নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিত্যকার প্রয়োজনে নিয়ত অভিযোজনের ক্রমাগত নিষ্পেষণ থেকে পরিত্রাণের ফুরসত খুঁজে ফেরা এক পরিশ্রান্ত প্রাণ।
নব্বইয়ের দশক। আমার শৈশব। স্বর্ণালী সেই দিনগুলো।সংগীত তখন পেনড্রাইভেও ঢোকেনি,মোবাইল মেমোরী চিপের এমপিথ্রী তেও ঠাঁই পায়নি। রেডিও তখন জমজমাট। টু ব্যান্ড,থ্রী ব্যান্ড রেডিও,ওয়াকম্যান,কিছু পরে ক্যাসেট প্লেয়ার কাম রেডিও।
৯৩ কি ৯৪ সাল তখন । চাচার একটা লাল রেডিও ছিল,ব্যাটারী ওয়ালা। পোলার,সানলাইট বা চান্দা ব্যাটারী লাগানো থাকত। সকালের দিকে বাংলাদেশ বেতার, ঢাকা চালু হত। অপেক্ষায় থাকতাম সকাল দশটার "অনুরোধের আসর;গানের ডালা " নামের চলচ্চিত্রের গানের অনুষ্ঠানের জন্য। এক ঘন্টা চলত। "শেরপুর থেকে লিখেছেন কামাল,হাসান,রোজিনা,সোহেল,রংপুর থেকে লিখেছেন সুজন,সুমন,আতিয়া,তনু ....আপনারা সবাই শুনতে চেয়েছেন এন্ড্রু কিশোর ও রুনা লায়লার কন্ঠে গাওয়া এই গানটি ..."। কি উত্তেজনা ,কি আগ্রহ নিয়ে সে গান শোনা।
এভাবে একসময় দুপুর গড়াতো। বেলা ১২টা কি ১ টায় শুরু হত বিজ্ঞাপন তরঙ্গের অনুষ্ঠান। একটি কোম্পানীর পন্যের সৌজন্যে চলচ্চিত্রের গানের অনুষ্ঠান। "লালবাগ কেমিকেল সুর বাহার অথবা হেনোলাক্স স্পট ক্রিম সুর ও ছব্দে " সহ অসংখ্য অনুষ্ঠান। উপস্থাপক/উপস্থাপিকার মিষ্টি কন্ঠের ঝংকার আরো আকর্ষনীয় করে তুলত অনুষ্ঠানকে। এতে ছিল চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার্। একবার ছোটচাচা তাঁর,আমার,আমার কাজিনদের নাম দিয়ে চিঠি পাঠায়। এক সপ্তাহের অধীর আগ্রহ। সেই অনুষ্ঠান শুনতে দৌড়ে চাচার রুমে যেতে মাথায় দরজার আঘাত পেলাম। তবু নাম শোনার পরে সে কি আনন্দ। সন্ধ্যায় আব্বা,বড়আব্বাদের সাথে বসে চাচার কসরত করে বিবিসি ধরিয়ে খবর শোনানো কত স্মৃতিময় ! রেডিও অনুষ্ঠানের পারত পক্ষে কোনটাই বাদ দিতাম না। এতে তো কাজিনরা সবাই আমার রেখে দিলো "শ্রোতা "! কি মজার সব ঘটনা। চাচার আবার একটা ছোট ডায়েরী ছিল,যেখানে কি বারে কোন অনুষ্ঠান কয়টায় হয় তা লেখা থাকত।
আরেকটা মজা ছিল,বাংলা চলচ্চিত্রের প্রমোশনুলক অনুষ্ঠান। সেই ভরাট কন্ঠের বিখ্যাত গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সিনেমা প্রমোশন। নির্দিষ্ট চলচ্চিত্রের কিছু গান,সংলাপ শোনানো হত। "আসিতেছে,সালমান শাহ -শাবনুর অভিনীত ,মতিন রহমান পরিচালিত ,লাভ,একশন,সাসপেন্স ড্রামা ছায়াছবি 'তোমাকে চাই ..তোমাকে চাই ...!!!' কি হবে এরপর ? শেষপর্যন্ত নায়ক পাবে কি তার স্বপ্নের কন্যাকে !! দেখুন আগামী শুক্রবার সারাদেশে একযোগে শুভমুক্তি ..."। কি যাদুকরী অনুরনন সৃষ্টিকারী ,কি সাবলীল মঞ্চায়ন,বেতারের অদৃশ্য আঁধার ছেড়ে যেন চোখের সামনে ভেসে ওঠে চলচ্চিত্র ! রেডিওর ছিলো এমনই শক্তি। রেডিওর কল্যানেই মুহুর্তেই হিট হয়ে যেত গান,আগ্রহের পারদ বাড়ত চলচ্চিত্রের,বিপনন বাড়ত পন্যের্।চলচ্চিত্রের গান নিয়ে বের হওয়া ক্যাসেট এর বিক্রি বাড়ত হু হু করে। সেই ক্যাসেটের প্রিয় গান শোনা,মাঝেমাঝে ক্যাসেটের ফিতে ক্যাসেট প্লেয়ারে পেঁচিয়ে যাওয়া,বিশেষ গান শোনার জন্য কলম দিয়ে পেঁচিয়ে ফিতেকে একটি নির্দিষ্ট যায়গায় টেনে দিয়ে আবার শোনা ,কি ফ্যান্টাসী ! হেনোলাক্স ক্রিম,হোয়াইট প্লাস টুথপেষ্ট,বিদ্যুৎ কালো নিমের মাজন,মধুমিতা লবন বা ওয়াশিং পাউডার নিরমা সবই চেনা হত রেডিওর হাত ধরে।
কত বিখ্যাত হওয়া গান রাখালের মুখে,কিষানের মুখে বা গৃহবধুর গুনগুনিয়ে গাওয়ায় বাজত ইয়াত্তা নেই। তেল গেলে ফুরাইয়া বাত্তি যায় নিভিয়া,তুমি একবার এসে দেখে যাও ভালোবাসার এ মরন,নাই নাই নাই রে সারাদেশে নাই তোমার মনের মত মন আর নাই,ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়,ভালোবাসিয়া গেলাম ফাঁসিয়া ,ও আমার বন্ধুগো চিরসাথী পথ চলার সহ শত সহস্র সঙ্গিত সবার মুখেমুখে রেডিওর কল্যানে। সেই বাংলাদেশ বেতার,১২১ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ ,শাহবাগ ,ঢাকা! সেই দিনগুলো আজ সোনালী অতীত ! এফ এম এর প্রফেশনাল "হ্যালো লিচেনার্স ,ওয়েলকাম ,আমি আরজে ..."-এর দিনে বেতারের আবেগী "সুপ্রীয় শ্রোতা-ভাই-বোন-বন্ধুরা ,স্বাগতম .." কে শোনাবে আমায় !
©somewhere in net ltd.