নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এস এম শাহনূর

কবি,লেখক ও গবেষক।

এস এম শাহনূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৯টি উপজেলার নামকরণের ইতিকথা:

০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১০:৪০

নাম দিয়ে কী হয়? নামের মাঝে লুকিয়ে আছে আসল পরিচয়। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী খ্যাত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার রয়েছে ৯টি বৈচিত্র্যপূর্ণ উপজেলা। প্রিয় পাঠক আসুন আমরা আমাদের প্রাণের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল উপজেলা সমূহের অলিখিত ইতিহাস জানি।তবেই আমার এ শ্রম সার্থক হবে।

০১ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা
০২ কসবা উপজেলা
০৩ নাসিরনগর উপজেলা
০৪ সরাইল উপজেলা
০৫ আশুগঞ্জ উপজেলা
০৬ আখাউড়া উপজেলা
০৭ নবীনগর উপজেলা
০৮ বাঞ্ছারামপুর উপজেলা
০৯ বিজয়নগর উপজেলা





০১ ব্রাহ্মণবাড়িয়া (সদর) উপজেলার নামকরণের ইতিকথা:

প্রাচীন জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার প্রাচীনত্ব সম্পর্কে বহু প্রমাণ পাওয়া যায়।বাণিজ্যিক নৌপরিচালনার সুবিধার্থে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জরিপবিদ ও প্রকৌশলী জেমস রেনেলকে বঙ্গীয় নদীব্যবস্থার জরিপ ও এর মানচিত্র প্রণয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। রেনেল ১৭৬৩ থেকে ১৭৭৩ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ সরকারের তরফে বাংলার এক সেট মানচিত্র প্রস্তত করেন। তাঁর ১৭৭৯ সালে মুদ্রিত বেঙ্গল এ্যাটলাস (Bengal Atlas) বাণিজ্যিক, সামরিক ও প্রশাসনিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক দিয়ে একটি অতিমূল্যবান কাজ। শিক্ষামূলক, প্রশাসনিক ও নৌ-পরিচালনা- প্রতিটি ক্ষেত্রেই মধ্য উনিশ শতকে পেশাগত মানচিত্রের আত্মপ্রকাশের পূর্ব পর্যন্ত রেনেলের মানচিত্রই একমাত্র নির্ভরযোগ্য নির্দেশক ছিল।”রেনেলের এই মানচিত্রে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বেশ কিছু স্থান ও নদীর নাম গুরুত্বের সাথে উল্লেখ রয়েছে।মহাভারত প্রণেতা বেদব্যাসের ‘পদ্মপুরান’ গ্রন্থে জনশ্রুতি আছে, কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগরের তলদেশ থেকে ধীরে ধীরে স্থল ও জনপদে রূপান্তরিত হয় জেলার বৃহত্তর অংশ, একাদশ থেকে ষোড়শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে। কালিদহ সায়র বা কালিদাস সাগর এর নামকরণেই এ অঞ্চলে হিন্দু আধিক্য ছিল বলে অনেকটা প্রমাণ মিলে। জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর সত্যতা নিরূপণ করা যায়। হিন্দু আধিক্যের কারণে এই এলাকার কর্তৃত্ব তৎকালীন ত্রিপুরায় ব্রাহ্মণ্যবাদের বিস্তার ঘটে। ব্রাহ্মণ আধিক্য বা ‘ব্রাহ্মণদের বাড়ি’ থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উৎপত্তি হয়েছে বলে অনেকেরই ধারণা। তবে এ কথা অনস্বীকার্য, ব্রাহ্মণ শব্দ থেকে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ নামকরণ হয়েছে।প্রাচীনকালে বর্তমান শহরের “পৌর মিলনায়তন” এর পশ্চিম দিকটায় “ব্রাহ্মণবাড়ি” নামে অভিজাত ব্রাহ্মণদের একটা বাড়ি ছিল। এ ‘ব্রাহ্মণবাড়ি’ থেকেই তৎকালীন মহকুমার নামকরণ করা হয় ‘ব্রাহ্মণবাড়ি’ তথা ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়া’।বর্তমান ব্রাহ্মণবাড়িয়া চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন একটি জেলা। প্রাচীনকালে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়েছিল।চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াং চোয়াঙ কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত ও এ অঞ্চলে প্রাপ্ত প্রাচীন নিদর্শন‍াদি থেকে যতদূর জানা যায় খ্রিষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে ত্রিপুরা গুপ্ত সম্রাটদের অধিকারভুক্ত ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে সপ্তম থেকে অষ্টম শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত এ অঞ্চলে বৌদ্ধ দেববংশ রাজত্ব করে। নবম শতাব্দীতে হরিকেলের রাজাগণের শাসনাধীনে আসে। প্রত্নপ্রমাণ হতে পাওয়া যায় যে, দশম হতে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ বছর এ অঞ্চল চন্দ্র রাজবংশ দ্বারা শাসিত হয়েছে।মধ্যবর্তী সময়ে মোঘলদের দ্বারা শাসিত হওয়ার পরে ১৭৬৫ সালে এটি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর অধীনে আসে। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে কোম্পানী ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ প্রদেশে একজন তত্ত্বাবধায়ক (Superintendent) নিয়োগ করে। ১৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে কুমিল্লাকে কালেক্টরের অধীন করা হয়। ১৭৯০ সালে ত্রিপুরা জেলা গঠনের মাধ্যমে ত্রিপুরা কালেক্টরেটের যাত্রা শুরু হয়।পূর্ব ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্ত সংলগ্ন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৮৬০ ইং সালে মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৫ সালে নাসিরনগর মহকুমার নাম পরিবর্তন করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমা করা হয়। তৎপূর্বেই ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর পৌরসভায় উন্নীত হয়।ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ পরবর্তীসময়ে কুমিল্লা জেলার একটি মহকুমা হিসেবে থাকে।১৯৭১ সালে বাংলাদেশ এক রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা উত্তর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের সময় ১৯৮৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে জেলা ঘোষণা করা হয়।

মুঘল আমলে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া মসলিন কাপড় তৈরির জন্য বিখ্যাত ছিল।ঈসা খাঁর প্রথম ও অস্থায়ী রাজধানী ছিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে ১০ কিমি উত্তরে সরাইলে।১৮২৪ সালে ব্রিটিশ সৈন্যদের মুনিপুর অধিকারের সময়ে তাদের সামরিক সদর দফতর ছিল এ শহরে।১৯২১ সালে সমগ্র মুসলিম লীগের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার সৈয়দ শামসুল হুদা (১৮৬২-১৯২২) এবং ব্যারিষ্টার আবদুর রসুল (১৮৭৪-১৯১৭) ছিলেন কংগ্রেস তথা ভারতবর্ষের প্রথম সারির একজন নেতা। উল্লাসকর দত্ত (১৮৮৫-১৯৬৫), সুনীতি চৌধুরী, শান্তি ঘোষ, গোপাল দেবের মত অনেক ত্যাগী ও মহান নেতাদের জন্ম দিয়েছে এই ব্রাহ্মণবাড়ীয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা (পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ড রয়েছে), ১১টি ইউনিয়ন, ১৪২ টি মৌজা ও ১৪৬ টি গ্রাম রয়েছে।এটি জাতীয় সংসদের ২৪৫নং নির্বাচনী এলাকা(বিজয়নগর উপজেলা সহ) ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ এর আওতাধীন।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.