করাব। আর তা কতই না খারাপ প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা আন নিসা, আয়াত ১১৫)
আর আল্লাহ তাআলা বলেন, যাকাতুল ফিতর
• ﴿ ﻭَﻣَﺎٓ ﺀَﺍﺗَﻯٰﻜُﻢُ ﭐﻟﺮَّﺳُﻮﻝُ ﻓَﺨُﺬُﻭﻩُ ﻭَﻣَﺎ ﻧَﻬَﻯٰﻜُﻢۡ ﻋَﻨۡﻪُ ﻓَﭑﻧﺘَﻬُﻮﺍْۚ ﻭَﭐﺗَّﻘُﻮﺍْ ﭐﻟﻠَّﻪَۖ ﺇِﻥَّ ﭐﻟﻠَّﻪَ ﺷَﺪِﻳﺪُ ﭐﻟۡﻌِﻘَﺎﺏِ ٧﴾ ‏[ ﺍﻟﺤﺸﺮ : ٧ ]
তোমাদের রাসূল যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর এবং যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন তা থেকে বিরত থাক। (সূরা আল হাশর, আয়াত ৭)

সাদকাতুল ফিতর বা ফিতরা কেন দেবেন?
প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তির ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। ‘সামর্থ্যবান’ শব্দের ব্যাখ্যা হলো, প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত সম্পদের মালিক হওয়া। অনেকের মনে প্রশ্ন আসবে, অতিরিক্ত বলতে কতটুকু?

সোজা উত্তর হচ্ছে যাকাতের নেসাব পরিমাণ সম্পদের (৫২.৫ ভরি রূপা অথবা ৭.৫ ভরি সোনা অথবা সমমূল্যের সম্পদ) মালিক হওয়া।
সুতরাং বলা যায়, যেসব নারী-পুরুষ ঈদুল ফিতরের চাঁদ উঠার পর থেকে সেদিনের সূর্য অস্ত যাওয়া পযর্ন্ত সময়ে একদিনের আবশ্যকীয় প্রয়োজনীয় সামগ্রী ব্যতিত সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা তার সমমূল্যের মালিক হয় তাদের উপর সাদকায়ে ফিতর আদায় করা ওয়াজিব।
• ﻓﻲ ﺗﻨﻮﻳﺮ ﺍﻟﺒﺼﺎﺋﺮ ‏( ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ‏) ﺣﺮ ‏( ﻣﺴﻠﻢ ‏) ﻭﻟﻮ ﺻﻐﻴﺮﺍ ﻣﺠﻨﻮﻧﺎ ﺣﺘﻰ ﻟﻮ ﻟﻢ ﻳﺨﺮﺟﻬﺎ ﻭﻟﻴﻬﻤﺎ ﻭﺟﺐ ﺍﻷﺩﺍﺀ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺒﻠﻮﻍ ‏( ﺫﻱ ﻧﺼﺎﺏ ﻓﺎﺿﻞ ﻋﻦ ﺣﺎﺟﺘﻪ ﺍﻷﺻﻠﻴﺔ ‏) ﻛﺪﻳﻨﻪ ﻭﺣﻮﺍﺋﺞ ﻋﻴﺎﻟﻪ ‏( ﺍﻟﺪﺭ ﺍﻟﺨﺘﺎﺭ - ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺰﻛﺎﺓ ﺑﺎﺏ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ - 2/99 ‏)
• ﻭﻓﻰ ﺍﻷﺷﺒﺎﻩ ﻭﺍﻟﻨﻈﺎﺋﺮ - ﻭﺟﺒﺖ ﺑﻘﺪﺭﺓ ﻣﻤﻜﻨﺔ ﻓﻠﻮ ﺍﻓﺘﻘﺮ ﺑﻌﺪ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﻟﻢ ﺗﺴﻘﻂ - ‏( ﺍﻷﺷﺒﺎﻩ ﻭﺍﻟﻨﻈﺎﺋﺮ - 2/225 ﺍﻟﻔﻦ ﺍﻟﺜﺎﻧﻰ ‏)
আমরা জানি, কোন ব্যক্তির যদি উপরোক্ত সম্পত্তি সঞ্চিত থাকা অবস্থায় এক বৎসর অতিক্রান্ত হয় তবে তার উপর যাকাত ফরজ হয়। তবে ফেতরা দাতার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নিয়ম হলো, যাকাতের ন্যায় নিসাব পরিমাণ সম্পদের এক বৎসর অতিক্রান্ত হওয়া জরুরী নয়। কেউ যদি ঈদের আগের দিনও এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে যায়, তাকেও ফেতরা আদায় করতে হবে। সামর্থ্যবান না হলে অর্থাৎ উপরোল্লিখিত নিসাব পরিমান সম্পদ কারো না থাকলে তার উপর সাদকাতুল ফিতর ওয়াজীব হবে না। সহীহ বুখারী শরীফে এসেছে, রাসূল সা. বলেছেন,
ﺧﻴﺮ ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﻣﺎ ﻛﺎﻥ ﻋﻦ ﻇﻬﺮ ﻏﻨﻲ
“সর্বোত্তম সাদকা সেটাই, যেটা সামর্থ্যবান কেউ আদায় করে।”

সাদকাতুল ফিতর ভাবনা-৩
************************
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, নবীজি (সা.)-এর জমানায় আমরা সদকাতুল ফিতর দিতাম এক সা (প্রায় সাড়ে তিন কেজি) খাদ্যবস্তু, তিনি বলেন, তখন আমাদের খাদ্য ছিল: যব, কিশমিশ, পনির ও খেজুর। (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৪)। তিনি আরও বলেন: আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্যবস্তু বা (১) এক সা যব বা (২) এক সা খেজুর বা (৩) এক সা পনির অথবা (৪) এক সা কিশমিশ। (বুখারি, খণ্ড: ১, পৃষ্ঠা: ২০৫)।
সাহাবায়ে কিরামদের (রা.) অধিকাংশই খেজুর দ্বারা ফিতরা আদায় করতেন।

সাদকাতুল ফিতর ভাবনা-৪
************************
সাদকাতুল ফিতরের হকদার হচ্ছেন,
(১) হত দরিদ্র
(২) ঋণ আদায়ে অক্ষম ব্যক্তি ও
(৩) ঋণগ্রস্ত, তাকে প্রয়োজন পরিমাণ দেয়া যাবে।
"এক সাদকাতুল ফিতর "অনেক ফকীরকে দেয়া যাবে এবং অনেক সাদকাতুল ফিতর এক মিসকিনকেও দেয়া যাবে। যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, কিন্তু হকদারকে কি পরিমাণ দিতে হবে তা নির্ধারণ করেননি।

সাদকাতুল ফিতর ভাবনা-৫
************************
"এক সাদকাতুল ফিতর" এর পরিমাণ কি হবে তা জানতে প্রথমে তিনটা হাদীস উল্লেখ করছি।
১.
ﻓﺮﺽ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ ، ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺷﻌﻴﺮ ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺗﻤﺮ ، ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺼﻐﻴﺮ ﻭﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ، ﻭﺍﻟﺤﺮ ﻭﺍﻟﻤﻤﻠﻮﻙ
ইবনে ওমর রা. বলেন, রাসূল স. সদকাতুল ফিতর আবশ্যক করেছেন। এর পরিমাণ হলো, এক সা যব বা এক সা খেজুর। ছোট-বড়, স্বাধীন-পরাধীন সবার ওপরই এটা আবশ্যক। (বুখারী : ১৫১২)
২.
ﻛﻨﺎ ﻧﺨﺮﺝ ﺯﻛﺎﺓ ﺍﻟﻔﻄﺮ ، ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﻃﻌﺎﻡ ، ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺷﻌﻴﺮ ، ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺗﻤﺮ ، ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺃﻗﻂ ، ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺯﺑﻴﺐ
আমরা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম এক সা খাদ্য দ্রব্য দিয়ে। তা এক সা যব, এক সা খেজুর, এক সা পনীর বা এক সা কিসমিস দিয়ে হত। (বুখারী : ১৫০৬)
৩.
ﺧﻄﺐ ﺍﺑﻦ ﻋﺒﺎﺱ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻲ ﺁﺧﺮ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﻋﻠﻰ ﻣﻨﺒﺮ ﺍﻟﺒﺼﺮﺓ ﻓﻘﺎﻝ ﺃﺧﺮﺟﻮﺍ ﺻﺪﻗﺔ ﺻﻮﻣﻜﻢ ﻓﻜﺄﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻟﻢ ﻳﻌﻠﻤﻮﺍ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﻦ ﻫﺎﻫﻨﺎ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ ﻗﻮﻣﻮﺍ ﺇﻟﻰ ﺇﺧﻮﺍﻧﻜﻢ ﻓﻌﻠﻤﻮﻫﻢ ﻓﺈﻧﻬﻢ ﻻ ﻳﻌﻠﻤﻮﻥ ﻓﺮﺽ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺼﺪﻗﺔ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺗﻤﺮ ﺃﻭ ﺷﻌﻴﺮ ﺃﻭ ﻧﺼﻒ ﺻﺎﻉ ﻣﻦ ﻗﻤﺢ ﻋﻠﻰ ﻛﻞ ﺣﺮ ﺃﻭ ﻣﻤﻠﻮﻙ ﺫﻛﺮ ﺃﻭ ﺃﻧﺜﻰ ﺻﻐﻴﺮ ﺃﻭ ﻛﺒﻴﺮ
ইবনে আব্বাস রা. একবার রমজানের শেষ দিকে বসরায় খুতবা প্রদান করেন। সেখানে তিনি বলেন, তোমাদের রোজার সদকা আদায় করো। লোকেরা যেন ব্যাপারটা বুঝতে পারে নি। তখন ইবনে আব্বাস রা. বললেন, এখানে মদীনার কে আছে দাঁড়াও। তোমাদের ভাইদেরকে বলো, তারা তো জানে না। বলো যে, রাসূল সা. এই সদকা আবশ্যক করেছেন। এক সা খেজুর বা যব অথবা আধা সা গম প্রত্যেক স্বাধীন-দাস, পুরুষ-নারী, ছোট-বড় সবার ওপর ওয়াজীব। (আবু দাউদ : ১৬২২)
উপরোক্ত হাদীস তিনটির ভাষ্য অনুযায়ী নিম্নের শস্যগুলো দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করা যায়। নাম ও পরিমাণ নিম্নে দেয়া হলো :
যব :এক সা
খেজুর : এক সা
কিসমিস : এক সা
পনির : এক সা
গম : আধা সা (যা তিন নং হাদীস থেকে বোঝা যায়)
এই পাঁচ প্রকার শস্যের কথা হাদীসে এসেছে। এই পাঁচ প্রকার শস্যের যে কোন একটি সরাসরি দিলেও হবে, আবার এসবের মূল্য দিলেও হবে। তবে অন্য কোনো শস্য দিতে চাইলে এই পাঁচ প্রকারের কোনো এক প্রকারের মূল্য হিসাব করে দিতে হবে।

"সা" সম্পর্কে কিছু কথাঃ

সদকাতুল ফিতর আদায়ের পরিমাণ সম্পর্কে হাদিসে দু’টি মাপকাঠি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তা হচ্ছে, ★"সা’' ও
★নিসফে সা’।
খেজুর, পনির, জব ও কিশমিশ দ্বারা আদায় করলে এক ‘সা’= ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়), অর্থাৎ ৩ কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি। আর গম দ্বারা আদায় করলে ‘নিসফে সা’= ১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম বা ১.৬৩৫৩১৫ কেজি (প্রায়), অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি প্রযোজ্য হবে।( -আওযানে শরইয়্যাহ পৃ. ১৮)

বাংলা সের হিসেবে ১ সা’-এর পরিমাণ ৩ সের ৬ ছটাক এবং আধা সা’-এর পরিমাণ ১.৫ সের ৩ ছটাক।
-কিতাবুন নাওয়াযেল ৭/২৪৩
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) একজন ঘোষক প্রেরণ করলেন যেন মক্কার পথে পথে সে যেন এ ঘোষণা করে যে, জেনে রেখো! প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, গোলাম-স্বাধীন, ছোট-বড় সকলের ওপর সদকায়ে ফিতর অপরিহার্য। দুই মুদ (আধা সা) গম কিংবা এক সা অন্য খাদ্যবস্তু।
( -জামে তিরমিজি: ১/৮৫)

আধুনিক হিসাবে সা ও নিসফে সা
১ সা = ২৮০.৫০ তোলা
১ তোলা = ১১.৬৬ গ্রাম (প্রায়)
অতএব
১ সা = ৩২৭০.৬০ গ্রাম (প্রায়)
অর্থাৎ ৩ কেজি ২৭০ গ্রামের কিছু বেশি।
এবং আধা সা = ১৬৩৫.৩১৫ গ্রাম বা ১.৬৩৫৩১৫ কেজি (প্রায়)
অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি।
[সূত্র : আওযানে শরইয়্যাহ, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রাহ. পৃ. ১৮; মেট্রিক/আন্তর্জাতিক পদ্ধতি সংক্ষিপ্ত বিবরণ (জনসাধারণের জন্য) ১৯৮২; বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স ইনস্টিটিউশন পৃ. ৩]

সা –এর বর্তমান পরিমাপ :
১ সা = ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম
.:. ১/২ সা = এক কেজি ৬৫০ গ্রাম
কাজেই যব, খেজুর, কিসমিস বা পনীর হিসাব করে দিলে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর মূল্য দেয়া যাবে। আর গম হিসাবে দিলে এক কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর মূল্য দেয়া যাবে।
অতএব রাসূলের যুগের "সা’ জানতে ইচ্ছা করলে, তাকে তিন কেজি তিনশ গ্রাম গম ওজন করে এমন পাত্রে রাখতে হবে, যা মুখ পর্যন্ত ভরে যাবে। অতঃপর তা পরিমাপ করতে হবে।

ফিতরা সম্বন্ধে আলোচনা হলেই একটি শব্দ উঠে আসে আর তা হল, সা। সা হচ্ছে ওজন করার বা মাপার একটি পাত্র। যেমন গ্রামাঞ্চলে কাঠা দ্বারা ধান মাপা হয়। আধুনিক যুগে কিলো গ্রামের প্রচলন হওয়ায় সেই সা’র ওজন আরবেও বিলুপ্ত প্রায়। তবুও মক্কা মদীনায় ঈদের প্রাক্কালে ফিতরার চাল বিক্রয়কারীদের কাছে এই সা’ দেখা যায়। শুষ্ক খেজুর ভরে ওজন করলে আড়াই কিলো থেকে সামান্য বেশী হয়। আর তাতে চাল ভরে ওজন করলে প্রায় তিন কিলো হয়। দ্রব্য যত ভারী হবে সা’ তে তার ওজনও ভিন্ন হবে। যেমন এক কাঠাতে চাল দিলে তার ওজন একরকম হবে আর ধান বা সরিষা দিলে আর এক রকম হবে। মোট কথা সা’ র পরিমাণকে সূক্ষ্ম কিলোগ্রামের এক ওজনে নির্ধারণ করা অসম্ভব। কারণ এটি একটি পরিমাপ পাত্র, কোন ওজনের নাম নয়। এই সা’র ব্যাখ্যায় বিদ্বানগণের বিভিন্ন মতের পর একটি সুন্দর, সহজ ও নির্ভরযোগ্য ওজন প্রমাণিত হয় যা, সর্বকাল ও সর্বক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তা হল: একজন সাধারণ শারীরিক গঠনের মানুষ অর্থাৎ অধিক লম্বা নয় এবং বেঁটেও নয়, এই রকম মানুষ তার দুই হাত একত্রে করলে যে অঞ্জলি গঠিত হয়, ঐরকম পূর্ণ চার অঞ্জলি সমান হচ্ছে এক সা। [ফাতাওয়া মাসায়েল/ ১৭২-১৭৩, সউদী ফাতাওয়া ও গবেষণা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি, ফতোয়া নং ৫৭৩৩ খণ্ড ৯য় পৃ: ৩৬৫ ]
হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সঠিক বিধানের প্রতি আমল করার সুমতি দা_ও।অামীন

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.