নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিত্যকার প্রয়োজনে নিয়ত অভিযোজনের ক্রমাগত নিষ্পেষণ থেকে পরিত্রাণের ফুরসত খুঁজে ফেরা এক পরিশ্রান্ত প্রাণ।
নব্বইয়ের দশক। গ্রামে গঞ্জে টেলিভিশন তখনো দুর্লভ।ডিশ তো দুর অস্ত। সাদাকালো একটা টিভিই তখন আভিজাত্য বা সৌখিনতার প্রতীক।৯০ এর মাঝামাঝি শুধু বিটিভির এক আলিফ লায়লা দেখার জন্য মানুষ রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে মানুষের বাড়ির উঠান বা বাহিরবাড়িতে ছুটে যেত।
শুক্রবার তো ঈদের দিন। এই দিনের ছায়াছবি উপভোগ করতে মানুষের কি জমায়েত। টিভিওয়ালা বাড়ির মানুষগুলোও আন্তরিকতার সহিত,মাদুর বিছিয়ে বা চেয়ার-টেবিল-টুল যেভাবে পারত বসতে যায়গা দিত দর্শকদের্।দর্শক বিকেল তিনটায় টিভি সেন্টার খোলা থেকেই উপস্থিত। পবিত্র কোরআন থেকে তিলওয়াত,গীতা,ত্রিপিটক পাঠ,দেশের গান পেরিয়ে যখন উপস্থাপিকা ঘোষনা দেন "এখন দেখুন পুর্নদৈর্ঘ্য বাংলা ছায়াছবি ..." তখন সবার উজ্জল মুখের অভিব্যাক্তি দেখার মত হত। এইদিনটায় টিভিওয়ালা বাড়ির ছেলেমেয়েগুলো এক আধটু ভাব ও নিত,হঠাৎ দেখা যেত টিভি লাইন অফ বা হালকা বকাবকি অথবা "ঝামেলা করলে টিভি দেখতে দেওয়া হবেনা " -ধরনের টুকটাক হুমকি ও দিত। মানুষ এগুলো কৌশলে এড়িয়ে যেত,"করুক না হয় একটু,ওদেরও তো আমরা বিরক্ত করছি " ভেবে। যাহোক,সিনেমা শেষ হলে,ভাঙ্গত মিলনমেলা।পিচ্চিপাচ্চারা সিনেমা দেখে রাস্তায় নেমে সিনেমার ভিলেনের বিশেষ ডায়ালগটা দিত,কেউ আবার নায়কের্। টুকটাক ফাইটও হত।
সেই শুক্রবার রাতেই আবার দেখাতো "আলিফ লায়লা " ! অসম্ভব দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠান। বিদ্যুৎ চলে গেলে চাঁদা তুলে ব্যাটারী এনেও দেখা হত।যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই তারা এই সিস্টেমে শুক্রবারের ছায়াছবিও উপভোগ করতো। "আলিবাবা চল্লিশ চোর " সিরিজে ডাকাতের হীরে-জহরতের গোপন আস্তানায় কাসেম নামের ব্যাক্তি ঢুকে যাবার পর বের হবার মন্ত্র "চিচিং ফাঁক " ভুলে যাওয়ায় আটকা পড়ে যায় ,ঠিক সেই মুহুর্তেই সেই সপ্তাহের মত আলিফ লায়লা শেষ হয়। সারা সপ্তাহ যুবক-ছেলে -বুড়ো সবার মাঝে জল্পনা-কল্পনা "কাসেমের মস্তক কাটা হবে/সাত চাকা করা হবে/দুই টুকরো করা হবে "-সহ আরো কত কি! কি প্রভাব বিটিভির!
ইত্যাদি তো কিংবদন্তি ,টিভিতে এর চেয়ে জনপ্রিয় বাংলা ম্যাগাজিন আর ছিলোনা,হয়ত আসবেওনা। মাঝে "শুভেচ্ছা" নামের মোটামুটি মানের একটা এসেছিল,যার উপস্থাপক আবদুন নুর তুষার ছিলেন।
ছায়াছন্দ নামের চলচ্চিত্রের গানের অনুষ্ঠান দেখেন নি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। নারীকুলে চরম জনপ্রিয়। এসব হাইভোল্টেজ অনুষ্ঠানের ফাঁকে দেখানো বিজ্ঞাপন গুলোও একটা বিনোদন। কিছু বিজ্ঞাপনের জিঙ্গেল তো কিংবদন্তি। "জনি প্রিন্ট ,জনি প্রিন্ট ...বিপাশা রুপসী শাড়ীতে /তাৎখানির চাল মসুরের ডাল -চেনে প্রতি জন মোল্লার লবন /ছিল্লা কাইট্টা লবন লাগাই দিমু /জুঁই নারিকেলের -তোমার ঘন কালো চুলে হারিয়ে যায় মন/ইকোনো বলপেনের -লিখে ভাল চলে ভালো ইকোনো সহ অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও হিট !
শুক্রবারের সকালের "মোগলী "নামক শিশুতোষ অনুষ্ঠান,মুভ্যি অফ দ্য উইক এ ইংরেজী মুভি,রাতে দ্য এক্স ফাইল,শনিবার প্যাকেজ নাটক,অন্যান্য দিন ধারাবাহিক নাটক কি দর্শকপ্রিয় সেই প্রোগ্রাম গুলো! স্বর্নালী সেই দিন গুলো। এখন স্যাটেলাইট,গোটা ত্রিশেক দেশী টিভি চ্যানেল,হাজার বিজ্ঞাপন,কিছু অনুষ্ঠান ,প্রতি ঘন্টায় খবর,গন্ডা গন্ডা টকশো । কিন্তু দর্শকপ্রিয় সেই প্রোগ্রাম কই,সেই আবেগ কই ?
©somewhere in net ltd.